নানা
কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। মানসিক
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা থেকে শুরু
করে
কাজের অস্বাভাবিক চাপ, খাওয়াদাওয়ায়
অনিয়ম, শারীরিক
পরিশ্রমের ঘাটতি, নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি
ইত্যাদি কারণে অনিদ্রা সমস্যা জটিল রূপ নিতে পারে। ভালো
ঘুমাতে পারেন না—এমন
অনেকেই জানেন, তাঁদের
এ সমস্যার জন্য জীবনযাত্রার
ধরনই দায়ী। কারণ, তাঁদের নিয়মিত কাজকর্মের সময়সূচিটাই গোলমেলে।
প্রথমেই কৌশল নির্ধারণ
ঘুমে ব্যাঘাতের জন্য
দায়ী কারণগুলো বিশ্লেষণের আগে জেনে নিতে হবে, রাতে আপনার প্রশান্তিপূর্ণ
ঘুমের শত্রু কী কী। সেগুলো
চিহ্নিত করে আপনি কিছু কৌশল অবলম্বনের
মাধ্যমে সুনিদ্রা নিশ্চিত করতে পারেন।
ধূমপান
ও তামাক চলবে না
সিগারেটের উপাদান
নিকোটিন মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা তৈরি করে। এতে ঘুম নষ্ট হয়। এই নেশাদ্রব্যটি মানুষের হৃৎপিণ্ডের গতি, রক্তচাপ
ও মস্তিষ্কে
বিভিন্ন তরঙ্গের গতিবিধি বাড়িয়ে দেয়। এ
ধরনের প্রতিক্রিয়া মানুষকে
জাগিয়ে রাখে। নিকোটিনে আসক্ত ব্যক্তিরা
টানা কয়েক ঘণ্টা এটি থেকে দূরে
থাকলেই রাতে ঘুমাতে গিয়ে কিছু উপকারিতা পাবেন। তবে প্রশান্তিপূর্ণ ঘুমের
জন্য তামাক সেবন ও ধূমপান দুটোই পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া ভালো।
নিয়মিত
ব্যায়াম করুন
হাঁটা, দৌড়ানো
ও সাঁতার কাটার মতো নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের প্রভাবে আপনার ঘুমে তিনটি
ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য যোগ হবে: শোবার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন, ঘুম
হবে গভীর এবং রাতে বারবার জেগে ওঠার প্রবণতা দূর হবে। ব্যায়ামে প্রবীণদেরও উপকার হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা সাধারণত অনিদ্রায়
ভোগেন বেশি। পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের সুনিদ্রার
জন্যও শরীরচর্চা করার বিকল্প নেই। তবে ঘুমানোর আগে দুই ঘণ্টার মধ্যে
ব্যায়াম করবেন না।
মাদক
একেবারেই নয়
সর্বনাশা মাদক
অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি
অনিদ্রার সঙ্গে সঙ্গে রাতে ভীতিকর সব দুঃস্বপ্ন দেখে থাকেন। এ ছাড়া নাক ডাকা এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে
সমস্যাও তাঁদের মধ্যে বেশি দেখা
যায়।
ক্যাফেইন
কমান
ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় যাঁরা
বেশি বেশি পান করেন, তাঁদের
রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তাঁদের
ঘুম সাধারণত
সংক্ষিপ্ত ও হালকা হয়। এমনও
কেউ কেউ আছেন যাঁরা সকালে মাত্র এক কাপ
কফি পান করলেই রাতে আর ঘুমাতে পারেন না। ক্যাফেইন
অ্যাডেনোসিনের কার্যক্রমে
বিঘ্ন ঘটায়। অ্যাডেনোসিন হচ্ছে
স্নায়ুতন্ত্রের একটি পরিবাহী উপাদান, যা
ঘুমের সহায়ক। ক্যাফেইনজাতীয় পানীয়
বারবার প্রস্রাবের বেগ তৈরি
করে। এতে ঘুমের সমস্যা হয়। অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব
ক্যাফেইন এড়িয়ে চলতে হবে, যদিও
ব্যাপারটা বেশ কঠিন। কারণ, হঠাৎ
করে ক্যাফেইন
বাদ দিলে মাথাব্যথা, বিরক্তি, চরম
ক্লান্তি প্রভৃতি প্রতিক্রিয়া হতে
পারে। কফি ছাড়া যাঁদের একেবারেই
চলে না, তাঁদের
অন্তত দুপুরের পর পানীয়টি
থেকে একেবারে দূরে থাকতে হবে।
সময়সূচি
মেনে চলুন
প্রাত্যহিক জীবনের
যাবতীয় কাজকর্মের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচি কঠোরভাবে মেনে চলুন। অনিয়ম করবেন না। তাহলেই আপনার ঘুম এবং জাগরণের চক্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে
নিয়ন্ত্রিত হবে। অনিদ্রা বা বিষণ্নতার মতো
সমস্যাগুলোও দূর
হবে। প্রতিদিন একই সময়ে জেগে
উঠুন, এমনকি
আগের রাতে দেরি করে বিছানায় গেলেও। দিনে ঘুমাবেন না, তাহলে
রাতে সহজে ঘুম আসবে না। সম্ভব
হলে দুপুরে খাওয়ার
পর একটু ঝিমিয়ে নিতে পারেন। তবে
এটা যেন ১৫-২০ মিনিটের বেশি কখনোই না
হয়।
সূত্র:
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল
সূত্রঃ প্রথম আলো, ০২:৪৮, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।