সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: আজ রিকশার মালিককে জমা দেওয়ার টাকাই এখনো পাইনি-রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া

আজ রিকশার মালিককে জমা দেওয়ার টাকাই এখনো পাইনি-রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া


ঘড়িতে সময় রাত প্রায় নয়টারাজশাহী নগরের নিউমার্কেট এলাকারাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক আনিসুজ্জামান রিকশায় উঠবেনপাশ থেকে একজন রিকশাওয়ালা ডাক দেন, স্যার আসেন, কোথায় যাবেন? রিকশায় উঠতে গিয়ে তিনি থমকে দাঁড়াননিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন নারিকশাওয়ালা তাঁর বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র! আনিসুজ্জামান বিব্রত হচ্ছেন দেখে ছাত্রটি এগিয়ে এসে বলেন, স্যার, পড়াশোনার খরচ জোগাড় করার জন্য আমি রাতে রিকশা চালাইআজ রিকশার মালিককে জমা দেওয়ার টাকাই এখনো পাইনিতাই ডাকছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন?

এ ঘটনা ১ এপ্রিল রাতেরআনিসুজ্জামান তাঁর রিকশায় উঠে সোজা প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে আসেনওই ছাত্রের নাম সানোয়ার হোসেন (২৪)বাবার নাম আমিনুল হকবাড়ি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামেদুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সানোয়ার দ্বিতীয়এসএসসি পাস করার পর বড় বোনের বিয়ে দেওয়া হয়েছেছোট ভাইটি এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবেগ্রামের বাজারে সানোয়ারের বাবার একটি ছোট্ট চা-মিষ্টির দোকান আছেআবাদি জমি আছে আড়াই বিঘার মতো 

সানোয়ার জানালেন, ২০০৯-১০ সেশনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হনসংসার চালাতে গিয়ে বাবা পৌনে দুই লাখ টাকায় জমিগুলো বন্ধক রাখেনএ ছাড়া চারটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিতে হয়েছেসেই ঋণ চার বছরে বেড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা হয়েছেসপ্তাহে ঋণের কিস্তি দিতে হয় তিন হাজার টাকাতার ওপর রাজশাহীতে তাঁর পড়াশোনার খরচবিশেষ করে মাস্টার্সে এসে বাড়ি থেকে পাঠানো টাকার পরিমাণ একবারেই কমে যায়তাই তিনি আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন নাগত বছর ধরেছেন রিকশার হাতল 

প্রায় প্রতিদিনই রিকশা চালান সানোয়ারমাঝে মাঝে শরীর সায় দেয় নাসেদিন বিশ্রাম নেনদিনে রিকশার মালিককে ৩৫ টাকা করে জমা দিতে হয়সাধারণত রাত দুইটার পর যাত্রী পাওয়া যায় নাতবু ভোরের ট্রেনের যাত্রীর জন্য বসে থাকেন সানোয়ারজমার টাকা বাদ দিয়ে রাতে গড়ে তাঁর ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়রিকশা চালানো শুরু করার আগে টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরির খোঁজ করে সফল হননি সানোয়ারঅনেক চেষ্টা করে একটি টিউশনি জোগাড় করেছিলেনকিন্তু দেখা গেল, ওই বাড়িতে যাতায়াত করতেই তাঁর আয়ের বেশ কিছু অংশ চলে যায় সানোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের হবীবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্রবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিকে একটি মাসিক পত্রিকা বিক্রি করতেনসেটাও বন্ধ হয়ে গেছেসহপাঠী, বন্ধু ও হলের কোনো কোনো বড় ভাই তাঁকে সহযোগিতা করেন

সানোয়ার জানান, তাঁর ২০ মাসের হলের সিট ভাড়া দুই হাজার টাকা বাকি পড়ে গেছেহলের ডাইনিংয়ে খাওয়ার বিলও এক মাসের বাকি পড়েছেএ মাসের শেষের দিকে মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথাহলের সিট ভাড়া শোধ করতে না পারলে মাস্টার্সের ফরম পূরণের সময় হলের ছাড়পত্রও পাওয়া যাবে নাএসব নিয়ে চিন্তায় আছেন মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সানোয়ারের বাবা বলেন, অনেক ধারদেনা হয়ে গেছেছেলেকে সব মাসে সমান টাকা আর দিতে পারি না

শিক্ষক আনিসুজ্জামান বলেন, ছেলেটিকে প্রতিদিন ক্লাসে দেখি১০ দিন শিক্ষাসফরে একসঙ্গে ছিলামকিন্তু কখনোই ছেলেটির এই দৈন্যের কথা বুঝতে পারিনিতাঁকে রিকশা হাতে দেখে প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনিরাত ১০টার দিকে প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয় থেকে বের হয়ে সানোয়ার আবার রিকশার হাতল ধরলেনপা রাখলেন প্যাডেলেহলের সিট ভাড়া ও ডাইনিংয়ের খাওয়ার বিল শোধ করে মাস্টার্সের ফরম পূরণের টাকাটা জোগাড় করতে হবে যে!


সূত্রঃ প্রথম আলো, ০২:৪৬, এপ্রিল ১৭, ২০১৫

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।