সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের বরকত ও ফজীলত

রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের বরকত ও ফজীলত


মাহে রমজানের আজ ৬ষ্ঠ দিবস। ঘরে ঘরে মসজিদে মক্তবে মুমিন মুসলমানরা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ তিলাওয়াতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গতকাল মানব কল্যাণে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের উপকারিতা বর্ণনার সূত্রপাত করেছিলাম। আজ মানব জীবনের আধুনিকায়নে জ্ঞানবিজ্ঞানের তৃষ্ণা মিটানোর ক্ষেত্রে এমনকি বিশ্বাসী মানুষের অভাব মোচনের ক্ষেত্রে এ কুরআন শরীফের তিলাওয়াত অনুধাবন কত কার্যকর সে সম্পর্কে দু’চার কথা। পবিত্র কোরআন সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাচীনতম উৎস-সূত্র। এখানে শুধু নামায কালামের কথা বলা হয়নি, সৃষ্টি রহস্য ও বিশ্ব ইতিহাসের বহু তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ এ মহাগ্রন্থ। এইতো মাত্র চার দশকেরও কিছু আগে (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই) মানুষ প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এ ঐতিহাসিক দিনে নেইল আমস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স, অলড্রিন প্রমুখ সৌভাগ্যবান মানব সন্তান চাঁদের দেশে মানব জাতির পদচিহ্ন আঁকেন। যে সময়, যে যুগে তারা এ মহা বিজয়ের সুসংবাদ বয়ে এনেছেন তখনও মানুষের এক বিরাট অংশ তা সহজে মেনে নিতে পারেনি। বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তাদের বিশ্বাস হলো, মানুষের পক্ষে আকাশ জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তাদের সে বিশ্বাস ভাঙছে, তারা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর কারিশমা বলে ক্রমেই অনুধাবন করতে ও প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হচ্ছে।

অথচ এর দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম ও তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং মহাগ্রন্থ আল-কোরআন বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ঘোষণা করেছে। বিজ্ঞানময় পবিত্র কুরআনুল হাকীম বিজ্ঞানপূর্ণ ও বিজ্ঞাননির্ভর বহু আয়াত বর্ণনা করেছে। আকাশপথে বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ ও চন্দ্রপৃষ্ঠের অবস্থা এবং অবস্থান ইনডিকেট করেছে প্রাজ্ঞ ভাষায়। এর জন্য বিস্তারিত দেখুন সূরা ইয়াসিন ও সূরা নাযমের তাফসীর। আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলে মাকবুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শাবান মাসের ২৭ তারিখ রজনীতে স্বয়ং পবিত্র মি’রাজ গমন করে মানব জাতির আকাশ জয়ের বিস্ময়কর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন। আজকের বিজ্ঞান মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে মি’রাজ শরীফের সম্ভাবনা ও বাস্তবতাকে স্বীকৃত ও যুক্তিপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে স্বীকার করে নিয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও পবিত্র কোরআনকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় কল্যাণমুখী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভান্ডার হিসেবে তুলে ধরে বিবৃত করেছেন : ‘তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও বিজ্ঞান। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।’-(জুমআ-২)।
এমনিভাবে কোরআনে কারীম আমাদের জন্য নিয়ে আসে আর্থ-সামাজিক উন্নতি, সৌভাগ্য ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন। এটি ভক্তি সহকারে বরকত লাভের আশায় তিলোয়াত করলে আল্লাহ অভাবীর অভাব মোচন করেন, দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করেন। অন্তর ভরে দেন প্রশস্ততা ও প্রশান্তিতে। এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) ঐতিহাসিক ইবনুল আসাকীরের বরাত দিয়ে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
ঘটনাটি হলো এই, বিখ্যাত সাহাবী ও কোরআন বিশেষজ্ঞ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি.) যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন মুসলিম জাহানের তৎকালীন খলিফা আমীরুল মো’মেনীন হযরত ওসমান (রাদি.) তাকে দেখতে যান। এ সময় তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন হয়। তা নিম্নরূপ :
হযরত উসমান: মা তাশতাকী- আপনার অসুখটা কি?
হযরত ইবনে মাসউদ: আমার পাপসমূহই আমার অসুখ।
ওসমান গণি: আপনার চাহিদা বা বাসনা কি?
ইবনে মাসউদ: রাহমাতু রাব্বী অর্থাৎ আমার মহান প্রভু আল্লাহপাকের দয়া ও রহমতের ভিখারী।
ওসমান গণি: আমি আপনার জন্য কোন চিকিৎসক ডাকবো কি?
ইবনে মাসউদ: চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছে।
ওসমান গণি: আমি আপনার জন্য সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
ইবনে মাসউদ: আপনি চিন্তা করেছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র্য ও উপবাসে পতিত হবে। কিন্তু আমি এরূপ চিন্তা করি না, কারণ আমি কন্যাদের জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতি রাতে (কুরআন শরীফের) সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। কেননা মহানবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইশার নামাযের পর সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করে, সে কখনো উপবাসে আক্রান্ত হবে না।’ -(ইবনে কাসীর)।
এভাবে কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের বহুবিধ বরকত ও উপকারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে। আমরা আমাদের জীবনের স্বার্থে কুরআনমুখী অভ্যাস গড়ে তুলব।

লেখক: অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক


সূত্রঃ  বিডি টুয়েন্টিফোরলাইভ ডট কম, ০৫ জুলাই ২০১৪খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।