সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: অদ্ভুত নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত

অদ্ভুত নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত

                                                             

আজও সমগ্র বিশ্বের ভূগোলবিদদের কাছে তিব্বত রহস্যঘেরা এক মায়াপুরী। তিব্বতকে বলা হয় নিষিদ্ধ দেশ এবং এর রাজধানী লাসাকে বলা হয় নিষিদ্ধ শহর। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বহির্বিশ্বের কাছে তিব্বত এক নিষিদ্ধ বিস্ময়! কারণ দীর্ঘদিন বিদেশিদের প্রবেশ তিব্বতে একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল, যা আজও নানা নিয়মকানুনের বেড়াজালে ঘেরা।

 হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত এই পরাধীন দেশটি অত্যন্ত দুর্গম। বিশ্বের সর্বোচ্চ মালভূমি আর বরফ গলা নদী নিয়ে জাদুময়ী এক রহস্যরাজ্য তিব্বত। লাসার অদূরেই অবস্থিত গোবি মরুভূমি। এই মরুভূমির কষ্টকর পরিবেশ মানুষকে কাছে যেতে নিরুৎসাহী করে। এই অঞ্চলগুলো এতই উঁচু যে একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। তিব্বতীয় মালভূমির গড় উচ্চতা ১৬,০০০ ফুট। বহির্বিশ্বের মানুষের প্রবেশাধিকার না থাকা, দুর্গম পরিবেশ, লামাদের কঠোরতা ইত্যাদি বিষয় তিব্বত সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল আরো বাড়িয়েছে।

বিখ্যাত পোতালা নামক প্রাসাদটিরও অবস্থান এই লাসায়। এই প্রাসাদটি বহির্বিশ্বের মানুষ সর্বপ্রথম দেখতে পায় ১৯০৪ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায়। তিব্বতের চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পাহাড় ও গুহা। সম্রাট সগেন পো লাসা নগরীর প্রতিষ্ঠাতা। ৬৪১ সালে তিনি একটি বিরাট জলাশয় ভরাট করে প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিব্বতের বিভিন্ন মন্দিরের ভেতরে সোনার তৈরি বড় বড় প্রদীপ মাখন দিয়ে জ্বালানো থাকে। চার হাজার ভরি ওজনের একটি প্রদীপও সেখানে আছে।

লাসা ইটালিয়ান শব্দ, যার অর্থ ঈশ্বরের স্থান। তিব্বতিদের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাদের প্রধান ধর্মগুরু দালাইলামা। নামটি এখন সারাবিশ্বে পরিচিত। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তিব্বতে লামা নামে পরিচিত। লামা শব্দের অর্থ প্রধান। আর দালাইলামা শব্দের অর্থ জ্ঞান সমুদ্রের সর্বপ্রধান। সোনার চূড়া দেওয়া পোতালা প্রাসাদে দালাইলামা বাস করেন। ১৩৯১ সালে প্রথম দালাইলামার আবির্ভাব ঘটে। ১৯১২ সালে ত্রয়োদশ দালাইলামা কর্তৃক গণচীনের একটি স্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে তিব্বত প্রতিষ্ঠা পায়। এই অঞ্চলটি চীনের অধীন হলেও তিব্বতিরা তা মানে না। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়। তখন দালাইলামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস আরম্ভ করেন। সেখানেই ভূতপূর্ব স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।


তিব্বতিদের জীবনব্যবস্থা ও সামাজিক রীতিনীতি তিব্বতকে আরো রহস্যময়ী করে তুলেছে। তারা দালাইলামা নির্বাচন করে এক অদ্ভুত রীতিতে। কোনো দালাইলামা মারা গেলে লামারা ধ্যানে বসে। তাদের মধ্যে প্রধান লামা তাঁর অলৌকিক অভিজ্ঞতায় একটি ছবি আঁকেন। তার পর কয়েকজন লামা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সেই ছবির অনুরূপ একজন শিশু অবতার খুঁজে বের করেন। মজার ব্যাপার হলো তিব্বতিরা সহজে গোসল করে না। তারা শুকনা থাকতে পছন্দ করেন। আর তারা নিজের গায়ে উকুনের বাসা বাধিয়ে তা খেয়ে ফেলে। তিব্বতিদের সৎকার ব্যবস্থা যথেষ্ট ভয়ংকর। তারা সৎকারের জন্য প্রথমে মৃতদেহকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে। তার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিচ থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে ছোট ছোট টুকরা করে। সবশেষে মাংসের টুকরাগুলো শকুন দিয়ে খাওয়ায়। আর যেখানে সেখানে পরে থাকে বীভৎস কঙ্কাল। এ প্রক্রিয়ার বর্বরোচিত দৃশ্যটি শুধু পরিবারের সদস্যদেরই দেখার নিয়ম আছে। মৃতদেহ সৎকারের এ প্রথা নিষ্ঠুর মনে হলেও বৌদ্ধ ধর্মের ধারণা চেতনা থেকেই এই প্রথা এসেছে। বৌদ্ধধর্মে মৃতদেহ সংরক্ষণকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয়। তিব্বতে হাজার বছর ধরে চলে আসছে মৃতদেহ সৎকারের এই প্রথা। আজও তিব্বতের শতকরা ৮০ ভাগ বৌদ্ধ সৎকারের জন্য এই প্রথা বেছে নেয়।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।