সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

প্রথম কথা
একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে বসা ছিলামতার স্ত্রীও একজন ভাল ডাক্তারউভয়ে ধর্মপ্রাণহজ করেছেন এক সাথেইদুটো মেয়েকেই তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসাতে ভর্তি করিয়েছেনআমাকে বললেন, তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসা আরবী মিডিয়ামের স্কলাস্টিকা তাই না? আমি বললাম, হ্যাউদ্দেশ্য তার উৎসাহকে স্বাগত জানানো
মানে তারা দুটো সন্তানকেই মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে গর্ববোধ করেনকতখানি ধর্মপ্রাণ হলে এমন হতে পারে তা আপনার ভেবে দেখার বিষয় বটে
রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে গল্প করছেনশুধু আমার সাথেই নয়আলেম-উলামাদের কাউকে কাছে পেলে আন্তরিকতার সাথেই আলাপ করেনজানতে চানজানাতে চান
একজন মহিলা আসল, সাথে তার মেয়ে।  সে  রোগের বিবরণ দিয়ে বলল, কয়েকদিন আগে ওকে জিনে আছর করেছিলওঝা-ফকিরেরা জিন তাড়িয়েছে

এ কথা শুনে ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেনবললেন, কিসের জিন? জিন বলতে কিছু আছে নাকি? জিন আবার মানুষকে ধরে নাকি? যত সব অন্ধ বিশ্বাস! জিন-ভূত বলতে কোন কিছু নেইজিনে মানুষ ধরে নামানুষকে আছর করে নাএটা মানসিক রোগ দ্বারা সৃষ্ট একটি কল্পনাএ কল্পনার কারণে সৃষ্টি হয়েছে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা
তার আবেগ কমে গেলে আমি তাকে এ বিষয়টি বুঝাতে চেষ্টা করলামকিন্তু এতে তার কোন আগ্রহ দেখলাম নাআমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেই সে অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করেআমি বুঝলাম, এ বিষয়ে আলোচনা তার পছন্দ নয়সে যা বুঝেছে, সেটাকেই সে চুরান্ত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছেবিশ্বাসটা যে সংশোধন করার প্রয়োজন এটা তিনি বুঝতে চাচ্ছেন না
আসলে কি জিন আছে? জিন কী? ইসলাম কী বলে? জিনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা ইসলামে কতখানি গ্রহণযোগ্য? জিন কি মানুষকে আছর করে? এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব এ বইটিতে
যে সকল বিষয় এখানে আলোচনা করব সেগুলো হল:
এক. জিনের পরিচয়
দুই. জিনের প্রকার
তিন. জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের দাবি
চার. জিন কি মানুষকে আছর করে?
পাঁচ. জিন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য
ছয়. মানসিক রোগী আর জিনে-ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য
সাত. কি কারণে জিন চড়াও হয়?
আট. জিনের আছরের প্রকারভেদ
নয়. জিনের আছর থেকে বাঁচতে হলে যা করতে হবে
দশ. জিনের আছরের চিকিৎসা
এগার. জিনের অধিকার রক্ষায় আমাদের করণীয়



জিনের পরিচয়
জিন আল্লাহ তাআলার একটি সৃষ্টিযেমন তিনি ফেরেশ্‌তা, মানুষ সৃষ্টি করেছেন তেমনি সৃষ্টি করেছেন জিনতাদের বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতি শক্তি রয়েছেতাদের আছে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাতাদের মধ্যে আছে ভাল জিন ও মন্দ জিনআল কুরআনে  জিনদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে:
وَأَنَّا مِنَّا الصَّالِحُونَ وَمِنَّا دُونَ ذَلِكَ كُنَّا طَرَائِقَ قِدَدًا
আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রমআমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত (সূরা আল জিন : ১১)
এ গোষ্ঠির নাম জিন রাখা হয়েছে, কারণ জিন শব্দের অর্থ গোপনআরবী জিন শব্দ থেকে ইজতিনান এর অর্থ হল ইসতেতার বা গোপন হওয়াযেমন আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন :
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ
অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল ... (সূরা আল আনআম : ৭৬)
এখানে জান্না অর্থ হল, আচ্ছন হওয়া, ঢেকে যাওয়া, গোপন হওয়া
তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জিনযেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ
নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না (সূরা আল আরাফ : ২৭)
জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দিয়েমহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন:
وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ
আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে (সূরা আল হিজর : ২৭)
এ আয়াত দ্বারা আমরা আরো জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জিন সৃষ্টি করেছেনইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ ﴿26﴾ وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ ﴿27﴾
আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকেআর এর পূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে (সূরা আল হিজর : ২৬-২৭)
আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সে-ই উদ্দেশ্যেই জিনকে সৃষ্টি করেছিলেনতিনি বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদাত করবে (সূরা আয যারিয়াত : ৫৬)
জিনদের কাছেও তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেনতিনি বলেন:
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آَيَاتِي وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا شَهِدْنَا عَلَى أَنْفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ
হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির (সূরা আল আনআম : ১৩০)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বিচার দিবসে মানুষের যেমন বিচার হবে তেমনি জিন জাতিকেও বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে
তারা বিবিধ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে এসেছেএমনিভাবে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে বলে আল কুরআনের সূরা আন নামলে উল্লেখ করা হয়েছে
আসমানী কিতাবে যারা বিশ্বাসী-ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমান- তারা সকলে জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেতারা কেউ জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে নাপৌত্তলিক, কতিপয় দার্শনিক, বস্তুবাদী গবেষকরা জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে নাদার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশ্‌তা ও জিন রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়সুন্দর চরিত্রকে ফেরেশ্‌তা আর খারাপ চরিত্রকে জিন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়অবশ্য তাদের এ বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ পরিপন্থী
জিন তিন প্রকার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন :
الجن ثلاثة أصناف: صنف يطير في الهواء، وصنف حيات وكلاب، وصنف يحلون ويظعنون). رواه الطبراني، وابن حبان والحاكم أنظر صحيح الجامع الصغير للألباني رقم الحديث 3114 (
জিন তিন প্রকারএক. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়
দুই. কিছু সাপ ও কুকুর
তিন. মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়
(সূত্র : তাবারানীপ্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেনদেখুন, সহীহ আল জামে আস সাগীর, হাদীস নং ৩১১৪, আবু সালাবা আল খাশানী রা. থেকে বর্ণিত।) (মুজামু আলফাজ আল-আকীদাহ)
জিন বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারেকিন্তু তাদের একটি গ্রুপ সর্বদা সাপ ও কুকুরের বেশ ধারণ করে চলাফেরা করে মানব সমাজেএটা তাদের স্থায়ী রূপ
জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের দাবী
একজন মুসলিমকে অবশ্যই জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবেযদি সে জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, তাহলে সে মুমিন থাকবে নাজিনের অস্তিত্ব স্বীকার ঈমান বিল গাইব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভূক্তআল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনের প্রায় পঞ্চাশ বার জিনের আলোচনা করেছেনজিনজাতির সৃষ্টি, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের পূর্বে তাদের সৃষ্টি করা, ইবলীস জিনের অন্তর্ভূক্ত, সূরা আর রাহমানে জিন ও মানুষকে এক সাথে সম্বোধন, নবী সুলাইমান আলাহিসসালাম  এর আমলে জিনদের কাজ-কর্ম করা, তাদের মধ্যে রাজমিস্ত্রী ও ডুবুরী থাকার কথা, তাদের রোজ হাশরে বিচার শাস্তি ও পুরস্কারের সম্মুখীন হওয়া ইত্যাদি বহু তথ্য আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেছেনতাদের সম্পর্কে বলতে যেয়ে সূরা আল-জিন নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেনতাই কোন মুসলমান জিনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করার মত কাজ করতে পারে নাতেমনি জিনকে রূপক অর্থে ব্যবহার করার কথাও ভাবতে পারে নাআহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা এটাইবিভ্রান্ত ও বিলুপ্ত মুতাযিলা ও জাহমিয়্যা সমপ্রদায় জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না
জিন কি মানুষকে আছর করে?
এর উত্তর হল, অবশ্যই জিন মানুষকে আছর করতে পারেস্পর্শ দ্বারা পাগল করতে পারেমানুষের উপর ভর করতে পারেতাকে নিয়ন্ত্র করতে পারেতার জীবনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত করতে পারে
এটা বিশ্বাস করতে হয়তবে এ বিষয়টি কেহ অবিশ্বাস করলে তাকে কাফের বলা যাবে নাসে ভুল করেছে, এটা বলা হবে
জিন যে মানুষকে আছর করে তার কিছু প্রমাণ:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় দাড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয় (সূরা আল বাকারা : ২৭৫)
এ আয়াত দ্বারা যে সকল বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়:
এক. যারা সূদ খায় তাদের শাস্তির ধরণ সম্পর্কে ধারণা
দুই. শয়তান বা জিন মানুষকে স্পর্শ দ্বারা পাগলের মত করতে পারেতিন. মানুষের উপর শয়তান বা জিনের স্পর্শ একটি সত্য বিষয়এটা অস্বীকার করার উপায় নেই
চার. জিন-শয়তানের এ স্পর্শ দ্বারা মানুষ যেমন আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি শারীরিক দিক দিয়েও অস্বাভাবিক হয়ে যায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী (সূরা যুখরুফ : ৩৬)
এ আয়াত দ্বারা যা স্পষ্ট হল : মহান রাহমান রহীম আল্লাহ তাআলার জিকির থেকে বিরত থাকা জিন শয়তানের স্পর্শ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ
আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে (সূরা সাদ : ৪১)
এ আয়াত দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে বুঝলাম:
এক. শয়তান নবী আইউব আলাহিস সালামকে স্পর্শ করে শাররিক রোগ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল
দুই. তিনি শয়তানের স্পর্শ থেকে বাচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছেই প্রার্থনা করেছিলেন
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ
নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করেতখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায় (সূরা আল আরাফ : ২০১)
এ আয়াত থেকে যা বুঝে আসে তা হল:
এক. যারা মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু তাদেরকেও জিন বা শয়তান স্পর্শ করতে পারেতারা মুত্তাকী হয়েও জিন বা শয়তানের আছরে নিপতিত হতে পারে
দুই. যারা মুত্তাকী তাদের শয়তান বা জিন স্পর্শ করলে তারা আল্লাহ-কেই স্মরণ করেঅন্য কোন কিছুর দ্বারস্থ হয় না
তিন. মুত্তাকীগণ জিন বা শয়তান দ্বারা স্পর্শ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে তাদের সত্যিকার দৃষ্টি খুলে যায়
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাওনিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল আরাফ : ২০০)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল:
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও জিন-শয়তান আছর করতে পারে
দুই. জিন আছর করলে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
তিন. সূরা আল ফালাক ও সূরা আন-নাছ হল জিন শয়তানের আছর থেকে আশ্রয় প্রার্থনার অতি মুল্যবান বাক্যএ আয়াতের তাফসীর দ্বারা এটা প্রমাণিত
হাদীসে এসেছে -
عن عائشة -رضي الله عنها- أنها قالت: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: إن الشيطان يجري من ابن آدم مجرى الدم.  رواه البخاريُّ ومسلم.
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, অবশ্যই শয়তান মানুষের রক্তের শিরা উপশিরায় চলতে সক্ষম (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  একদিন বললেন,
إن عفريتا من الجن تفلت علي البارحة ليقطع علي الصلاة فأمكنني الله منه
গত রাতে একটি শক্তিশালী জিন আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিলতার উদ্দেশ্য ছিল আমার নামাজ নষ্ট করাআল্লাহ তার বিরুদ্ধে আমাকে শক্তি দিলেন (বর্ণনায় : বুখারী, সালাত অধ্যায়)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত নাসায়ীর বর্ণনায় আরো এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, আমি তাকে ধরে ফেললামআছার দিলাম ও গলা চেপে ধরলামএমনকি তার মুখের আদ্রতা আমার হাতে অনুভব করলাম
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :
এক. জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও আছর করতে চেয়েছিল
দুই. জিনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ নষ্ট করার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল
তিন. ইফরীত শব্দের বাংলা অর্থ হল ভূতজিনদের মধ্যে যারা দুষ্ট ও মাস্তান প্রকৃতির তাদের ইফরীত বলা হয়
চার. জিন দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কোন ভয় পাননিতিনি তার সাথে লড়াই করে পরাস্ত করেছেন
পাঁচ. জিনদের শরীর বা কাঠামো আছে যদিও তা সাধারণত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না

জিন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য
জিন আরবী শব্দবাংলাতে জিন শব্দটি ব্যবহৃত হয়কিন্তু ভূত বাংলা শব্দএর আরবী হল ইফরীত, বহুবচনে আফারীতআল কুরআনে সূরা আন-নামলের ৩৯ নং আয়াতে ইফরীত কথাটি এসেছে এভাবে :
قَالَ عِفْريتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آَتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ
এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেবআমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত
এ আয়াতে ইফরীতুম মিনাল জিন  অর্থ্যাৎ জিনদের মধ্যে থেকে এক ইফরীত বা ভূত .. কথাটি এসেছেএমনিভাবে উপরে বর্ণিত হাদীসেও ইফরীতুম মিনাল জিন কথাটি এসেছেতাফসীরবিদগণ বলেছেন, জিনদের মধ্যে যারা অবাধ্য, বেয়ারা, মাস্তান, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে তাদের ইফরীত বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফী গারিবিল কুরআন)
ইফরীত শব্দের অর্থ বাংলাতে ভূত
অতএব দেখা গেল ইফরীত বা ভূত, জিন ছাড়া আর কিছু নয়সব ভূতই জিন তবে সব জিন কিন্তু ভূত নয়

মানসিক রোগী আর জিনে ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য
অনেক সময় আমরা এ সমস্যায় পড়ে যাই। ঠিক করতে পারি না রোগটা কি মানসিক না-কি পাগল, না কি জনিরে আছর থেকে রোগ দেখা দিয়েছে। অনেক সময় তাই আমরা মানসিক-রোগীকে জিনে-ধরা রোগী বলে থাকিতেমনি জিনে-ধরা রোগীকে মানসিক রোগী বলে চালাতে চেষ্টা করিবিশেষ করে ডাক্তার ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কোনভাবেই জিনের আছরকে স্বীকার করতে চান নাতারা এ জাতীয় সকল রোগীকে মানসিক রোগী বলে সনাক্ত করে থাকেন
পাগলামী-কে  আরবীতে বলা হয় জুনুনআর পাগল-কে বলা হয় মাজনূনআরবীতে এ জুনুন ও মাজনূন শব্দ দুটো কিন্তু জিন শব্দ থেকেই এসেছে
যেমন আল কুরআনে এসেছে :
إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ بِهِ جِنَّةٌ فَتَرَبَّصُوا بِهِ حَتَّى حِينٍ
সে কেবল এমন এক লোক, যার মধ্যে পাগলামী রয়েছেঅতএব তোমরা তার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর
এ কথাটি নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের লোকেরা তার সম্পর্কে বলেছিলএ আয়াতে জিন্নাতুন শব্দের অর্থ হল পাগলামী
কাজেই কাউকে পাগলামীর মত অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখলে সেটা যেমন জিনের আছরের কারণে হতে পারে, আবার তা মানসিক রোগের কারণেও হতে পারেতবে এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিষয় নির্ধারণ করেছেন, যার মাধ্যমে মানসিক রোগী আর জিনে-ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য করা যায়
এগুলো হল:
এক. জিনে-ধরা রোগী কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে যায়মানসিক রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে না
দুই. কখনো কখনো জিনে-ধরা রোগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয়দাতে খিল লেগে যায়মানসিক রোগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয় না
তিন. জিনে ধরা রোগী প্রায়ই সপ্নে সাপ, কুকুর, বিচ্ছু, বানর, শিয়াল, ইঁদুর ইত্যাদি দেখে থাকেকখনো কখনো সপ্নে দেখে সে অনেক উচু স্থান থেকে পড়ে যাচ্ছে
চার. জিনে ধরা রোগীর সর্বদা ভীতু ভাব থাকেসর্বদা তার ভয় লাগেমানসিক রোগীর তেমন ভয় থাকে না
পাঁচ. জিনে ধরা রোগী নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ইত্যাদি পছন্দ করে নাবরং এগুলো তার অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়
ছয়. জিনে ধরা রোগী কখনো কখনো ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলে
সাত. জিনে ধরা রোগী অধিকাংশ সময় স্বাভাবিক থাকেমাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করে
আট. জিনে-ধরা রোগী থেকে অনেক সময় আশ্চর্যজনক বিষয় প্রকাশ হয়ে থাকেযেমন অল্প সময়ে সে বহু দূরে চলে যায়গাছে উঠে সরু ডালে বসে থাকে ইত্যাদি
নয়. জিনে ধরা রোগীর কাছে স্বামী, ঘর-সংসার, স্ত্রী-সন্তানদের ভাল লাগে না
দশ. জিনে ধরা রোগীর উপর যখন জিন চড়াও হয় তখন ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তুললে ছবি ধোঁয়ার মত অস্পষ্ট হয়স্পষ্ট হয় নাদেখা গেছে আশে পাশের সকলের ছবি স্পষ্টভাবে উঠেছে কিন্তু রোগীর ছবিটি ধোয়াচ্ছন্নএটা কারো কারো নিজস্ব অভিজ্ঞতামনে রাখতে হবে অভিজ্ঞতা সর্বদা এক রকম ফলাফল নাও দিতে পারে
কিন্তু বড় সমস্যা হবে তখন, যখন রোগীটি নিজেকে জিনে ধরা বলে অভিনয় করে কিন্তু তাকে জিনেও আছর করেনি আর সে মানসিক রোগীও নয়সে তার নিজস্ব একটি লক্ষ্য পূরণের জন্য জিনে ধরার অভিনয় করছে
এ অবস্থায় অভিভাবকের করণীয় হল, তারা তাকে তার দাবী পুরণের আশ্বাস দেবেতাহলে তার জিন ছেড়ে যাবেপরে তার দাবীটি যৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে আর অযৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে নাএরপর যদি সে আবার জিনে ধরার অভিনয় করে তাহলে তাকে জিনে ধরা রোগী বলে আর বিশ্বাস করার দরকার নেইঅনেক সময় শারিরিক শাস্তির ভয় দেখালে এ ধরনের বাতিল জিন চলে যায়

কি কারণে জিন চড়াও হয়
কিছু বিষয় রয়েছে যার উপস্থিতির কারণে মানুষকে জিনে আছর করে
এক. প্রেমকোন পুরুষ জিন কোন নারীর প্রেমে পড়ে যায়, অথবা কোন নারী জিন যদি কোন পুরুষের প্রেমে পড়ে তাহলে জিন তার ঐ প্রিয় মানুষটির উপর আছর করে
দুই. কোন মানুষ যদি কোন জিনের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে বা কষ্ট দেয় তাহলে অত্যাচারিত জিনটি সেই মানুষের উপর চড়াও হয়যেমন জিনের গায়ে আঘাত করলে, তার গায়ে গরম পানি নিক্ষেপ করলে, কিংবা তার খাদ্য-খাবার নষ্ট করে দিলে জিন সেই মানুষটির উপর চড়াও হয়
তিন. জিন খামখা জুলুম-অত্যাচার করার জন্য মানুষের উপর চড়াও হয়তবে এটি পাঁচটি কারণে হতে পারে : (ক) অতিরিক্ত রাগ (খ) অতিরিক্ত ভয় (গ) যৌন চাহিদা লোপ পাওয়া (ঘ) মাত্রাতিরিক্ত উদাসীনতা। (ঙ) নোংড়া ও অপবিত্র থাকা
কারো মধ্যে এ স্বভাবগুলো থাকলে জিন তাকে আছর করে অত্যাচার করার সুযোগ পেয়ে যায়

জিনের আছরের প্রকারভেদ
মানুষের উপর জিন চড়াও হওয়ার ধরনটি চার প্রকারের হতে পারে
এক. জিন মানুষের পুরো শরীরে প্রভাব বিস্তার করে কিছু সময়ের জন্য
দুই. আংশিকভাবে শরীরের এক বা একাধিক অংশে সে প্রভাব বিস্তার করে কিছু সময়ের জন্যযেমন হাতে অথবা পায়ে কিংবা মুখে
তিন. স্থায়ীভাবে জিন মানুষের শরীরে চড়াও হতে পারেএর মেয়াদ হতে পারে অনেক দীর্ঘ
চার. মানুষের মনের উপর কিছু সময়ের জন্য প্রভাব বিস্তার করেমানুষ যখন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা শুরু করে তখন চলে যায়

জিনের আছর থেকে বাঁচতে হলে যা করতে হবে
এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে ও ইসলামী শরিয়তের অনুসরণ করতে হবে
 কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী (সূরা যুখরুফ : ৩৬)
হাদীসে এসেছে -
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد ، يضرب كل عقدة مكانها : عليك ليل طويل فارقد ، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة ، فإن توضأ انحلت عقدة ، فإن صلى انحلت عقده كلها ، فأصبح نشيطا طيب النفس ، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان .  رواه البخاري ومسلم واللفظ للبخاري
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে বসে তিনটি গিরা লাগায়প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় একটি কথা বলে: তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও যখন সে নিদ্রা থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে তখন একটি গিরা খুলে যায়এরপর যখন সে অজু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায়এরপর যখন নামাজ পড়ে তখন শেষ গিরাটি খুলে যায়ফলে সে সারাদিন কর্মতৎপর ও সুন্দর মন নিয়ে দিন কাটায়আর যদি এমন না করে, তাহলে সারাদিন তার কাটে খারাপ মন ও অলসভাব নিয়ে(বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল:
(১) ঠিকমত অজু করলে, নামাজ আদায় করলে শয়তানের চড়াও থেকে মুক্ত থাকা যায়
(২) খারাপ মন নিয়ে থাকা ও অলসতা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল
(৩) রীতিমত নামাজ আদায় করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকেকর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়অলসতা দূর হয়ে যায়
(৪) ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে অজু গোসল করার আগেই আল্লাহর জিকির করা উচিতঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার নির্দিষ্ট দুআ আছেএটি পাঠ করা সুন্নতএতে শয়তানের কুপ্রভাব দূর হয়ে যায়

দুই. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দুআ পাঠ করা
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন :
من قال  إذا خرج من بيته بسم الله توكلت على الله ولا حول ولا قوة إلا بالله، يقال له : كفيت ووقيت وهديت و تنحى عنه الشيطان
যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে, বিছমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি অলা হাওলা অলা কুওআতা ইল্লা বিল্লাহি (আল্লাহরই নামে আল্লাহর উপর নির্ভর করে বের হলামআর তার সামর্থ ব্যতীত পাপ থেকে বাচাঁর উপায় নেই এবং তার শক্তি ব্যতীত ভাল কাজ করা যায় না) তখন তাকে বলা হয়, তোমার জন্য এটা যথেষ্ট, তোমাকে সুরক্ষা দেয়া হল এবং তোমাকে পথের দিশা দেয়া হলআর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায় (বর্ণনায়: আবু দাউদ ও তিরমিজী)
তিন. পেশাব পায়খানাতে যাওয়ার সময় দুআ পাঠ করা:
হাদীসে এসেছে-
كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا دخل الخلاء قال : اللهم إني أعوذ بك من الخبث والخبائث
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যখন পেশাব পায়খানা প্রবেশ করতেন, তখন বলতেন আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জিন নর ও জিন নারী থেকে আশ্রয় নিচ্ছি) (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন : এ সকল পেশাব পায়খানার স্থানে জিন শয়তান থাকেঅতএব তোমাদের কেহ যখন এখানে আসে সে যেন বলে, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ (বর্ণনায় : ইবনে হিব্বান)

চার. প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এ দুআটি তিনবার পাঠ করা
أعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আউজু বিকালি মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা)  অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যাবলীর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় নিচ্ছি (বর্ণনায় : মুসলিম, তিরমিজী, আহমাদ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله ! ما لقيت من عقرب لدغتني البارحة . قال " أما لو قلت حين أمسيت : أعوذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق ، لم تضرك " .
এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে এসে বলল, গত রাতে আমাকে একটি বিচ্ছুতে দংশন করেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যখন সন্ধ্যা হবে তখন তুমি বলবে, আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকাতাহলে তোমাকে কোন কিছ ক্ষতি করতে পারত না। (বর্ণনায় : মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৯)
অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- একটি জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আছর করতে চেয়েছিলতার সাথে আরেকটি জিন ছিলজিব্রাইল এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, আপনি এ বাক্যটি বলুন তাহলে ওরা আপনাকে কিছু করতে পারবে না (বর্ণনায় : ইবনে আবি হাতেম)
এমনিভাবে কে যখন কোন স্থানে যায় আর এ দুআটি পাঠ করে তাহলে তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন:
 من نزل منزلا ثم قال : أعوذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق ، لم يضره شيء ، حتى يرتحل من منزله ذلك
যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ কর অতঃপর বল: আউজু বিকালি মাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা (আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যাবলীর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় নিচ্ছি) তখন তাকে কোন কিছু ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ সে ওখানে অবস্থান করবে। (বর্ণনায় : মুসলিম, খাওলা বিনতে হাকীম থেকে)

পাঁচ. প্রতিদিন নিদ্রা গমনকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা
হাদীসে এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه وكلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة رمضان ، فأتاني آت ، فجعل يحثو من الطعام ، فأخذته وقلت : والله لأرفعنك إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ، قال : إني محتاج وعلي عيال ولي حاجة شديدة ، قال : فخليت عنه ، فأصبحت فقال النبي صلى الله عليه وسلم : ( يا أبا هريرة ما فعل أسيرك البارحة ) . قال : قلت : يا رسول الله ، شكا حاجة شديدة ، وعيالا فرحمته فخليت سبيله ، قال : ( أما إنه قد كذبك ، وسيعود ) . فعرفت أنه سيعود ، لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إنه سيعود ) . فرصدته ، فجاء يحثو من الطعام ، فأخذته فقلت : لأرفعنك إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ، قال : دعني فإني محتاج وعلي عيال ، لا أعود ، فرحمته فخليت سبيله ، فأصبحت فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( يا أباهريرة ما فعل أسيرك ) . قلت : يا رسول الله شكا حاجة شديدة وعيالا ، فرحمته فخليت سبيله ، قال : ( أما إنه كذبك ، وسيعود ) . فرصدته الثالثة ، فجاء يحثو من الطعام ، فأخذته فقلت : لأرفعنك إلى رسول الله ، وهذا آخر ثلاث مرات تزعم لا تعود ، ثم تعود ، قال : دعني أعلمك كلمات ينفعك الله بها ، قلت ما هو ؟ قال : إذا أويت إلى فراشك ، فاقرأ آية الكرسي : { الله لا إله إلا هو الحي القيوم } . حتى تختم الآية ، فإنك لن يزال عليك من الله حافظ ، ولا يقربنك شيطان حتى تصبح ، فخليت سبيله فأصبحت ، فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( ما فعل أسيرك البارحة ) . قلت : يا رسول الله ، زعم أنه يعلمني كلمات ينفعني الله بها فخليت سبيله ، قال : ( ما هي ) . قلت : قال لي : إذا أويت إلى فراشك ، فاقرأ آية الكرسي من أولها حتى تختم : { الله لا إله إلا هو الحي القيوم } . وقال لي : لن يزال عليك من الله حافظ ، ولا يقربك شيطان حتى تصبح - وكانوا أحرص شيء على الخير - فقال النبي صلى الله عليه وسلم : ( أما إنه قد صدقك وهو كذوب ، تعلم من تخاطب منذ ثلاث ليال يا أبا هريرة ) . قال : لا ، قال :  ذاك شيطان.
(رواه البخاري في كتاب الوكالة، باب إذا وكل رجلا فترك الوكيل شيئا فأجازه الموكل فهو جائز)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাকে যাকাতের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব দিলেনদেখলাম, কোন এক আগন্তুক এসে খাদ্যের মধ্যে হাত দিয়ে কিছু নিতে যাচ্ছেআমি তাকে ধরে ফেললামআর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে নিয়ে যাবোসে বলল, আমি খূব দরিদ্র মানুষআমার পরিবার আছেআমার অভাব মারাত্নকআবু হুরাইরা বলেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলামসকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতের আসামীর খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার প্রচন্ড অভাবের কথা আমার কাছে বলেছেআমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছেদেখবে সে আবার আসবে
আমি এ কথায় বুঝে নিলাম সে আবার আসবেইকারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে আবার আসবে আমি অপেক্ষায় থাকলামসে পরের রাতে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগলআমি তাকে ধরে ফেললামআর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে নিয়ে যাবোসে বলল, আমাকে ছেড়ে দাওআমি খুব অসহায়আমার পরিবার আছেআমি আর আসবো নাআমি এবারও তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলামসকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে আসলাম, তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার চরম অভাবের কথা আমার কাছে বলেছেতার পরিবার আছেআমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছেদেখো, সে আবার আসবে
তৃতীয় দিন আমি অপেক্ষায় থাকলাম, সে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুঁজতে লাগলআমি তাকে ধরে ফেললামআর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে নিয়ে যাবোতুমি তিন বারের শেষ বার এসেছবলেছ, আসবে নাআবার এসেছসে বলল, আমাকে ছেড়ে দাওআমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেবো যা তোমার খুব উপকারে আসবে আমি বললাম কী সে বাক্যগুলো? সে বলল, যখন তুমি নিদ্রা যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেতাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না আমি তাকে ছেড়ে দিলামসকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কিছু উপকারী বাক্য শিক্ষা দিয়েছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে সে কী শিক্ষা দিয়েছে? আমি বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি নিদ্রা যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেতাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না
আর সাহাবায়ে কেরাম এ সকল শিক্ষণীয় বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে যদিও সে মিথ্যাবাদীহে আবু হুরাইরা! গত তিন রাত যার সাথে কথা বলেছো তুমি কি জানো সে কে?
আবু হুরাইরা বলল, না, আমি জানি নারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, সে হল শয়তান (বর্ণনায় : বুখারী)
এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:
(১) জনগণের সম্পদ পাহাড়া দেয়া ও তা রক্ষা করার জন্য আমানতদার দায়িত্বশীল নিয়োগ দেয়া কর্তব্যআবু হুরাইরা রা. ছিলেন একজন বিশ্বস্ত আমানতদার সাহাবী
(২) আবু হুরাইরা রা. দায়িত্ব পালনে একাগ্রতা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিলেনতিনি রাতেও না ঘুমিয়ে যাকাতের সম্পদ পাহাড়া দিয়েছেন
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর এটি একটি মুজেযা যে, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও আবু হুরাইরার কাছে বর্ণনা শুনেই বুঝতে পেরেছেন শয়তানের আগমনের বিষয়টি
(৪) দরিদ্র অসহায় পরিবারের বোঝা বাহকদের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের দয়া ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দয়াকে স্বীকৃতি দিলেনতিনি আবু হুরাইরা রা. কে বললেন না, তাকে কেন ছেড়ে দিলে? কেন দয়া দেখালে?
(৫) সাহাবায়ে কেরামের কাছে ইলম বা বিদ্যার মূল্য কতখানি ছিল যে, অপরাধী শয়তান যখন তাকে কিছু শিখাতে চাইল তখন তা শিখে নিলেন ও তার মূল্যায়নে তাকে ছেড়েও দিলেন
(৬) খারাপ বা অসৎ  মানুষ ও জিন শয়তান যদি ভাল কোন কিছু শিক্ষা দেয় তা শিখতে কোন দোষ নেইতবে কথা হল তার ষড়যন্ত্র ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবেযেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, তবে সে মিথ্যুকএ বিষয়টিকে শিক্ষার একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা যায়
(৭) জিন শয়তান মানুষের খাদ্য-খাবারে হাত দেয়তা থেকে গ্রহণ করে ও নষ্ট করে
(৮)আয়াতুল কুরসী একটি মস্তবড় সুরক্ষাযারা আমল করতে পারে তাদের উচিত এ আমলটি ত্যাগ না করারাতে নিদ্রার পূর্বে এটি পাঠ করলে পাঠকারী সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকবে ও জিন শয়তান কোন কিছু তার উপর চড়াও হতে পারবে না
(৯) আয়াতুল কুরসী হল সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং এই আয়াত :
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থ: আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারকতাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে নাতাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তাকে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনেআর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়াতাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় নাআর তিনি সুউচ্চ, মহান
ছয়. খাবার সময় বিমিল্লাহ বলা ও ঘরে প্রবেশের সময় দুআ পাঠ করা :
হাদীসে এসেছে
إذا دخل الرجل بيته ، فذكر الله عند دخوله وعند طعامه ، قال الشيطان : لا مبيت لكم ولا عشاء . وإذا دخل فلم يذكر الله عند دخوله ، قال الشيطان : أدركتم المبيت . وإذا لم يذكر الله عند طعامه ، قال : أدركتم المبيت والعشاء. رواه مسلم، رقم الحديث 2018
যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময় ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার খাবার নেই ও রাত্রি যাপনও নেইআর যখন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার রাত যাপন হবেআর যখন খাবার সময় আল্লাহর জিকির করে না, তখন শয়তান বলে, তোমাদের সাথে আমার রাত যাপন ও খাবার দুটোরই ব্যবস্থা হল (বর্ণনায় : মুসলিম হাদীস নং ২০১৮)
ঘরে প্রবেশের সময় নির্দিষ্ট দুআ আছে সেটি পাঠ করবেদুআ মুখস্থ না থাকলে কমপক্ষে বিছমিল্লাহ . . বলে ঘরে প্রবেশ করবেএমনিভাবে খাবার সময় বিছমিল্লাহ  . . বলে খাওয়া শুরু করবে

সাত. হাই তোলার সময় মুখে হাত দেয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন,
إذا تثاءب أحدكم فليمسك على فيه ، فإن الشيطان يدخل
যখন তোমাদের কে হাই তোলে তখন সে যেন তার মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয়কারণ হাই তোলার সময় শয়তান প্রবেশ করে (বর্ণনায় : মুসলিম ও আবু দাউদ)

আট. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা :
খারাপ জিন শয়তান অপবিত্র ও নাপাক স্থানে বিচরণ করে থাকেজিনের আছর থেকে বাঁচতে সর্বদা অপবিত্র ময়লাযুক্ত স্থান থেকে দূরে থাকতে হবেবাচ্চাদের ময়লা আবর্জনা ও নোংড়া অবস্থা থেকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
যেমন :
في حديث زيد بن أرقم ان رسول الله صلي الله علية وسلم قال : إن هذه الحشوش محتضرة فاذا اتي أحدكم الخلاء فليقل : اللهم إني أعوذ بك من الخبث والخبائث " رواه أبو داود
যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সকল প্রস্রা পায়খানার নোংড়া স্থানগুলোতে শয়তানরা উপস্থিত থাকে যখন তোমাদের কেহ এখানে আসবে তখন যেন সে বলে, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ (হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জিন নর ও জিন নারী থেকে আশ্রয় নিচ্ছি) বর্ণনায় : আবু দাউদ
অতএব আমরা এ হাদীস থেকে
বুঝলাম জিন, ভূত, শয়তান নোংড়া স্থানে অবস্থান করেএ সকল নোংড়া স্থান থেকে সকলের দূরে থাকা উচিত
قال شيخ الإسلام ابن تيميه : وغالب ما يوجد الجن في الخواب والفوات في مواضع النجاسات كالحمامات والحشوش والمزايل والمقامين  والمقابر
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, সাধারণত জিনেরা ময়লা আবর্জনা, মল-মুত্র ত্যাগের স্থান ডাষ্টবিন ও কবর স্থানে অবস্থান করে। (মজমুআল ফাতাওয়া)
নয়. ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করা বিশেষ করে সূরা আল বাকারা পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا تجعلوا بيوتكم مقابر. إن الشيطان ينفر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة.     رواه مسلم 780
তোমরা ঘর-কে কবরে পরিণত করো নাযে ঘরে সূরা আল বাকারা তেলাওয়াত করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে দূরে থাকে। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ৭৮০)
এ হাদীস থেকে আমরা ঘরে আল কুরআন তেলাওয়াত করার নির্দেশ জানলামঘরকে কবরে পরিণত করবে না, এর মানে হল ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করবেআর সূরা আল বাকারা ঘরে তেলাওয়াত করলে শয়তান ঘর থেকে পালিয়ে যায়আমরা জানি সূরা আল বাকারাতেই রয়েছে আয়াতুল কুরসী

দশ. কোন গর্তে পেশাব-পায়খানা না করা:
হাদীসে এসেছে -
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى أن يبال في الجحر . قيل لقتادة : ما يكره من البول في الجحر ؟ قال : كان يقال : إنها مساكن الجن.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেনকাতাদাহ রা. কে জিজ্ঞস করা হল এ নিষেধের কারণ কি? তিনি বললেন, বলা হয়ে থাকে গর্ত হল জিনদের থাকার জায়গা (বর্ণনায় : আবু দাউদ)

এগার. ঘরে কোন সাপ দেখলে তা মারতে তাড়াহুড়ো না করা :
যদি ঘরে কোন সাপ দেখা যায় তবে সাথে সাথে তাকে না মেরে সতর্কবাণী উচ্চারণ করাতাকে ঘর ছেড়ে যেতে বলাতারপর যদি না যায় তাহলে মেরে ফেলা
হাদীসে এসেছে -
عن أبي السائب مولى هشام بن زهرة ، أنه قال : دخلت على أبي سعيد الخدري ، فوجدته يصلي ، فجلست أنتظره حتى قضى صلاته ، فسمعت تحريكا تحت سرير في بيته ، فإذا حية ، فقمت لأقتلها ، فأشار أبو سعيد أن اجلس ، فلما انصرف أشار إلى بيت في الدار ، فقال : أترى هذا البيت ؟ فقلت : نعم ، قال : إنه قد كان فيه فتى حديث عهد بعرس ، فخرج مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الخندق ، فبينا هو به إذ أتاه الفتى يستأذنه ، فقال : يا رسول الله ! ائذن لي أحدث بأهلي عهدا ، فأذن له رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وقال : خذ عليك سلاحك ، فإني أخشى عليك بني قريظة ، فانطلق الفتى إلى أهله ، فوجد امرأته قائمة بين البابين ، فأهوى إليها بالرمح ليطعنها ، وأدركته غيرة ، فقالت : لا تعجل حتى تدخل وتنظر ما في بيتك ، فدخل فإذا هو بحية منطوية على فراشه ، فركز فيها رمحه ، ثم خرج بها فنصبه في الدار ، فاضطربت الحية في رأس الرمح ، وخر الفتى ميتا ، فما يدري أيهما كان أسرع موتا ، الفتى أم الحية ؟ فذكر ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : إن بالمدينة جنا قد أسلموا ، فإذا رأيتم منهم شيئا فآذنوه ثلاثة أيام ، فإن بدا لكم بعد ذلك فاقتلوه ، فإنما هو شيطان. رواه مسلم في كتاب قتل الحيات وغيرها.
হিশাম ইবনে যাহরার মুক্ত দাস আবু সায়েব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়ীদ খুদরি রা. এর সাথে দেখা করার জন্য গেলামতাকে নামাজ পড়া অবস্থায় পেলামআমি তার নামাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকলামএমন সময় তার ঘরের খাটের নীচে কিছু একটা নড়াচড়া করার শব্দ পেলামচেয়ে দেখি একটি সাপআমি সেটাকে মেরে ফেলতে উঠে দাঁড়ালামআবু সায়ীদ রা. আমাকে বসতে ইশারা দিলেনযখন নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে বাড়ীর একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললেন, তুমি কি এ ঘরটি দেখছো? আমি বললাম হ্যাঁ, দেখছিতিনি বললেন, এ ঘরে বসবাস করত একজন যুবকসে নববিবাহিত ছিলএকদিন সে খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে যোগ দিলযেহেতু সে নব বিবাহিত যুবক, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে অনুমতি চেয়ে বলল, হে রাসূল! আমি নববিবাহিতআমাকে আমার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি দিনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাকে অনুমতি দিলেন, আর বললেন, সাথে অস্ত্র নিয়ে যেওআমি তোমার উপর বনু কুরাইযার হামলার আশঙ্কা করছিযুবকটি তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলঘরে পৌছে দেখল, তার স্ত্রী ঘরের বাহিরে দরজার দু পাটের মাঝে দাঁড়ানোএ অবস্থা দেখে তার আত্নসম্মান বোধে আঘাত লাগলসে বর্শা দিয়ে তাকে আঘাত করতে উদ্যত হলস্ত্রী বলল, তাড়াহুড়ো করো না।  আগে ঘরে প্রবেশ করে দেখ তোমার ঘরের মধ্যে কি? সে ঘরে ঢুকে দেখল, তার বিছানায় একটি সাপ গোল হয়ে শুয়ে আছেযুবকটি বর্শা দিয়ে সাপের গায়ে আঘাত করলএরপর এটাকে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসলসাপটি বর্শার মাথায় ছটফট করছিলোআর যুবকটি তখন মরে পড়ে গেলকেহ জানে না, কে আগে মরেছে, যুবকটি না সাপটি?  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করা হলতিনি বললেন, মদীনাতে কিছু জিন আছে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেযদি তোমাদের কেহ তাদের কাউকে দেখে তাহলে তাকে তিন দিনের সময় দেবেতিন দিনের পরও যদি তাকে দেখা যায় তাহলে তাকে হত্যা করবেকারণ, সে শয়তান (বর্ণনায় : মুসলিম, সাপ হত্যা অধ্যায়।)
এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:
১- সাহাবায়ে কেরাম অন্যকে ইসলামী বিধি-বিধান ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মতের প্রতি কত দয়াশীল ছিলেন যে, যুদ্ধকালীন সময়ে কে স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তা তিনি সাথে সাথে দিয়ে দিতেনকখনো দেখা গেছে তিনি তার সাহাবীদের নিজের পক্ষ থেকেই জিজ্ঞেস করতেন, কত দিন হল তুমি বিবাহ করেছ? তোমার বাড়ীতে কে আছে? তোমাকে ছুটি দিলাম তুমি বাড়ীতে স্ত্রীর কাছে যাও
৩- ঘরে কোন সাপ দেখলে সাথে সাথে হত্যা করতে নেইহতে পারে সে জিনতবে যদি সাপ দেখে বা এর আচার-আচরণ, আলামত দেখে বুঝে আসে এটা জিন নয়, সাপতখন হত্যা করা দোষণীয় নয়আলোচ্য হাদীসে দেখুন, সাপটি বিছানার উপর শুয়ে ছিলযদি সে সাপ হয়, তাহলে বিছানার উপর তার কী প্রয়োজন? সে ইঁদুর বা পোকা-মাকর খুঁজবে
৪- ঘরে এ রকম সন্দেহ জনক সাপ দেখলে তাকে উচ্চস্বরে ঘর ছেড়ে যেতে বলবেএভাবে তিন দিন বলার পরও সে না গেলে তাকে হত্যা করে ফেলবে
৫- বনে জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, রাস্তায় কোন সাপ দেখলে জিন মনে করার কোন কারণ নেইতাকে মেরে ফেলতে হবেশুধু ঘরের সাপকে জিন বলে সন্দেহ করা যায়একটি সহীহ হাদীসে এটি স্পষ্ট বলা আছে
৬- সাপটি জিন ছিল বিধায় সে নিজেকে হত্যা করার অপরাধে হত্যাকারীকে আঘাত করে হত্যা করেছেকিন্তু সাপটি কিভাবে যুবকটিকে আঘাত করল তা কেউ দেখেনি
৭- সাপটি মুসলিম জিন ছিল বলে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কথায় ইশারা পাওয়া যায়সে শুরুতেই তাকে আঘাত করেনিবা তার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করেনি
৮- রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ছিলেন রহমাতুললিল আলামীন বা সৃষ্টিকুলের জন্য করুণাতাই তিনি জিনের প্রতিও করুণা-রহমত দেখিয়েছেনএ হাদীসটি ছাড়াও অন্যান্য অনেক হাদীস রয়েছে এ বিষয়ে
৯- কারণ সে শয়তান রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ কথার অর্থ হল, সে জিন নয়, সে প্রাণীদের মধ্যে দুষ্ট ও ক্ষতিকরতাকে হত্যা করো
১০. জিনকে অযথা হত্যা করা অন্যায়
বার. স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় দুআ পাঠ করা :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন,
لو أن أحدهم إذا أراد أن يأتي أهله قال : بسم الله ، اللهم جنبنا الشيطان ، وجنب الشيطان ما رزقتنا ، فإنه إن يقدر بينهما ولد في ذلك لم يضره شيطان أبدا.
তোমাদের কেহ যখন নিজ স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছে করে তখন যদি বলে, বিছমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতান, অজান্নিবিশ শাইতান মা রাযাকতানা (আল্লাহর নামে আমরা মিলিত হচ্ছি, হে আল্লাহ আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখুন) তাহলে এ মিলনে সন্তান জন্ম নিলে সে সন্তানকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
তের. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদেরকে বাহিরে বের হতে না দেয়া:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন,
إذا كان جنح الليل، أو أمسيتم ، فكفوا صبيانكم ، فإن الشياطين تنتشر حينئذ ، فإذا ذهبت ساعة الليل فخلوهم ، وأغلقوا الأبواب واذكروا اسم الله ، فإن الشيطان لا يفتح باباً مغلقاً .
যখন রাত্রি ডানা মেলে অথবা তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও, তখন সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবেবাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখবেকারণ, তখন শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়েযখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যায় তখন তাদের ছেড়ে দিতে পারোআর দরজা বন্ধ করে দেবেআল্লাহর নাম স্মরণ করবেজেনে রাখো, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (বর্ণনায় : বুখারী)
এ হাদীস থেকে আমরা নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো জানতে পারলাম :
১- সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার নির্দেশ
২- সন্ধ্যার আগে বাচ্চাদের ঘরে আসার জন্য বলতে হবেতখন তাদের ঘর থেকে বের হতে বারণ করবে
৩- সন্ধ্যার কিছু পরে এ আশঙ্কা থাকে নাতখন বাচ্চাদের বের হতে বারণ নেই
৪- সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ
৫- আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, জিন বা শয়তান ঘরের বন্ধ দরজা খুলতে পারে না
৬- দরজা খোলা ও বন্ধের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে
চৌদ্দ. জিনদের কাছে আশ্রয় চাওয়া বা তাদের সাহায্য  না নেয়া:
মানুষ যদি জিনদের কাছে কোন কিছু চায় বা তাদের সাহায্য গ্রহণ করে তাহলে তাদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়তারা মানুষের উপর চড়াও হতে উৎসাহ পায়যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْإِنْسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল (সূরা আল জিন : ৬)
অনেক ওঝা ফকীর-কে দেখা যায় তারা তাবীজ-তদবীরের ক্ষেত্রে জিনের সাহায্য নেয়এটা অন্যায়
জিনের আছরের চিকিৎসা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নিজে জিনের আছর করা রোগীর চিকিৎসা করেছেনহাদীসে এসেছে -
عن يعلى ابن مرة  قال: رأيت من النبي صلى الله عليه وسلم عجبا خرجت معه في سفر فنزلنا منزلا فأتته امرأة بصبي لها به لمم ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أخرج عدو الله أنا رسول الله ، قال : فبرأ فلما رجعنا جاءت أم الغلام بكبشين وشيء من أقط وسمن ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : يا يعلى ! خذ أحد الكبشين ، ورد عليها الآخر ، وخذ السمن والأقط ، قال : ففعلت

ইয়ালা ইবনে মুররা বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক বার আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে এক সফরে গেলাম তখন আমরা এক স্থানে অবস্থান করলাম তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখলামএক মহিলা নিজের একটি বাচ্চা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলবাচ্চাটি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলোরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, হে আল্লাহর দুশমন বের হয়ে যা! আমি আল্লাহর রাসূল তিনি বলেন, এ কথা বলার পর বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে গেল।  যখন আমরা সে স্থান থেকে ফিরে আসছিলাম, তখন বাচ্চাটির মা দুটো ভেড়া, কিছু ঘি ও ছানা নিয়ে আসলরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, হে ইয়ালা! ভেড়া দুটোর মধ্যে একটি রেখে দাওঅন্যটি মহিলাটিকে ফেরত দাওআর ঘি ও ছানা রেখে দাও ইয়ালা বলেন, আমি তাই করলাম (বর্ণনায় : বুখারী, দালায়েলুন নবুওয়াহ)
হাদীসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম :
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাটিকে জিন মুক্ত করেছেনআমি আল্লাহর রাসূল এ কথা শুনেই জিন চলে গেছে
(২) বাচ্চাটির মা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হাদীয়া দিলেনকেহ উপকার করলে তাকে হাদীয়া দেয়া যায়এমনিভাবে জিন মুক্ত করার তদবীর করলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া যায়
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেনহতে পারে মহিলাটি নিজ সামর্থের চেয়ে বেশী দিয়েছেহয়ত এ কারণে তাদের কষ্ট হবে, এ জন্য রাহমাতুললিল আলামীন হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেন

জিনের রোগীর কাছে কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত তেলাওয়াত করা :
আল কুরআন পুরোটাই শিফা বা আরোগ্য লাভের মাধ্যমআল কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন-কে শিফা বলেছেনআল কুরআন শারিরিক ব্যধির চিকিৎসা নয়, বরং আধ্যাত্নিক ব্যধির চিকিৎসা এ ধরনের খন্ডিত ব্যাখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়কারণ, আল-কুরআনকে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শিফা বলেছেনতিনি বা তাঁর রাসূল কখনো বলেননি যে, শিফা বা আরোগ্য বলতে আধ্যাত্নিক রোগের শিফা বুঝানো হয়েছেতাই যারা বলবেন, আল কুরআনকে শারিরিক ব্যধির জন্য শিফা বলা যাবে না তারা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননিযাই হোক জিনে ধরা রোগীর কাছে আল কুরআনের বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় আর রোগী ভাল হয়ে যায়এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. কর্তৃক আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে তেত্রিশটি আয়াতের কথা বর্ণিত আছেযদিও হাদীসের সনদটি সহীহ নয় কিন্তু আল কুরআনের আয়াতের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেইআমি নিজেও একাধিকবার দেখেছি সুন্নাতের পাবন্দ একজন আলেমের কাছে জিনে ধরা রোগী নিয়ে আসা হলতিনি তেত্রিশটি আয়াত পাঠ করে তাকে শুনালে জিন চলে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়এ রকম দৃশ্য বহুবার প্রত্যক্ষ করেছিকুরআনের বরকত ও প্রভাব কত যে ব্যাপক তা কি আমরা সকলে অনুধাবন করতে পারি?
আর সে তেত্রিশটি আয়াত হল : সূরা ফাতেহা পর, সূরা আল বাকারার ১ থেকে ৪ আয়াত, সূরা আল বাকারার ২৫৫ থেকে ২৫৭ আয়াত, যার মধ্যে আয়াতুল কুরসী রয়েছেসূরা আল বাকারার ২৮৪ থেকে ২৮৬ আয়াতসূরা আল আরাফের ৫৪ থেকে ৫৬ আয়াতসূরা আল ইসরার (বনী ইসরাইল) ১১০ থেকে ১১১ আয়াতসূরা আস সাফফাতের ১ আয়াত থেকে ১১ নং আয়াতসূরা আর রাহমানের ৩৩ আয়াত থেকে ৩৫ নং আয়াতসূরা জিন এর ১ নং আয়াত থেকে ৪ নং আয়াতএভাবে তেত্রিশটি আয়াত হয়
কোন কোন বর্ণনায় এর সাথে সূরা হাশরের ২১ নং আয়াত থেকে ২৪ নং আয়াত পাঠ করার কথা এসেছেআবার সূরা ইখলাছ, সূরা কাফেরূন, সূরা আল ফালাক ও সূরা আন নাছ পাঠ করার কথাও এসেছে
তবে মূল কথা হল তেত্রিশ আয়াত পাঠ করতে হবে এমন কোন বিধান নেইআগেই বলেছি এ সংক্রান্ত হাদীসটির সনদ সহীহ বলে প্রমাণিত নয়বরং এ আয়াতগুলো ও এর সাথে অন্যান্য যে সকল আয়াতের কথা আলোচনা হয়েছে এগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে খূবই অর্থবহ, তৎপর্যপূর্ণ, বরকতময়আর অভিজ্ঞতায় এর কার্যকারিতা প্রমাণিত
যেমন সূরা ফাতেহার কথা সকলে কাছে সুবিদিত যে তার এক নাম হল সূরা শিফাআয়াতুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কে সকলের জানাসূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহের ফজিলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছেসূরা সাফফাত পাঠে জিন শয়তান ভয় পেয়ে যায় বলে হাদীসে এসেছেসূরা ফালাক ও সূরা নাছ সকল প্রকার যাদু টোনা ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ইত্যাদি
তাই জিনে ধরা রোগীর কাছে এ সকল আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় ও রোগী সুস্থ হয় বলে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিতএবং এটি মহান আল্লাহর কালামের একটি বরকত ও শিফা
জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসার জন্য তাবীজ-কবচ ব্যবহার, লোহা পড়া, ঘর বন্ধক দেয়া ইত্যাদি তদবীর করা ঠিক নয়তবে কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত দুআ-জিকির দিয়ে ঝাড়-ফুঁক, তেল পড়া, পানি পড়া ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি আছে
জিনের অধিকার রক্ষায় আমাদের করণীয়
হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  জিনদের ব্যাপারে তোমাদের ভাই শব্দ ব্যবহার করেছেনঅর্থাৎ মুসলিম জিনেরা হল আমাদের ভাইতাদের অধিকার রক্ষায় যত্নবান হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেনযেমন হাদীসে এসেছে -
قال علقمة : أنا سألت ابن مسعود . فقلت : هل شهد أحد منكم مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة الجن ؟ قال : لا، ولكنا كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة. ففقدناه، فالتمسناه في الأودية والشعاب . فقلنا : استطير أو اغتيل، قال فبتنا بشر ليلة بات بها قوم . فلما أصبحنا إذا هو جاء من قبل حراء. قال فقلنا : يا رسول الله ! فقدناك فطلبناك فلم نجدك فبتنا بشر ليلة بات بها قوم . فقال " أتاني داعي الجن . فذهبت معه . فقرأت عليهم القرآن " قال فانطلق بنا فأرانا آثارهم وآثار نيرانهم . وسألوه الزاد . فقال " لكم كل عظم ذكر اسم الله عليه يقع في أيديكم ، أوفر ما يكون لحما . وكل بعرة علف لدوابكم " . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم " فلا تستنجوا بهما فإنهما طعام إخوانكم". رواه مسلم
আলকামা বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, জিনের রাতে আপনাদের মধ্যে কি কেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলেন? তিনি বললেন, নাকিন্তু ঘটনা হল, আমরা এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে ছিলামতাকে আমরা পেলাম নাআমরা তাকে বিভিন্ন ঘাটি ও পাহাড়ে খোঁজ করতে থাকলামআমরা বলতে লাগলাম তিনি উধাও হয়ে গেছেন অথবা কে তাকে অপহরণ করেছেআসলে সে রাতটি আমরা অত্যন্ত খারাপভাবে কাটিয়েছিযখন সকাল হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা পর্বতের দিক দিয়ে আমাদের কাছে হাজির হলেনআমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে হারিয়েছিলামঅনেক খোঁজা-খোঁজি করেছিআপনাকে না পেয়ে আমরা খুব দু:চিন্তায় (খুব খারাপ) রাত কাটিয়েছিতিনি বললেন, জিনদের মধ্য থেকে একজন আহবানকারী এসেছিল আমার কাছেআমি তার সাথে গেলামআমি তাদের কুরআন পাঠ করে শুনালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাদের নিয়ে সে স্থানের দিকে চললেনতিনি আমাদের তাদের পদচিহ্নগুলো দেখালেনতাদের আগুনের আলামতগুলোও দেখালেনতারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাদের খাদ্য-খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলতিনি তাদের বললেন, তোমাদের খাবার হল সে সকল জন্তু জানোয়ারে হাড্ডি যা আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ করা হয়েছেএর মধ্যে যা তোমাদের নাগালে আসে তা তোমরা খাবেএটা তোমাদের জন্য গোশ্‌ত বলে গণ্য হবেআর তোমাদের পালিত জানোয়ারের গোবরও তোমাদের খাদ্য
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাদের বললেন, তোমরা এগুলো দিয়ে কখনো ইসতেনজা (শৌচ কর্মে ব্যবহার) করবে নাকেননা এটা তোমাদের ভাইদের (জিনদের) খাদ্য
হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- জিনদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেনহাদীসে বর্ণিত ঘটনার সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াত আমরা উল্লেখ করতে পারি
وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآَنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنْصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَى قَوْمِهِمْ مُنْذِرِينَ . سورة الأحقاف، 29
আর যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলামতারা কুরআন পাঠ শুনছিলযখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোনতারপর যখন পাঠ শেষ হল, তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল (সূরা আল আহকাফ, আয়াত ২৯)
২- সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কত ভালোবাসতেনতাদের মন্তব্য দ্বারাই বুঝা যায় যে, তাকে না পেয়ে সে দিন তারা জীবনের সবচেয়ে খারাপ রাত অতিবাহিত করেছে
৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  সাহাবায়ে কেরাম রা. কে শিক্ষা দিতে বা তথ্য জানাতে কোন ধরনের কার্পণ্য বা শিথিলতা করেননিতাঁর বক্তব্যই তাদের জন্য যথেষ্ঠ ছিলতা সত্বেও তিনি তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেনতাদের আলামতগুলো দেখিয়েছেন
৪- এ হাদীস থেকে জিনদের দুটো খাদ্যের বিষয় জানতে পারলামএকটি হল হাড্ডি অন্যটি হল গোবর
৫- তাদের খাদ্য সংরক্ষণ করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এ দুটো বস্তুকে শৌচকর্মে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেনএটা জিনদের অধিকার রক্ষার একটি বিষয় হিসাবে গণ্য হলো
৬- জিনদেরকে আমাদের ভাই বলে তাদের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছেকাজেই জিন মানেই আমাদের শত্রু নয়তাদের মধ্যে যারা মানুষকে কষ্ট দেয় বা বিভ্রান্ত করে তারাই মানুষের শত্রু ।
কয়লা কি জিনদের খাদ্য?
অনেক ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়লা দিয়ে ইস্তেন্জা (শৌচ কর্ম) করা যাবে নাকারণ কয়লা হল জিনদের খাদ্য
এ প্রসঙ্গে অবশ্য একটি হাদীস এসেছেহাদীসটি হল :
قدم وفد الجن على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا يا محمد انه أمتك أن يستنجوا بعظم أو روثة أو حممة فإن الله تعالى جعل لنا فيها رزقا قال : فنهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذلك.
الراوي: عبدالله بن مسعود المحدث: أبو داود - المصدر: سنن أبي داود - الصفحة أو الرقم: 39
خلاصة الدرجة: سكت عنه [وقد قال في رسالته لأهل مكة كل ما سكت عنه فهو صالح]
জিনদের একটি প্রতিনিধ দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে আসলতারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মত হাড্ডি, গোবর ও কয়লা দ্বারা ইসতেন্‌জা করে থাকেঅথচ আল্লাহ তাআলা এ গুলোকে আমাদের জন্য খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন হাদীসের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাদেরকে এ সকল বস্তু দিয়ে ইসতেন্‌জা করতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনায় : আবু দাউদ)
সনদ সূত্রের দিকে দিয়ে হাদীসের মান হল :
قال الإمام  النووي في شرح هذا الحديث في المجموع شرح المهذب :
رواه أبو داود والدارقطني والبيهقي ولم يضعفه أبو داود ، وضعفه الدارقطني والبيهقي
والحممة بضم الحاء وفتح الميمين مخففتين وهي الفحم ، كذا قاله أصحابنا في كتب الفقه ، وكذا قاله أهل اللغة . وقال الخطابي : الحمم الفحم وما أحرق من الخشب والعظام ونحوهما ، قال : والاستنجاء به منهي عنه لأنه جعل رزقا للجن فلا يجوز إفساده علي .
ইমাম নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল মাজমু শারহুল মুহাজ্জাব গ্রন্থে লিখেন, এ হাদীসটি আবু দাউদ, দারে কুতনী ও বায়হাকী বর্ণনা করেছেনআবু দাউদ হাদীসটিকে যয়ীফ (দুর্বল সুত্র) বলেননিকিন্তু দারে কুতনী ও বায়হাকী হাদীসটি দুর্বল সুত্রের বলে অভিমত দিয়েছেন
হাদীসে বর্ণিত হামামা শব্দের অর্থ হল কয়লাআমাদের সাথীরা ফিকাহ শাস্ত্রে এ রকম লিখেছেনআর অভিধানবিদরাও এ অর্থ করেছেন
ইমাম আল খাত্তাবী রহ. বলেন, আল হামাম শব্দের অর্থ আল ফাহাম বা কয়লাযা সৃষ্টি হয় কাঠ, হাড্ডি ইত্যাদি পোড়ালেএ দিয়ে ইস্তেনজা করতে নিষেধ করা হয়েছেকারণ এটাকে জিনদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছেতাই এটা অপবিত্র করা জায়েজ নয়
জিন যেমন মুসলমান আছে তেমনি আছে কাফেরএ ব্যাপারে জিনদের বক্তব্য আল্লাহ উল্লেখ করেছেন এভাবে :
وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُونَ وَمِنَّا الْقَاسِطُونَ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُولَئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا
আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে মুসলিম এবং আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সীমালংঘনকারীকাজেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারাই সঠিক পথ বেছে নিয়েছে (সূরা আল জিন, আয়াত ১৪)
কাজেই মুসলিম জিনেরা সে সকল অধিকার পাবে যা একজন মুসলিম মানুষ ইসলামের কারণে পেয়ে থাকে
জিনদের কুরআন তেলাওয়াত শোনা ও তার উত্তর প্রদান :
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন :

لقد قرأتها , سورة ( الرحمن ) على الجن ليلة الجن , فكانوا أحسن مردودا منكم، كنت كلما أتيت على قوله ( فبأي آلاء ربكما تكذبان ) , قالوا : لا بشيء من نعمك ربنا نكذب , فلك الحمد  .
قال الألباني في " السلسلة الصحيحة " 5 / 183 : أخرجه الترمذي في " سننه " ( 2 / 234 )

আমি জিনদের সাথে সাক্ষাতের রাতে তাদের সূরা আর রাহমান পাঠ করে শোনালামতারা তেলাওয়াত শুনে তোমাদের চেয়ে উত্তম জওয়াব দিতযখন এ আয়াত পাঠ করতাম সুতরাং তোমাদের রবের কোন্‌ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? তখন তারা এর উত্তরে বলত, হে আমাদের রব! আমরা আপনার কোন নিআমতকে অস্বীকার করি নাসকল প্রশংসা তো আপনারই
হাদীসটি ইমাম তিরমিজী বর্ণনা করেছেনআলবানী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেনদেখুন আস সিলসিলাতুস সহীহা ১৮৩/৫
এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- জিনদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কুরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করেছেন তার মধ্যে সূরা আর রাহমানও ছিল
২- এ জিন সাহাবীরা সূরা আর রাহমান শুনে আল্লাহ তাআলার প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছে তা মানুষ সাহাবীদের চেয়ে সুন্দর উত্তর ছিল বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন
৩- কোন কোন ক্ষেত্রে জিনেরা মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও তারা মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়ক্ষেত্র বিশেষে কেহ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলে সর্বক্ষেত্রে তার শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়াটা জরূরী নয়
৪- আল কুরআন পাঠ করে বা তার পাঠ শুনে সে মোতাবেক উত্তর দেয়া সুন্নাতযেমন আলোচ্য হাদীসে দেখা গেলআল্লাহ তাআলার কোন প্রশ্ন আসলে তার উত্তর সাথে সাথে প্রদান করা, এমনিভাবে যখন জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের কথা আসে তখন তা থেকে আল্লাহর কাছে  আশ্রয় প্রার্থনা করাআর যখন জান্নাত ও জান্নাতীদের কথা আসে তখন জান্নাত কামনা করা ইত্যাদি হল আল্লাহ তাআলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও আল কুরআন তেলাওয়াতের আদব

লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা : আবু শুআইব মুহাম্মদ সিদ্দিক
2009 - 1430

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।