সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: তিন রানের হার একটি স্বপ্নের মৃত্যু

তিন রানের হার একটি স্বপ্নের মৃত্যু



ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে পুরো দেশ। ভারত, শ্রিলংকাকে হারানোর পর পুরো বাংলাদেশ নড়েছড়ে বসেছিল। ভারত, শ্রিলংকাকে হারিয়ে বাঙ্গালীর আত্নবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল ১০০%, যে এবারের এশিয়া কাপ আমাদেরই হবে। অনেকেই বাজেট করে ফেলেছিল পার্টি দেবে। অনেকেই আবার মানত করেছিল সৃষ্টি কর্তাকে খুশি করবে বিশেষ কোন কিছুর মাধ্যমে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার পরও মানুষ মাঠে গিয়ে বা টিভি সেটের সামনে কাটিয়েছিল পুরো সময়।

আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা নেত্রী সহ দেশের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা পর্যন্ত এসেছিলেন শত ব্যস্ততা ফেলে। দেশের জন্য ভালবাসার কমতি থাকলেও কাল ক্রিকেটের জন্য দেখা গেলে তাঁদের অসীম আগ্রহ। লক্ষ কোটি মানুষ এক দৃষ্টিতে দেখছিল আমাদের সূর্য সন্তানদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। পাকিস্তানের পর পর উইকেট পড়াতে মাঠে যেমন বেড়ে যায় দর্শকদের উল্লাস তেমনি টিভি সেটের সামনে চলে হাত তালি আর হাত তালি। যদিও শাহাদতের শেষ ওভার দর্শকদের একটু নিরাশ করেছিল। তারপরও পুরোটা সময় দর্শকরা দারুন উপভোগ করে শাকিব, মাশরাফি, মুশফিকদের ফিল্ডিং।
ফিল্ডিং শেষে যথারীতি শুরু হলো ব্যাটিং পরীক্ষা।  তামিম প্রমাণ করে দিল ক্রিকেটের বড় কর্তা কামাল সাহেবদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর মান রাখল তামিম, সম্মানিত আকরাম চাচার আশাও পূরণ করল। অপরদিকে সাকিবও প্রমাণ করে দিল সেই সেরা অলরাউন্ডার। সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে দাবি করার যোগ্যতা তার আছে। মাশরাফিও দেখিয়ে দিল ইনজুরি তাকে দুর্বল করতে পারেনি। রাজ্জাকই বা কম কিসে?
চলে এল সেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া দৃশ্য-এক বল চার রান। আমাদের মনে পড়ে গেল সেই ICC ট্রপি'র কথা যেটাতে বাংলাদেশ এক বল এক রানের জন্য খেলেছিল। সবাই তখন সৃষ্টি কর্তাকে ডাকছিল খুব বেশি। কেউ কেউ বলছিল- তোমাদের দিয়ে কিছু হবে না। আবার অনেকেই বলছিল-পারবে পারবে, তোমরা পারবে। কারণ ICC ট্রপিতে বাঙ্গালী দেখিয়েছিল এক বল চার রান কোন ব্যাপার নয়। তাই সবাই আনন্দ উল্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেছে। অন্যদিকে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রীও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিখে আনা বক্তব্য বলার জন্য যে- আমরা স্বাধীনতার শত্রু পকিস্তানিদের আরো একবার হারালাম। এগিয়ে গেল বোলার। আমাদের ব্যাটম্যান শাহাদতও প্রস্তুত। বল এগিয়ে গেল শাহাদতের দিকে। অবশেষে নিয়ে নিলো এক রান। কিন্তু বাকি রয়ে গেল তিন রান। এই তিনটা রান বুলেট হয়ে ঢুকল যেন লক্ষ কোটি বাঙ্গালীর বুকে। যে ফলাফল ভাসাতে পারতো পুরো বাঙ্গালীকে আনন্দের বণ্যায়, সে ফলাফল বাঙ্গালীকে ভাসিয়ে দিলে দুই নয়নের অশ্রুতে।


অনেকে বলছে ইস, শাহাদত যদি শেষ ওভারটা নষ্ট না করতো, অনেকেই বলছে জহুরুল আর নাসির যদি আরেকটু খেলতে পারতো ইত্যাদি। যে স্ট্যাডিয়াম একটু আগেও ছিল উল্লাস আর উল্লাসে পরিপূর্ণ, খেলা শেষে সেই স্ট্যাডিয়াম হয়ে গেল গ্যালারী শুণ্য মাঠের মত। শুরু হলো মর্মান্তিক দৃশ্য। সাকিব কাঁদছে, নাসির কাঁদছে, সবার বুক ভেসে যাচ্ছে অশ্রুতে। সাকিব তোমরা হয়তো দর্শকদের বুঝাতে পারছো ৩ টা রান তোমাদের কত কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু আমরা কাকে বুঝাবো? কি দিয়ে মুছবো আমাদের দুই চোখের জল? একটা সোনার হরিণকে ধরতে ধরতেই যে আমরা হারিয়ে ফেললাম, এই অ-প্রাপ্তি কি দিয়ে পূর্ণ করবো আমরা? তোমরা কেঁদো না সাকিব। তোমরা কাঁদলে আমাদের কান্না থামবে না। তোমাদের মত আমরাও অনেক কষ্ট পেয়েছি, দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু তোমাদের উপর আমাদের কোন ক্ষোভ নেই, অভিযোগ নেই, নেই কোন জবাবদিহীতা। আমরা হয়তো বড় প্রাপ্তিটা পায় নি। কিন্তু ছোট প্রাপ্তিতো আমাদের অনেক। বিশ্বসেরা শচীনের ভারতকে হারিয়েছি, হারিয়েছি লংকানদের। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি পাকিস্তানের জন্য ফিফটি কঠিন কিছু হলেও আমাদের জন্য তেমন কঠিন নয়। ম্যাচ সেরা ব্যাক্তিও আমাদের সন্তান। আরো কি লাগে?

১৬ কোটি মানুষের সবাই জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, পারে মাত্র ৩৩০ জন। আর ক্রিকেটের মাঠে মাত্র ১১ জন। জাতীয় সংসদে যখন দেখি জনগণের প্রতিনিধিরা মারামারি করছে, অর্পিত দায়িত্বকে বৃদাঙ্গুল দেখাচ্ছে- সেখানে মাঠে দেখি তোমরা এক জনের দুঃখে অন্যজন কাঁদছো, বাঙ্গালীর সম্মানকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছো। তাহলে তোমাদের ভালবাসবো না কেন? অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাস যেখানে শতাব্দীকাল সেখানে আমাদের মাত্র কয়েক দশক। আমরা জানি তাদের তুলনায় তোমাদের বয়স কম, অভিজ্ঞতা কম, অনেকে বলে পুষ্টি আর শক্তিও কম। তারপরও অল্প সময়ে তোমরা বাঙ্গালীকে অনেক দিয়েছো। আমাদের গণতন্ত্রের উন্নতি না হলেও (সম্ভাবনাও নেই) ক্রিকেটের অনেক অনেক উন্নতি হয়েছে তোমাদের হাত ধরে। সংসদের প্রতিনিধিরা জনগণের সাথে প্রতারণা করার পরও যদি তাদের ভালবাসতে পারে তাহলে তোমরা জনগণকে উপহার দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করার পরও কেন তোমাদের ঘৃণা করবে? আমরা তোমাদের সাথে আছি ভাই, বন্ধু, সন্তান কিংবা অভিবাবক হয়ে সবসময়। তোমরা আরো ভাল করবে ইনশাহআল্লাহ, আমাদের দিতে পারেব নতুন নতুন উপহার যা জাতীয় সংসদের ৩৩০ জন প্রতিনিধি দিতে পারেনি-পারছে না। ৩৩০ জনের কাছে কিছু পাওয়ার আশা না করলেও তোমরা ১১ জণের কাছে আমাদের চাওয়া অনেক। আশাকরি ৩৩০ জনের মত না হয়ে আজকের ১১ জনের মত থাকবে সবসময়। এ দোয়াই করি আমরা। সাবাস বাংলাদেশ, সাবাস বাংলাদেশ টাইগার।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।