সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: অ্যামেশিয়া মহাদেশ!

অ্যামেশিয়া মহাদেশ!



শিরোনাম দেখে অনেকে হয়তো বিষয়টিকে গল্প মনে করতে পারেন। কিন্তু সত্যটা অনেকটাই অস্বাভাবিক! বর্তমানে পৃথিবীতে মোট সাতটি মহাদেশ আছে। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের অবস্থানও আলাদা। তবে দূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসছে, যখন আলাদা কোনো মহাদেশ বলে কিছু থাকবে না। হ্যাঁ, কয়েক কোটি বছরের মধ্যে সুমেরু মহাসাগর (আর্কটিক ওশান) ও ক্যারিবিয়ান সাগর উধাও হয়ে যাবে। পৃথিবীর সাত মহাদেশের কোনোটিই তখন আর পৃথক থাকবে না। একটির সঙ্গে আরেকটি জুড়ে গিয়ে গঠিত হবে নতুন এক মহাদেশ। এশিয়া মহাদেশ যুক্ত হবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সঙ্গে। যার নাম হবে অ্যামেশিয়া। উত্তর মেরুজুড়ে যার অবস্থান হবে।

মহাদেশের এ চলন জীববিদ্যার ওপরও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তঃপ্রজাতির মিলনের ধারা এ কারণে প্রভাবিত হবে। বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী পাঁচ থেকে ২০ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীর বর্তমান মহাদেশগুলো একত্রিত হয়ে যাবে। গঠন করবে একটি একক বৃহৎ মহাদেশ (সুপারকন্টিনেন্ট)। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন অ্যামেশিয়া। বিগত কয়েকশ বছর ধরে পৃথিবীর ধীর গতির চলন পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছেন। আজকের পৃথিবী অনেক চলমান টেকটনিক প্লেটে বিভক্ত। এগুলোর ওপর ছড়িয়ে থাকা পৃথিবীর কঠিন আবরণকে আমরা মহাদেশ নামেই চিনি। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রাচীন পৃথিবী কী এমন ছিল? না, প্রাচীন পৃথিবী এমন ছিল না। তখন পৃথিবীতে ছিল একটি মাত্র সুপারকন্টিনেন্ট। ওই একক বৃহৎ মহাদেশেই জড়ো হয়েছিল সেই আদিম পৃথিবীর প্রায় সব ভূমি। যা ক্রমান্বয়ে এ রকম কয়েকটি বৃহৎ মহাদেশই পৃথিবীতে দেখা দিয়েছিল। ওই রকম একেকটি সুপারকন্টিনেন্ট ১০ কোটি বছর বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত টিকে ছিল বলে গবেষকদের ধারণা। এরপর ভেঙে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়েছিল সেই বিশাল মহাদেশ। তারপর আবার শুরু হয়েছিল নতুন আরেকটি সুপারকন্টিনেন্ট গঠনের চক্র। এক সুপারকন্টিনেন্ট থেকে আরেক সুপারকন্টিনেন্ট গঠনের মধ্যবর্তী বিশাল সময়ে মহাদেশ আকৃতির স্থলভাগ ও তুলনামূলক ছোট স্থলভাগগুলো আজকের দিনের মতোই টেকটনিক প্লেটের ওপর ভর করেই চলমান ছিল। সর্বশেষ সুপারকন্টিনেন্ট গঠিত হয়েছিল ৩০ কোটি বছর আগে। তখন পৃথিবীর সব ভূমি জড়ো হয়েছিল বিষুবরেখা বরাবর। সেই সুপারকন্টিনেন্টের নাম প্যানগায়া। এর অবস্থান ছিল বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকার কাছাকাছি অঞ্চলে। পরবর্তী সুপারকন্টিনেন্ট বা অ্যামেশিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের কাছাকাছি প্যানগায়ার অবস্থানস্থলেই গঠিত হবে। অথবা হতে পারে বর্তমান পৃথিবীর ঠিক উল্টো পাশে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে।

অন্য একটি দল তাদের গবেষণা অনুযায়ী বলছেন, পরবর্তী সুপারকন্টিনেন্ট বা অ্যামেশিয়া গঠিত হবে আর্কটিকে বা উত্তর মেরুতে, প্যানগায়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে। টেকটনিক প্লেটের চলন প্রথমেই সুমেরু মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরকে উধাও করে ফেলবে। আজকের দিনের উত্তর মেরুর কাছাকাছি কোথাও ইউরোপ ও এশিয়ার সঙ্গে তাদের সংঘাত ঘটবে। অস্ট্রেলিয়া তার উত্তরমুখী চলন অব্যাহত রাখবে এবং ভারতের পাশে গিয়ে অবস্থান নেবে। তবে অ্যান্টার্কটিকার অবস্থান কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। মিচেলের আগে ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে অ্যামেশিয়ার সংগঠনস্থল নিয়ে বিভক্তি ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, প্রতিটি সুপারকন্টিনেন্ট বারবার একই স্থানে গঠিত হতো। আগের সুপারকন্টিনেন্টটি যেখানে ভাঙত তার ১৮০ ডিগ্রি কোণে পৃথিবীর উল্টোপাশে গঠিত হতো পরবর্তী সুপারকন্টিনেন্টটি। এঙ্ট্রোভার্সন অনুযায়ী অ্যামেশিয়ার উদ্ভব হওয়ার কথা পৃথিবীর উল্টো পাশে বিষুবরেখায়। আগেও পৃথিবীতে কয়েকটি সুপারকন্টিনেন্ট ছিল। সেগুলোর আকৃতি বা কনফিগারেশনও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। মহাদেশগুলোর অবস্থানচ্যুতি বোঝা পৃথিবীর ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে মৌলিক ভূমিকা পালন করবে, এমনটি মনে করছেন গবেষকরা। সূত্র : ইন্টারনেট

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, মার্চ ২০১২ খ্রিঃ।

1 টি মন্তব্য:

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।