সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড



আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (ইংরেজি: International Mathematical Olympiad সংক্ষেপে IMO) হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় এমন একটি গণিত অলিম্পিয়াড। এটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী পুরাতন প্রতিযোগীতা।
প্রথম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৯ সালে রোমানিয়ায়তখন থেকে এটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে, শুধু ১৯৮০ সাল এর ব্যতিক্রম। প্রায় ৯০ টি দেশ থেকে (সর্বোচ্চ) ছয় সদস্যের একটি করে দল (ও একজন দলপতি, সহ-দলপতি এবং একজন পর্যবেক্ষক) আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে। যদিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী দলকে নয়, প্রতিযোগীদের নম্বর প্রদান করা হয়। প্রতিযোগীদের বয়স অনধিক ২০ বছর হতে হবে এবং অবশ্যই মাধ্যমিকের উপরের স্তরের শিক্ষা থাকা চলবে না। এই সকল নিয়মের মধ্যে পড়লে একজন প্রতিযোগী একাধিকবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

প্রশ্নপত্রে ছয়টি সমস্যা থাকে, প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য ৭ নম্বর দেয়া হয়। তাই পূর্ণমান হচ্ছে ৪২। পরীক্ষাটি হয়ে থাকে দুইদিনব্যাপী; প্রতিযোগীরা একেক দিনে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় পায় তিনটি সমস্যা সমাধানের জন্য। মাধ্যমিক স্তরের গণিত হতে সমস্যাগুলো নির্বাচন করা হয়। এগুলোর জন্য উচ্চতর গণিতের প্রয়োজন হয়না, আর সমাধানগুলো হয় ছোট ও বিচিত্র। তবে, সমাধান বের করার জন্য বুদ্ধিমত্তা ও গণিতের পারদর্শীতার প্রয়োজন।
BwZnvmt প্রথম আইএমও অনুষ্ঠিত হয় রোমানিয়ায় ১৯৫৯ সালে। তারপর থেকে প্রতি বছর এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, কেবল মাঝে ১৯৮০ সাল ছাড়া। ঐ বছর মঙ্গোলিয়ায় আভ্যন্তরীন গন্ডগোলের কারণে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এই প্রতিযোগিতাটি প্রথমদিকে সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্গত ওয়ারশ চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহ নিয়ে চালু হয়, তবে পরবর্তীতে অন্যান্য দেশও এতে অংশগ্রহণ করে থাকে। পূর্ব ইউরোপে শুরু হওয়ার কারণে প্রারম্ভিক পর্যায়ে আইএমও ওই অঞ্চলের দেশগুলোতেই অনুষ্ঠিত হত। ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশ এটি আয়োজন করতে শুরু করে।
প্রথমদিককার আইএমও'র স্বাগতিক শহর নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন উৎসে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এর একটি কারণ হতে পারে দলনেতারা প্রতিযোগীদের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন বলে; আবার প্রতিযোগীতা সম্পন্ন হয়ে যাবার পর প্রতিযোগীরা ওই শহরেই বসে থাকেন না বলে এমনটি হতে পারে। আবার সঠিক দিন-তারিখ নিয়েও ভিন্নতা দেখা যায়, কারণ দলনেতারা ছাত্রদের পূর্বেই চলে আসেন এবং বর্তমানকালের আইএমওগুলোতে আইএমও উপদেষ্টা বোর্ড দলনেতাদেরও পূর্বে এসে পৌঁছান।
কিছু ছাত্র, যেমন ক্রিশ্চিয়ান রেহার আইএমওতে খুবই ভালো ফলাফল করেছেন, তিনি বেশ কয়েকবার স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ নামকরা গণিতবিদ হয়েছেন, যেমন গ্রিগরি মারগুলিস, টেরেন্স টাও প্রমুখ। কয়েকজন প্রতিযোগী পরবর্তীতে ফিল্ডস মেডেল জয় করেন।

দল নির্বাচন প্রক্রিয়াt  আইএমও-তে দল প্রেরণের জন্য প্রত্যেক দেশই একটি নির্বাচন পরীক্ষার আয়োজন করে। সাধারণত, স্থানীয়, বিভাগীয়, জাতীয় প্রতিযোগীতার পর এক বা একাধিক "দল নির্বাচন পরীক্ষা" (টিম সিলেকশন টেস্ট বা টিএসটি) এর মাধ্যমে দল নির্বাচন করা হয়।

AvBGgI Gi mgm¨v I b¤^i e›Ub t আইএমও-তে সর্বোমোট ৬ টি সমস্যা থাকে এবং প্রতি সমস্যায় ৭ পয়েন্ট থাকে।  ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরীক্ষা দু'দিন ধরে চলে। প্রথম দিনে তিনটি এবং দ্বিতীয় দিনে ৩টি করে মোট ৬ টি সমস্যার সমাধান করতে হয়; প্রতিদিন সাড়ে চার ঘণ্টা করে মোট নয় ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। সমস্যাগুলো মাধ্যমিক স্কুল গণিতের নানা বিভাগ থেকে করা হয় যাদের মোটা দাগে জ্যামিতি, বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব এবং কম্বিনেটরিক্স ইত্যাদি বিভাগে ভাগ করা যায়। এই সমস্যাগুলো সমাধান প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জ্ঞান দিয়ে করা গেলেও প্রচুর অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন হয়। স্বাগতিক দেশ ব্যতীত অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ স্বাগতিক দেশের নির্বাচিত সমস্যা নির্বাচন কমিটির নিকট সমস্যা প্রস্তাব করতে পারে, যেখান থেকে কমিটি সম্ভাব্য প্রশ্নের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। দলনেতারা প্রতিযোগিদের পূর্বেই আইএমও ভেন্যুতে পৌঁছে যান এবং তাদের নিয়ে গঠিত হয় আইএমও জুরি যারা প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত সকল আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যার প্রথমেই থাকে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রতিযোগিতার জন্যে ছয়টি সমস্যা নির্বাচন করা। দলনেতারা প্রশ্ন সম্বন্ধে পূর্বেই জেনে যান বলে পরীক্ষার পূর্বে তাদের দল থেকে পৃথক রাখার ব্যাপারটি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
প্রতিটি দেশের প্রাপ্ত নম্বর ঐ দেশের দলনেতা ও উপ-দলনেতার এবং স্বাগতিক দেশের নিয়োগ করা সমন্বয়কের (স্বাগতিক দেশের ক্ষেত্রে সমস্যা প্রস্তাবকারী দেশের দলনেতা) ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্থির করা হয় এবং এ নিয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা প্রধান সমন্বয়ক এবং তাতেও সমাধান না হলে শেষ পর্যন্ত জুরির শরণাপন্ন হতে হয়।
c`Kt প্রতিযোগীদের ব্যক্তিগত নম্বরের ওপর ভিত্তি করে i¨vswKs‡q  করা হয়।
  • পদকপ্রাপ্তির জন্যে ন্যূনতম নম্বর এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যেন সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর অনুপাত প্রায় ১:২:৩ হয়।
  • যেসব প্রতিযোগী কোন পদক জয় করতে পারে না, কিন্তু কোন সমস্যায় সাত নম্বর পায় তাদের সম্মানজনক উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়।
অসাধারণ নৈপুণ্য বা চমৎকার সাধারণীকরণের জন্যে বিশেষ পুরষ্কার দেওয়া হয়। এই পুরষ্কার ২০০৫, ১৯৯৫ এবং ১৯৮৮ তে দেওয়া হয়েছিল, তবে ১৯৮০ পর্যন্ত এই পদকপ্রাপ্তির সংখ্যা আরো বেশি ছিল।
সর্বোচ্চ পদকের সংখ্যা মোট প্রতিযোগীর অর্ধেক হবে - এই নিয়মটি মাঝে মাঝে রক্ষা করা হয় না যখন এর ফলে পদকপ্রাপ্তের সংখ্যা অর্ধেকসংখ্যক প্রতিযোগী হতে খুব বেশি এদিক-সেদিক হয়। এমন ঘটনা সর্বশেষ ঘটেছিল ২০০৬ সালে যখন ৪৯৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ১৮৮ জন নইলে ২৫৩ জনকে পুরষ্কৃত করতে হত।

বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রতিযোগিতাসমূহ‌‌‌‌

  • ৫১তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড হবে কাজাখস্তানের আস্তানাতে ২০১০ সালে।
  • ৫২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড হবে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে ২০১১ সালে।
  • ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড হবে আর্জেন্টিনায় ২০১২ সালে।

২০০৮ সালের আইএমও'র ফলাফলঃ প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ফলাফলের তালিকা

  1. গনচীন (২১৭)
  2. রাশিয়ান ফেডারেশন (১৯৯)
  3. যুক্তরাষ্ট্র (১৯০)
  4. দক্ষিণ কোরিয়া (১৮৮)
  5. ইরান (১৮১)
  6. থাইল্যান্ড (১৫২)
  7. উত্তর কোরিয়া (১৭৩)
  8. তুরস্ক (১৭০)
  9. তাইওয়ান (১৬৮)
  10. হাঙ্গেরী (১৬৫)

প্রাপ্ত মেডেল অনুযায়ী ফলাফলের তালিকা

  1. গনচীন | (৫টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য)
  2. রাশিয়ান ফেডারেশন | (৬টি স্বর্ণ)
  3. যুক্তরাষ্ট্র | ৪টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্য)
  4. দক্ষিণ কোরিয়া | (৪টি স্বর্ণ,২টি রৌপ্য)
  5. ইরান | (১টি স্বর্ণ, ৫টি রৌপ্য)
  6. থাইল্যান্ড | (২টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য, ১টি ব্রোঞ্জ)
  7. উত্তর কোরিয়া | (২টি স্বর্ণ, ৪টি রৌপ্য)
  8. তুরস্ক | (৩টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য, ২টি ব্রোঞ্জ)
  9. তাইওয়ান | (২টি স্বর্ণ, ৪টি রৌপ্য)
  10. হাঙ্গেরী | (২টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য, ১টি ব্রোঞ্জ)
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করছে মূলত ২০০৫ সাল থেকে। তবে, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে- দুই প্রতিযোগী নাজিয়া চৌধুরী ও সামিন রিয়াসাত ব্রোঞ্জ পদক জয় করে বাংলাদেশের জন্যে এই গৌরব বয়ে নিয়ে আসেন। ২০১০ সালে দ্বিতীয বারের মতো বাংলাদেশের পক্ষে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন তারিক আদনান মুন।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।