কিছুদিন আগে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে নিজেকে ‘এলিট’দের কাতারে নিয়ে গেছে ভারত৷ এবার সেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় ব্যুহ তৈরি করে সামরিক সামর্থ্যে আরও একধাপ উপরে উঠলো তারা৷
গত ১৯শে এপ্রিল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ এর পরীক্ষা চালিয়েছিলো ভারত৷ পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সর্বোচ্চ ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত৷ এবার সেই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র যাতে আর নিজেদের দেশে আঘাত হানতে না পারে তার জন্যও আদাজল খেয়ে লেগেছেন ইন্ডিয়ান সামরিক বিজ্ঞানীরা৷ এবং তাতে সফলতাও এসেছে৷ উল্লেখ্য, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাত্র কিছুদিন পর পাকিস্তানও মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়৷ তবে দুই দেশের সামরিক সামর্থ্যে স্পষ্টতই ভারত এগিয়ে৷ আর তাতে নতুন সংযোজন এবার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যুহ৷ ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (ডিআরডিও) রোববার এই তথ্য জানিয়েছে৷ বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, ডিআরডিও ইতিমধ্যে সফলভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছে যাতে দুই হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়৷ আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ডিআরডিও-র৷ সংস্থাটির প্রধান ভিকে সারাসোয়াত পিটিআইকে জানিয়েছেন, আপাতত সুবিধামত দেশের দুটি জায়গায় এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বুহ্য স্থাপন করা যাবে৷ তবে কোন জায়গাতে, সেটা প্রকাশ করেন নি তিনি৷
ভারতের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যুহ পরীক্ষায় পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে৷ এই নিয়ে ভিকে সারাসোয়াত আরও বলেন, ‘‘আমরা ছয়বার পরীক্ষা চালিয়েছি, এবং দুই হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছি৷ বায়ুমণ্ডলের ভেতরে এবং বাইরে উভয় স্তরেই টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র৷'' তিনি আরও জানান, এখন তাদের লক্ষ্য আগামী চার বছরের মধ্যে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা৷ তবে তার আগে এমন জাহাজ তৈরি করতে হবে যেখান থেকে টার্গেট করা ক্ষেপণাস্ত্র বহন এবং ছোঁড়া যাবে৷ এছাড়া শত্রুর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে ভূমির ৮০ থেকে দেড়শ কিলোমিটার ওপরে থাকতেই অকেজো কিংবা ধ্বংস করে ফেলার প্রযুক্তি তৈরিরও চেষ্টা করছে ইন্ডিয়ান মিলিটারি৷
ভিকে সারাসোয়াত দাবি করেন, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যুহ মার্কিন প্যাট্রিয়ট থ্রি-র সমকক্ষ৷ উল্লেখ্য, মার্কিন বাহিনী ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সাদ্দামের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে এই প্যাট্রিয়ট-থ্রি ব্যবহার করেছিলো৷ এখন ভারতও সেই সামর্থ্য অর্জনে সক্ষম হলো৷ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারত বিশ্বের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে দিয়েছিলো৷ আর এখন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের অনেক বড় দেশকেও পেছনে ফেলে দিলো৷ ভারত ছাড়া এখন বিশ্বের আর মাত্র তিনটি দেশের এই ফৌজি সামর্থ্য রয়েছে৷ তারা হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েল৷ উল্লেখ্য, বিগত ২০০৬ সালে প্রথমবারের মত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যুহের পরীক্ষা চালিয়েছিলো ভারত৷ তবে এবার পার্থক্য হলো, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ব্যুহ অন্তত দুটি শহরে স্থাপনের সক্ষমতা অর্জন করলো তারা৷ এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের সফরের ঠিক আগমুহূর্তেই এই খবর প্রচার করলো ভারতের কর্তৃপক্ষ৷ ক্লিন্টনের এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷ এছাড়া ইরান নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে কথা হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম (পিটিআই)
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।