সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: নানা রূপে আল কোরআন

নানা রূপে আল কোরআন


কোরআন মুসলিমদের জন্য পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। জম্নের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়েও এ গ্রন্থে আলোচনা আছে। মুসলিমদের জন্য সকল ধরনের আদেশ-নিষেধ বিধি-বিধান এ গ্রন্থে লিখিত আছে বলে এ গ্রন্থকে বলা হয় The Code of Life বা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এটি সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য সংবিধান স্বরূপ। তাই এ পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য খুবই পবিত্র, মহান। এ গ্রন্থকে ভালবেসে তাই সব মুসলিম চায় নুতন কিছু করতে। শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজানের, ত্যাগ ও সংযমের এই মাসেই অবতীর্ণ হয়েছিল পবিত্র কোরআন। কোরআন শরিফ নিয়ে কৌতূলোদ্দীপক কিছু ঘটনার বিশেষ রচনা।

 

দীর্ঘতম কোরআন শরিফঃ

বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এক ছাত্র হোসেন আল খারসান। ২৫ বছর বয়সী এক টগবগে যুবকের লক্ষ্য, বিশ্বের দীর্ঘতম কোরআন শরিফ নিজ হাতে লেখা। 

দীর্ঘতম কোরআন লিখার কাজে ব্যস্ত

বছর শুরু করা, সাড়ে তিন মাইল দীর্ঘ এই কোরআন শরিফটি লিখতে খারসান ব্যবহার করছেন পাখির পালকের তুলি আর রং। ৫০৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘতম কোরআন শরিফের প্রতি তিন পৃষ্ঠা খারসান লিখছেন এক দিনে। এভাবে কাজ চললে ছয় মাসে দীর্ঘতম কোরআন শরিফের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে উবু হয়ে বসে লিখতে লিখতে খারসান কোমর ও পিঠের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। তবুও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, খুব অল্প দিনের মধ্যেই পৃথিবীর দীর্ঘতম কোরআন শরিফ লিখে শেষ করবেন। নাজাফ শহরের একটি ইসলামি গবেষণাকেন্দ্রে বসে খারসান তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন একনিষ্ঠ মনোযোগে। ইসলামের পবিত্র এই ধর্মগ্রন্থের দীর্ঘতম কপিটির কাজ শেষ হলে খারসানের ইচ্ছা অবশ্য গিনেস বুকে নাম ওঠানোর। সে পথে হেঁটে অনেক দূরই এগিয়ে গেছেন এই ইরাকি যুবক। ডন ও এএফপি, ৬ মে ২০১২


সবচেয়ে পুরোনো কোরআন শরিফঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো কোরআন লেখা হয়েছিল ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর সময়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর ১৯ বছর পর খলিফা উসমান কোরআনের সম্ভাব্য বিকৃতি রোধে এর সব আয়াত সংকলনের প্রয়াস হাতে নেন। এ লক্ষ্যে তিনি কোরআন শিক্ষায় পণ্ডিত এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশন একসঙ্গে কোরআন শরিফের পাঁচটি সংকলন তৈরি করে। সেই পাঁচটি সংকলন পাঠানো হয় খিলাফতের বিভিন্ন প্রান্তে। হজরত উসমান (রা.) নিজের ব্যবহারের জন্য মদিনায় একটি সংকলন রেখে দেন। পাঁচটি সংকলনের মধ্যে আরও একটি রক্ষিত ছিল বর্তমান তুরস্কের টোপকাপি প্রাসাদে। হজরত উসমানের মৃত্যুর পর ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) মদিনায় রক্ষিত কোরআনের সেই কপিটি নিয়ে যান বর্তমান ইরাকের কুফায়। তৈমুর লং পরবর্তী সময় ইরাকে অভিযান চালিয়ে পুরো এলাকা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেন। কোরআন শরিফের সেই কপিটি তৈমুর লং দখলি সম্পদ হিসেবে তাঁর রাজধানী তাসখন্দে নিয়ে যান। বর্তমান উজবেকিস্তানের তাসখন্দে কোরআনের সেই কপিটি রক্ষিত ছিল ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত। রুশরা তাসখন্দ দখল করে নিলে কোরআনের সেই কপিটির পরবর্তী অবস্থান হয় রাশিয়ান ইমপেরিয়াল গ্রন্থাগারে। হজরত উসমানের (রা.) কাছে থাকা কোরআনে কপিটির বর্তমান অবস্থান উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অবস্থিত হাসত-ইমাম গ্রন্থাগারে। সূত্র: উইকিপিডিয়া


বৃহত্তম কোরআন শিক্ষার বিদ্যালয়ঃ

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শিক্ষার বৃহত্তম বিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা করছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রাজধানী তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থাপিত হতে যাচ্ছে কোরআন শিক্ষার এই বৃহত্তম বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। প্রায় ২২ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শিক্ষার এই বিদ্যালয়টি। 

কোরআনের ক্যালিগ্রাফ তৈরি করা হচ্ছে

সারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কোরআন শিক্ষায় আগ্রহী মানুষ এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। শুধু কোরআন শরিফ পড়তে পারাই নয়, কোরআনের মর্মবাণী আত্মস্থ করার শিক্ষাও এই বিদ্যালয়ে দেওয়া হবে।  এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। এতে থাকবে পঞ্চমাত্রিক একটি সিনেমা থিয়েটার, যেখানে কোরআনের বিভিন্ন কাহিনি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। মোট কথা, এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ছাত্রছাত্রীরা অনুভব করতে পারবেন, কোরআন শুধু একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থই নয়, এটি পরিপূর্ণ এক জীবনবিধান।  সূত্র: ইরান কোরআন নিউজ এজেন্সি


বৃহত্তম কোরআন শরিফঃ

যুদ্ধে যুদ্ধে কেটে গেছে আফগানিস্তানের ৩০টি বছর। কিন্তু এই ৩০ বছরে দেশটি যে নিজেদের শৈল্পিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারকে ভুলে যায়নি, তা প্রমাণ করতেই যেন আফগানরা পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় তৈরি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম কোরআন শরিফ। ১০০০ পাউন্ড ওজনের এই কোরআন শরিফটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৫ ও প্রস্থ ৫ দশমিক ১০ ফুট, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১৮। আফগান সরকারের হজ ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই কোরআন শরিফটির প্রচ্ছদে ব্যবহূত হয়েছে ২১টি গবাদিপশুর চামড়া। দামি চামড়ার তৈরি প্রতিটি পৃষ্ঠায় অপরূপ সোনালি ক্যালিগ্রাফিতে বিবৃত হয়েছে এর কালাম। পৃথিবীর বৃহত্তম এই কোরআন শরিফ তৈরি করতে আফগানিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ব্যয় করতে হয়েছে তিন লাখ পাউন্ড। ২০০৯ সালে শুরু করে এ বছরের প্রথমদিকে কাজ শেষ হওয়া পৃথিবীর বৃহত্তম এই কোরআন শরিফটি বর্তমানে রক্ষিত আছে রাজধানী কাবুলের সংস্কৃতিকেন্দ্রে। মোহাম্মদ সাবির খেদরি নামের এক ক্যালিগ্রাফারের অধীনে নয়জন ছাত্র দিনরাত খেটেছেন। আফগানদের হাতে তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরিফ যেন জানান দিচ্ছে ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও যুদ্ধের অভিশাপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অপার ইচ্ছাশক্তির।  

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোরআন আফগানিস্থানে সংরক্ষিত

আফগানিস্তানের আগে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরিফ তৈরি হয়েছিল রাশিয়ার তাতারস্তানে। ৮০০ কেজি ওজনের ৬৩২ পৃষ্ঠা সংবলিত সেই কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য সাড়ে ছয় ফুটের একটু বেশি এবং প্রস্থ সাড়ে তিন ফুট। প্রচ্ছদ তৈরি হয়েছিল সোনা ও মূল্যবান পাথরের গাঁথুনিতে। তাতারস্তানের সেই কোরআন শরিফটি তৈরি হতে সময় লেগেছিল পুরো একটি বছর। তবে এটি তৈরি করতে কত খরচ পড়েছিল, তা অবশ্য অজানাই রয়ে গেছে। সূত্র: দি গার্ডিয়ান, ১৭ জানুয়ারি ২০১২


 

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কোরআন শরিফঃ

হযরত উসমান দ্বারা সংরক্ষিত কোরআন

১২০৩ সালের রমজান মাসে লেখা কোরআনের একটি কপি ২৩ অক্টোবর ২০০৭ লন্ডনে নিলামে ওঠে। নিলামে এটি বিক্রি হয় রেকর্ড ২৩ লাখ মার্কিন ডলারে। একে নির্দ্বিধায় কোরআনের সবচেয়ে দামি কপি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। ইয়াহিয়া বিন মুহাম্মদ ইবনে উমর নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর-সংবলিত কোরআনের এই কপিতে তারিখ দেওয়া আছে ৫৯৯ হিজরি সনের ১৭ রমজান। ১৯০৪ সালে হিসপ্যানিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আর্চার মিল্টন হটিংটন কায়রো থেকে (১৯০৫) কোরআনের এই কপিটি সংগ্রহ করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এই কোরআনের ক্যালিওগ্রাফি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কালো লাইনের ওপর সোনার হরফে এর আয়াতগুলো লেখা। প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিভিন্ন আয়াতের যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, সেগুলো রুপালি হরফে লেখা।  সূত্র: এপি ও নিলাম প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি


ক্ষুদ্রতম কোরআন শরিফঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরআনের কপিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক নাগরিকের কাছে রক্ষিত আছে বলে কিছুদিন আগে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই কোরআন শরিফ উচ্চতায় মাত্র ৫ দশমিক ১ এবং প্রস্থে ৮ সেন্টিমিটার। এতে পৃষ্ঠা আছে ৫৫০টি। 

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরআনের হেফাজতকারী আরব আমিরাতের সেই নাগরিক অবশ্য খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। আমিল ঈসা নামের সেই নাগরিক বংশপরম্পরায় কোরআনের ক্ষুদ্রতম কপির মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোরআনের ক্ষুদ্রতম এই কপিটি পাওয়া গেছে জেরুজালেমে আল কুদসের কাছে।


গ্রন্থনা: নাইর ইকবাল

সূত্র: আল জাজিরা, মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ, ২২ এপ্রিল ২০১২

 

 

 প্রথম আলো, তারিখ: ২০-০৭-২০১২ থেকে সংগৃহীত।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।