সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: হৃদয়ের ব্যথা -এনজিনা

হৃদয়ের ব্যথা -এনজিনা



যদি হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশ প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ পেতে ব্যর্থ হয় তবে ওই অংশে অক্সিজেন ঘাটতির জন্য ব্যথা অনুভূত হয়। এ ধরনের ব্যথাকে এনজিনা বলা হয়। যেহেতু হৃৎপিণ্ড বুকের ভেতর অবস্থান করে তাই মানুষ বুকে ব্যথা (এনজিনা) অনুভব করে।

এনজিনার ব্যথার ধরন অন্যান্য কারণে বুকে ব্যথার ধরনের চেয়ে আলাদা। এনজিনার ব্যথা বুক চেপে আসে, বুকে চাপা কষ্ট অনুভূত হয়, বুক জ্বালা করা, বুকের ওপর পাথর বসে আছে এমন অনুভূত হয়ে থাকে। সাধারণত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা বুকের মাঝখান থেকে শুরু হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন_ গলা, চোয়াল, বাহু, হাত, পিট, পেটের উপরি ভাগ, শরীরের এসব অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কখনো কখনো বুকে ব্যথা ছাড়া শুধু এসব অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এনজিনার আরও একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো পরিশ্রমকালীন তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া এবং বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যথা দূরীভূত হওয়া। এনজিনা কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ। সাধারণভাবে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির সমস্যার জন্য এনজিনা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডে রক্তনালি স্বাভাবিক থাকার পরও এনজিনা হতে পারে। যেমন- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, রক্তশূন্যতা এবং কার্ডিওমায়োপ্যাথি ইত্যাদি।
হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল নামক এক ধরনের মোমের মতো নরম চর্বি জাতীয় পদার্থ রক্তনালির দেয়ালের ভেতর দিকে স্তূপাকারে জমা হয়ে রক্তপ্রবাহের বাধার সৃষ্টি করে থাকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের কোলেস্টেরলের স্তূপকে এথারোস্কেরোটিক প্লাক বলা হয়। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির ভেতর দিকে প্লাক খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে খুব আস্তে আস্তে রক্তপ্রবাহের বাধা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থাতে হৃৎপিণ্ড স্বল্প রক্ত প্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা এবং বিকল্প পথে ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ পাওয়ার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে বিশ্রামের সময় রোগীর হৃৎপিণ্ড কোনো রূপ অক্সিজেনের ঘাটতিতে ভোগে না, কোন রকম এনজিনাও অনুভূত হয় না। কিন্তু পরিশ্রমকালীন হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হৃৎপিণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং এনজিনা অনুভূত হয় এবং বিশ্রাম নিলে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি এনজিনা দূরীভূত হয়। এ ধরনের এনজিনাকেই স্থিতিশীল এনজিনা (Stable Angina) বলা হয়।

কোলেস্টেরলের স্তূপ বা প্লাক কোনো কারণে যদি হঠাৎ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, ফেটে যায়, স্তূপের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়, স্তূপে প্রদাহ দেখা দেয়, স্তূপে জীবাণুর আক্রমণ হয় অথবা ফেটে যাওয়ার কারণে স্তূপের উপরি ভাগে রক্তজমাট বেঁধে যায়_ এসব কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রক্তনালি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় হৃৎপিণ্ড পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সময় পায় না এবং বিকল্প পথেও রক্ত সরবরাহ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় না।




ডা. এম শমশের আলী
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল
কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৩ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।