সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিকল হলেই ফেলে দিতে হবে কেন?

ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিকল হলেই ফেলে দিতে হবে কেন?



লক্ষ্য করে দেখেছেন, আজকাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি যেন আগের তুলনায় অনেক কম টেকসই হয়ে পড়েছে৷ বিকল হলে মেরামতের উপায় নেই, ফেলে দিয়ে নতুন কিনতে হয়৷ এমন অভিজ্ঞতা কার না হয়েছে? গ্যারান্টি শেষ হওয়ার ঠিক পরেই প্রিন্টার বা কফি মেশিন বিকল হয়ে গেছে৷ স্মার্টফোনের ব্যাটারি বদলাতে চান? সেটা যদি আইফোন, আইপ্যাড বা আইপড হয়, তাহলে তো ব্যাটারি কোথায়, তাই জানতে পারবেন না৷ ফলে সেটি বের করে বদলানোরও উপায় নেই৷ ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ বদলাতে গেলে শুনবেন, নতুন মডেলের দাম নাকি তার থেকে কম! অর্থাৎ বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এরকম৷ জেনেশুনেই কোম্পানিগুলি তাদের ডিভাইস এমনভাবে তৈরি করছে, যার আয়ু সীমিত হতে বাধ্য৷ বিকল হলে ফেলে দিন, নতুন মডেল কিনুন৷ মেরামত করা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না৷ এটাই তারা চায়৷ কারণ সস্তার যন্ত্রাংশ মানে উৎপাদন প্রক্রিয়ার ব্যয় কমে যায়৷ আর চাহিদাও বজায় থাকে৷

কোম্পানিগুলির মুনাফা হচ্ছে, ভালো কথা৷ কিন্তু এমনবিজনেস মডেল'এর ফলে ক্রেতাদের কি ক্ষতি হচ্ছে না? তাছাড়া পরিবেশের জন্যও এমন বিকল যন্ত্রপাতি ক্ষতিকারক৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বাড়তি চাপ পড়ে৷ তারপর শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকে বিষাক্ত বিপজ্জনক ইলেকট্রনিক বর্জ্যও পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই সব দেশে৷জার্মানিতে অনেক ক্রেতাই বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে একটি ওয়েবসাইটে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লেখেন৷ কোন কোম্পানি জেনেশুনে তাদের কোন পণ্যকে এমনভাবে তৈরি করেছে, যাতে তার আয়ু কম হয় বা দ্রুত অচল হয়ে পড়ে বিষয়ে অনেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন৷ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ক্ষেত্রেই এমনটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকার শীর্ষে রয়েছে রেডিও, টেলিভিশন বা সিডি প্লেয়ারের মতো মনোরঞ্জনের উপকরণ৷ তারপর নানা রকমের কম্পিউটার এবং সাধারণ ও মোবাইল টেলিফোন৷ অভিযুক্ত কোম্পানিগুলির নামও কারো অজানা নয়এপসন, ব্রাদার, ফিলিপস ও অ্যাপল'এর মতো বহুজাতিক সংস্থা প্রায়ই দেখা যায়৷ নভেম্বরের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ারস্যামসাং' ছিল শীর্ষে৷
 
কোনো ডিভাইস বা পণ্যকে দ্রুত বাতিল করতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সস্তার যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়৷ কিছু জায়গায় খরচ বাঁচাতে প্রায়ই ধাতুর বদলে প্লাস্টিক বসানো হয়৷ তবে সে সব অংশ খুব ছোট হওয়ায় সহজে তা চোখে পড়ে না৷ কোলোন শহরে জার্মান অর্থনীতি ইন্সটিটিউট'এর বিশেষজ্ঞ ডমিনিক এনস্টে এ বিষয়ে বললেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যে কোম্পানিগুলি মোটেই টেকসই পণ্য তৈরি করতে চাইছে না৷ অর্থাৎ সম্পদের সদ্ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়নের ধারণা বা সামাজিক দায়িত্ববোধের বিষয়টির সঙ্গে তা মোটেই খাপ খাচ্ছে না৷'' এমন পণ্য উৎপাদনের পিছনে সার্বিক পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ অনেক ক্ষেত্রে নতুন পণ্য বাজারে আনার আগেই যখন ভাবনা-চিন্তা করা হয়, তখনই সেটিকে একেবারেই বেশি টেকসই না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ মোটামুটি তিন বছর অক্ষত রাখতে যে অর্থ ব্যয় করতে হয়, নির্মাতারা সেটুকুর বেশি করতে চায় না৷ কারণ উৎপাদনের পর সাধারণত ৩ বছর পর্যন্ত গ্যারান্টি থাকে৷ তারপর আর কোনো কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না৷ এর মধ্যে পরবর্তী প্রজন্মের পণ্য বাজারে আনার তাগিদ তৈরি হয়৷

কিন্তু সমস্যা হলো, ইলেক্ট্রনিক পণ্যের আয়ু কমানোর ফলে কাঁচামালের চাহিদা নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ ইলেক্ট্রনিক পণ্যে সোনা, রুপো, তামা, রেয়ার আর্থ ইত্যাদি নানা ধাতুর প্রয়োজন হয়৷ সেগুলির দাম কম নয়৷ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনেক বিষাক্ত দ্রব্যও ব্যবহার করা হয়৷ আর ইলেক্ট্রনিক পণ্যের অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ডমিনিক এনস্টে অবশ্য সব দোষ কোম্পানিগুলির ঘাড়ে চাপাতে প্রস্তুত নন৷ তিনি বললেন, ‘‘সবার শেষে বিষয়টি ক্রেতা বা ভোক্তাদের হাতে চলে যায়৷ মানুষ আজকাল সস্তার জিনিসপত্রের দিকেই বেশি ঝোঁকে৷ এমন চাহিদার ফলেও কোম্পানিগুলি তাদের খুশি রাখতে বাধ্য হয়৷'' বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, শেষ পর্যন্ত এই মডেল অর্থনীতির ক্ষতিসাধন করে৷ ধারাবাহিক চাহিদার ফলে উৎপাদন বাড়ে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় ঠিকই, কিন্তু তার পরিণাম ও তার মূল্য সহজে চোখে পড়ে না৷ কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও বর্জ্য পদার্থ নিয়ে সমস্যার ফলে যে কোনো দেশের ক্ষতি হয়৷ এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ তারা যাতে ভেবেচিন্তে ইলেক্ট্রনিক পণ্য কেনে, সে বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন৷ পাঁচ বছরের জন্য সস্তায় দুটি যন্ত্র কেনার বদলে কিছু বেশি খরচ করে এমন যন্ত্র কেনা যায়, যা ৫ বছর টিঁকবে৷


সূত্রঃ DW.DE, তারিখঃ 12.11.2012

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।