সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন নয়াদিল্লির সেই ছাত্রী

মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন নয়াদিল্লির সেই ছাত্রী


মৃত মেডিকেল ছাত্রীর লাশ
মৃত মেডিকেল ছাত্রীর লাশ

ভারতের দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেলের ছাত্রী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না। মৃত্যুর কাছে হেরে গেছেন তিনি। প্রায় দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল শনিবার সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে নয়াদিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সহিংস বিক্ষোভের আশঙ্কায় গতকাল নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রাস্তায় মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার দাঙ্গা পুলিশ। অনেক সড়ক, বিপণিবিতান ও মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে পাঁচজনের বেশি একত্রে জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। শান্ত থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সোনিয়া।

গণ বিক্ষোভ
গণ বিক্ষোভ
ছাত্রীর মৃত্যুর খবর জানিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কেলভিন লোহ বলেন, ‘আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, স্থানীয় সময় ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে রোগী মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় পরিবারের সদস্য ও ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাঁর পাশে ছিলেন। লোহ আরও বলেন, ‘তাঁকে বাঁচাতে হাসপাতালের আট বিশেষজ্ঞ চিকিসক সব চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন। এর পরও দুই দিন ধরে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। মস্তিষ্ক ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের কারণে তাঁর একটার পর একটা অঙ্গ অচল হয়ে পড়ছিল।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত মেডিকেল ছাত্রী
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত মেডিকেল ছাত্রী
১৬ ডিসেম্বর দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ছয়জন দুর্বৃত্ত মেডিকেলের ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া লোহার রড দিয়ে তাঁকে ও তাঁর ছেলেবন্ধুকে পিটিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েক দফায় অস্ত্রোপচারের পরও অবস্থার অবনতি হতে থাকায় গত বৃহস্পতিবার তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ওই ছাত্রীর লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এরপর একটি বিশেষ বিমানে করে গতকালই লাশ দেশে আনা হয়। মৃত্যুর খবর জানার পরপরই প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষ। এ ছাড়া মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, অমৃতসর, শিলিগুড়িসহ বেশির ভাগ বড় বড় শহরে বিক্ষোভ হয়। কোথাও কোথাও সংঘর্ষও হয়। গতকাল ভারতজুড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে শোক প্রকাশ করা হয়। ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি ও নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল সকালে নয়াদিল্লির যন্তরমন্তরে কয়েক শ বিক্ষোভকারী জড়ো হন। এ সময় পুনম কৌশিক নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, দিল্লিতে নারীদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ। এ জন্য ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটেছে।

বিচারের দাবীতে গণ বিক্ষোভ
বিচারের দাবীতে গণ বিক্ষোভ
বিক্ষোভে প্রদর্শন করা একটি ব্যানারে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনাদের শোক প্রকাশের কোনো দরকার নেই, আমরা এটা চাই না। আপনাদের ফালতু অনুভূতিও আমরা চাই না। যৌন হয়রানির ঘটনায় যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তেমন আইন চাই আমরা। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে গিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাকে দেশের জন্য একটি লজ্জাজনক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে তিনি কথা বলতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা চিকার করে তাঁকে থামিয়ে দেন। দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, ‘তাঁর (ছাত্রী) মৃত্যুর খবরে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। মানুষের এই ক্ষোভ ও অনুভূতিকে যদি আমরা গঠনমূলক কাজে লাগাতে পারি, কেবল তবেই ওই ছাত্রীর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব হবে। ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে। এএফপি, বিবিসি ও পিটিআই।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ ডিসেম্বর ২০১২ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।