সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: কলকাতার আজাদ ইনস্টিটিউট

কলকাতার আজাদ ইনস্টিটিউট



ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক অগ্রনায়ক মওলানা আবুল কালাম আজাদ। আজাদ ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, ভারত স্বাধীন হওয়ার দিন থেকে আমৃত্যু। অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। ছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি (১৯৪০-১৯৪৬)। পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারত রত্ন।


মওলানা আজাদের জন্ম সৌদি আরবে। তবে তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক সব কর্মকাণ্ডের বিকাশ হয়েছে কলকাতা শহরেই। কলকাতা ছিল তাঁর প্রিয় শহর। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মওলানা আজাদকে স্মরণীয় করে রাখতে কলকাতায় গড়ে তুলেছে মওলানা আবুল কালাম ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ। এখন এখানে দেশ-বিদেশের গবেষকেরা আসেন গবেষণা করতে। কলকাতায় তাঁর স্মৃতিবাহী বাসভবনে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘরও। ১৯৮৯ সালে আজাদের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গড়া হয় এই এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে তা। ১৯৯৩ সালে গড়া এই ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান করা হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল (গভর্নর) অধ্যাপক নুরুল হাসানকে এবং অধ্যাপক বরুণ দেকে পরিচালক নির্বাচন করে যাত্রা শুরু হয় ইনস্টিটিউটটির। লক্ষ্য, এশিয়ার দেশগুলোতে মওলানা আজাদের চিন্তাধারাকে পৌঁছে দেওয়া। পাশাপাশি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোর লোকসাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, কৃষ্টি ও সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করা। ইতিমধ্যে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাও শুরু হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, জাপান, ইসরায়েল, চীন ইত্যাদি। এখন এই ইনস্টিটিউটে গবেষণার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ভারত ও অন্যান্য দেশের ৩০ জন ফেলো। এঁরা গবেষণা করছেন নানা বিষয় নিয়ে।

এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয় কলকাতার বালিগঞ্জের লাভলক স্ট্রিটের আশরাফ মিস্ত্রি লেনের মওলানা আজাদের বাসভবন থেকে। তবে ২০১০ সালে এই ইনস্টিটিউট চলে যায় কলকাতার সল্টলেকের সেক্টর তিনের নতুন ভবনে। এই ভবনের নাম দেওয়া হয়েছে আজাদ ভবন। তিন একর জায়গাজুড়ে গড়া হয়েছে এই ভবনটি। হলুদ রঙের এই ভবনে রয়েছে মিলনায়তন, কনফারেন্স কক্ষ, গ্রন্থাগার, অতিথি ভবন ইত্যাদি। আজাদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা, ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চে। আর এখানে কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের ১৬ জানুয়ারি। উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। একই সঙ্গে আজাদ ভবনে উন্মোচন করা হয় মওলানা আজাদের একটি আবক্ষ ব্রোঞ্জমূর্তিও। আর ২০০৫ সালে মওলানা আজাদের বাসভবনকে কেন্দ্রীয় সরকার ঐতিহ্য ভবন হিসেবে ঘোষণা করে, সেখানে চালু করা হয়েছে মওলানা আজাদ জাদুঘর। আজাদ ভবনে গবেষণার জন্য নির্মিত হয়েছে বিশাল এক গ্রন্থাগারও। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ভাষার প্রায় ১৫ হাজার বই। সাধারণ বইপ্রেমীরাও সেখানে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আজাদ ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত হয় নিউজলেটার। প্রকাশ করা হয় গবেষণাগ্রন্থও।

কথা হচ্ছিল ইনস্টিটিউটটির বর্তমান পরিচালক শ্রীরাধা দত্তের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা শুধু মওলানা আজাদের জীবন ও কর্ম নিয়েই আমাদের গবেষণা কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ রাখিনি। দেশ-বিদেশের লুপ্ত সংস্কৃতি, সভ্যতা, রাজনৈতিক, সামাজিক ঐতিহ্য এবং ক্রমোন্নয়ন ইত্যাদি নিয়েও গবেষণা করছি। ভারতের লুপ্ত হয়ে যাওয়া সংস্কৃতি নিয়েও আমাদের গবেষণা অব্যাহত। আমরা গ্রাম থেকে খুঁজে বের করছি আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, সভ্যতাকে। আমরা অনেক সময় লুপ্ত সংস্কৃতিকে উদ্ধার করে জনসমক্ষে প্রদর্শনও করছি। সেসব সংরক্ষণ করারও উদ্যোগ নিই আমরা। এসব নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনও করছি। মোট কথা, আমরা আমাদের দেশই নয়, এশিয়ার দেশগুলোর লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি, সভ্যতা নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি।জাদুঘরটিতে গেলে দেখা যায় মওলানা আজাদের পাওয়া ভারতরত্ন পদকসহ তাঁর স্মৃতিবাহী নানা সামগ্রী। আছে তাঁর ব্যবহূত ঐতিহাসিক টুপি, লাঠি, পরিধেয় বস্ত্র, চশমা, শাল, আসবাবপত্র, মানপত্রসহ বিভিন্ন পদক।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ১১ ডিসেম্বর ২০১২ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।