![]() |
বান্ধবী বীথি আক্তার, শাজাহান আলী, নুরুজ্জামান গেদা, হারুনুর রশীদ ও মনিরুজ্জামান মনি |
কিছু
দিন আগে আমরা ভারতের নয়াদিল্লিতে মেডিকেল ছাত্রী আমানতকে গণধর্ষণের খবর টেলিভিশন
আর খবরের কাগজে দেখে হতবাক হয়েছিলাম। ভাবতে পারি নি যে, সে রকম ঘটনা আমাদের এখানেও
ঘটতে পারে। অথচ একই রকম ঘটনা একেবারে সবার অগোচরে ঘটে গেলো আমাদের এখানেও। হ্যাঁ, টাঙ্গাইলের সেই স্কুল ছাত্রীর কথাই
বলছি যাকে তিন দিন ধরে গণধর্ষণ করে অসুস্থাবস্থায় রেল লাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়। বর্তমানে ঐ ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিত্সাধীন আছে। ঘটনাটি আগে ঘটলেও চুপচাপ থাকায় সবার অগোচরে ছিলো এতদিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়েটি যখন জীবন-মৃত্যুর দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে, তখন মিডিয়ার কল্যাণে বিষয়টি সবার দৃষ্টিতে আসে।
টাঙ্গাইলে
গণধর্ষণের শিকার সেই স্কুলছাত্রীর সুচিকিত্সায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সকদের সমন্বয়ে গতকাল সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। এদিকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গতকাল ঢাকায় মানববন্ধন
করে
ধর্ষকদের বিচার দাবি করেছে। বিএনপির প্রচার
সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক জানিয়েছেন, তার দল মেয়েটির চিকিত্সার ব্যয়ভার বহন করবে। প্রয়োজনে তাকে বিদেশ পাঠাতেও প্রস্তুত বিএনপি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেন, প্রয়োজনে তাকে
বিদেশে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গেছে, গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)-১ আবদুল মালেক টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) অসুস্থ স্কুলছাত্রীর পাশে অবস্থান করেন। তিনি রোগীর সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসা এবং দোষীদের উপযুক্ত বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আশ্বাস দেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও পরিচালকসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপকদের সঙ্গে অসুস্থ স্কুলছাত্রীর সুচিকিতৎসার ব্যাপারে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমত একটি মেডিকেল বোর্ড গঠনের পরামর্শ দেন। এর পরই সাত চিকিত্সকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডটি গঠন করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক জানান, বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান কাজী দীন মোহাম্মদকে। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন—মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক ডা. বিলকিস, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, গাইনি বিভাগের প্রধান, ক্যাজুয়ালিটি ব্লকের প্রধানকসহ আরও এক চিকিত্সক। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী তার পিএসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, নির্যাতিত মেয়েটির সুচিকিত্সার খরচসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তিনি তা করবেন। মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, মেয়েটির শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে মানসিকভাবে সে এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। পাষণ্ডদের কথা বারবার মুখে এনে মেয়েটি খাবার গ্রহণ করতে পারছে না। এ কারণে চিকিত্সকরা তাকে তরল খাদ্য দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ডিসেম্বর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে বিথী আক্তার নামের এক বান্ধবী নির্জন পাহাড়ি বাড়িতে নিয়ে যায় নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে। সেখানে পাষণ্ডরা তাকে ৩ দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে
১০
ডিসেম্বর সদর উপজেলার রসুলপুর এলাকায় রেল লাইনের
পাশে মেয়েটিকে অপরাধীরা ফেলে রেখে পালিয়ে
যায়। পরিবারের সদস্যরা লোকলজ্জার ভয়ে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে বাড়িতে নিয়ে যায়। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই স্কুল ছাত্রী। পরে অবস্থার অবনতি হলে
তাকে
গত সোমবার ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
মঙ্গলবার তাকে ওসিসিতে আনা হয়। বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গেছে।
সাথীর বাবার নাম ফয়জউদ্দিন, পেশাষ কৃষক, গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইলের রসুলপুর গ্রামে। তিন বোনের মধ্যে সাথী ছিল সবার বড়। একমাত্র ভাই রফিকুল ইসলাম ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষার্থী।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।