![]() |
Ikaria Island Greece |
গ্রিসের
ছোট্ট দ্বীপ ইকারিয়া। সেখানকার বাসিন্দারা ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের তুলনায় গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। তাঁদের এই দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য কী? ইকারিয়ার বিশুদ্ধ বাতাস এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজ ও উন্মুক্ত জীবনযাত্রা, তাজা শাকসবজি, ছাগলের দুধ প্রভৃতিকে মানুষের দীর্ঘায়ু লাভের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কেউ কেউ। ইকারিয়ার পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথে চলাফেরার
কারণেও স্থানীয় লোকজনের শরীর সুস্থ-সবল
থাকে।
স্থানীয় বৃদ্ধ স্তামাতিস মোরাইতিস বলেন, ইকারিয়ায় উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানীয় (ওয়াইন) তাঁর দীর্ঘায়ু অর্জনে সহায়ক হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ওয়াইন সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। তবে তাঁরা সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর ওয়াইন তৈরি করেন। কাগজে-কলমে স্তামাতিসের বয়স ৯৮ বছর। তবে নিজের আসল বয়স আরও বেশি বলে তাঁর দাবি। বাড়ির সামনেই জলপাইগাছ, আঙুরলতা ও অন্যান্য গাছের পরিচর্যা করেই দিন কাটে তাঁর। বছরে তিনি প্রায় ৭০০ লিটার ওয়াইন তৈরি করেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডায় সেই ওয়াইনের সদ্ব্যবহার করা হয়।
৪৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে ফুসফুসের
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন স্তামাতিস। তাঁর
আয়ু বড়জোর নয় মাস বলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তখন শেষকৃত্য অনুষ্ঠান অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায়
ইকারিয়ায় ফিরে এসেছিলেন স্তামাতিস। মা-বাবার
কবরের পাশেই তিনি নিজের সমাধি চেয়েছিলেন।
কিন্তু জন্মভূমি ইকারিয়ার সার্বিক পরিবেশ তাঁকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলেছে। এই গল্প বহু আড্ডায় অসংখ্যবার বলেছেন স্তামাতিস, তবু ক্লান্তি নেই তাঁর। মরণব্যাধি থেকে
সেরে উঠে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই বৃদ্ধ বলেন, ‘চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া সেই নয় মাস তো কবেই পেরিয়ে গেছে। তারপর ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আমি জীবিত আছি। কয়েক বছর আগে আমি আবার
যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেই চিকিৎসকদের খুঁজে বের করার
চেষ্টা করেও কাউকে পাইনি। কারণ, তাঁরা সবাই মারা গেছেন।’
ইকারিয়া দ্বীপে এ রকম আরও অনেক গল্প রয়েছে।
ইকারিয়া দ্বীপে এ রকম আরও অনেক গল্প রয়েছে।
তবে
সম্প্রতি বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা ইকারিয়ার মানুষের
দীর্ঘায়ুর রহস্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন। তুরস্ক উপকূল থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ইকারিয়া দ্বীপটি স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবে শতাধিক বছর ধরে পরিচিত। স্থানীয় জনসংখ্যা আট হাজার। অ্যাথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ইকারিয়ার ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের
ওপর
গবেষণা চালিয়ে জানান, সেখানকার বাসিন্দাদের বয়স গড়ে ৯০ বছরে পৌঁছানোর হার মার্কিনদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। ইকারিয়ার লোকজনের খাদ্যাভ্যাস ভূমধ্যসাগরীয়। তাদের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে মাছ ও শাকসবজির উপস্থিতি বেশি এবং মাংসের উপস্থিতি কম। ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার ও রান্নার কাজে জলপাই (ওলিভ) তেল ব্যবহারের ফলেও তাঁদের জীবনকাল দীর্ঘতর হয়। এ
ছাড়া
সেখানে ধূমপানের হার কম এবং মদ্যপানও পরিমিত। অ্যাথেন্স
বিশ্ববিদ্যালয়ের হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ ক্রিস্তিনা ক্রিসোহু বলেন, সাধারণত মানুষ ৫৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হূদেরাগে আক্রান্ত হলেও ইকারিয়ার বাসিন্দারা রোগটিতে আক্রান্ত হন আরও ১০ বছর পর। জাপানের ওকিনাওয়া, ইতালির সার্দিনিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা দ্বীপের বাসিন্দারাও দীর্ঘজীবনের অধিকারী হয়ে থাকেন। আবার উষ্ণ পানির প্রাকৃতিক ঝরনার কারণেও পর্যটকদের কাছে ইকারিয়ার আকর্ষণ রয়েছে। বিবিসি।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ০৮ জানুয়ারী ২০১৩ ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।