অতিথি
পাখি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এজন্য আমাদের দেশে অতিথি পাখি বিষয়ে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের
দেশে
সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। শীতের শুরুতে
দূর-দূরান্ত থেকে উড়ে আসা হাজারও অতিথি পাখির কলতানে মুখর বাংলাদেশের প্রকৃতি। দেশের বিভিন্ন হাওর, জলাশয়ে
মোট ৬৫৩ প্রজাতির পাখি আজ পর্যন্ত পাওয়া
গেছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০০ জাতের পাখি পুরো বছর আমাদের দেশে থাকতে পারে না। খাবারের খোঁজে, নিরাপদে
বংশবিস্তারের জন্য তাদের এই ভ্রমণ। যে পাখি
গাছের পাতার ফাঁকে থাকা পোকা খায়, তাদের জন্য
বাংলার শীতকালটা অনেকটা দুর্ভিক্ষের মতো।
তারা আরও দক্ষিণে চলে যায় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার
খোঁজে।
আমাদের দেশে মূলত শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া, তিব্বতের মতো হিমশীতল এলাকার পাখিগুলো বেড়াতে আসে। তারা কেবল আমাদের দেশ নয় ভারত এবং মিয়ানমারের মতো দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। এসব পরিযায়ী এই ভ্রমণ করছে বহু বছর ধরে। এ দেশের পাখিপ্রেমীরা বিদেশ থেকে আসা এই পাখিদের অতিথি পাখি না বলে পরিযায়ী পাখি বলেন। বাংলার ভূখণ্ডে মানুষের বসতির ইতিহাস পাখির পরিভ্রমণের চেয়ে অনেকটাই নতুন, মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে বাংলায় মানুষের বসতি। তাই বরং বাংলার এ ভূখণ্ডে আমরাই অতিথি। পরিযায়ী পাখি মানেই পানিতে এসে বসা ২৫ প্রজাতির হাঁসকে বোঝানো হয়। মেটে রাজহাঁস, রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, নাকটা হাঁস, চখাচখি, রাজমণি হাঁস, বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, পাতারি হাঁস, ফুলুরি হাঁস, পিয়ং হাঁস, গিরিয়া হাঁস, সিথি হাঁস, নীল শির হাঁস, মান্ডারিন হাঁস, লালঝুটি ভূতি হাঁস, পাতি ভূতি হাঁস, মরচে রঙ ভূতি হাঁস, বিয়ারের ভূতি হাঁস, টিকি হাঁসসহ আরও চার প্রজাতির হাঁস। হাঁস দেখতে বেশ বড়, শীতে সংকীর্ণ হয়ে থাকা জলাশয়ে বসে, ফলে একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি দেখা যায়। তাই আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে অতিথি পাখি মানেই হাঁস। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এরা ডেরা বাঁধতে থাকে বাংলাদেশে। ছোট পাখির দলে শুধু এরাই নয়, আরও প্রচুর পাখি রয়েছে খোদ ঢাকা শহরে, যারা শীতে আশ্রয় নিয়েছে বড় বড় গাছে। এই গাছের পাখিগুলোর তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফ্লাইক্যাচার [চুটকি], বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার [ফুটকি] আর থ্রাশ [দামা]। হলদে পেট ফুটকি, সবুজ চান্দি ফুটকি, বাচাল নীল ফুটকি, নীলশীষ দামা, কমলা দামা, বিভিন্ন প্রজাতির খঞ্জন আর চুটকিসহ আরও প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি। পাখিগুলোকে একটু মনোযোগ দিয়ে খুঁজলে পেয়ে যাবেন গাছপালা ভরপুর এলাকায়। এরপর বলা যেতে পারে চখাচখির কথা। বাঙালি কবিদের কবিতায় বারবার চলে আসে এসব পাখির নাম।
জীবনানন্দ
দাশ তার অসংখ্য কবিতায় বিভিন্ন পাখির কথা
লিখেছেন। অথচ এই পাখিও কিন্তু পরিযায়ী। মাত্র ২-৩ মাস এরা প্রজনন ঋতুতে তিব্বতে থাকে, ৬-৭ মাস
বাংলাদেশে আর বাকিটা সময় পথে। হাঁস আর ছোট পাখির দলকে বাদ দিলে আরও একটি দল বাংলাদেশে আসে সৈকত পাখির দল। বাটান ও জিরিয়া পরিবারের এ পাখিগুলো নদীর ও সমুদ্রের ধারে কাদায় থাকা পোকামাকড় খায় বলেই এই নাম। এই দলে রয়েছে ৬০ জাতের পাখি। হাঁসের চেয়ে আকারে ছোট। তবুও বেশ সহজেই চোখে পড়ে। গুলিন্দা, জৌরালি এই দলের পাখি। এই পাখিগুলোকে বেশি
পাওয়া যায় উপকূলীয় অঞ্চলে। বেলনের গুরগুরি, কুট, ছোট শিলাবাটান, বড় শিলাবাটান, ঢেঙ্গা, লাল ঢেঙ্গা, বড়বাবু বাটান, মেটে মাথা তিতি, বড়ঢুল
জিরিয়া,
ছোটঢুল জিরিয়া, চোটন
জিরিয়া,
কেন্টিস জিরিয়া, কালো
লেজ জৌরালি,
ডোরালেজ জৌরালি, বড়
গুলিন্দা,
ছোট গুলিন্দা, লাল-পা, টিলা লাল-পাসহ আরও প্রচুর পাখি রয়েছে এই দলে। আমাদের দেশে ১২ রকম
মাছরাঙা রয়েছে, যেখানে পুরো আমেরিকা মহাদেশে রয়েছে মাত্র এক প্রজাতির! শীতের সময় এসব অতিথি পাখিদের কেন্দ্র করে আমাদের হাওর অঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠে। অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে দেশের হাওরগুলো বিশেষ পর্যটন তৈরি করা যেতে পারে।
এসব অতিথি পাখি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এজন্য আমাদের দেশে অতিথি পাখি বিষয়ে আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে।
মাহির
আহসাব শান্ত
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৩
জানুয়ারী ২০১২ ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।