Oleo-resin Capsicum |
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
পুলিশ সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বা
আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করতে নতুন এক ধরনের স্প্রে ব্যবহার করছে। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ণ এ স্প্রে পিপার বা
ওসি (Oleo-resin Capsicum) স্প্রে হিসেবে
পরিচিত। পিপার স্প্রে কারো ওপর নিক্ষেপ করলে কমপক্ষে
৩০ মিনিট ধরে কষ্টদায়ক পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। শুধু সাময়িক যন্ত্রণাই নয়, চিরস্থায়ী শ্বাস কষ্ট, হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং স্থায়ীভাবে ত্বক ও চোখের রোগে আক্রান্ত করতে পারে এ পিপার
স্প্রে। কেবল আক্রান্ত ব্যক্তিই নন, এ স্প্রের ক্ষতিকর রাসায়নিকে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই
প্রায় ২৫ বছর আগে এসব গ্যাস ছোড়া বন্ধ করে দেয়
যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ। বর্তমানে সেসব দেশে
এটি ব্যবহৃত হচ্ছে কেবল সেনাবাহিনী ও পুলিশের
নিজেদের মধ্যকার রাসায়নিক যুদ্ধের মহড়া বা জনগণকে ভয়ঙ্কর জীবজন্তু থেকে রক্ষা করতে।
অভিযোগ উঠেছে, ৯ জানুয়ারি রাজধানীতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর নিক্ষেপের কারণে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। একই দিনে আন্দোলনরত ডেন্টাল হেল’ শিক্ষার্থীদের ওপরও পুলিশ এ স্প্রে নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রায় ১৫ জন জ্ঞান হারালে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেন, ক্যাপসিসিম (মরিচ জাতীয়) গ্রুপের বিভিন্ন গাছ থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্যাপসিকাম (মোম জাতীয় পদার্থ) সংগ্রহ করা হয়। তরপর এটিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ইথানলের সঙ্গে মিশ্রিত করে এ স্প্রে তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, মানবদেহের জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এর প্রধান কাজ শ্বাস নালীকে সংকুচিত করে প্রদাহ সৃষ্টি করা এবং ৩০-৪০ মিনিট দৃষ্টিশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করা।
ড. মুনীরউদ্দিন বলেন, কোনো অ্যাজমা রোগীর ওপর এ গ্যাস নিক্ষেপ করলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যেতে পারেন। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে গোটা জনপদে। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তি জরায়ু, রক্তনালী, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস জটিলতায় পড়তে পারেন। দেখা দিতে পারে ক্যান্সার ও মস্তিষ্ক প্রদাহ। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে লসঅ্যাঞ্জেলস টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০-৯৫ সময়কালে এই স্প্রে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ৬০ জন লোক প্রাণ হারায়। এ ছাড়া আমেরিকার আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ান ১৯৯৩ সালে পিপার স্প্রে আক্রান্ত ২৭ ব্যক্তি পুলিশ কাস্টডিতে মারা যান। এ থেকেই বোঝা যায়, এ স্প্রে কতটা ভয়াবহ। তিনি আরো বলেন, বার বার কোনো ব্যক্তির ওপর এ স্প্রে প্রয়োগ করলে জেনেটিকাল সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। যা পরবর্তী প্রজšে§র ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। হরতালে এর ব্যবহার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এসব গ্যাস ব্যবহার করে। গত কয়েকটি কর্মসূচিতে ব্যবহার করে বাংলাদেশ পুলিশও সফল হয়েছে। তবে এসব গ্যাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সিপিবি বাসদের গতকালের হরতালে পুলিশ বার বার নেতাকর্মীর ওপর এ স্প্রে ব্যবহার করলে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ভয়ঙ্কর জীবজন্তুর হাত থেকে জনপদকে রক্ষা করার জন্য উন্নতবিশ্বে শুধু এগুলো ব্যবহার করা হয়। মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর হওয়ায় পৃথিবীতে যখন এ স্প্রে নিষিদ্ধ করা হলো তখন বাংলাদেশ সরকার এ দ্রব্য আমদানি করেছে। এবং অন্যায়ভাবে তা ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, এ স্প্রে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর নয়, নিক্ষেপকারীর জন্যও সমান ক্ষতিকর। ইতিমধ্যে আমেরিকান সৈন্যরা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করছে।
রাশেদ রাব্বি
সূত্রঃ মানব কন্ঠ, ১৭ জানুয়ারী ২০১৩ ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।