যুদ্ধ আর মৃত্যু যেন একে-অন্যের
প্রতিশব্দ। তাই যুদ্ধের কথা মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে আসে বিভীষিকাময় এক দৃশ্য। সভ্যতার আদি থেকেই ক্ষমতা
দখল ও নানামুখী বিরোধের জের ধরে পৃথিবীর
ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। আর এ যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে অনেক
নগর এমনকি সভ্যতাও। একের পর এক যুদ্ধ বৈশ্বিক
সভ্যতার অগ্রগতিকে করেছে বাধাগ্রস্ত মানবিকতাকে করেছে
বিপন্ন। পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য ভয়াবহ যুদ্ধের ভেতর থেকে ভয়াবহতম কতগুলো যুদ্ধের কথা।
দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ
আধুনিক আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহতম
যুদ্ধের নাম দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ। যুদ্ধ যে কতটা
রক্তাক্ত, কতটা বিধ্বংসী হতে পারে তার জ্বলন্ত
দৃষ্টান্ত বয়ে বেড়াচ্ছে দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ। এই
ভয়াবহতম যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল আফ্রিকার সাতটি জাতি
এবং সঙ্গে সমরাস্ত্রে সজ্জিত ২৫টি আর্মড গ্রুপ। এ যুদ্ধটিকে অনেকে গ্রেট ওয়ার অব আফ্রিকা বলে অভিহিত করে থাকে।
প্রথম কঙ্গো যুদ্ধ বন্ধের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই প্রথম
যুদ্ধের ভয়াবহতাকে হার মানিয়ে ২০০৮ সালে যুদ্ধটি শুরু
হয়।
প্রথম
কঙ্গো যুদ্ধের ইস্যুগুলোকে সামনে রেখেই গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রতিষ্ঠা বা খনিজ সম্পদের ওপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুদ্ধটি
বাধে। স্বার্থের কাছে অন্ধ হয়ে ভাই ভাইয়ের রক্ত দিয়ে
আনন্দ প্রকাশ করার এ যেন এক অনন্য উদাহরণ। এ যুদ্ধে
কমপক্ষে ৫৪ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আর লাখ লাখ মানুষ নিজেদের সম্পদ ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ্বববর্তী দেশগুলোতে
উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেয়। লাখ লাখ গৃহহীন
মানুষের এ যেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়া। খাদ্য আর অপুষ্টিতে ভোগা নিরীহ মানুষগুলোকে দেখলে মনের অজান্তে যুদ্ধকে ধিক্কার
জানাতে ইচ্ছা হবে।
অফিসিয়াল হিসাব মতে, ২০০৩ সালের জুলাই মাসে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এ যুদ্ধ থেমে যায়। কিন্তু ২০০৪ সালে কঙ্গোর ওপর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এ বছরের প্রতিটি দিন অপুষ্টি আর খাদ্যাভাবে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার মানুষ মারা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহতম যুদ্ধ হিসেবে ইতিহাসবিদরা দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধকে মনে করেন।
রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ
পৃথিবীতে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে যে
যুদ্ধ হয়েছিল তার নাম রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ। এ যুদ্ধটি ১৯১৭
সালের ২৫ অক্টোবর তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাশিয়ান সাম্রাজ্য পতনের পর সংঘটিত হয়। যুদ্ধটি মূলত 'বলশেভিক রেড আর্মি' এবং 'হোয়াইট আর্মি'র মধ্যে সংঘটিত হলেও বহু বিদেশি আর্মি এ
যুদ্ধে রেড আর্মির বিপক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল। এ
বৈদেশিক আর্মি গ্রুপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল 'আলাইন্ড ফোর্স' এবং 'প্রো জার্মান আর্মি'। দক্ষিণ রাশিয়ার ইউক্রেনে রেড অ্যালেকসান্ডার কোলচ্যাকের নেতৃত্বে
হোয়াইট আর্মিদের পরাজিত করে। এ ছাড়াও ১৯১৯ সালে
সাইবেরিয়াতে রেড আর্মিরা হোয়াইট আর্মিদের পরাজিত করে। তা ছাড়াও এ অঞ্চলের বাইরে হোয়াইট আর্মিদের
নেতৃত্বে থাকা পিওথর নিকোলাইভিচ র্যানেগেল ক্রিমাতে পরাজিত
হন। পরবর্তীতে অনেক স্বাধীনতাকামী আন্দোলনকারী দল এ
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
তাদের মধ্যে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ড মিলে সোভিয়েত স্টেট করেছিল। আর অন্যরা আগের রাশিয়ান সাম্রাজ্যের ধ্যান-ধারণা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল। ভয়াবহতম এ যুদ্ধটি ১৯১৭ থেকে শুরু করে ১৯২১ সাল পর্যন্ত চলছিল। এ যুদ্ধে আনুমানিক ৯০ লাখ লোক প্রাণ হারান।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে বলা হয় ছিল সভ্য
যুগের সর্বপ্রথম অসভ্য যুদ্ধ। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে
ঘটে যাওয়া ভয়াবহতম এই যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় চার বছর। এটি ইউরোপিয়ান মহাযুদ্ধ নামেও পরিচিত ছিল। পৃথিবীর
ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম যুদ্ধ, যা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণ হারায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ। শুধু কী তাই? আহত হয় দুই কোটিরও বেশি মানুষ। এই যুদ্ধে তিনটি সাম্রাজ্যের পতন হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ব
মানচিত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়।
প্রথম
যুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই এবং শেষ হয় ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর। এই যুদ্ধ মূলত শুরু হয় অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় আর
সার্ভিয়ার মধ্যে। পরে দুই দেশের পক্ষ হয়ে নানা দেশ এই যুদ্ধে
জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়
সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত
হয়। এই যুদ্ধের কারণ হিসেবে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য বসনিয়া-হার্জেগোভিনা
দখল করা এবং আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে কেন বিভিন্ন
দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তা বুঝতে হলে আপনাকে নিচের অংশটুকু পড়তেই হবে। ফ্রান্সের ঐতিহাসিক শত্রুতার কারণে ব্রিটেন প্রথমদিকে
জার্মানির প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিল। কিন্তু জার্মানি
ব্রিটেনের সঙ্গে নৌ-প্রযুক্তিতে পাল্লা দিতে শুরু
করায় সম্পর্কটি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে। ফ্র্যাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের পর থেকে জার্মান ও ফরাসিদের
সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ফরাসিরা তাই রাশিয়ার সঙ্গে
মৈত্রী করে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি রাশিয়াকে হুমকি
হিসেবে দেখত, তাই তারা জার্মানির সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি
করে। সার্বিয়ার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে স্লাভ
জাতীয়তাবাদ জোরদার হয়ে ওঠে। সুযোগ পেয়ে এবার অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি
সার্বিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলে। সার্বিয়ার মিত্র রাশিয়া, সেই জোরে সার্বিয়া হুমকি অগ্রাহ্য করার সাহস দেখায় এবং সৈন্য সমাবেশ শুরু করে। বিভিন্ন মৈত্রী চুক্তি, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন পর্যায়ে সত্যের বিভিন্ন বিকৃতি রাষ্ট্রনায়কদের যুদ্ধের
সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। ২৮ জুলাই ১৯১৪ অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি
সার্বিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরদিন
রাশিয়া সৈন্য সমাবেশের মাধ্যমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে জার্মানিও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এদিকে সার্বিয়ার সমর্থনে
ফ্রান্স সৈন্য সমাবেশ শুরু করে_ সব মিলিয়ে ঘটনা জড়িয়ে যায় চারদিকে।
অন্যদিকে জার্মান নিরপেক্ষ বেলজিয়াম আক্রমণ করলে তখন পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের জন্য রাশিয়া যুদ্ধ ত্যাগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি জাহাজে করে ফ্রান্স ব্রিটেনের জন্য রসদ যাওয়ার সময় জার্মান সাবমেরিন তাদের ডুবিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগ দিয়ে এটিকে বিশ্বযুদ্ধে রূপ দেয়। মূলত এর পরই জার্মানের পরাজয় নিশ্চিত হয়। এ যুদ্ধের প্রথম সংঘর্ষটি হয় ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে আফ্রিকায়, ৭ আগস্ট ১৯১৪ সালে। অস্টিয়া-সার্বিয়ান সৈন্য দ্বারা ১২ আগস্ট ১৯১৪ কলুবারায় আক্রান্ত হয়। রাশিয়া ১৭ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জার্মান দ্বারা আক্রান্ত হয়, যা ট্যানেনবার্গ নামে পরিচিত। রাশিয়ান সৈন্যরা ৬০০০০-২০০০০০ ইহুদিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। জার্মান সেনাবাহিনী ১৯১৪ সালের আগস্ট ও নভেম্বরে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের ৬৫০০০ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে। জার্মান সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৫০০০-২০০০০ বিল্ডিং ধ্বংস হয়, এর মধ্যে বেলজিয়ামের ল্যুভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিও ছিল। এ ছাড়া জার্মান সৈন্যরা বেলজিয়ামে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত করে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ
পৃথিবীর ইতিহাসে গণহত্যার জন্য সবচেয়ে
কুখ্যাত যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধকে। এই
যুদ্ধ এখনো মানুষকে আন্দোলিত করে, শিহরিত করে আর শান্তির পথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। বিশ্বের
সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও পরাশক্তি মানা হয় আমেরিকাকে। যুগ যুগ
ধরে পৃথিবীর ভয়াবহতম যুদ্ধগুলোর সঙ্গে আমেরিকার কোনো
না কোনো যোগসাজশ ছিল। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতায় অধিকাংশ যুদ্ধেই আমেরিকানরা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধ
হচ্ছে প্রথম যুদ্ধ, যাতে আমেরিকা হেরে
যায়। এ যুদ্ধকে ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত সবচেয়ে বড় সংঘাত হিসেবে মানা হয়।
এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল আমেরিকানদের সাম্রাজ্যবাদ
বিরোধিতা। অর্থাৎ সাম্যবাদী শাসন বা কমিউনিজম যেন সারা
বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে না পারে সে জন্যই আমেরিকা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে যুদ্ধের শুরুটা
হয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনাম আর উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে।
মাঝখান থেকে আমেরিকা যুক্ত হলে যুদ্ধ তার গতিপথ পরিবর্তন
করে এবং ভয়াবহ রূপ নেয়। আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে ১৯৬৫ সালে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে
এটি সরকারিভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক
প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এ যুদ্ধে প্রায় ৩২ লাখ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সঙ্গে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ লাও ও কম্বোডীয়
জাতির লোক মারা যান। মার্কিনিদের প্রায় ৫৮ হাজার
সেনা নিহত হয়।
তৈমুরের জয়
ইতিহাসে অন্যতম ঘৃণিত নিন্দিত সাম্রাজ্য
লাভে মত্ত চরিত্র তৈমুর লং। ক্ষমতার ক্ষুধায়
তৈমুর বিশ্ব জয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সময়টি ছিল ১৩৬৯ সাল। তৈমুর তার রাজ্য বিস্তৃতিতে বের হয়ে এশিয়ার মধ্য এবং পশ্চিম
অংশ দখল করে নেয়। তার জয়রথ দীর্ঘ ৩৭ বছর ১৩৬৯ থেকে ১৪০৫
সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তিনি বহুমাত্রিক চরিত্রের
অধিকারী হলেও মূলত তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় মুসলিম সাম্রাজ্য। শিল্পকলার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তার হাতে ধ্বংস হয়
পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু শহর।
তার হত্যাযজ্ঞ এতটা
ভয়াবহ ছিল যে, শুধু দিলি্ল জয় করতে ১ লাখ মানুষ হত্যা করেন। এ ছাড়া তৎকালীন জ্ঞানের আলোকবর্তী শহর
বলে বিবেচিত ইরাকের বাগদাদ শহর দখলে ৯০ হাজার
মানুষকে হত্যা করেন। এশিয়া মহাদেশই শুধু নয়, ইউরোপের রাশিয়া পর্যন্ত তিনি তার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রাজ্য দখল
করেন। এ ছাড়া মুসলমানদের সাম্রাজ্য বলে বিবেচিত অটোমান
সাম্রাজ্যে তিনি রক্তের বন্যা বইয়ে দেন।
ইতিহাসে উলি্লখিত ভয়াবহ এই যুদ্ধে আনুমানিক দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। তৎকালীন হিসাব মতে, বিশ্বের মোট
জনসংখ্যার শতকরা ৩.৪ থেকে ৪.৫ ভাগ এ যুদ্ধে নিহত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব
মানচিত্রকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও
দীর্ঘতম যুদ্ধটির মাত্র ২৫-৩০ বছর না পেরোতেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের খড়গ নেমে এলো শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর কপালে।
গোটা পৃথিবী বিস্ময় আর বিহ্বল চোখে তাকিয়ে দেখল আরও
একটি ধ্বংসযজ্ঞ। দেখল আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ।
এই
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় আর ধ্বংসাত্দক যুদ্ধ বলা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধে গোটা পৃাথবী
লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। ভয়াবহ এই যুদ্ধে আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লাখ
মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার নাগরিক। নিহতের এই
বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের
ব্যাপক ব্যবহার। আধুনিক সময়ে সংঘটিত এই যুদ্ধে অস্ত্র
হিসেবেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার এই যুদ্ধের ভয়াবহতাকে কয়েক হাজার
গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য
পৃথিবীর ইতিহাসে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। তিনি অ্যাডলফ
হিটলার। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। মিত্রপক্ষে ছিল
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও গণচীন। জার্মানির সঙ্গে ছিল ইতালি ও জাপান। এই যুদ্ধে প্রথমে রাশিয়া অংশগ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে জার্মানি
রাশিয়াকে আক্রমণ করে যুদ্ধে বাধ্য করে।
এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিত্রশক্তির বিজয় হয়। জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়। বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্দপ্রকাশ করে আর রাশিয়া আমেরিকা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হয় আর এর শিকার হয় জাপান। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে আধুনিক সময়ের এই যুদ্ধের ভয়াহতার কারণে মানুষ একে কখনো ভুলতে পারবে না।
তাইপিং অভ্যুত্থান
১৮৫০ থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ
চীনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের নাম তাইপিং অভ্যুত্থান। শাসক
মানচুর নেতৃত্বাধীন কিং রাজবংশের বিরুদ্ধে অন্যতম অভ্যুত্থান। তাইপিংয়ের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন হং
জিউজুয়ান। তিনি ঘোষণা করেন যে- স্বপ্নে তিনি দেখেছেন, তিনি যিশু খ্রিস্টের ছোট ভাই। তিনি তাইপিং হ্যাভেনলি কিংডম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার রাজধানী ছিল
ন্যানজিং। ৩০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর চীনের দক্ষিণাঞ্চল এই
রাজ্যের সেনারা দেখভাল করত।
এই যুদ্ধের এজেন্ডা ছিল সামাজিক পরিবর্তন, যেখানে নারী-পুরুষ সমান সম্পদের মালিক হবে। এ ছাড়াও চীনের সনাতন ধর্ম এবং কনুফুসিয়াস মতবাদ খ্রিস্টান সম্প্রদায় মেনে চলবে। অপরদিকে কিং রাজতন্ত্র এটি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ফ্রান্স ও রাশিয়ার সহায়তায় তাইপিংদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অরাজকতা শুরু হয়। শুধু তাই নয়, সাধারণ জনগণ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। তৎকালীন হিসাব মতে, এই আত্দঘাতী গৃহযুদ্ধে তিন কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, যা বিশ্বের তৎকালীন বসবাসকারী জনসংখ্যার শতকরা ১.৬ থেকে ২.১ ভাগ।
এই যুদ্ধের এজেন্ডা ছিল সামাজিক পরিবর্তন, যেখানে নারী-পুরুষ সমান সম্পদের মালিক হবে। এ ছাড়াও চীনের সনাতন ধর্ম এবং কনুফুসিয়াস মতবাদ খ্রিস্টান সম্প্রদায় মেনে চলবে। অপরদিকে কিং রাজতন্ত্র এটি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ফ্রান্স ও রাশিয়ার সহায়তায় তাইপিংদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অরাজকতা শুরু হয়। শুধু তাই নয়, সাধারণ জনগণ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। তৎকালীন হিসাব মতে, এই আত্দঘাতী গৃহযুদ্ধে তিন কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, যা বিশ্বের তৎকালীন বসবাসকারী জনসংখ্যার শতকরা ১.৬ থেকে ২.১ ভাগ।
মোঙ্গল জয়
তের
এবং চৌদ্দ শতাব্দীতে অন্যতম সাম্রাজ্যের নাম মোঙ্গল। যদিও সাম্রাজ্যটি মধ্য এশিয়া থেকে শুরু হয়েছিল, তবে এর ব্যাপকতা পশ্চিম ইউরোপ থেকে জাপান
সাগর, উত্তর
দিকে সাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ দিকে এগিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটিকে বিশ্ব ইতিহাসে
অন্যতম দীর্ঘ সাম্রাজ্য বলে আখ্যায়িত করা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতে, তৎকালীন মোঙ্গল যুদ্ধে মানব জাতির ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ধ্বংস এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত দখল করার নজির সত্যিই বিরল। মোঙ্গলরা যে অস্থির যুদ্ধকেন্দ্রিক পরিস্থিতি ইউরোপে সৃষ্টি করেছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এত মাত্রায় তা আর দেখা যায়নি। মোঙ্গলদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিপুলসংখ্যক মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের পশ্চিম অংশের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পৃথিবীর রাজ্য দখলের এ ভয়াবহতম মঙ্গল জয় যুদ্ধে নিহত হয়েছিল আনুমানিক ছয় কোটি মানুষ। যা তখনকার সময়ে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭.৫ থেকে ১৭.১ ভাগ।
ঐতিহাসিকদের মতে, তৎকালীন মোঙ্গল যুদ্ধে মানব জাতির ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ধ্বংস এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত দখল করার নজির সত্যিই বিরল। মোঙ্গলরা যে অস্থির যুদ্ধকেন্দ্রিক পরিস্থিতি ইউরোপে সৃষ্টি করেছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এত মাত্রায় তা আর দেখা যায়নি। মোঙ্গলদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিপুলসংখ্যক মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের পশ্চিম অংশের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পৃথিবীর রাজ্য দখলের এ ভয়াবহতম মঙ্গল জয় যুদ্ধে নিহত হয়েছিল আনুমানিক ছয় কোটি মানুষ। যা তখনকার সময়ে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭.৫ থেকে ১৭.১ ভাগ।
রণক ইকরাম ও হাসানুর রহমান
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ মে ২০১৩
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।