সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: বিশ্বখ্যাত নদ-নদী

বিশ্বখ্যাত নদ-নদী


 

অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার আমাদের এই পৃথিবী। আর এই সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে গাছপালা-ফুল-পাখি-নদী-জল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে জালের মতো জড়িয়ে আছে নানা নদ-নদী। কোনো কোনো নদী দেশ-কাল আর জাতির সীমা ছাড়িয়ে পেয়েছে বৈশ্বিক রূপ। এসব নদীর সৌন্দর্য যেমন যে কাউকে বিমোহিত করে, তেমনি ভৌগোলিক ভারসাম্যে এদের অবদান অনস্বীকার্য। কোনোটি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত, তো কোনোটি আবার দৈর্ঘ্যের দিক থেকে সর্ববৃহৎ। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিখ্যাত সব নদ-নদীর গল্প পড়ুন। 

 

উত্তরের মিসিসিপি

উত্তর আমেরিকার ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনার প্রধান নদী মিসিসিপি। যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। এর ড্রেনেজ সিস্টেম এতটাই দীর্ঘ যে, তা কানাডা পর্যন্ত বিস্তৃত। ড্রেনের দীর্ঘ ব্যাপকতায় আমেরিকার ৩১টি রাজ্য এবং কানাডার দুটি রাজ্য যার মধ্যে রয়েছে রকি এবং আপ্পালাচেইন পর্বতমালা। মিসিসিপি নদীটি পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে। আর বিস্তৃতির দিক দিয়ে দশম স্থানে। নদীটি মার্কিন মুলুকের মিনেসোটা, উইসকনসিন, লোওয়া, ইলিনেহিচ, মিসৌরি, কেনটাকি, টেনেসে, আরকানসাস, মিসিসিপি এবং লুইজিয়ানার মতো উল্লেখযোগ্য রাজ্য দিয়ে কিংবা অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়েছে।

 

নদীটির তীর ঘেঁষে বসতি আছে আদিবাসী মার্কিনিদের। বসবাসরত আদিবাসী মার্কিনিদের অধিকাংশের পেশা শিকার করা বা কৃষিকাজ। তবে ১৫০০ সালে নদীটির তীরে ইউরোপিয়ানদের অনুপ্রবেশ ঘটলে আদিবাসী মার্কিনিদের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। নদীটি নিউ স্পেন, নিউ ফ্রান্স এবং আমেরিকা আবিষ্কারের প্রথম দিকে নদীপথে যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উনিশ শতকে পশ্চিম দিকে আমেরিকার বিস্তৃতিতে মিসিসিপি এবং মিসৌরির মতো নদীগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে ছিল খুবই কার্যকর। মিসিসিপি নদীর উপত্যকাকে ফসল উৎপাদনের জন্য পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম উর্বর ভূমি বলে মনে করা হয়। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় নদীটি ইউনিয়ন নামক শক্তির হাতে চলে যায়। কারণ হিসেবে ছিল বাণিজ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীটির উপযুক্ততা। উনিশ শতকের দিকে নদীটির তীরে একদিকে যেমন শহর প্রতিষ্ঠা হয়, ঠিক তেমনি কল-কারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে ওঠে। আর বর্তমান সময়ে উন্নতির জোয়ারে নদীটির তীরে চাষাবাদ আর জনসংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে, তা এখন পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়তই নদীর তীরে গড়ে উঠছে নিত্যনতুন শিল্প-কলকারখানা, বসবাসের জন্য আবাসন।

 

আলতাই থেকে ওবি

ওবি নদীটি পশ্চিম সাইবেরিয়া আর রাশিয়ার বিখ্যাত নদী। এটি পৃথিবীর সপ্তম দীর্ঘতম নদী। সুমেরু মহাসাগরে মিলিত হওয়া সাইবেরিয়ান নদীগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এ নদীটিকে খানটি সম্প্রদায়ের লোকজন ইয়েমা আর সাইবেরিয়ান টাটারসরা উমার বলে চেনে। নদীটির দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪৫৯ মাইল। নদীটি সাইবেরিয়ান বিয়া এবং কাতুন নদী থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। আর এ নদীটির উৎপত্তিস্থল আলতাই পর্বতমালা। যদিও নদীটি একভাবে দীর্ঘ তবু এটির মোহনায় চায়নার বিখ্যাত এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নদী ইরথিশের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। 

 

ওবির আকৃতি উত্তর এবং পশ্চিমের দিকে এঁকেবেঁকে ৫৫ ডিগ্রি বেঁকে ৬০০ মাইল দূরের কারা সমুদ্রে মিশেছে। আর ওবি-ইরিতাশ নদী দুটি একত্রে ৫,৪১০ কিলোমিটার। নদী দুটির বেসিন এলাকা দুই লাখ ৯৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। ভৌগোলিকভাবে নদীটির বেসিনগুলো তাইজা, সুয়াম্পস, তুন্দ্রা এবং সেমি ডেজার্ট। বন্যার সময় নদীটির পানিতে অনেক লেক এবং হ্রদ প্লাবিত হয়। নভেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ওবি নদীর দক্ষিণাংশে অবস্থিত রারনাউল অঞ্চল বরফ আচ্ছাদিত থাকে। আর উত্তরাংশের সালেকহার্ড অঞ্চলের ১০০ মাইল পর্যন্ত অংশ অক্টোবরের শেষ থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত বরফ আচ্ছাদিত থাকে। নদীটি অনেকগুলো জলবায়ু অঞ্চল অতিক্রম করেছে। ওবি ভ্যালির উপরের অংশের দক্ষিণ দিকে আঙুর, তরমুজ জন্মে। অপরদিকে নিম্নাংশ সুমেরু তুন্দ্রা অঞ্চলে মিশেছে। প্রাকৃতিক আবহাওয়ার ভিন্নতার কারণে নদীটির তীরবর্তী অঞ্চল মানুষের বসবাসের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়।

 

 

সাত রাজ্যের ইয়েলো

ইয়েলো নদী বা হোয়াংহো এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। আর পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীগুলোর মধ্যে এর অবস্থান ষষ্ঠ। নদীটি পাঁচ হাজার ৪৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। পশ্চিম চীনের কুইনঘাই রাজ্যের বায়ান হার পর্বতমালা থেকে নদীটির উৎপত্তি। ইয়েলো নদীটি চীনের সাতটি রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া সানডং রাজ্যে অবস্থিত বোহাই সমুদ্রে পতিত হয়েছে। ইয়েলো নদীর বেসিন পূর্ব-পশ্চিমে ১৯০০ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর নদীটির পুরো বেসিন এলাকা সাত লাখ ৪২ হাজার ৪৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত। 

ইয়েলো নদীটিকে প্রাচীন চীনা সভ্যতার সূতিকাগার বলা হয়। কারণ চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চল এটির বেসিন ওয়ে নদী উপত্যকায় পড়েছে। তবে ঘন ঘন বন্যা এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অনেকের কাছে নদীটি 'চীনের দুঃখ' বলে পরিচিতি পেয়েছে। প্রাচীন চীনা সাহিত্যে শুধু ইয়েলো নদীকে নদী বলে আখ্যায়িত করলেও হান শাসনামলে নদীটিকে তার কাদাপানির রং হলুদের সঙ্গে মিলিয়ে ইয়েলো নদী নামকরণ করেছে। বর্তমান চীনা সভ্যতা বিনির্মাণে ইয়েলো নদীর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। এর তীরে সাম্প্রতিক সময় কৃষিকাজের পাশাপাশি শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে।

 

 

মিশরের নীল নদ

বিশ্বের দীর্ঘতম নদের নাম নীল নদ। যার দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিক স্তরের সমাজ বইয়ে নীল নদ ও মিসরীয় সভ্যতার ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। নীল নদের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে প্রাচীন মিসরের সভ্যতা। প্রতি বছর নীল নদের বন্যায় পলি পড়ে অতিমাত্রায় উর্বর হয়ে ওঠা উভয় তীরে প্রচুর ফসল হতো। এ ছাড়া খালের সাহায্যে পানি নিয়ে নীল নদের দুই তীরের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতেও চাষাবাদ করা হতো। আফ্রিকা মহাদেশের এই নীল নদ বিশ্বের দীর্ঘতম নদীরও স্বীকৃতি পেয়েছে। এর দুটি উপ-নদ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে শ্বেত নীল নদ ও নীলাভ নীল নদ। এর মধ্যে শ্বেত নীল নদ দীর্ঘতর। শ্বেত নীল নদ আফ্রিকার মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়েছে। এর সর্বদক্ষিণের উৎস হলো দক্ষিণ রুয়ান্ডাতে। এটি এখান থেকে উত্তরদিকে তাঞ্জানিয়া, লেক ভিক্টোরিয়া, উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নীলাভ নীল (ব্লু নাইল) নদ ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ হতে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করেছে। দুটি উপনদই পরে সুদানের রাজধানী খার্তুমের কাছে মিলিত হয়েছে। নীল নদের উত্তরাংশ সুদানে শুরু হয়ে মিসরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মিসরীয় সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই নীলের ওপর নির্ভরশীল। 

 

মিসরের জনসংখ্যার অধিকাংশ এবং বেশির ভাগ শহরের অবস্থান নীল নদের উপত্যকায়। প্রাচীন মিসরের অনেক সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থানও এখানে। কঙ্গো, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, মিসর জুড়ে বিস্তৃত নীল নদ ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। পৃথিবীর সব নদ-নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হলেও নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের আরও একটি নদ হচ্ছে সিন্ধু। এটি দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে করাচি বন্দরের পাশ দিয়ে আরব সাগরে পড়েছে। এই নদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো বছরের নির্দিষ্ট সময় পৃথিবীর অন্যান্য নদী যখন শুকিয়ে যায় তখন নীল নদ পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। আর নীল নদ যখন শুকিয়ে যায় তখন অন্যান্য নদী পানিতে পূর্ণ থাকে। বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে নীল নদ ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে।

 

 

জলপ্রপাতে স্নিগ্ধ পারানা

পারানা নদীটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত। নদীটি ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার চার হাজার ৮৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। দক্ষিণ আমেরিকার নদীগুলোর মধ্যে আমাজান নদীর পরই পারানার স্থান। পারানা নামটি টুপি ভাষা থেকে আগত একটি শব্দ যার, অর্থ সমুদ্রের মতো।

নামকরণের সঙ্গে যথার্থতা পাওয়া যায় নদীটির ব্যাপকতা দেখলেই প্রথমত নদীটি প্যারাগুয়ের নদীর সঙ্গে মিশে নিম্নমুখী প্রবাহে উরুগুয়ের নদী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। দক্ষিণ দিকে ৬১৯ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে নদীটি প্যারাগুয়ের শহর সারাটোচ ডেল গুয়াইরার তীরে ঠেকেছে। আর এখানেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে পারানা ওয়াটার ফলস। ইতিহাসে এটি দক্ষিণাংশের সবচেয়ে বিখ্যাত ওয়াটার ফলস বা জলপ্রপাত বলে খ্যাত। তবে ১৯৮৪ সালে ইতাইপু ডেম নির্মাণ করা হলে জলপ্রপাতটি তার স্বকীয়তা হারিয়ে দক্ষিণ দিকে ২০০ কিলোমিটার এলাকায় প্রবাহিত হয়ে প্রাকৃতিকভাবে প্যারাগুয়ে এবং ব্রাজিলকে বিভক্ত করেছে।

 

 

স্রোতের ভিন্নতায় মিকং

মিকং নদী চীনে অবস্থিত। নদীটি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিশ্বের ১১তম এ নদীটি এশিয়ায় সপ্তম দীর্ঘতম নদী। প্রায় দুই হাজার ৭০৩ মাইল দীর্ঘ এ নদীটি ঋতু পরিবর্তনের কারণে প্রবাহের ভিন্নতা দেখা যায়। ২০০০ সালে প্রবল স্রোত ও জোয়ার-ভাটার কারণে বন্যা হয়। তখন বন্যায় প্রায় ৯০ জন লোক মারা যায়। নদীটি চীনের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে অনেকদিন ধরে। এই নদীকে পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ চীনের জীবন-জীবিকার লোকগাঁথা বললে ভুল হবে না।

 

 

বিস্ময়কর আমাজান

দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত আমাজান পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। আর চওড়ার দিক দিয়ে এটিই প্রথম। আমাজানের দৈর্ঘ্য প্রায় চার হাজার মাইল। আর গড়ে প্রায় সাড়ে সাত মাইল প্রশস্ত। আমাজান যেখানে সাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে সেখানে এর প্রশস্ততা প্রায় ২০২ মাইল। আন্দিজ পর্বতমালার যে অংশ ব্রাজিলে অবস্থিত, সেখান থেকেই এই নদীর উৎপত্তি। এরপর পেরু, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলার ভেতর দিয়ে এক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে আমাজান শেষমেশ গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর নদী বলা হয় 'আমাজান'কে। নদীটির নামকরণ করেছে স্প্যানিশরা। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী নারীরা হলেন 'আমাজান'। আর তাদের নামেই নামকরণ করা হয়েছে প্রমত্তা এই নদীটির। প্রতি সেকেন্ডে আমাজান থেকে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন গ্যালন পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যার তোড়ে মোহনা থেকে প্রায় ১০০ মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের পানিতে কোনো লবণাক্ততাই থাকে না। পৃথিবীর সব নদী একত্রে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে ফেলছে আমাজান একাই তার ২০ শতাংশ পানি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে। আর এ কারণেই আমাজানকে অনেক সময় ডাকা হয় 'সাগরনদী' নামে। স্থানবিশেষে আমাজানের গভীরতা প্রায় ৩০০ ফুট। বর্ষাকালে প্রশস্ততা আরও বেড়ে যায়। নদীর দুই পাড় আর মাঝখানের দ্বীপগুলোও ডুবে যায় পানির নিচে।

পৃথিবীর অন্যসব নদ-নদীর চেয়ে আমাজানের মোহনা চওড়া। আমাজানের প্রস্থ ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির দ্বীপ মারাকোর অবস্থান এ নদীর মোহনা। মারাকোর আয়তন প্রায় ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। আমাজান-আটলান্টিকের সঙ্গমস্থল থেকে ইকুইটাসের দূরত্ব প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। সারা বছরই এ অংশে পানির পৃষ্ঠ থেকে নদের তলদেশ পর্যন্ত গভীরতা ৪০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বজায় থাকে। সুতরাং এ স্রোতে বা গভীরতায় কারও আমাজানের তলদেশ স্পর্শ করার সাধ জাগলেও সেটা স্রেফ মামা বাড়ির আবদার বৈ আর কিছু নয়। আমাজান নদের প্রধান দুই শাখা নদী কুরুয়া ও মাদিরা ৩৩০ কিলোমিটার লম্বা। প্রায় এক হাজার ১০০ শাখা নদী আমাজানের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বছরের কোনো কোনো সময় পানির স্তরের ব্যাপক ওঠানামার অর্থ হলো সমগ্র আমাজান অববাহিকা বছরের কোনো না কোনো সময়ে প্লাবিত হওয়া।

  

সর্বোচ্চ প্রবাহের লিনা

লিনা নদী সিরিয়ার পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত। নদীটি বিশ্বের ১০তম দীর্ঘ নদী। সাগরে পতিত না হওয়া পর্যন্ত দুই হাজার ৭৩৪ মাইল বেগে পানি প্রবাহিত হয় এ নদীতে। উত্তর দিকে প্রবাহিত এ নদীটি আরও দুটি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ল্যাপটিভ সাগরে পতিত হয়েছে। সর্বোচ্চ প্রবাহের জন্য নদীটিকে চেনে অন্যভাবে। কারণ গ্রীষ্ম এবং বসন্তের সময় নদীর পানি সাধারণের চেয়ে উষ্ণ থাকে। ২০০৭ সালে এ নদীর পানি বেড়ে যায় এবং এক হাজারের চেয়ে বেশি ঘরবাড়ি এবং ১২টি শহর পানির নিচে চলে যায়। নদীটির তীর ঘেঁষে আছে দীর্ঘ জনবসতি। সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে নদীটি এতোটাই জড়িয়ে আছে যে জীবন-জীবিকার চাহিদা মেটায় এই বিখ্যাত নদী।

 

 

বাংলার ব্রহ্মপুত্র

এশিয়া মহাদেশে ব্রহ্মপুত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহে যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সাং পো নামে তিব্বতে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তখন এর নাম হয়ে যায় সিয়ং। তারপর আসামের ওপর দিয়ে দিহং নামে বয়ে যাওয়ার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরও দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। তারপর এটি ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের বাহাদুরাবাদ দিয়ে শুরু হয়ে তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের মধ্যে চলে গেছে। হিমালয়ের মধ্য দিয়ে আসাম উপত্যকা হয়ে আবার বাংলাদেশে। এক হাজার ৮০০ মাইল দীর্ঘ। বেশির ভাগ জলসেচনের জন্য ব্যবহার করা হয়। যখন নদীটির অধিকাংশ ব্যবহার উপযোগী হয় ঠিক তখনই বন্যা বিপর্যয়ের জন্য দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে যায়। এ নদী জোয়ার-ভাটার আশ্রয় কেন্দ্র নামেও পরিচিত। মানে সমুদ্র থেকে আসা জোয়ার-ভাটা নদীটি জলস্রোতের গতিপথের বিরুদ্ধ নিয়ে যায়। গবেষকরা একে সত্য সামুদ্রিক তরঙ্গ বলেছেন। এককালের প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদ বর্তমানে (২০১১) শীর্ণকায়। তিব্বতের কৈলাস পর্বতের হিমশীতল জলপ্রপাত, মানস সরোবরের নীলপদ্ম বিধৌত জলরাশি ও চেমাইয়াং ডং হিমবাহের স্রোতে সৃষ্ট প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্রের আদি রূপের বিবরণ এখন শুধু ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যাবে।

 

উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদের বাংলাদেশ অংশের পুরনো ব্রহ্মপুত্র এখন শুধুই যৌবনহারা মরা খাল। আবার কোথাও কোথাও এ নদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। যেন মানচিত্র থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান হাল এটি। দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘ এই নদকে ঘিরে দু'পারের হাজারও মানুষ শত বছর ধরে গড়ে তোলে তাদের জীবিকা। কিন্তু বর্তমানে মরা খালে পরিণত হওয়ায় প্রায় দুই হাজার বর্গকিলোমিটার অববাহিকায় বসবাসকারী বৃহত্তর ময়মনসিংহের এক কোটি মানুষ আজ পানির সুবিধা-বঞ্চিত। অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ব্রহ্মপুত্রের অস্তিত্ব আজ নাব্য সংকটে বিপন্ন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনা ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় পারের মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন তিন হাজার কিউসেক, সেখানে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পানিপ্রবাহ ছিল গড়ে মাত্র ৩০ কিউসেক। পাশাপাশি স্রোত না থাকায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে এ নদ। এর ফলে কৃষি কাজে নেমে এসেছে বিপর্যয়। জানা যায়, গত ৫০ বছরেও কোনো ড্রেজিং না হওয়ায় নদের তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।

 

হাসানুর রহমান


 

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৫ মে ২০১৩ খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।