আপনি কে এবং কাকে ই-মেল পাঠাচ্ছেন এবং কতবার
সেসব ই-মেলের উত্তর আসছে?
আপনি
কোন সার্ভার ব্যবহার করেন?
এসব
প্রশ্নের উত্তর থাকে মেটাডাটার মধ্যে৷ আপনার সম্পর্কে আপনার ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য
অন্যকে জানাতে পারে এই মেটাডাটা। আপনি যখন ইন্টারনেট
ব্যবহার করেন তখন বিভিন্ন রকম তথ্য তৈরি করেন যা সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা সম্ভব৷
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ ধরুন, একদিন আপনি গুগলে সস্তা ফার্নিচার খুঁজলেন৷ এরপর দেখতে পেলেন, আপনি যে ওয়েবসাইটেই প্রবেশ করেন না কেন, সেই ওয়েবসাইটের স্বয়ংক্রিয় বিজ্ঞাপনের ঘরে প্রদর্শন হচ্ছে সস্তা
ফার্নিচারের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন৷ অর্থাৎ আপনার খোঁজের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপনগুলো সাজিয়ে
পরিবেশন করছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷
বিভিন্ন ওয়েবসাইট আপনার পছন্দের বিষয়গুলি জানার
জন্য ‘কুকিস' অনুসরণ করে৷ এসব কুকিস ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর
ওয়েব ব্রাউজারেই জমা থাকে৷ এদের কাজ হচ্ছে আপনার পছন্দের বিষয় সম্পর্কে খোঁজ রাখা
এবং প্রয়োজনমত সেগুলো অন্য সেবাদাতাকে জানানো৷ আর আপনার ইন্টারনেট জীবন সম্পর্কে
বিভিন্ন তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ কেননা, এভাবে তারা সহজে আপনার আরো কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়৷
গোয়েন্দারা কুকিসের ব্যাপারে আগ্রহী নয়
তবে গুপ্তচর বিভাগ কুকিসের ব্যাপারে আগ্রহী নয়৷
তারা অনেক বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা' সম্পর্কে৷ নির্দিষ্ট কিছু
ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায় মেটাডাটা বা সহজ করে বললে আপনার সম্পর্কে
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ডিজিটাল ছবির কথা৷ এসব ছবির
সঙ্গে মেটাডাটা হিসেবে থাকে কোন ক্যামেরায় ছবিটি তোলা, ছবির রেজ্যুলেশন এবং অ্যাপারচারসহ বিভিন্ন তথ্য৷ কিছু ক্যামেরায়
তোলা ছবিতে আবার কোথায় সেটি তোলা হয়েছে সেই তথ্যও পাওয়া যায়, যদি ব্যবহারকারী ট্রাকিং ফাংশন বন্ধ করে না দেন৷এভাবে কে কাকে
ই-মেল করছে এবং কখন? সেই তথ্যও থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগে
পেতে চায়৷ একেবারে প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে
সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ
করা সম্ভব৷
ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি
(এমআইটি)-এর বিশেষজ্ঞরা ব্যবহারকারীকে এই বিষয়ে ধারণা দিতে একটি পাতা খুলেছে৷ ‘‘এনএসএ
ইওরসেল্ফ'' শীর্ষক এই পাতায় প্রবেশ করে একজন ব্যবহারকারী
জানতে পারেন,
তাঁর সম্পর্কে কতটা তথ্য মেটাডাটার মাধ্যমে অন্যের পক্ষে জানা
সম্ভব৷ বর্তমানে জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা এমআইটি-র বিশেষজ্ঞদের তৈরি এই
ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে পারেন৷ এভাবে অনেক তথ্যই জানা সম্ভব৷মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন ইতোমধ্যে গোটা
বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছেন৷ তিনি ইন্টারনেটে সাধারণ মানুষের উপর মার্কিন গোয়েন্দাদের
মাত্রাতিরিক্ত নজরদারি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেছেন৷ এমনকি যাঁরা মনে করেন
ইন্টারনেটে তাঁদের লুকানোর কিছু নেই, তাঁরাও এখন বিশ্বাস করছেন
যে গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড সম্ভবত শুধুমাত্র সন্দেহভাজনের ই-মেল পড়া বা ফোনে
আড়িপাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷মেটাডাটা থেকে তথ্য সংগ্রহ সম্পর্কে তথ্য প্রযুক্তি
বিশেষজ্ঞ ইয়র্গ ব্রুন্সমান বলেন, ‘‘প্রথমে শুধু তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ এরপর একটি
প্রোগ্রামের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু দিক নির্ধারণ করে সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়৷
সবকিছুই করা হয় মেশিনের মাধ্যমে৷''
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ওসামা বিন লাদেনের
কথা৷ দেখা গেল মেশিন বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে আবিষ্কার করেছে, জন স্মিথ নামক কাউকে ৩০ বার ই-মেল করেছে ওসামা বিন লাদেন৷ বিন
লাদেন এখন মৃত,
কিন্তু জন স্মিথ জীবিত৷ ফলে বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক৷ কিন্তু পরে যদি
ই-মেলের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা পোষা বিড়াল নিয়ে
আলাপ করেছেন,
তাহলে সেটা কোনো কাজের নয়৷
এনক্রিপশন কি সমাধান?
বর্তমানে খুব কম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ই-মেল
এনক্রিপ্ট করছে৷ তবে যেকেউ চাইলে এটা করতে পারে৷ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক
বুর্কহার্ড স্র্যোডার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইন্টারনেটে সহজেই
ট্রুক্রিপ্ট বা জেনুপ্রাইভেসিগার্ড-এর মতো প্রোগ্রাম পাওয়া যায়৷'' তবে সমস্যা হচ্ছে এনক্রিপ্ট তখনই কাজ করবে যখন, প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ই একই প্রোগ্রাম ব্যবহার করবে৷ আর মেটাডাটা
এনক্রিপ্ট হয় না৷ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সম্ভাব্য সমাধান হচ্ছে
ডার্কনেট ব্যবহার করা যেখানে টিওআর-এর মতো নেটওয়ার্কগুলো অনেক সার্ভারের সঙ্গে
একসঙ্গে কাজ করে এবং এসব নেটওয়ার্ক ক্রমাগত ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট ঠিকানা বদলাতে
থাকে৷ সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷
ইন্টারনেটে পদাঙ্ক রেখে যাওয়া
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন
ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ বিশেষ করে ফেসবুক এবং টুইটারে একজন
ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানাচ্ছেন না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও
বিভিন্নভাবে জানাচ্ছেন৷ আর এসব নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন তথ্য তৃতীয়
সেবাদাতাদের ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে৷ একইভাবে বিভিন্ন স্মার্টফোন অ্যাপসও
ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে৷ফলে
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ইন্টারনেটে কোনো কিছু শেয়ার করার আগে বেশি করা
ভাবা উচিত৷ অপ্রয়োজনে কোনো তথ্য শেয়ার না করাই ভালো৷ তবে বর্তমানে তথ্য শেয়ারের
চেয়েও বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে মেটাডাটা৷ কেননা, বাস্তবতা হচ্ছে এসব গোপন
ডাটাও ঘাটাঘাটি সম্ভব৷
সূত্রঃ DW.DE
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।