ইসলাম ধর্মের মূল গাইড লাইন হলো পবিত্র কোরআন। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এ গ্রন্থ সমগ্র মানবজাতির জন্য নাজিল হয়েছে। বিশ্বে অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ থাকলেও কোরআন সত্যিকার অর্থেই তুলনাহীন। ১৪০০ বছর আগে নাজিল হওয়া এই পবিত্র গ্রন্থের একটি অক্ষরও আজ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়নি। এ কৃতিত্ব অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থের নেই। কেয়ামত পর্যন্ত এ বিধান বহাল থাকবে।
মহানবী
(সঃ) বলেছেন, 'ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে কোরআন পড়া। তিনি আরো বলেন, তোমরা কোরআন পড়। কারণ কিয়ামতের দিন এই কোরআন স্বীয় পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।' (মুসলিম)
মহানবী (সঃ) তার অনুসারীদের বলেছেন,
'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কোরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা প্রদান করে।' (বুখারী)
মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে, 'লোহায় পানি লাগলে যেমন মরিচা ধরে তেমনি মানুষের অন্তরসমূহেও মরিচা ধরে। মহানবীকে (সঃ) জিজ্ঞাসা করা হলো 'হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতিষেধক কি? উত্তরে মহানবী (সঃ) বললেন, মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা এবং কোরআন তিলাওয়াত করা।'
কোরআন তিলাওয়াত মানবাত্দাকে পরিশুদ্ধ করে। মনে আনে অফুরন্ত ও অনাবিল প্রশান্তি। কোরআন তেলাওয়াত করা মুমিনদের জন্য সওয়াবের কাজ। এ মর্মে রাসূল (সঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে তার জন্য ১০টি নেকী রয়েছে।' (তিরমিযী)
কোরআন হলো জ্ঞানের সাগর। জ্ঞান আহরণ এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার জন্য কোরআন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংলাপ করা হয়।
হাদিসে এরশাদ হয়েছে, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চায় তবে সে যেন বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করে।' যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেছে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ। এ মর্মে রাসূল(সঃ) বলেন, 'কিয়ামতের দিন কোরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে,
কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে জান্নাতে প্রবেশ করতে থাক।' সুতরাং কোরআন পাঠ জান্নাতে প্রবেশের উছিলা।
রাসূল (সঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করেছে এবং তাতে যা আছে তদানুযায়ী আমল করেছে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির পিতা-মাতাকে এমন একটি নূরের মুকুট পরিয়ে দেবেন যার আলো সূর্যের আলো হতেও অধিকতর উজ্জ্বল হবে। আমাদের দুনিয়ার গৃহে সূর্যের কিরণ পতিত হলে ঘর যেরূপ আলোকিত হয়, তার আলো তদাপেক্ষা অধিক উজ্জ্বল হবে। রাসূল (সঃ) বলেছেন, কোরআন তিলাওয়াতের বরকতে অনেক লোক উন্নতি করবে, আর অনেক লোক অবহেলার কারণে লাঞ্ছিত হবে।' সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ভালোভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে জানে না, পড়তে গিয়ে পুনঃপুনঃ আটকে যায় এবং তোতলায়, তার জন্যও দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।'
রাসূল (সঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কোরআন শরীফ পড়বে ও তা হেফাযত করবে এবং তার হালালকৃতকে হালাল ও হারামকৃতকে হারাম জেনে চলবে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন এবং তার আত্বীয়বর্গের মধ্য হতে এমন দশজন লোকের জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম সাব্যস্ত হয়েছিল। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই আসুন এই ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে একটু সময় অন্তত আমরা কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কাটাই এবং সময়ের সদ্ব্যবহার করি।
মাওলানা হারুন অর রশীদ
ধর্মবিষয়ক গবেষক ও প্রবন্ধকার।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।