আমাদের বৃহদন্ত্রের সঙ্গে
লাগানো কনিষ্ঠ আঙুলের মতো একটি সরু থলের নাম অ্যাপেনডিক্স। লম্বায় এটি দুই থেকে ২০
সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। থাকে তলপেটের ডান দিকে। এর সঠিক কাজ যে কী, তা এখনো অস্পষ্ট। কিন্তু এই ছোট্ট থলেতে আকস্মিক প্রদাহ হলে দেখা দেয় জরুরি
পরিস্থিতি। এর নাম অ্যাপেনডিসাইটিস। অ্যাপেনডিসাইটিসের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা না
করা হলে এটি ফেটে গিয়ে ভেতরের বর্জ্য ও সংক্রমণ পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একে
বলা হয় পেরিটোনাইটিস। এ থেকে জীবনাশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। কীভাবে বুঝবেন?
অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা আকস্মিকভাবেই শুরু হয়। একদম প্রথমে ব্যথাটা নাভির চারদিকে অনুভূত হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ব্যথা চলে আসে তলপেটের ডান দিকে, কুঁচকির একটু ওপরে, আর তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন: বমি ভাব, বমি ও সঙ্গে গায়ে জ্বর। খাবারে অরুচি হতে পারে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যথা ও খারাপ লাগা মিলিয়ে রোগী বেশ কাবু হয়ে যাবে। কখনো বাম দিকে টিপলে ডানের ব্যথা বেড়ে যায়। এ রকম ছোটখাটো দু-একটা লক্ষণ মিলে গেলেই রোগ নিশ্চিত। নয়তো একটা আলট্রাসনোগ্রাফি ও রক্ত পরীক্ষা সহায়ক হতে পারে।
তলপেটে ব্যথা মানেই অ্যাপেনডিসাইটিস?
সব সময় তা নাও হতে পারে। এ
এলাকায় রয়েছে মূত্রনালি, মূত্রাশয়, মেয়েদের ডিম্বাশয়, জরায়ুসহ আরও নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
নানা কারণেই তলপেটে ডানে-বাঁয়ে ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাবে সংক্রমণ, মূত্রনালি বা মূত্রাশয়ের পাথর, ডিম্বাশয়ে সিস্ট বা সংক্রমণ
এমনকি সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডিম্বাণু নির্গমনের ব্যথাও হয় এখানে। তাই তলপেটে
ব্যথা হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খেয়াল করুন সমস্যার চরিত্র ও তীব্রতাকে।
চিকিৎসা জরুরি
অ্যাপেনডিসাইটিস ভয়াবহ কোনো
রোগ নয়, তবে এর জরুরি চিকিৎসা দরকার। নয়তো পেরিটোনাইটিস বা
অ্যাপেনডিক্সে ফোড়াসহ নানা জটিলতা অবশ্যম্ভাবী। আর চিকিৎসা একটাই—জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে
অ্যাপেনডিক্স অর্থাৎ আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা দেওয়া। এটি জটিল কোনো অস্ত্রোপচার নয়।
বর্তমানে পেট না কেটে ছিদ্র করেও করা যায়। তাই অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষণ দেখা দিলে
দ্রুত হাসপাতালে বা শল্যচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সার্জারি বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালন।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।