মানুষের জীবনের মতো
মৃত্যুও স্বাভাবিক, অবশ্যম্ভাবী।
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত ও সম্মানিত তারকা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনাবসান হয়েছে।
দীর্ঘ রোগভোগের পর তাঁর এই চলে যাওয়াও স্বাভাবিক। তার পরও অস্বাভাবিকতা এখানেই যে, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো একজন মানুষের অভাব অনুভব
করবে বিশ্ববাসী, যুগের
পর যুগ আর শতাব্দী ধরে। এখানে তিনি একক ও অবিসংবাদিত। তাঁর মৃত্যু নেই।
এক
মানুষ হিসেবে আমরা অনেকে যার
যার কল্পলোকে সত্যিকারের এক নায়কের স্বপ্ন দেখি। বর্তমান সময়ে সব বিচার শেষে নেলসন
ম্যান্ডেলাই আমাদের সত্যিকারের সেই নায়ক। সদা হাস্যোজ্জ্বল, আত্মত্যাগের মহান প্রতীক নেলসন ম্যান্ডেলা
বিশ্বের লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে এক সেইন্ট, পরিপূর্ণ এক মানুষের নাম। তবে খুব শক্ত মনের
মানুষ ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। কিন্তু খুব সহজেই তিনি ব্যথিত হতেন। তাঁর মধ্যেও
ছিল অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ছোট্ট প্রজাপতিও হয়তো তাঁর দ্বারা কষ্ট পেত না, কিন্তু তিনিই আবার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের
সামরিক শাখা ‘উমখন্তো উই সিজউই’র প্রথম প্রধান
ছিলেন! একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের সত্যিকারের নেতা, অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত সেলিব্রেটি
তিনি। যিনি সবাইকে আনন্দ দিতে চেয়েছেন, আবার কাউকে ‘না’ বলতেও দ্বিধা করেননি। তিনি কখনো কৃতিত্ব নিতে চাননি। কিন্তু জানতেন, কখন তিনি সেটা পাবেন। তিনি রান্নাঘরের সবার
সঙ্গেও হাত মেলাতেন, আবার
কখনো নিজের দেহরক্ষীদেরও চিনতেন না। বর্ণবাদবিরোধী কৃষ্ণাঙ্গ এই নেতা প্রেসিডেন্ট
হলে অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও নিজের প্রধান দেহরক্ষী নিযুক্ত করেন একজন শ্বেতাঙ্গকে।
এত বড়
জীবনের ক্যানভাস যাঁর, সেই
ম্যান্ডেলার ছিল জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি। তিনি যদি একটি টিসু
হাতে তুলে নিতেন, অত্যন্ত
সুচারুভাবে তা ভাঁজ করে ঢুকিয়ে নিতেন বুকপকেটে। জেলখানায় থাকা অবস্থায় যত চিঠি
পেয়েছেন—পাওয়া আর উত্তর দেওয়ার তারিখসহ লিখে রেখেছেন
ডায়েরিতে। উত্তরে কী লিখেছেন, তা-ও
কপি করে রেখেছেন। কখনো কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে তিনি বিলম্ব করেননি।
সময়ানুবর্তিতার ব্যর্থতাকে তিনি মনে করতেন চরিত্রের দুর্বলতা। সে জন্য প্রেসিডেন্ট
থাবো এমবেকি এক অনুষ্ঠানে দেরিতে এলে সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে।
২৭ বছরের
কারাজীবন থেকে বেরিয়ে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) নতুন করে সংগঠিত
করেছেন। বহুবিধ সংকট-সন্ত্রাস-আক্রমণ-বিপদের খাদ পেরিয়ে ম্যান্ডেলা দেশের প্রথম
সাধারণ নির্বাচনের পর শ্বেতাঙ্গদের দল ও উগ্র অশ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে জাতীয়
ঐকমত্যের গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেন। খুব অল্প সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বের
বুকে একটি সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মাত্র এক মেয়াদ সম্পন্ন করেই
প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নেন তিনি। এই স্বল্প সময় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে
দায়িত্ব পালন করে দক্ষিণ আফ্রিকার চরম বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থাকে তিনি গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থায় উন্নীত করেন, যাতে
প্রতিফলন ঘটে তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার। তিনি ‘এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকা’ গড়ে
তোলার পথ উন্মুক্ত করেন। কলেজে অধ্যয়নকালেই তিনি সক্রিয় হয়েছিলেন বর্ণবাদবিরোধী
রাজনীতির সঙ্গে। সেই থেকে জীবনের এক পর্ব থেকে আরেক পর্ব কেটেছে তাঁর জেল-জুলুম, সংগ্রাম আর সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতির পেছনে।
জীবনের ২৭ বছর তাঁকে কারাভোগ করতে হয় রোবেন দ্বীপের কারাগারসহ অন্যান্য কারাগারে। নতুন
গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকা গড়ে তুলতে কারাবাস থেকে বের হয়েই শ্বেতাঙ্গ সরকারের
সঙ্গে প্রকাশ্য আলোচনা শুরু করেন। নেলসন ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গ শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে এ
যোগাযোগ-আলোচনা একক সিদ্ধান্তে কারাগারের অভ্যন্তরে থেকেই শুরু করেছিলেন। পরে তিনি
তাঁর সহবন্দীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ধীরে ধীরে বাইরের নেতৃত্বের সঙ্গেও এ বিষয়ে
আলোচনা ও সমঝোতা হয়। এ আলোচনা শুরু এবং শেষ হতে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগে
যায়। কখনো কোনো চিঠির জবাব পেতে মাসের পর মাস চলে যাওয়া। কারাবন্দী হিসেবেই
শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ও অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এভাবেই শ্বেতাঙ্গ
সরকারের সঙ্গে সমঝোতা সৃষ্টির ভিত গড়ে ওঠে। একে একে কারাবন্দীরা বের হয়ে আসেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা বের হয়ে আসেন ১৯৯০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভিক্টর ভের্স্টার কারাগার
থেকে মুক্তি পান। তারপর সারা বিশ্ব জয় করে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে
নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার
বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। কালো আর সাদায় বিভক্ত
সন্ত্রাস, যুদ্ধ আর
মৃত্যুকবলিত রাষ্ট্রকে বিশ্বের দরবারে উঁচু সম্মানের জায়গায় নিয়ে যান। সারা
বিশ্বের রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে পপতারকা—সবাই তাঁর সামনে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে বিনম্র অভিবাদন
জানান।
নেলসন
ম্যান্ডেলা বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতা, যিনি নিজেকে জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
করেছিলেন। মৃত্যুর পরও থাকবেন প্রবল অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে। এবং একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন দাদা, একজন নানা, একজন বন্ধু—এভাবে তিনি একজন
সম্মানিত মানুষ বিশ্বের সর্বত্র।
দুই
১৯৯৭ সালে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের রজতজয়ন্তীতে ঢাকায় আগত তিন বিদেশি (দক্ষিণ আফ্রিকা, প্যালেস্টাইন ও তুরস্ক) রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মানে
প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রদত্ত (২৬ মার্চ, বুধবার) রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় দক্ষিণ আফ্রিকার
প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষণের একটি অংশ উপস্থিত সুধীজনকে ব্যাপকভাবে
আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করেছিল। লিখিত বক্তব্য শেষ করে প্রথাসিদ্ধ টোস্টের যাওয়ার আগে
পিনপতন নীরবতার মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের অভিশাপে জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকার
উন্নয়ন, পুনর্গঠনে তাঁর
সরকারের মধ্যে কীভাবে সব দল ও মতের সৌহার্দ্যমূলক সম্মিলন ঘটিয়েছেন, তার বর্ণনা দেন।
সেদিন
রাতে বঙ্গভবনে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা কীভাবে জাতি গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সফল হয়েছি, সে বিষয়টি আমি আপনাদের জানাতে চাই। আমরা আমাদের
শত্রুর সঙ্গে আপস আলোচনায় বসেছি তিনটি মৌলিক নীতির ভিত্তিতে, বিশেষত যে শত্রু বিগত চার দশকে বয়স-নির্বিশেষে
হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক নারী, পুরুষ
ও শিশুকে হত্যা করেছে। আমরা রক্তের উন্মাদনায় অশুভ শক্তির প্রতি সাড়া দিইনি। আমরা
যা কিছু করেছি, দেশের স্বার্থে
সাহসের সঙ্গে করেছি। গণহত্যা এড়াতে, নিরীহ জনগণকে রক্ষার্থে, পরিবারকে খণ্ডিত করা রোধের জন্য আমরা তিনটি
মৌলিক আদর্শ গ্রহণ করি।
‘প্রথমত, আমরা মনে করেছি, আপস আলোচনায় আমরা বা আমাদের শত্রুরা কেউই বিজয়ী
হবে না, বিজয়ী হবে সমগ্র
দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ, তাদের
বর্ণ, সংস্কৃতি ও
ঐতিহাসিক পটভূমি-নির্বিশেষে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণকে জিততে হবে। আমাদের
রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং মেনে চলি যে, সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো নারী ও পুরুষ রয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতীয় বা শ্বেতাঙ্গ—যার কথাই বলি না কেন। আমরা আরও বলতে চাই, কোনো রকম ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের দেশের সব
রাজনৈতিক দলে ভালো নারী ও পুরুষ রয়েছে।
‘নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর আমরা আরেকটি
মূলনীতি গ্রহণ করলাম। আমাদের সরকারে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। মন্ত্রিসভার
সদস্যসংখ্যা ২৭। মন্ত্রিসভায় একটি দলের তিনজন, দ্বিতীয় দলের ছয়জন এবং আমাদের এএনসির (আফ্রিকান
ন্যাশনাল কংগ্রেস) ১৮ জন সদস্য রয়েছে। সবকিছু নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে ছোট দলগুলোকে আমরা অবশ্যই
কার্বন কপি বা রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করতে চাই না। অনেক সময় একমত পোষণ করতে পারছি
না এমন বিষয়েও আমরা তাদের মতামত বিবেচনায় আনি। কারণ, আমরা জনগণের আস্থা গড়ে তুলতে চাই। এই মূলনীতির
কারণেই আমরা চরমপন্থী আর ডানপন্থী লোকদের কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছি। এই মূলনীতির
কারণে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। আমরা সেই জনগণের মধ্যে রয়েছি, যারা তাদের প্রতিটি কাজে আমাদের পেয়েছে।
‘সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত বাংলাদেশের সমর্থনের ফলে আমরা উপকৃত
হয়েছি। এখন আমরা যেখানে আছি, তা
থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বিংশ শতাব্দীর স্বাধীনতা
আন্দোলনের জন্য গর্বিত। এই সব সমর্থন না পেলে আমাদের জীবদ্দশায় আমরা স্বাধীনতা
লাভে সক্ষম হতাম না। তাই আমরা নিঃসঙ্গ নই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আমাদের
সঙ্গে রয়েছে এবং আমরা তার অপব্যবহার করতে চাই না। এ কারণে আমরা এখন আমাদের দেশে
একদলীয় সরকার গ্রহণ করতে পারি না। ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় যখনই কোনো সমস্যা দেখা দেয়, আমি বলতে পারি না যে এটা বর্ণবাদের কারণে ঘটেছে।
আমি এখন সরকারে, আমি
দু-তিন বছর ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছি, যেকোনো সমস্যাই দেশে সৃষ্টি হোক না কেন, আমি বলতে পারি না যে এর জন্য প্রেসিডেন্ট ডি
ক্লার্ক দায়ী, যে বা যার দল চার
দশক ধরে দেশটি শাসন করেছে। ওই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে আমাকেই এবং যেকোনো সমস্যাই
আমাকে নাড়া দেয়।’
সেদিন
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় লিখিত বক্তৃতার বাইরে গিয়ে নেলসন
ম্যান্ডেলা তাঁর বক্তৃতায় এ কথাগুলো বলেছিলেন। সেই রাতে আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম, তাদের মনে হয়েছে যে স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকায়
অবস্থানকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধের পটভূমিতেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন। সেদিনের
ভোজসভায় একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে এখনো তাঁরা সেই একই অবস্থানে রয়েছেন।
সেদিনের সেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখন আরও তীব্র হয়েছে। রাজনীতিতে সহিংসতা বেড়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকার এখন একপেশে নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের সহিংস রাজনীতিতে দেশজুড়ে নৃশংসতা, ধ্বংস আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এখন দেশের মানুষের
মনে বড় এক প্রশ্ন—আমরা কোথায় চলেছি!
বাংলাদেশের
এই দুঃসময়ে আমরা ১৯৯৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সামরিক
শাখা ‘উমখন্তো উই সিজউই’র জাতীয় সম্মেলনে
নেলসন ম্যান্ডেলার বক্তৃতার উপসংহারের কথাগুলো স্মরণ করতে পারি। সেদিন তিনি
বলেছিলেন, ‘আমাদেরকে সহিংসতা, মৃত্যু এবং ধ্বংস, নির্যাতন এবং শোষণ বন্ধ করতেই হবে। এবং আমাদের
জনগণের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতেই হবে, যেখানে থাকবে শান্তি এবং গণতন্ত্র।’ আমাদের জন্য, আজকের বাংলাদেশের জন্যও এ কথা সত্য।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।