পৃথিবীর বুকে রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্রময় প্রাণী, স্থান এবং বস্তু। যেগুলোর বেশির ভাগই রহস্যে ঘিরে রেখেছে আপন বৈশিষ্ট্যে। মানুষ তার জানার পরিসর যত বাড়িয়েছে ততই বেড়েছে এসব রহস্যের সীমানা। নিত্য-নতুন রহস্যের জালে পৃথিবী যেন নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। অজানাকে জানার অদম্য আকাঙ্ক্ষা থেকেই সামনে এসেছে বহু রহস্য। পৃথিবীর তেমনই কয়েকটি রহস্য নিয়ে আজকের রকমারি-
নরকের দরজা
এ জায়গাটি তুর্কমেনিস্তানে অবস্থিত লোকমুখে
এটা নরকের দরজা নামে পরিচিত। তুর্কমেনিস্তানের ছোট্ট একটি শহর দারভাজে
অবস্থিত। এটি কোনো প্রাকৃতিক
গর্ত নয়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রাকৃতিক
গ্যাসসমৃদ্ধ দারউয়িজি এলাকায় অনুসন্ধানের সময় ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল এটি একটি তেলক্ষেত্র তাই ড্রিলিং মেশিন দিয়ে তেল উত্তোলনের
জন্য সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। কিন্তু পরে তারা সেখান
থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের হতে দেখে। সেই ১৯৭১ সাল থেকে জায়গাটি
অবিরত দাউ দাউ করে জ্বলছে। কারাকুম মরুভূমিতে অবস্থিত অগি্নমুখটির ব্যাস ৭০ মিটার ও গর্ত ২০ মিটার দীর্ঘ। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নরকের দরজা একটি অন্যতম দর্শনীয়স্থান।
বিচিত্র পুতুল দ্বীপ
পুতুলের দ্বীপ। আশ্চর্য এই দ্বীপে গাছের ডালে ঝুলছে পুতুল, ছোট পরিত্যক্ত ঘরের দেয়ালে ঝুলছে পুতুল। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু পুতুল আর পুতুল। এই নির্জন দ্বীপে এত পুতুল এলো কোত্থেকে, সেটা কেউই পরিষ্কার
করে জানে না। স্থানীয়দের ভাষায় দ্বীপটির নাম ইলসা ডে লাস মিউনিকাস বা পুতুলের দ্বীপ। দ্বীপটিকে অনেকেই ভয়
পান। এ দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে
অনেক কল্পকথা। প্রচলিত আছে, ৮০ বছর আগে তিন মেক্সিকান
শিশু পুতুলের বিয়ে দিচ্ছিল গাছে ঢাকা শীতল অন্ধকার দ্বীপটিতে। খেলতে খেলতেই তিনজনের একজন নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে দ্বীপের পাশের একটি খালে মিলে তার মৃতদেহ। এরপর থেকে ভয়ে আর কেউ ওই দ্বীপে যায়নি। দ্বীপটি রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে
জোকিমিলকোতে অবস্থিত। ১৯৫০ সালের দিকে ডন জুলিয়ান
সানতানা নামের এক যাজক নির্জনে তপস্যা করার জন্য এ দ্বীপকে বেছে নিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, এখানে আশ্রম গড়ে তোলার
পর থেকে তার সঙ্গে মৃত
শিশুটির আত্মার প্রায়ই কথা হয়। শিশুটির আত্দা জুলিয়ানের কাছে পুতুলের বায়না ধরে ভয়ঙ্কর চেহারার পুতুল এনে দ্বীপের চারদিকে
টাঙিয়ে দিতে। ওই আত্দার অনুরোধেই জুলিয়ান মানুষের কাছ থেকে
নষ্ট পুতুল সংগ্রহ করতে থাকেন। জঙ্গলে এনে গাছের ডালের
সঙ্গে এগুলো বেঁধে রাখলেই খুশি হতো শিশুটির আত্মা। এভাবেই হাজার হাজার কুড়িয়ে পাওয়া কিংবা কিনে আনা পুতুল দিয়েই জুলিয়ান গড়ে তোলেন মৃত পুতুলের দ্বীপ। মেক্সিকান সরকার এই দ্বীপকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর
উদ্যোগ নেয়; কিন্তু পর্যটকরা কদাকার পুতুল দেখে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে হয়
এই অজুহাতে এখানে আসতে ভয় করেন।
মরুভূমির আতঙ্ক
মরুভূমি মানেই ধু-ধু বালুর সাগর। কিন্তু এই বিরূপ ও প্রতিকূল বালুর সাগরেই
রয়েছে অনন্য সব জীববৈচিত্র্য। কিন্তু বেশ কিছু ওর্ম রয়েছে যা সারা বিশ্বে একেবারেই বিরল। পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত ওর্ম রয়েছে মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে। এর নাম অলঘোই খরখোই। গোবি মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে এক রহস্যময় ভয়াবহ প্রাণীর জন্য দেশজুড়ে এক আতঙ্কের নাম। অলঘোই খরখোই। অনেকে বলেছেন, এটি দেখতে সমান্তরাল, রক্তের মতো লাল ও সাপের মতো লম্বা, দৈর্ঘ্যে প্রায় দুই থেকে চার ফুট। দেখতে অনেকটা গরুর ভূঁড়ি বা অন্ত্রের মতো। অলঘোই খরখোই নামটির মূল অর্থ হচ্ছে পেটের অন্ত্রের কৃমি। মঙ্গোলিয়ানরা প্রাণীটিকে এতটাই ভয় পায় যে, অনেকে মনে করেন এর নাম নিলেও অমঙ্গল হয়। এর ভয়াবহভাবে মানুষ ও প্রাণী হত্যা করার ক্ষমতা রীতিমতো কিংবদন্তিতুল্য। অলঘোই খরখোই আকৃষ্ট হয় হলুদ রঙের প্রতি। এরা বিষাক্ত হলেও বিষ ছিটিয়ে দেয় না। এ ছাড়া এটি অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতে দেখতে পাওয়া যায়।
টাংগুসকার বিস্ফোরণ
রহস্যময় বিস্ফোরণের কথা উঠলেই চলে আসে টাংগুসকার বিস্ফোরণের
কথা। চারদিকে ঘন বন শুধু মাঝের বিশাল অঞ্চলে কোনো গাছ নেই। এখানেই এসে পড়েছে সেই বিস্ফোরণের আগুনের গোলা এমনটিই বলা হয়। এই বিস্ফোরণের পূর্বাবস্থা অনেকেই দেখেছেন
এমন দাবি করেছেনও। তাদের একজন বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন- হঠাৎ
তাকিয়ে দেখলাম উত্তরের আকাশ চিরে
দুই ভাগ হয়ে গেল। সে ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে
এল আগুন। তারপর প্রচণ্ড শব্দ। ছিটকে পড়লাম চেয়ার থেকে কয়েক মিটার দূরে। কেঁপে উঠল মাটি...। এভাবেই বর্ণনায় এসেছে সেই রহস্যময় বিস্ফোরণের
কথা। পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত এই বিস্ফোরণই হলো টাংগুসকার
বিস্ফোরণ। এর একটি বিস্ফোরণের বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের এলাকায় যা ছিল সব
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে যেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫-১০ কি.মি উপরে বায়ুমণ্ডলে
মহাশূন্য থেকে আগত কোনো বৃহৎ উল্কা বা ধূমকেতুর সঙ্গে বায়ুর সংঘর্ষের ফলেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এটি এখন পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠে বা ভূপৃষ্ঠের উপরস্থিত বায়ুমণ্ডলে
ঘটা সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ। যদিও এই বিস্ফোরণের
কেন্দ্রস্থল বায়ুমণ্ডলে ছিল কিন্তু ভূপৃষ্ঠে এর প্রভাব কম ছিল না। এই বিস্ফোরণের শক্তি ছিল হিরোশিমার পারমাণবিক
বোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি
শক্তিশালী। এ ধরনের বিস্ফোরণের
সঠিক কারণ এখনো খুঁজে বের করতে পারেননি গবেষকরা। তবে বিজ্ঞান এ ধরনের বিস্ফোরণকে স্বীকৃতি দেয়। প্রাকৃতিক কারণেই এ ধরনের বড় আকারের বিস্ফোরণ
ঘটতে পারে। মহাকাশ থেকে ছিটকে আসা উল্কাপিণ্ড এ জন্য দায়ী হতে পারে। এ বিস্ফোরণ ওই স্থানের আশপাশের ২১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আনুমানিক আট কোটি গাছ
জ্বলে পুড়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট শক ওয়েভের প্রভাবে রিখটার স্কেলে
৫.০ মাত্রার ভূকম্পন হয়েছিল, যা একটি শহর ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ ঘটনার পর অনেক বিজ্ঞানী এবং গবেষক এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু এখনো এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
জলতলে হারানো শহর
জলতলে শহর খুঁজে পাওয়ার নজির খুব কমই রয়েছে। কিন্তু পানির গভীরেও পাওয়া গেছে গোটা একটি
শহর। অবশ্য সেই অসম্ভবে হাতড়ে বেড়িয়ে পাওয়া গেল একটি
নগরী। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে
২০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে
সাগরের জল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে এমন এক শহর, যার সঙ্গে আটলান্টিসের অনেক মিল রয়েছে। প্রাচীন এই শহরটির নাম হেরাক্লেয়ন। ধারণা করা হয়, আজ থেকে দেড় হাজার
বছর আগে সমুদ্র তাকে গ্রাস করে নিয়েছিল। এই নগরীর কথা জানা যায় গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের বর্ণনায়। ট্রয়ের রানী হেলেনের কথা বলেন তিনি, যে নিজের প্রেমিক প্যারিসের
সঙ্গে হেরাক্লেয়নে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন। ২০০১ সালে ফরাসি প্রত্নতাত্তি্বক ফ্র্যাঙ্ক গুডিওর গবেষক দল এমন কিছু নিদর্শন খুঁজে পান যা অনিশ্চয়তার দ্বার
খুলে সম্ভবের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমে সাগরের তলে পলিমাটি চাপা পড়ে থাকা বিশাল সব পাথুরে ভাস্কর্যের ধ্বংসাবশেষ পানির উপরিভাগে আনতে
শুরু করেন তারা। সেই ভাস্কর্যগুলো তীরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। এভাবেই প্রথম আবিষ্কারের ১২ বছর পর মানুষের সামনে উন্মোচিত হয় হেরাক্লেয়নের অমূল্য
সব নিদর্শন। এদের মধ্য দেবী আইসিস, দেবতা হাপি এবং নাম না জানা এক ফারাওয়ের মূর্তি। কাদার নিচে চাপা পড়ে থাকা এসব মূর্তি মোটামুটি অক্ষতই পাওয়া
গেছে। এমন ১৬টি বিশালাকার মূর্তির পাশাপাশি পাওয়া গেছে মিসরের অন্য
দেবদেবীর ছোট শত শত মূর্তি। এ ছাড়া হেরাক্লেয়নে পাওয়া
গেছে ৬৪টি জাহাজের ধ্বংসস্তূপ।
আজীবন ঘুমহীন মানুষ
না ঘুমিয়ে থাকা মানুষের তালিকায় যারা নাম লিখিছেন
তাদেরই একজন পল কেরন। পৃথিবীতে বেশ অনেকজনই অনিদ্রা রোগের জন্য
আলোচনার পাত্র হয়েছেন। তাই বলে সারা জীবন ধরেই ঘুম
না আসা মানুষগুলো রয়েছেন আগ্রহের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে। অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে গেছেন পল কেরন নামে এক হাঙ্গেরিয়ান সৈনিক। যিনি সম্পূর্ণ না ঘুমিয়েই বেঁচে ছিলেন অনেক বছর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দুর্ঘটনাবশত তার মাথায় গুলি লেগেছিল। এতে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবে আঘাত পান তিনি। এ কারণেই তিনি হয়ে ওঠেন ঘুমহীন মানব। একদিন দু'দিন নয়, বহু বছর না ঘুমিয়েই
বেঁচেছিলেন তিনি। পল কেরন এক সময় সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তী সময়ে তিনি আর কখনোই ঘুমাতে পারেননি, কখনো না। তিনি না ঘুমিয়ে শুধু এক বছর না রীতিমতো দীর্ঘ ৪০ বছর সুস্থ দেহেই বেঁচেছিলেন! তিনি ঘুমানোর বদলে
শুধু শুয়ে চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিতেন। সেডাটিভ, ড্রাগ কোনো কিছুই তাকে
ঘুম পাড়াতে পারত না।
রহস্যঘেরা টাওয়ার
পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। এসব রহস্য চিরকালই আকর্ষণ করে মানুষকে। তেমনই রহস্যময় একটি স্থাপনার নাম নিউপোর্ট
টাওয়ার। সম্পূর্ণ গোলাকৃতির প্রাচীন এই টাওয়ারটি যুক্তরাষ্ট্রের
রোডস আইল্যান্ডের নিউপোর্ট এলাকার টাউরো পার্কে অবস্থিত। সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয় ১৭ শতকের মাঝামাঝিতে। এটি দাঁড়িয়ে আছে আটটি কলামের ওপর। যার মধ্যে দুটি কলাম অন্য ছয়টি কলামের চেয়ে আকারে বড়। কলামগুলোর গায়ে দাগ কেটে আঁকা হয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণীর ছবি, নাম ও আরও অনেক চিত্র। ইতিহাস বলে, আমেরিকান বিপ্লবের পর থেকে এই টাওয়ারকে রহস্যময় টাওয়ার
বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, এর ভেতর থেকে মৃতের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া
যায়। কেউ বলেছেন, এখানে অচেনা স্বরে কথা বলে কেউ। জিম ব্রানডন নামের এক আমেরিকান গবেষক ও প্রকৌশলী নিউপোর্ট টাওয়ারকে কেন রহস্যজনক টাওয়ার বলা
হয় এর কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রাচীন এই টাওয়ারের নানা উপকরণ, লেখা, কারুকাজ নিয়ে প্রায় এক বছর গবেষণা
করে দেখেছেন, নিউপোর্ট টাওয়ারটি
যে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তা প্রাচীন চুম্বক জাতীয় পাথর। ম্যাগনেট ছাড়াও টাওয়ারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় পাওয়া গেছে মানুষের পায়ের চিহ্ন, প্রাচীন নকশা, মানুষের মাথার খুলি। এ থেকে অনুমান করা হয়, প্রাচীনকালে বা আমেরিকান বিপ্লবের সময় টাওয়ারটিতে মানুষ হত্যা করা হতো। অপরাধীকে এখানেই ফাঁসিতে ঝুলানো হতো। অতি উৎসাহী অনেকে বলে থাকেন, গভীর রাতে নিউপোর্টে
কান পেতে থাকলে শোনা যায়, দূর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
জোন অব সাইলেন্স
রহস্যময় জোন অব সাইলেন্সকে ঘিরে সব সময়ই আলোচনা হয়েছে। বিজ্ঞানী আর শৌখিন গবেষকদের কাছে এখনো এক জীবন্তু রহস্যময় এলাকা
এই জোন অব সাইলেন্স। মেক্সিকোর জোন অব সাইলেন্স বা নীরব ভূমি পৃথিবীর
অন্যতম আলোচিত রহস্য। এই এলাকার অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য
রয়েছে। এখানে রাতের গুমোট
আঁধারে উল্কা বৃষ্টি নামে। কেউ যদি সেখানে টেপ
রেকর্ডার বাজাতে থাকে তাহলে হঠাৎই সেটা থেমে যায়। এ এলাকায় হঠাৎ করেই চলন্ত গাড়ির স্টার্ট বন্ধ
হয়ে যায়। এই মরুভূমির পোকা-মাকড়গুলোও স্বাভাবিক পোকামাকড়ের চেয়ে
দুই-তিনগুণ বড়। জোন অব সাইলেন্সের পাথরগুলোও এমন ভুতুড়ে যে কম্পাস
পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। এ এলাকার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার
সময় পাইলটরা অভিযোগ করেছেন, তাদের সব কিছু কেমন
যেন বিভ্রান্তিকর ঠেকে। জোন অব সাইলেন্সের এমন অদ্ভুত পরিবেশের কারণে
কোনো মানববসতি গড়া সম্ভব
হয়নি।
ভয়ঙ্কর জলদানব
স্কটল্যান্ডের এক রহস্যময় লেক রয়েছে। তার নাম লক নেস লেক বা হ্রদ। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানবের। কিন্তু শক্ত যুক্তি দাঁড় করাতে না পারলেও অনেকেই দেখেছিলেন সেই জলদানবকে। এখানে প্রাগৈতিহাসিক অনেক প্রাণী দেখেছেন বলে কেউ কেউ দাবি করে থাকেন। গবেষক এড. রবার্ট রাইসন প্রাণীটির অস্তিত্ব খুঁজতে দীর্ঘদিন চেষ্টা করছেন। তিনি পরবর্তী সময়ে এই রহস্যময় জলদানব নিয়ে অভিযান চালিয়ে যেতে থাকলেন। ১৯৭২ সালে রাইসন আরও সূক্ষ্ম কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে হ্রদে অভিযান চালালেন। সেই বছরের ৮ আগস্ট তার দলের সদস্যরা নৌকায় অপেক্ষা করছিল। রাত ১টার দিকে পর্যবেক্ষণে এক বিচিত্র প্রাণীর অস্তিত্ব ধরা পড়ে, যার রয়েছে বিরাট আকারের ডানা। লম্বায় সেই ডানা ছয় ফুটের মতো। ড. রাইসনের মতে, আজ থেকে সাত কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এরকম প্রাণী ছিল। জাপানের টেলিভিশনের একদল কর্মী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি
নিয়ে পানির নিচে অভিযান চালালেন। তারা একটি ডুবোজাহাজে করে নেমেছিলেন। ৯৫০ ফুট নিচে একটি গভীর গুহা আবিষ্কার করছিলেন তারা। তাদের ধারণা, ওই গুহটি ছিল সেই জলদানবের
আশ্রয়স্থল। এর পরের বছর অভিযানে দলটি একটি প্রামাণ্য ছবি তুলল। তাতে দেখা গেল, ১২ ফুট লম্বা লাল-খয়েরি রংয়ের একটি প্রাণী। তার মাথা দেখা যাচ্ছিল না। গলা ছিল ধনুকের মতো বাঁকা, আট ফুট লম্বা। অনেক প্রাণীবিজ্ঞানীর মতে, লক নেস হ্রদের রহস্যময় প্রাণীটি হলো
প্রাগৈতিহাসিক আমলের মৎস্যভোজী সরীসৃপ। এ জাতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব সাত
কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল বলে সবার ধারণা ছিল।
অদ্ভুতুড়ে জাহাজ
ভুতুড়ে জাহাজের কথা এলেই লোককাহিনী নির্ভর যত গুঞ্জন
রয়েছে তাতে বিখ্যাত দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান। লোকমুখে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায়, 'দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান' জাহাজের ক্যাপ্টেন
ছিলেন হেনড্রিক ভ্যানডার ডেকেন। হেনড্রিক ১৬৮০ সালে জাহাজটিতে করে আমস্টার্ডাম
থেকে বাটাভিয়ার (ডাচ ইস্ট-ইন্ডিয়া পোর্ট) দিকে যাচ্ছিলেন। যখন জাহাজ আফ্রিকার কেপটাউনে পৌঁছায়, ততক্ষণে আবহাওয়া খারাপ
হয়ে পড়েছিল। তা দেখে হেনড্রিককে
জাহাজের অন্য নাবিকরা জাহাজ ছাড়তে
নিষেধ করল। কিন্তু হেনড্রিক সবার
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাহাজ ভাসালেন কেপটাউনের উত্তাল সাগরের বুকে। তার এই পাগলামি দেখে নাবিকদের মধ্যে বিদ্রোহী দল গড়ে ওঠে। কিন্তু বিদ্রোহী দলের নেতাকে হেনড্রিক গুলি করে মেরে ফেলেন। এই খুনের রেশ ধরেই প্রেতাত্মা ভর করে জাহাজটিতে। এমনই বলা হয়। নাবিকরা মনে করেন, ফ্লাইং ডাচম্যান সমুদ্রে
কোনো অমঙ্গল বা ঝড় হওয়ার পূর্ব-সংকেত
হিসেবে দেখা দেয় মানুষকে সতর্ক করার জন্য।
রহস্যময় হটস্পট
হটস্পট। মহাকাশের হটস্পট কৌতূহলী মানুষকে মহাশূন্যের
অজানা রহস্যের সৌন্দর্যে বিমোহিত করে।বিশাল এক অজানা গ্রহে
রহস্যময় অদ্ভুত একটা হট স্পট খুঁজে বের করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। কিন্তু গবেষকদের কাছে এখনো রহস্যময় হয়ে রয়েছে এই বিশাল গ্রহটিতে কিভাবে এই হট স্পট
তৈরি হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকদের ধারণা রহস্যময় এই
বিশাল গ্রহটির নাম আপসিলন অ্যান্ড্রেমিডা বি। গ্রহটিকে হট জুপিটার বা গ্যাসের কুণ্ডের দৈত্যও বলা হয়। গবেষকদের মতে, গ্রহটি যে নক্ষত্র
থেকে তৈরি হয়েছে তার একদিকে মুখ করেই যেন অন্ততকালে ফুটছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো গ্রহটির নক্ষত্রমুখী দিকটাই কিন্তু সবচেয়ে উষ্ণ নয়, বরং গ্রহটির উল্টোপাশের
বিশেষ একটি অংশটিই সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। পৃথিবী থেকে আপসিলন অ্যান্ড্রোমিডা বি গ্রহটির দূরুত্ব ৪৪ আলোকবর্ষ। গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহেরও চেয়ে শতকরা ৭০ গুণ বিশাল যা প্রতি ৪.৬ দিনে নিজ নক্ষত্রকে আবর্তন করে এটি। গ্রহটির এই হটস্পট আবার একস্থানে স্থায়ী হয় না। এর কারণ হতে পারে শক্তিশালী শক ওয়েভ এই তাপপ্রবাহ স্থানান্তর করে এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করে। কিন্তু এগুলো কেবলই ধারণা।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৯-১২-২০১৩
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।