রক্তচক্ষু শুনলে মনে হয় রেগে যাওয়ায় চোখ লাল হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে চোখ লাল হতে পারে। এটি বেশ অস্বস্তিকর। অতিরিক্ত পানি দিয়ে পুকুর জলাশয়ে দীর্ঘক্ষণ গোসল করলে; বিশেষ করে যেসব প্রাকৃতিক জলাশয়ে গরু-ছাগল গোসল করে বা হাঁস চলাচল করে, চোখে কাজল দিলে, খুব কাঁদলে, চোখে সাবান লাগলে, শীতের সকালে ঠান্ডা হাওয়ায় হাঁটলেও স্বাভাবিক চোখ লাল হয়। অস্বাভাবিক যে কারণে চোখ লাল হয় তার মধ্যে চোখ ওঠা, চোখে ঘা হওয়া, চোখের গ্লুকোমা, চোখে কোনো অস্ত্রোপচার করলে, কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে, ইউভিয়াইটিস হলে, অ্যালার্জিজাতীয় খাবার খেলে, চোখে ধুলোবালু গেলে এবং লেদ মেশিনে কাজ করতে গিয়ে চোখে লোহার কণা বা টুকরা গেলে চোখ লাল হয়। এ ছাড়া যাদের দৃষ্টিশক্তি কম, জোর করে পড়াশোনা করতে গেলেও চোখ লাল হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের টিউমার চোখ লাল হওয়ার কারণ। নেত্রনালি বন্ধ হলেও চোখের কোনা লাল হয়।
কর্নিয়া ছাড়া চোখের সামনের দিকে পুরোটাই সাদা। এর সামনের দিকের অংশটা পাতলা ঝিল্লি বা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। এ ঝিল্লির নাম কনজাংটিভা। চোখের শিরা-উপশিরাগুলো এ ঝিল্লির মধ্যে থাকে। এই ঝিল্লি অত্যন্ত সংবেদনশীল, খুব সহজেই তাতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তখন তা লাল হয়ে ওঠে, চোখ লাল দেখায়। এসব ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। অল্প সময় পরে তা ঠিক হয়ে যায়। লাল ভাব কেটে যায়। তবে কনজাংটিভায় যখন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি কোনো জীবাণুর আক্রমণ ঘটে তখন চোখের পাতার ভেতরের অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চোখে সবুজাভ সাদা রঙের পুঁজ (পিচুটি) জমে চোখের পাতা ফুলে যায়। অনেক সময় পুঁজের জন্য সকালে চোখের পাতা দুটো আটকেও যায়। কখনো কখনো এক চোখে অথবা দুচোখেই জ্বালা করে। তখন আমরা বলি কনজাংটিভাইটিস। এটি সাধারণত ‘চোখ ওঠা বা চোখ লাল হওয়া’ রোগ নামে পরিচিত। পুরোনো কিছু কুসংস্কার পদ্ধতি যেমন: চোখে গোলাপজল ব্যবহার, শামুকের পানি, তেল ও ভাত খাওয়ার পর হাত ধোয়া পানি চোখে দেওয়া, ঝাড়-ফুঁক দেওয়া ইত্যাদিতে চোখের এ রোগটি আরও জটিল আকার ধারণ করে। লক্ষণ অনুসারে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করলে চোখ ওঠা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
মানস কুমার গোস্বামী
চক্ষু বিভাগ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।