চুরি করা তথ্যের গন্তব্য কোথায়? এ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে, এই তথ্য বিক্রি হয় সাইবার দুর্বৃত্তদের কালোবাজারে। সম্প্রতি মার্কিন অলাভজনক সংস্থা আরএএনডি করপোরেশনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগ এ-বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাকারদের এই বাজার অত্যাধুনিক ও সুসংগঠিত। অবৈধ ড্রাগ চোরাচালান বা ব্যবসার চেয়ে হ্যাকারদের এই বাজারে এক ধরনের সম্মান পায় হ্যাকার। যারা হ্যাক করে তথ্য চুরি করে, তারা শেষ পর্যন্ত সেই চুরি করা তথ্য নিয়ে অবৈধ কোনো ওয়েবসাইটে বিক্রি করে দেয়। এ রকম ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য কেনাবেচা করার সুবিধা থাকে।
মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষক উইল ওরেমাস এ প্রসঙ্গে বলেন, একটা সময় ছিল যখন ক্রেডিট কার্ড বা মেইল অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি বিষয়টি নিয়েই শঙ্কায় থাকতে হতো। এখন হ্যাকাররা ছবি এমনকি সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টের তথ্যও চুরি করার উপায় এবং তা থেকে অর্থ আয় করার পথ খুঁজে বের করেছে। হ্যাকারদের কাছে লিঙ্কডইন ও ই-হারমোনি এখন পাসওয়ার্ডের সোনার খনি, যা দিয়ে তারা তাদের ‘রেইনবো টেবিল’কে আপডেট করে নিতে পারে। এই ‘রেইনবো’ টেবিল হচ্ছে মূলত একটি বিশাল ডেটাবেজ, যা জটিল ও সহজে ভাঙা যায় না এমন এনক্রিপটেড পাসওয়ার্ড ভাঙতে ডিজিটাল কী হিসেবে কাজ করে। আরএএনডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির চেয়ে কোনো টুইটার অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি করা লাভজনক।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যও নিরাপদ নয়। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফিশল্যাবসের পরিচালক ডন জ্যাকসন জানিয়েছেন, গোপনে হ্যাকারদের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য চুরি করতে পারলে হ্যাকারদের লাভ বেশি। এখন কোনো ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করলে যা আয় হয় তার চেয়ে কোনো চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য চুরি করতে পারলে ১০ গুণ বেশি লাভ হয় সাইবার দুর্বৃত্তদের। কীভাবে আয় হয়? জ্যাকসন বলেন, নাম, জন্মতারিখ, পলিসি নম্বর প্রভৃতি তথ্য চুরি করে হ্যাকাররা ভুয়া আইডি তৈরি করে চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কেনে ও পরে তা বিক্রি করে। ভুয়া ইনস্যুরেন্স দাবিও করতে তথ্য কাজে লাগায়। সাইবার অপরাধ নিয়ে প্রকাশিত আরএএনডির প্রতিবেদনে এই সাইবার কালোবাজারকে বলা হয়েছে ‘হ্যাকারস বাজার’। এই বাজারে এখন বিভিন্ন রকম পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিছু গোপন সংস্থা এ ধরনের বাজার তৈরি করেছে। দেখা গেছে, তারা এ ধরনের বাজার তৈরি করে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। আর চুরি করা তথ্য সেখানে কেনাবেচা করে লাখ লাখ ডলার আয় করছে।
বাজার গবেষকেরা বলছেন, হ্যাকারদের এই বাজার খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ আর নিঃসন্দেহে লোভনীয়। আরএএনডির গবেষকেরা ধারণা করছেন, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ও মোবাইল যন্ত্রের ব্যবহার বাড়তে থাকায় এই বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখে ও গুগলের বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে সহজেই তথ্য চুরি, কেনাবেচা করার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্যাকার বাজারও বড় হচ্ছে।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।