মোট ৮১৫০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তির অধিকারী, মাইক্রোসফট-এর
সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এই মুহূর্তে আমেরিকার সবচেয়ে বিত্তবান ব্যক্তি। সাত বছর এবং ৬.৩ কোটি
ডলার খরচ করে তৈরি তার বাড়িতে প্রযুক্তি ও ঐশ্বর্যের তাক লাগানো মিশেল। ১৯৮৮ সালে ২০ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে ওয়াশিংটন এস্টেট কেনেন
গেটস। এরপর দীর্ঘ
সাত বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে ওঠে তার স্বপ্নের বাসভবন। 'সিটিজেন কেন' ছবির নায়ক চার্লস ফস্টার কেন-এর বাড়ির আদলে গেটস তার
আস্তানার নাম রেখেছেন 'জানাডু ২.০'। শুধুমাত্র বিত্তের আস্ফালন নয়। বিল গেটসের বাড়ির আপাদমস্তক ছেয়ে রয়েছে
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক।
গেটসের বাড়ির তাক লাগানো কিছু বৈশিষ্ট্য:
১. মাইক্রোসফট সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের বাড়ির বর্তমান
মূল্য হল ১২.৩৫৪ কোটি ডলার। ১৯৮৮ সালে বাড়িটি কেনা হয় ২০ লক্ষ ডলারে। বছরে মোট ১০ লক্ষ ডলার সম্পত্তি কর
দেন গেটস।
২. ৬৬,০০০ বর্গ ফিটের বাড়ি তৈরি হয়েছে ৩০০ নির্মাণ
শ্রমিকের সাহায্যে। এদের
মধ্যে ২০০ জন বিদ্যুৎকর্মী। বাড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ বর্গ
ফিট কাঠ। বাড়ি লাগোয়া হ্রদের
তীরের সৌন্দর্য্য বাড়াতে বসানো হয়েছে ৫০০ বছরের প্রাচীন 'ডগলাস ফার' গাছের
সারি। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ
থেকে বার্জে ভাসিয়ে আনা হয়েছে বালি, যা
দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে জলাশয়ের পাড়।
৩. জানাডু ২.০-র প্রতি ঘরে হাই-টেক সেন্সরের সাহায্যে
পছন্দসই তাপমাত্রা এবং আলো সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বাড়িতে থাকতে এলে অতিথিদের নিজস্ব
পিন নম্বর দেয়াই 'জানাডু ২.০'-এর দস্তুর। নম্বর উল্লেখ করলেই মেলে অত্যাধুনিক
পরিষেবা। ঘরের ওয়ালপেপারের পিছনে
লুকোন স্পিকার থেকে বাড়ির সর্বত্র পছন্দ অনুযায়ী গান শোনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
৪. এই বাড়ির পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দূষণহীন পরিবেশের ভারসাম্য এখানে বজায় থাকে স্বাভাবিক উপায়ে।
৫. গেটসের বাড়ির দেওয়ালের ছবি ইচ্ছে মতো পরিবর্তন করার
ব্যবস্থা হয়েছে। শুধুমাত্র
একটি বোতামে চাপ দিলেই বদলে যাবে ছবি। এজন্য বাড়ির আনাচে-কানাচে মোট ৮০,০০০ ডলার
অর্থমূল্যের কম্পিউটার স্ক্রিন বসানো হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি ছবি রাখতে ব্যবহার করা হয় দেড় লক্ষ ডলার
মূল্যের স্টোরেজ ডিভাইস।
৬. বাড়ির ৬০ ফিট লম্বা সুইমিং পুলটি তৈরি করা হয়েছে এক
সম্পূর্ণ পৃথক ভবনে যার মোট আয়তন ৩,৯০০ বর্গ ফিট। পুলে জলের নিচে সঙ্গীত শোনার জন্য রয়েছে আলাদা
ব্যবস্থা। একটি কাচের দেওয়ালের তলা
দিয়ে সাঁতরে পুলের বাইরে চলে আসা যায়। রয়েছে একটি অত্যাধুনিক লকার রুম, ৪টি
শাওয়ার এবং ২টি স্বয়ং সম্পূর্ণ শৌচাগার।
৭. শরীরচর্চা করার জন্য বিল গেটসের বাড়িতে যে জায়গাটি
নির্দিষ্ট করা হয়েছে তার মোট আয়তন ২,৫০০ বর্গ ফিট। পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক লকার রুম ছাড়াও রয়েছে
স্টিম ও সাওনা বাথের আলাদা ব্যবস্থা।
৮. জানাডু ২.০-এর রিসেপশন হলটির আয়তন ২,৩০০ বর্গ
ফিট। এখানে ২০০ জনের ককটেল
পার্টি এবং ১৫০ জনের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হলঘরের একদিকে রয়েছে লাইমস্টোনের তৈরি ৬ ফিট
চওড়া ফায়ারপ্লেস। উল্টোদিকের দেওয়ালে রয়েছে
২২ ফিট চওড়া ভিডিও স্ক্রিন।
৯. ডোটা বাড়িজুড়ে রয়েছে ২৪টি শৌচাগার। এর মধ্যে ১০টি অভিনব পরিষেবাযুক্ত।
১০. বাড়িতে রয়েছে মোট ৬টি রসুইঘর। বাড়ির বিভিন্ন প্রান্তে এগুলি তৈরি করা
হয়েছে, যাতে ইচ্ছে অনুযায়ী বিশাল প্রাসাদের যেকোনো অংশে খানাপিনার ব্যবস্থা
করা যায়।
১১. বিল গেটসের বইয়ের নেশা সর্বজন বিদিত। তার ২১০০ বর্গ ফিট গ্রন্থাগারের
সিলিংটি গম্বুজাকৃতির। এতে রয়েছে দু'টি গোপন বুক কেস। এর মধ্যে একটি আসলে গুপ্ত বার। বইয়ের আড়ালে লুকোনো রয়েছে বিশ্বের বিরল ও দুর্মূল্য
মদিরার সম্ভার। গ্রন্থাগারে সংগৃহীত
বইয়ের সংখ্যা এবং বিষয়বস্তুও ঈর্ষণীয়। মাইক্রোসফট সহ-প্রতিষ্ঠাতার সংগ্রহে রয়েছে লিওনার্দো দ্য
ভিঞ্চির পাণ্ডুলিপি সুবিখ্যাত 'কোডেক্স লিসেস্টার'। ১৯৯৪ সালে যা নিলামঘর থেকে ৩ কোটি ৮
লক্ষ ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন গেটস।
১২. জানাডু ২.০-এর নিজস্ব মুভি থিয়েটারে ২০ জনের বসার
ব্যবস্থা রয়েছে। অতিথিদের
বসার জন্য রয়েছে অত্যন্ত আরামদায়ক কাউচ ও আরামকেদারা। এখানে ছবি দেখতে দেখতে মুখ চালাবার জন্য রাখা হয়েছে একটি পপকর্ন
তৈরির যন্ত্র।
১৩. এখন যেখানে গেটসের নিজস্ব গল্ফ কোর্স, স্পোর্টস
কোর্ট ও বোটিং ডক রয়েছে, সেখানে আগে একটি বাড়ি ছিল। বার্জে চাপিয়ে তা অন্যত্র সরিয়ে ফেলে গোটা
এলাকা সংস্কার করা হয়েছে।
১৪. মোট ২৩টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এই বাড়ির বিভিন্ন
গ্যারাজে। এর
মধ্যে রয়েছে স্টেনলেস স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি একটি কৃত্রিম গুহা। সেখানে ১০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।
১৫. বিল গেটস বৃক্ষপ্রেমী। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় গাছ একটি ৪০ বছরের প্রাচীন
মেপল গাছ। বাড়ির ড্রাইভওয়ের পাশে
দাঁড়ানো এই গাছের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। কখনও সামান্য রুক্ষ হয়ে উঠলেই তার শরীর ভিজিয়ে
দেয় শীতল ফোয়ারার পানি।
১৬. বাড়ির একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মিষ্টি পানির নালা। সেখানে বসবাস করে স্যামন
ও কাটথ্রোট ট্রাউট মাছের ঝাঁক। গৃহস্বামী অথবা অতিথিদের ইচ্ছে হলে, মেনুতে
জায়গা করে নেয় এই সমস্ত টাটকা মাছ।
১৭. বিল গেটসের বাড়িতে অতিথি হতে গেলে অংশগ্রহণ করতে হবে
মাইক্রোসফটের বাৎসরিক নিলামে। তথ্য বলছে, একদা জানাডু ২.০-এর অতিথি হতে এক মাইক্রোসফট কর্মী
খরচ করেছিলেন ৩৫,০০০ ডলার। নিলামের যাবতীয় অর্থ জমা পড়ে সংস্থার ত্রাণ
তহবিলে।
একজন ধনী ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার বা ৮ কোটি
টাকা খরচ করেন, তাহলে তার নিঃস্ব হতে কত দিন লাগবে? এর
জবাব হিসাব-নিকাশ করে তারাই বলতে পারবেন। কিন্তু মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস যদি
প্রতিদিন ৮ কোটি টাকা খরচ করেন, তবে তার যাবতীয় অর্ধ ফুরোতে ২১৮ বছর লেগে যাবে। অক্সফামের নতুন এক গবেষণায়
এ হিসাব দেওয়া হয়েছে যা গার্ডিয়ানে প্রকাশ করা হয়। তার ৭৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফুরোনোর এমনই হিসাব পাওয়া গেছে। ওদিকে, বিশ্বের
সবচেয়ে ধনী মেক্সিকান ব্যবসায়ী কার্সোল স্লিমের সময় লাগবে ২২০ বছর। বিনিয়োগ গুরু এ হারে খরচ করতে থাকলে ১৬৯ বছরে শূন্য
হবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
তবে এসব অদ্ভুত হিসাব বিলিয়নেয়ারদের ক্ষেত্রেই করা যায়। আর বিশ্বে বিগত অর্থনৈতিক
মন্দার পর বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অক্সফাম জানায়, ২০০৯ সালে মার্চে ৭৯৩ জন বিলিয়নেয়ারের সংখ্যাটি ২০১৪ সালের
মধ্যে ১৬৪৫ জনে দাঁড়ায়। এই বিলিয়নেয়াররা তাদের মোট অর্থের ৫.৩ শতাংশ পরিমাণ
প্রতিদিন ইন্টারেস্ট হিসাবেই পান। এই হারে বিল গেটস প্রতিদিন ১১.৫ মিলিয়ন ডলার কেবল ইন্টারেস্ট
থেকেই আয় করেন। বিলিয়নেয়ারদের
এই বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো শেষ নেই। বিশ্বের নাম করা ৮৫ জন ধনীর
সম্পদের পরিমাণ যত, এই ধরণীর অর্ধেক দরিদ্র মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণ
তত। কিন্তু
তাদের যত অর্থই থাক না কেন, কেউই এই অর্থ অকাজে ওড়াতে চান না। তারা বহু কাজের কাজও করেন। বিভিন্ন চ্যারিটি এবং মানবকল্যাণে বিপুল পরিমাণ অর্থও
প্রদান করেন বহু বিলিয়নেয়ার।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।