আমরা তো কতরকমেরই ডায়েট করে থাকি ওজন কমানোর জন্য। অনেকেই
অনেক ধরনের ডায়েট করে উপকৃতও হয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি কি ডিটক্স ডায়েট
সম্পর্কে জানেন? না জেনে থাকলে চলুন আজ জেনে নেই ডিটক্স ডায়েট সম্পর্কে কিছু
বিষয়।
ডিটক্স ডায়েট কী?
শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ ফ্লাশ আউট করার
প্রক্রিয়াই ডিটক্সিফিকেশন। লাইফস্টাইল পরিবর্তনের সাথে সাথে স্ট্রেস
ক্রমশ বাড়ছে। আর অতিরিক্ত স্ট্রেস এর কারণে শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
পড়ে। ফলসরূপ রোগ-প্রতিরোধ ও রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। শরীর থেকে
অপ্রয়োজনীয় টক্সিন ধীরে ধীরে বের হয়ে যায়। এই কারনেই স্বাভাবিকভাবেই
অতিরিক্ত টক্সিন শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তিভাব বাড়িয়ে তোলে। ডিটক্সিফিকেশন
তাই মানসিক প্রফুল্লতা বজায় রাখার জন্যেও জরুরি। যথেষ্ট পরিমানে
পানি, ফলমূল, সবজি খাওয়ার মাধ্যমে এই টক্সিন ফ্লাশ আউট করা সম্ভব।
ডিটক্সিফিকেশন ডায়েটের প্রাথমিক কথাঃ
- সবুজ শাকসবজি, ফল, নারকেল বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন।
- গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভালো হয়।
- ময়দার বদলে আটার রুটি খাওয়ার দরকার। জোয়ার, রগির
আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে পারলে খুব উপকার পাওয়া যায়।
- প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার, ক্যানড ফুড, ডিপ
ফ্রায়েড ফুড এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল, স্মোকিং এড়িয়ে চলুন।
- প্রসেসড ফুড কম খান।
- চিনি, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ধীরে ধীরে কম খেতে শুরু করুন।
ডিটক্সিফিকেশনের উপকারিতাঃ
- ডিটক্সিফিকেশনের ফলে সহজে ওজন ঝরানো সম্ভভ হয়।
- মনোযোগ বাড়তে সাহায্য করে।
- ডিটক্সিফিকেশনের জন্যে যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
খাওয়ার দরকার হয়, তাই চুল ও ত্বক উজ্জ্বল থাকে। চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য
ভালো রাখার জন্য এই ডায়েট মেনে চলতে পারেন।
- এই ডায়েটের মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ভালো ঘুম হয়। এনার্জি বাড়ে। সেই কারণে স্ট্রেস থাকলেও এই
ডায়েট মেনে চলার কারণে অ্যাক্টিভ থাকা সম্ভব।
কী কী খেতে পারেনঃ
- ব্রকলি, ফুলকপি, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, বিট, লাল ও সবুজ রঙের সবজি খেতে পারেন।
- রাইস কেক, রাইস পাস্তা খেতে পারেন। ব্রাউন রাইস খাওয়ার চেষ্টা
করুন। ডাল, মুগ ডাল, রাজমা খেতে পারেন।
- লবন ছাড়া বাদাম, তিল, কুমড়োর বীজ, আমন্ড, কাজুবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং এই খাবার গুলো
সালাদের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন।
- রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
- লেবুর সরবত, ভেজিটেবল জুস, চিনি ছাড়া ফলের রস খেতে পারেন।
- ডেইরি প্রডাক্টের মধ্যে দুধ, মাখন, টক দই
খেতে পারেন।
- গম ও গম জাতীয় খাবার যেমন হোয়াইট পাস্তা, ব্রাউন
ব্রেড ব্রেকফাস্টে ট্রাই করুন।
- দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। উষ্ণ বা রুম
টেম্পারেচারের পানি খান।
- সবজি ও দানা জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার সময় ভালমত চিবিয়ে খান।
বিশেষ টিপসঃ
- সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস উষ্ণ জলে লেবু মিশিয়ে খান।
- ব্রেকফাস্টে ফলের সঙ্গে ডাবের পানি খেতে ভুলবেন না।
- তিলের তেল, অলিভ ওয়েল বা সরষের তেল সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে
পারেন।
- সারাদিনে যথেষ্ট পরিমানে লেবু পানি পান করার অভ্যাস করুন।
- সালাদে লেবুর রস, আদা, জিরা ব্যবহার করতে পারেন।
ডিটক্সিফিকেশন ডায়েট মেনে চলার ক্ষেত্রে মনে রাখুনঃ
- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডিটক্স ডায়েট মেনে চলুন।
- প্রেগন্যান্ট মহিলার এই ডায়েট মেনে চলবেন না। ডেলিভারি
হওয়ার পরে আপনি যদি বাচ্চাকে ব্রেস্ট মিল্ক খাওয়ান, তা হলেও ডিটক্স
ডায়েট আপনার উপযোগী নয়।
- অ্যানিমিয়া, কিডনির সমস্যা, ক্যানসার, ক্রনিক অসুস্থতা, জেনেটিক ডিজিজ, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়বিটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী ডিটক্স ডায়েট মেনে চলুন।
- ডিটক্স ডায়েট মেনে চললে অনেক সময় মাথাধরা, পেটে
গন্ডগোল, অ্যাকনে, মুড সুইংয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডিটক্স ডায়েট কত দিন মেনে চলবেনঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে চাইলে ২/১ বার ডিটক্স ডায়েট
মেনে চলুন।
- সাধারণত বছরে ৩ বারের বেশি এই ডায়েট মেনে চলতে বারণ করা হয়।
- ডিটক্স ডায়েট মেনে চলার পর সাধারণত আগের খাওয়াদাওয়ার
অভ্যাসে ফিরে যাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
তথ্যঃ সানন্দা ২০০৯, ডাঃ নৈনি সেতালবাদ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।