মগজ খাটানোটা আসলে নিয়মিত চর্চার ব্যাপার। অনেকেরই ধারণা, আমাদের মস্তিষ্ক বুঝি নিজে থেকে নিজেকে
মেরামত করতে পারে না বা রোগ সারিয়ে হারানো সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। কিন্তু
বিষয়টা এমন নয়। কিছু অনুশীলনের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের অনেক সমস্যার
সমাধান করা সম্ভব। এমনকি
প্রাত্যহিক নানা চর্চার মধ্য
দিয়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখা এবং সক্ষমতা বাড়ানোও সম্ভব।
দ্য
গার্ডিয়ান অবলম্বনে মনোরোগ চিকিৎসক এবং দ্য ব্রেইনস ওয়ে অব হিলিং বইয়ের লেখক নরমান ডোইগির
পরামর্শ জেনে নিন।
প্রতিদিন দুই মাইল হাঁটুন
হাঁটার
মতো
নিয়মিত শরীরচর্চা ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতা কমিয়ে আনার একটা গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। নিয়মিত হাঁটায় এ রোগ প্রায় ৬০ শতাংশ
কমিয়ে আনা সম্ভব। হাঁটার সময় একটা কিছু ভাবতে ভাবতে
আনমনে না হেঁটে অনুসন্ধিৎসু মন
নিয়ে
চারপাশ দেখে-শুনে হাঁটাহাঁটি করুন। এতে আপনার
মস্তিষ্কের কাজ বাড়তে থাকবে, মস্তিষ্ক সক্রিয় হবে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষেরা সপ্তাহে
পাঁচ দিন
দিনে দুই মাইল করে হাঁটতে পারেন। এতে
শরীর ও মন দুটোর সক্ষমতাই বাড়বে।
নতুন কিছু শিখুন
নতুন কিছু শিখুন
নতুন একটা
ভাষা শিখতে শুরু করুন কিংবা শেখা শুরু করুন কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো, এমনকি ইচ্ছে হলে নাচ শেখাও
শুরু করতে পারেন। বয়স বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে মধ্যবয়সে
পৌঁছে যাওয়ার পর আমরা আর তেমনভাবে নতুন কিছু শিখি না। স্কুল-কলেজে
পড়ার দিনগুলোর কথা মনে করে দেখুন। কত
কিছু নিয়েই না মগজ
খাটানোর চর্চা করতাম আমরা। মগজকে
নতুন কাজ দিন, এটাই
মগজের খাবার। ভাষা,
সংগীত, নাচতে শেখা বা ছবি আঁকা যা-ই
শেখা শুরু করুন না কেন চর্চাটা
নিয়মিত
করুন। সপ্তাহে পাঁচ দিন নিয়ম করে দিনে অন্তত
ঘণ্টা খানেক সময় দিন এই
শেখাশিখিতে।
মস্তিষ্ককে পরীক্ষায় ফেলুন
শব্দ ও
ছবি
নিয়ে খেলুন। শব্দ ও ছবি মনে রাখার জন্য মস্তিষ্কের
বিশেষ একটা অংশ সক্রিয়
থাকে। এই অংশটিকে নিয়মিত সক্রিয় রাখার
চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে একজন সঙ্গীকে নিয়ে এই
চর্চা করতে পারেন। ধরুন
স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে
খেলতে শুরু করলেন, ক্রমাগত
আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে এই শব্দচর্চা করার চেষ্টা করুন। এসব
প্রক্রিয়ার মধ্যে মস্তিষ্ক ধ্বনি শনাক্ত করার সংকেত স্পষ্ট করতে পারে। পারিবারিক ছবির অ্যালবাম কিংবা
চিত্রকর্মের অ্যালবাম নিয়ে
বসতে পারেন। কোন ছবিতে কী কী আছে, সেগুলো ভালো করে দেখুন। এবার একটা করে ছবি নিয়ে ভাবুন এবং
মিলিয়ে দেখুন আপনি কতটা মনে রাখতে পারছেন। শব্দ ও ছবি মনে রাখার এই চর্চা
আপনার মগজকে শাণিত করবে।
নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে খেলুন
নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে খেলুন
আপনি নিশ্চয়ই
খেয়াল করেছেন, অনেক
বক্তার কথা বলার ধরনের মধ্যেই এমন কিছু থাকে যে আপনি মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারেন না। আবার অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তিই এমনভাবে কথা বলতে থাকেন যে
আপনি কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। শব্দ তরঙ্গের পার্থক্যের কারণেই
এমন ঘটে। আর যাঁরা ভালো বক্তা, তাঁরা নিজেদের স্বরযন্ত্রটিকে উঁচু-নিচুতে
নানা মাত্রায় ব্যবহার করতে পারেন,
অর্থাৎ নিজের কণ্ঠস্বরকে নানাভাবে
ব্যবহার করার ও সেটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারার ক্ষমতা তাঁদের আছে। নিজের
কণ্ঠস্বর নিয়ে এমন চর্চা শুরু করতে পারেন। প্রয়োজনে
আবৃত্তি চর্চার কায়দাকানুনের বইপত্র এবং সিডি-ডিভিডি জোগাড় করে নিন। স্বরচর্চা আপনার মগজের জন্যও দারুণ
উপকারী হতে পারে।
শরীরের কথা শুনুন
মগজ ঠিক
রাখতে হলে আগে শরীরটা ঠিক রাখা চাই। শরীর
নামের এই যন্ত্রখানাও আপনাকে
বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন সংকেত দিতে থাকে। ক্ষুধা
বা ঘুমের মতো এই সংকেতগুলোর
কথা আমাদের শুনতে হবে। নিয়মিত
পর্যাপ্ত ঘুমানো শরীরের জন্য
যেমন, তেমনি মগজের জন্যও অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়। কেননা ঘুমের সময়ই আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিদিনের দেখা-শোনা-শেখা
জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখে ভবিষ্যতে
ব্যবহারের
জন্য। ঘুম ঠিক না হলে মগজ বিগড়াবেই। তেমনি অন্যান্য শারীরিক সমস্যার প্রতিও মনোযোগী
হোন, নিজের
শরীরের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকুন। আপনি শরীরের কথা শুনলে মনও
আপনার কথা শুনবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।