যাদের পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয় তাদের প্রায় সবারই একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মে থাকে যে, তিনি গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন। এটা ঠিক নয়, গ্যাস্ট্রিক বলতে ডাক্তারি ভাষায় গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডিওডেনাল আলসার- এসব অসুস্থতাকে বুঝানো হয়। এ ধরনের অসুস্থতায় সাধারণভাবে রোগীর পেটে ব্যথা অনুভূত হয় অনেকসময় ব্যথা বেশ তীব্র আকার ধারণ করে এবং ব্যথা দীর্ঘ সময় (কয়েক ঘণ্টা) ধরে বিদ্যমান থাকে।
এ ধরনের ব্যথার সময় রোগীর সারাদেহ ঘেমে ভিজে যেতে পারে, রোগীর বমি হতে পারে, অনেকে বমি করার পর কিছুটা সুস্থতা অনুভব করতে পারেন। এন্টাসিড, রেনিটিডিন অথবা ওমিপ্রাজল জাতীয় মেডিসিন ব্যবহারে ব্যথা নিরাময় হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক জাতীয় অসুস্থতায় রোগীর পেটে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে, তবে তার পরিমাণ খুব বেশি হয় না। তাই পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হলে গ্যাস্ট্রিক ভেবে উপরোল্লিখিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার করলে তা থেকে আরোগ্য লাভ করার সম্ভাবনা কম। গ্যাস উৎপাদন বেশি হলে যারা হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের বুকের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং গ্যাস বের হলে অস্বস্তি ও বুকের ব্যথা দুই-ই কমে যেতে পারে।
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের কমতি দেখা দিলে অক্সিজেনের অভাবে হৃৎপিণ্ডের আক্রান্ত অংশে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে থাকে। এ ব্যথা তীব্র ধরনের, সাধারণভাবে পরিশ্রমকালীন সময়ে এ ব্যথা শুরু হয়, বিশ্রাম গ্রহণ করলে খুব অল্প (কয়েক মিনিট) সময়ের মধ্যে ব্যথা নিরাময় হয়ে যায়, এ ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলে অভিহিত করা হয়। একটু তাড়াহুড়া করে কোনোকিছু করতে গেলে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে, বৈরী আবহাওয়ায় এনজিনার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এনজিনার ব্যথা পানি খেলে, এন্টাসিড খেলে, অন্যসব গ্যাস্ট্রিকের মেডিসিন খেলে, বিশ্রাম নিলে অথবা কোনো কিছু ব্যবহার না করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে যাবে। এনজিনার ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গ থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, এতে বুকে ভার ভার ভাব, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস অথবা বুক জ্বালার মতো অনুভূতি হয়ে থাকে।
এনজিনা এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা অনেক সময়ই আলাদা করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। তাই সাধারণ মানুষ এনজিনাকে গ্যাস্ট্রিক ভেবে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করতে থাকেন এবং যখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে আসেন তখন দেখা যায়, এনজিনার অসুস্থতা অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া শ্রেয়।
ডা. এম. শমশের আলী
সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনার মন্তব্য লিখুন...আমার জীবনে যে কয়েক জন ডাক্তার দেখেছি তার মধ্য সব চেয়ে বোঝেন ডাক্তার উনি...... উনাকে দেখানোর ব্যপারে সতর্ক হউন....
উত্তরমুছুনতাই নাকি? পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
মুছুন