গত ১৮ বছর কোন অর্থ হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেননি। কোনো লেনদেন
করেননি অর্থমুদ্রা ব্যবহার করে। তিনি জার্মানির এক স্কুল শিক্ষক। তিনি ৬৯ বছর বয়সী জার্মান নারী হাইডমেরি
শুয়ারমার।এখন প্রশ্ন মনে হতে মুদ্রার ব্যবহার না করে, কীভাবে
তিনি টিকে আছেন এই প্রবল বাজার অর্থনীতির যুগে? ২২ বছর আগে বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা
থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে দুই সন্তানকে নিয়ে জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে স্থানান্তরিত
হন হাইডমেরি। নতুন পরিবেশ বদলে দেয় তার জীবন বাস্তবতাও। শহরে আশ্রয়হারা এক বিশাল সংখ্যক
জনগোষ্ঠীর কষ্ট ভীষণভাবে মর্মাহত করে তোলে তাকে। আর এ মর্মবেদনা থেকে হঠাৎ করে হাইডমেরির
মাথায় উদয় হয় নতুন এক চিন্তার।
চিন্তা অনুযায়ী ঠিক করেন কোনো ধরনের মুদ্রার লেনদেন ছাড়াই
সমাজে বেশ ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে আশ্রয়হীনরা। আর সে চিন্তাকে মাথায় রেখে হাইডমেরি
খুলে বসেন এক বিনিময়ের দোকান। হাউডমেরির ওই দোকানে অর্থের বিনিময়ে নয়, বরং লেনদেন
চলে কোন বস্তুর বিনিময়ে বস্তু, সেবার বিনিময়ে সেবা, কাজের বিনিময়ে
কাজ কিংবা দক্ষতার বিনিময়ে দক্ষতার। পুরনো কাপড়ের বিনিময়ে রান্নাঘরের সরঞ্জামাদি কিংবা সীসার
তৈরি জিনিসপত্রের বিনিময়ে গাড়ির সেবা এ ধরনের নানান বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হয় সে দোকানে। আর এভাবে
হাইডমেরির সে ছোট্ট দোকানটিতে নিজেদের দক্ষতা আর পুরনো জিনিসপত্রকে কাজে লাগানোর সুযোগ
পেলেন বেকাররা। তবে শুরুটা যে হাইডমেরির জন্য খুব সহজ ছিল তা নয়, বরং আশ্রয়হীনদের
বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে তাকে। এ ধরনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর
এক নারী তাদের সত্যিকারের কষ্ট বুঝতে পারবেন এমনটা বিশ্বাস করতে চাননি ঘরহারারা।
হাইডমেরি ১৯৯৫ সালেই প্রথম সিদ্ধান্ত নিলেন অর্থমুদ্রা
ব্যবহার না করার। এক বছরের মাথায় জীবনের বাস্তবতায় তাঁর সন্তানরাও ছেড়ে দেন ডর্টমুন্ড শহর। আর এর পরপরই
নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে পুরোদস্তুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেন হাইডমেরি। আর তখন
থেকে অর্থমুদ্রার ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন হাইডমেরি। গিভ এন্ড
টেক দোকানের নিয়ম নীতি থেকে একটুও সরে আসেননি তিনি। দোকানের সদস্যদের ছোট ছোট প্রয়োজন
পূরণ করে নিজের আনন্দ খুঁজে ফেরেন তিনি। উপভোগ করেন প্রতিটি মুহূর্ত।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।