রংপুরের তারাগঞ্জ
ইউনিয়নের পারুল বেগম। পারুল বেগম স্বপ্ন দেখতেন লেখাপড়া শিখে একজন শিক্ষিকা হবেন কিন্তু
বাবা-মায়ের মৃত্যুর কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। বিয়ে হয়ে যায় এক স্বল্প বেতনের
নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে। স্বামীর গ্রামে এসে পারুল জানতে পারেন এই গ্রামে পারুলই একমাত্র
এসএসসি পাস।
অভাব-অনটনের কারণে একসময় যে গ্রামের শিশুরা কেউই স্কুলে যেত না, পড়াশোনার
প্রতি উৎসাহী হতো না, সেই গ্রামের অধিকাংশ শিশুই এখন স্কুলগামী। পারুল বেগমের সাহসী
উদ্যোগে শিশুরা এখন আলোর পথ দেখতে শুরু করেছে। পরম মমতায় দিনমজুর পরিবারের এসব শিশুকে
পারুল প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে পড়ান। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ভর্তি হয়। বিনা পারিশ্রমিকে পড়ায় বলে গ্রামবাসী এর নাম দিয়েছে- 'পারুল আপার ফ্রি পাঠশালা'।
ক্লাস শুরু করার আগে সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর সবাই পারুলের কণ্ঠে
কণ্ঠ মিলিয়ে প্রার্থনা করে। প্রার্থনাটি হলো সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি- সারাদিন
আমি যেন ভালো হয়ে চলি। ইত্যাদিতে উপস্থাপক হানিফ সংকেতের প্রশ্নের জবাবে পারুল বেগম
বলেন, 'এই গ্রামে নিরক্ষর বেশি, ছেলেমেয়েরা পড়তে চায় না। পড়ানোর মতো কেউ নেই। ভাবলাম
নিজে পড়তে পারি নাই তাই ছেলেমেয়েদের পড়াইয়া আমি আনন্দ পাই। তবে বর্ষায় উঠানে কাদা,
রৌদ্রে গরমে শিশুরা কষ্ট পায় তা দেখে আমারও কষ্ট হয়'। ইত্যাদি অনুষ্ঠানে পারুল বেগমকে
দুই লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়। ইত্যাদির পরবর্তী অনুষ্ঠানে দেখানে হয়, এই টাকা
দিয়ে পারুল বেগম দোলাপাড়া গ্রামে ৩১ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখানে গড়ে উঠেছে স্কুল। যেখানে
নিজস্ব পোশাক পরে শিশুরা স্কুলে এসেছে। তাদের রয়েছে টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড
সবকিছুই। শুধু তাই নয় স্কুলের সামনে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গা। করা হয়েছে পুকুর,
বসানো হয়েছে টিউবওয়েল। পুকুরের পাশেই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ফলের গাছ। স্কুলের পাশেই
৬ শতাংশ জমির ওপর পারুল বেগমের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন পোশাক পরা শিশুদের
কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে পারুল আপার ফ্রি পাঠশালা।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।