সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নের মৃত্যু

বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নের মৃত্যু


রাজশাহীর হজরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি অ্যান্ড সিভিল অ্যাভিয়েশনের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রশিক্ষাণার্থী বৈমানিক নিহত হয়েছেনগুরুতর আহত হয়েছেন বিমানের ক্যাপ্টেন নিহত প্রশিক্ষাণার্থী বৈমানিকের নাম তামান্না রহমান (২১)তাঁর বাবার নাম আনিছুর রহমানঢাকায় তাঁদের বাসাগ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলেবিমানের আহত ক্যাপ্টেন হলেন লে. কর্নেল (অব.) সাইদ কামাল (৫০)দুর্ঘটনার পর তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়পরে বিমানযোগে ঢাকায় পাঠানো হয়তাঁর শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে

ফ্লাইং একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, তামান্না রাজশাহীতে পারসোন্যাল পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) কোর্সে ভর্তি হননিয়ম অনুযায়ী এই কোর্সে এককভাবে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালাতে পারলে একটি সনদ দেওয়া হয়এরপর কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) কোর্সে ভর্তি হতে হয়গত মঙ্গলবার তামান্নাকে পিপিএল কোর্সের অধীনে এককভাবে বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়গতকাল দুপুরে তিনি বিমানে ওঠেনতাঁর সঙ্গে বিমানে ওঠেন প্রশিক্ষক সাইদ কামাল সিভিল অ্যাভিয়েশনের জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক এনামুল কবির জানান, গতকাল বেলা একটা ৫৮ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়উড্ডয়নের পরপর টার্ন নিতে গিয়ে বিমানটি রানওয়ের পূর্ব পাশে গিয়ে পড়েসঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়

রানওয়ের পূর্বদিকের দেয়াল ঘেঁষে পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার চালিকীপাড়া মহল্লাএই মহল্লার রিকশাচালক মোহাম্মদ ডাবলু (২৮) ও লুৎফর রহমান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীডাবলু জানান, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার শব্দ শুনে তিনি দেয়াল টপকে বিধ্বস্ত বিমানের কাছে যানতিনি বলেন, এ সময় বিমানের মাঝখান থেকে প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক মেয়েটি হাত ইশারা করে তাঁকে ডাকছিলেন আর চিৎকার করে বলছিলেন, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচানবিমানটি তখন জ্বলছিলতার মাঝখানে ছিলেন মেয়েটিতাঁদের কাছাকাছি কোনো পানি ছিল না, তাই আগুনের কাছে ভিড়তে পারছিলেন নাপুরুষ লোকটি (প্রশিক্ষক) বিমানের জানালার কাচ ভেঙে বেরিয়ে আসেনতাঁর শরীরে আগুন ছিলতাঁরা মাটিতে গড়াগড়ি করিয়ে ওই আগুন নেভান

লুৎফর রহমান জানান, প্রায় ২০ মিনিট পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসেতাদের পাইপ লাগাতে আরও কয়েক মিনিট দেরি হয়ফায়ার সার্ভিস যখন আগুন নিভিয়ে ফেলে, তখন বিমানের ভেতরেই মেয়েটি পুড়ে কয়লা হয়ে যানঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বিমানটি প্রথমে আছড়ে পড়ে, সেখানে বিমানের সামনের চাকাটি ভেঙে পড়ে রয়েছেখানিকটা জায়গার মাটি চাষ দেওয়ার মতো গর্ত হয়ে গেছেসেখান থেকে প্রায় ৫০ হাত দূরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছেএর ককপিট, ইঞ্জিন ও পাখা পুড়ে আলাদা হয়ে গেছেইঞ্জিনের ভেতরে পুড়ে অঙ্গার হওয়া তামান্না রহমানের শরীরটা এমনভাবে আটকে আছে যে দূর থেকে তা ইঞ্জিনেরই অংশবিশেষ মনে হচ্ছেকাছে গিয়ে দেখলে বোঝা যায়, তার মাথাটি মাটিতে ঠেকে আছে বেলা তিনটা ৫৭ মিনিটের সময় ঢাকা থেকে একটি বিমান এসে নামেবিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই বিমানে করে আহত প্রশিক্ষক সাইদ কামালকে ঢাকায় নেওয়া হয়

ঘটনার পরপরই রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সারুল ইসলামসহ র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব), পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে যান বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তামান্নার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয় এদিকে ঘটনা তদন্তের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক নাজমুল আনামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছেএই কমিটি বিকেলেই একটি হেলিকপ্টারে করে রাজশাহীতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে

টাঙ্গাইলে শোকের ছায়া: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক তামান্নার মৃত্যুতে তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালায় নেমে এসেছে শোকের ছায়াএই গ্রামের চিকিৎসক আনিছুর রহমানের মেয়ে তামান্নাতামান্নার বাবার বাল্যবন্ধু কানাই চক্রবর্তী জানান, তামান্না সব সময় তাঁর বাবার সঙ্গে চাকরিস্থলেই থাকতেনতাঁর এক ভাইও চিকিৎসকগতকাল বিকেলে গালায় গিয়ে জানা যায়, বিকেলের মধ্যেই পুরো গ্রামে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েবিকেলে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই তামান্নাদের বাড়িতে যায় লাশ গ্রামে আনা হবে কি না, কখন দাফন হবেএমন নানা প্রশ্ন নিয়েওই বাড়িতে অবস্থানরত তামান্নার ফুফু মিনি আক্তার জানান, লাশ কোথায় দাফন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত তখন পর্যন্ত তাঁরা জানতে পারেননি


সূত্রঃ প্রথম আলো, ০২:৪৮, এপ্রিল ০২, ২০১৫

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।