কবজি থেকে শুরু করে পুরো হাতটা ঝিঁঝি ধরে বা অনুভূতিশূন্য হয়ে যায়। কখনো কামড়ায় বা ব্যথা করে। আঙুল নাড়াচাড়া করতেও কষ্ট হতে পারে; বিশেষ করে রাতের বেলা বা ঘুম থেকে ওঠার পর। এই সমস্যার নাম কারপাল টানেল সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সিটিএস। আমাদের হাতের পাতার ঠিক শুরুতে কবজির কাছে চামড়ার নিচ দিয়ে চলে গেছে একটা টানেল। এর ভেতর দিয়ে বিভিন্ন স্নায়ু ও শিরার প্রবাহ। এটিরই নাম কারপাল টানেল। কোনো কারণে এই টানেলের ওপর চাপ পড়লে সংশ্লিষ্ট স্নায়ুকোষগুলোর ওপরও চাপ পড়ে। তারই পরিণামে হাত ঝিঁঝি করে বা অস্বাভাবিক অনুভূতি শুরু হয়।
কী হয় সিটিএস হলে?
কারপাল টানেল সিনড্রোম হলে হাত ও হাতের আঙুলগুলো অবশ হয়ে আসে বা অস্বস্তি হয়। বুড়ো আঙুল, মধ্যমা ও তর্জনীতে সমস্যা হয় বেশি, আর সাধারণত কনিষ্ঠ আঙুল ভালোই থাকে। কোনো কিছু ধরে কাজ করার সময়, যেমন ফোনে কথা বলা বা গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে রাখার সময় হাত দুটো অবশ হয়ে আসে বা ঝিঁঝি ধরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতে ঘুম ভেঙে যায় হাতের ওই অস্বস্তির কারণে। কখনো কখনো হাত দিয়ে কিছু ধরে রাখার সামর্থ্যও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হাত থেকে জিনিসপত্র পড়ে যায়।
কারণ
কারপাল টানেলের ভেতর দিয়ে যেসব জিনিস প্রবাহিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মিডিয়ান নার্ভ, যা হাতের আঙুলের পেশি ও ত্বকের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে কারপাল টানেলের ভেতর এই মিডিয়ান নার্ভের ওপর চাপ পড়ার কারণেই সব সমস্যার শুরু, যা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় ত্বকের নিচে বা কলার ফাঁকে পানি জমলে কারপাল টানেল সরু হয়ে যায় এবং ¯স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে। একই ব্যাপার ঘটে কিডনি বা থাইরয়েডের সমস্যায়ও। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়ায়। কবজিতে আঘাতজনিত কারণেও হতে পারে এ সমস্যা।
করণীয়
চিকিৎসক হাতের পেশি ও স্নায়ুগুলো পরীক্ষা করে বেশ খানিকটা আঁচ করতে পারবেন সমস্যা সম্পর্কে। ঝুঁকিগুলোও নির্ণয় করা দরকার। প্রয়োজনে হাতের এক্স-রে, নার্ভ কনডাকশন স্টাডি বা ইলেকট্রোমায়েলোগ্রামও করা লাগতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে ব্যথানাশক, ¯স্নায়ুরোগের ওষুধ বা স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। সমস্যা দূর না হলে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
মেডিসিন বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ০৩:৪১, মে ১৪, ২০১৫
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।