وَمِنْهُم
مَّنْ عَاهَدَ اللَّهَ لَئِنْ آتَانَا مِن فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ
وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصَّالِحِينَ [٩:٧٥]
তাদের
মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা আল্লাহ তা’আলার সাথে ওয়াদা করেছিল যে, তিনি যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দান
করেন, তবে অবশ্যই আমরা ব্যয় করব এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে থাকব। (সূরা আত-তাওবা - আয়াতঃ ৯ঃ৭৫)
|
فَلَمَّا آتَاهُم مِّن فَضْلِهِ بَخِلُوا بِهِ
وَتَوَلَّوا وَّهُم مُّعْرِضُونَ [٩:٧٦]
অতঃপর যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে দান
করা হয়, তখন তাতে কার্পণ্য করেছে এবং কৃত ওয়াদা থেকে ফিরে গেছে তা ভেঙ্গে দিয়ে। (সূরা আত-তাওবা - আয়াতঃ ৯ঃ৭৬)
সাদকা
মানে দান করা। ইসলামে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাময়
ইবাদত। সম্পদশালীরা গরীব বা অসহায়দেরকে সাহায্য সহযোগীতার মাধ্যমে তাদের দুঃখ-কষ্ট
কিছুটা হলেও দূর করার চেষ্টা করে এ ইবাদতে অংশগ্রহণ করতে পারে। নিসাবের মালিক (শরিয়ত নির্ধারিত নির্দিষ্ট পরিমাণ মালের মালিক) হলে
প্রতি বছর নির্দিষ্ট অর্থের যাকাত ও শস্যাদির ওশর প্রদান করা, সামর্থ্য থাকলে প্রতি বছর
কোরবানী করা বাধ্যতামূলক। আর যাদের সম্পদ কম তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে তারা নিজ নিজ সামর্থ্য
অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সৎপথে ব্যয় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
ইসলামের শুরুর যুগে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) দান
সাদকার জন্য সাহাবীদেরকে খুব বেশি অনুপ্রাণিত করতেন। সাহাবীরাও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে
নিজেদেরকে এ গৌরবময় কাজে যুক্ত করতেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) সহ অসংখ্য সাহাবীদের কথা
তাই ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তবে ব্যকিক্রম কয়েকজন ব্যক্তিও ছিল যারা এ
দান-সদকা করারটা অপছন্দ করতো এবং সম্পদকে আঁকড়ে ধরে থাকতো। তাঁদের ব্যাপারে পবিত্র
ক্বোরআনে আয়াত নাযিল হয়। উপরের আয়াতটি তেমনি একটি আয়াত যা সা’লাবাহ ইবনে হাতেম নামে একজন আনসারী সাহাবীর জন্য নাযিল হয়।
ঘটনা
বিস্তারিতঃ
ইবনে জরীর, ইবনে-আবী হাতেম, ইবনে মারদুরিয়া, তাবারানী ও
বায়হাকী প্রমূখ হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) এর রেওয়ায়েতক্রমে ঘটনাটি এভাবে
উদ্ধৃত করেছেন যে, জনৈক স’লাবাহ ইবনে হাতেম আনসারী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে আবেদন করলেন এভাবে, “হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে দোয়া করে দিন যেন আমি মালদার হয়ে যায়”। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তাহলে কি তোমার কাছে আমার তরীকা পছন্দ নয়? সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন,
যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তবে মদীনার পাহাড় সোনা হয়ে গিয়ে আমার সাথে সাথে ঘুরত। কিন্তু
এমন ধনী হওয়া আমার পছন্দ নয়”। একথা শুনে সালাবাহ ফিরে গেল। কিন্তু ফিরে এসে আবার একই নিবেদন করল এ চুক্তির
ভিত্তিতে যে, “যদি আমি সম্পদপ্রাপ্ত হয়ে
যাই, তবে আমি প্রত্যেক হকদারকে তার হক বা প্রাপ্য পৌঁছে দেব। একথা শুনে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া
করে দিলেন। এতে তার ছাগল আর ভেড়ার সংখ্যা এভাবে বাড়তে শুরু করল যে, এত ছাগল আর
ভেড়া নিয়ে মদীনায় বসবাসের মত তার জায়গার সংকুলান দেখা দিল। তাই সে মদীনা থেকে দূরে
চলে যায়। তবে যোহর আর আসরের নামায মদীনায় এসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে পড়তো এবং বাকী নামায তার মালামালের জায়গায় পড়ে নিত।
এদিকে তার ছাগল আর ভেড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগের থেকে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ল এবং
যোহর আর আসরের নামায রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে পড়ার সুযোগ পায় না। তবে শুক্রবারে জুমআ’র নামায রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে পড়তে মদীনায় আসত। কিন্তু তার ছাগল আর ভেড়ার সংখ্যা
অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া সে আরো দূরে চলে গেলো এবং সেখান থেকে সে মদীনায় আসার সুযোগ
পেত না। এর ফলে সে শুক্রবারে জুমআ’র নামাযটাও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে পড়তে পারত না। কিছুদিন পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকদের কাছে সে লোকটি’র অবস্থা জানতে চাইলে লোকেরা বলল যে, “তার মালামাল এত বেশি বেড়ে গেছে যে শহরের কাছাকাছি কোথাও তার সংকুলান না হওয়ায় অনেক
দুরে কোথাও গিয়ে বসবাস করছে। এখন আর তাকে দেখা যায় না”। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথা শুনে তিন বার বললেন-সা’লাবার প্রতি আফসোস।
ঘটনাক্রমে
সে সময়ে সাদকার আয়াত নাযিল হয়, যাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মুসলমানদের কাছ থেকে সদকা আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়।
তিনি পালিত পশুর সাদকার যথাযথ আইন প্রণয়ন করে দুজন লোককে সাদকা উসূলকারী বানিয়ে
মুসলমানদের পালিত পশুর সাদকা আদায় করার জন্য পাঠালেন এবং তাদের প্রতি নির্দেশ
দিলেন, যেন তাঁরা সা’লাবাহ কাছে যান। সা’লাবাহ ছাড়া বনী সুলাইমের আরো এক লোকের কাছে যাবার হুকুমও করলেন। নির্দেশমত
তাঁরা দুজনই সা’লাবাহর কাছে গিয়ে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর
লিখিত ফরমান দেখালেন। ফরমান পড়ে সা’লাবাহ বলতে লাগলো, “এতো ‘জিযিয়া’ কর হয়ে গেল, যা
অ-মুসলমানদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। এখন আপনার যান, ফেরার পথে এখান হয়ে যাবেন”। সাহাবী দু’জন চলে গেলেন।
অন্যদিকে
সুলাইম গোত্রের অপর লোকটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ফরমানের কথা শুনে নিজের পালিত পশু উট-বকরীসমূহের মধ্যে
যেগুলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ছিল তা থেকে সাদকার নেসাব অনুযাীয় পশু নিয়ে স্বয়ং নিজেই
সংগ্রহকারী দুই কর্মকর্তা সাহাবী’র কাছে গিয়ে হাযির হলেন। কর্মকর্তা সাহাবীরা বললেন, “আমাদের প্রতি যে নির্দেশ রয়েছে তাহলো, পশুসমূহের মধ্যে যেটি উৎকৃষ্ট সেটি যেন
না নেই। কাজেই আমরা এগুলো নিতে পারি না”। সুলাইমী লোকটি বার বার বিনয় করে বললেন, “আমি নিজেই খুশি হয়ে এগুলো দিতে চাই, আপনারা দয়া করে কবুল করুন”। অতঃপর দুই কর্মকর্তা সাহাবী অন্যান্য মুসলমানদের কাছ থেকে সাদকা আদায় করে স’লাবাহর কাছে আসলেন। সা’লাবাহ আগের মতই একই উত্তর দিয়ে বলল “এটি মুসলমানদের কাছ থেকে নেয়া উচিত নয়। আপনারা এখন যান। আমি পরে চিন্তা করে
একটি সিদ্ধান্ত নেবো”। কর্মকর্তা সাহাবীরা
মদীনায় ফিরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্মকর্তাদের কুশল জিজ্ঞেস করার পূর্বেই আগের মতই তিনবার
বললেন- সা’লাবার প্রতি আফসোস। অতঃপর
সুলাইমীর প্রতি খুশি হয়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন।
এ ঘটনার
প্রেক্ষিতে সূরা আততাওবার ৭৫, ৭৬তম আয়াত নাযিল হয়। পরবর্তী আয়াতে এসব লোকের জন্য
অভিশাপের কথা রয়েছে। হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) এর বিস্তারিত রেওয়ায়েতের পর ইবনে জরীর
লিখেছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সা’লাবাহর প্রতি তিন তিনবার আফসোস করেন তখন সে মজলিসে সা’লাবাহর কতিপয় আত্মীয়-আপনজনও উপস্থিত ছিল। এ বাক্য শুনে তাদের মধ্য থেকে একজন
সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা হয়ে সা’লাবার কাছে গিয়ে পৌঁছল এবং তাকে ভৎর্সনা করে বলল, তোমার সম্পর্কে পবিত্র
ক্বোরআনে আয়াত নাযিল হয়েছে। এ কথা শুনামাত্রই সা’লাবা ঘাবড়ে গেল এবং মদীনায় গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে সাদকা কবুলের নিবেদন করল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাবা দিলেন “আল্লাহ তা’আলা আমাকে তোমার সাদকা
কবুল করতে বারণ করেছেন”। এ কথা
শুনে সা’লাবাহ নিজের মাথায় মাটি
নিক্ষেপ করতে লাগল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন “এটা তো তোমার নিজেরই কৃতকর্ম। আমি তোমাকে হুকুম করেছিলাম, কিন্তু তুমি মান্য
কর নি। এখন আর তোমার সদকা কবুল হতে পারে না”। তখন সা’লাবাহ অকৃতকার্য হয়ে ফিরে
গেল। এর কিছুদিন পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওফাত হয়। অতঃপর হযরত আবু বকর (রাঃ) খলীফা হলে সা’লাবাহ সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তার সাদকা কুবল করার জন্য আবেদন করেন।
সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) জবাব দিলেন-“ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই এ সাদকা যেখানে কবুল করেন নি সেখানে আমি কিভাবে তা
কবুল করবো”? তারপর সিদ্দিকে আকবরের
(রাঃ) ওফাতের পর ফারুখ আযম (রাঃ) খলীফা হলে সা’লাবা তাঁর কাছে গিয়ে সাদকা কুবল করার জন্য আবেদন করে। ফারুখ আযম (রাঃ)
সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) এর মত একই জবাব প্রদান করেন। এভাবে হযরত ওসমান (রাঃ) এর
খেলাফতের সময়ও সা’লাবাহ একই নিবেদন করে এবং আগের
মত জবাব পায়। হযরত ওসমান (রাঃ) এর খেলাফতের সময়ে সা’লাবাহর মৃত্যু হয়। -(মাযহারী)। [সৌদি সরকারের বিতরণকৃত তাফসীরে মা'রেফুল ক্বোরআন, পৃষ্ঠা নং ৫৮৩-৫৮৪ থেকে সংগৃহীত]
এ ঘটনার
মাধ্যমে সাদকার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সাদকা মানে যে শুধু টাকা-পয়সা
দিতে হবে তা নয়। বরং খাদ্য, বস্ত্র, সামর্থানুযায়ী
সাহায্য ইত্যাদির মাধ্যমে সাদকা করা যায়। যেমন হাদীসে আছে- জাবের (রা) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে কোন মুসলিম কোন গাছ লাগায়, অতঃপর
তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য
সাদকাহ হয় এবং যে ব্যক্তি তার ক্ষতি করে, সেটাও তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।” (মুসলিম ১৫৫২,
মিশকাত)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন : রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান বিবস্ত্র মুসলমানকে
বস্ত্র পরিধান করালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাকে বেহেশতের সবুজ পোশাক পরাবেন। কোনো
মুসলমান তার ক্ষুধার্ত ভাইকে অন্ন দান করলে এবং তাকে পিপাসায় পান করালে আল্লাহ পাক
তাকে বেহেশতের মোহর করা শরাব পান করাবেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
আবু হুরায়রা (রা:)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
”যে ব্যক্তি কোন অভাব গ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার
দু’নিয়া ও আখিরাতের সকল বিষয় সহজ
করে দিবেন।” (মুসলিম)
اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ
“খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন
থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
উক্ববা
বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নিশ্চয় দান-ছাদকা দানকারী থেকে
কবরের গরম নিভিয়ে দিবে। আর মু’মিন কিয়ামত দিবসে নিজের ছাদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে।” (ত্ববরানী, বাইহাক্বী, সনদ ছহীহ)
সালমান
বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি
দান হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গরীব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ ছওয়াব হয়।
একটি ছাদকার; অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।” (নাসাঈ, তিরমিযী)
আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণিত হাদিসে
রাসূল সা: বলেন, ‘মানুষের জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা, তার মৃত্যুকালে এক
শত দিরহাম দান করা অপো উত্তম(আবু দাউদ মিশকাত)।
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত
হাদিসে রাসূল সা: আরো বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা
আল্লাহ পাক বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া হ্রাস করেন না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয়
প্রকাশ করলে আল্লাহ পাক তাকে উন্নত করেন (মুসলিম, মিশকাত)।
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত।
রাসূল সা: বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন বিগত হয় না যে দিন দু’জন ফেরেশতা পৃথিবীতে
আগমন করেন না, তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ!
আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বদলা দিন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে
বদদোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন’ (বুখারি-মুসলিম)।
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের
কাছাকাছি এবং মানুষের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে, আর দূরে থাকে ভয়াবহ দোজখ থেকে। পান্তরে কৃপণ
অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশতের বিপরীতে এবং মানুষের শুভকামনা থেকে অনতিক্রম্য
অন্ধকারে অথচ দোজখের একান্ত সন্নিকটে। জাহেল দাতা, বখিল আবেদের চেয়ে আল্লাহর কাছে
অবশ্যই বেশি প্রিয়।’ (তিরমিজি)
এছাড়া
পবিত্র ক্বোরআনের অসংখ্য জায়গায় দান করার নির্দেশ রয়েছে। মেযন:
(1) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ ﴿المنافقون: ٩﴾
মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই
তো ক্ষতিগ্রস্ত। (৬৩: ৯)
(1) وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ ﴿المنافقون: ١٠﴾
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার
আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে
না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৬৩: ১০)
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿البقرة: ١٩٥﴾
আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে
ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন। (২: ১৯৫)
إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ﴿البقرة: ٢٧١﴾
যদি
তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং
অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তা’আলা
তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন।
(২: ২৭১)
দান-ছাদকা করে অনেকে আবার খোঁটা দেয়া। এটি হারাম
এবং নিন্দনীয় কাজ।
এ ব্যাপারে পবিত্র ক্বোরআন
বলে-
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [٢:٢٦٢]
যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার
পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই
জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বকারা- ২৬২)
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের
দান-খায়রাতকে বরবাদ করে দিও না।” (সূরা বকারা- ২৬৪)
হাদীসেও এ সম্পর্কে নিষেধ করা হয়েছে। আবু যর (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন: “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক তিন
ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং
তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আবু যার (রা:)
বললেন, ওরা ধ্বংস হোক ক্ষতিগ্রস্ত হোক- কারা তারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, “টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে যে কাপড়
পরিধান করে, দান করে যে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে যে ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয়
করে।” (মুসলিম)
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।