সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: কিছু বিস্ময় বালকের কথা

কিছু বিস্ময় বালকের কথা


এ পৃথিবীতে রহস্যের যেন শেষ নেই। রহস্য যেমন প্রকৃতিতে, তেমনি মানব জীবনেও। আমাদের চার পাশে এমন কিছু প্রতিভাবান শিশু রয়েছে, যাদের মেধা, প্রতিভা আর সাফল্যে বিস্ময়ে আমাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। শুধু বড়রাই নয়, শিশুরাও চাইলে পারে দুনিয়া বদলে দিতে। তবে মুশকিল হচ্ছে বেশির ভাগ প্রতিভাবান শিশুর খোঁজ কিন্তু আমরা জানি না। আবার অনেক প্রতিভা অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে হারিয়ে যায়।  মাঝে-মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিছু অসাধারণ প্রতিভার খবর উঠে আসে। এমন কয়েকজন বিস্ময় শিশুর কথা বলছি। 


শৈশবেই সেরা গণিতবিদ
১৯৬২ সালে অসাধারণ প্রতিভাবান এক শিশু জন্মগ্রহণ করে দক্ষিণ কোরিয়ায়। কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী শিশু হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে সে। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি যে, মাত্র চার বছর বয়সেই শিশুটি জাপানিজ, কোরিয়ান, জার্মান এবং ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করে। পঞ্চম জন্মদিনের পরপরই সে জটিল সব ডিফারেনসিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস সমাধান করতে শুরু করে।
সে সময় এক জাপানিজ টিভি অনুষ্ঠানে চাইনিজ, স্প্যানিশ, ভিয়েতনামিজ, টাগালগ, জার্মান, ইংরেজি, জাপানিজ ও কোরিয়ান ভাষায় সে পারফর্ম করে দেখায়। এরপর খুব দ্রুতই সে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান শিশু হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম লেখায়। সেখানে তার আইকিউ লেভেল দেখানো হয় ২১০। যেখানে একজন গড়পড়তা সাধারণ মানুষের আইকিউ লেভেল ৭০ থেকে ১৩০ এর মধ্যে। কিম হ্যানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে সে গেস্ট স্টুডেন্ট হিসেবে তিন বছর বয়সে ভর্তি হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানে লেখাপড়া করে। নাসা যখন তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানায় তখন তার বয়স মাত্র ৭। কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি শেষ করার সময় তার বয়স ছিল ১৫ থেকে কিছুটা কম। এই লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সময়ই সে নাসাতে নানা গবেষণামূলক কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।  পরবর্তীতে দেশে ফিরে সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও পিএইচডি করে। বর্তমানে কিম চুমবাক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন।



দশ বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
মাত্র দুই বছর বয়সেই যে পড়তে শিখেছিল সে ১০ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকবে, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?’— এমন মন্তব্য ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া গ্রেগরি স্মিথের স্বজনদের। সত্যিই তাই। তবে অবাক হওয়ার পালা এখানেই শেষ নয়। গ্রেগরি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিশ্ব শান্তি এবং শিশুদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শুরু করে এক বিশ্ব ভ্রমণ। 

এর আওতায় সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, মিখাইল গর্ভাচেভ, নোবেল বিজয়ী আয়ারল্যান্ডের বেটি উইলিয়ামস, দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেজমন্ড টুটু, পূর্ব তিমুরের জোসে রামোসসহ আরও অনেক বিশ্ব নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। জাতিসংঘে শিশুদের অধিকার নিয়ে বক্তৃতাও করে গ্রেগরি। এ ছাড়াও সে আরও অসংখ্য কাজ করেছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। এ ধরনের সামাজিক কার্যকলাপের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার প্রাথমিক তালিকায় এ পর্যন্ত চারবার তার নাম উঠেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটা তার পাওয়া হয়নি। গ্রেগরি বলেন, আমি কিন্তু পুরস্কার পাওয়ার জন্য কাজ করছি না।  আসলেই তো, বিশ্বে যদি সত্যিই শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাই তো হবে গ্রেগরির জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার।





অবাক করা সার্জন
ভারতে জন্ম নেওয়া অক্রিতের আইকিউ লেভেল ১৪৬। সে কারণেই তাকে ১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান শিশু হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। ২০০০ সালে অক্রিত সবার নজরে আসে যখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর। প্রতিবেশী এক মেয়ের হাত আগুনে মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল। 

চিকিৎসার খরচ না থাকার কারণে সে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছিল না। আগুনে মেয়েটির হাতের আঙ্গুল একটির সঙ্গে অন্যটি জোড়া লেগে যাচ্ছিল। অক্রিতের কোনো চিকিৎসা সনদ কিংবা অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও মেয়েটির হাতে সফল অস্ত্রোপচার করে আঙ্গুলগুলো ঠিক করে দিতে পেরেছিল। শুধু কী তাই? ১২ বছর বয়সে এক ধরনের ক্যান্সার প্রতিকারের পদ্ধতি আবিষ্কার করে সে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কিছু দিন আগে সে চন্ডিগড় কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স শেষ করেছে।  সারা ভারতে অনার্স কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অক্রিতই ছিল সবচেয়ে কম বয়সী।


খুদে গ্রান্ড মাস্টার
১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় জন্ম নেওয়া এই বিস্ময় শিশু একই সঙ্গে ইতালিরও নাগরিক। ছোটবেলা থেকেই দাবাখেলায় আগ্রহ ছিল তার। সুযোগ পেলেই দাবার বোর্ড নিয়ে বসে পড়ত বন্ধুদের সঙ্গে। ফ্যাবিয়ানোর কাছে বারবার হারার কারণে একসময় বন্ধুরাও আর খেলতে চাইত না। তখন ভরসা ছিল কম্পিউটারের দাবা সফটওয়্যারগুলো। সেখানেও অনায়াসেই জিতে যেত ফ্যাবিয়ানো। এভাবে একে একে জিততে জিততে মাত্র ১৪ বছর ১১ মাস ২০ দিনে সে অর্জন করল গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব। ইতালি এবং আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গ্র্যান্ড মাস্টার বনে গেলেন ফ্যাবিয়ানো।  ২০০৯ সালে ইলো রেটিংয়ে ২৬৪৯ নম্বর অর্জন করেন তিনি, যা ১৮ বছরের নিচে কারও অর্জন করা সবচেয়ে বেশি নম্বর।
  
বিস্ময় গায়িকা
মলডেভার চিসিনাউয়ে ২০০২ সালের ৬ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করে ক্লিওপেট্রা। তার ঠিক তিন বছর পরের কথা। রোমানিয়ায় লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। টানা দুই ঘণ্টা গান গাইবে ক্লিওপেট্রা। 

প্রতি গানের জন্য আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ক্লিওপেট্রা পাবে ১০০০ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা!সত্যিই তাই, এত কম বয়সে এত টাকা উপার্জনকারী বিশ্বের একমাত্র শিশু গায়িকা ক্লিওপেট্রা। তার বাবা মলডোভান রোমানিয়ান গায়ক পাভেল স্ট্রাটন। তিন বছর বয়সেই ক্লিওপেট্রা বাজারে আনে লা ভার্সটা ডি ট্রি এ্যানি শিরোনামের অ্যালবাম, যার অর্থ তিন বছর বয়সে। সবচেয়ে কম বয়সে এমটিভি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়া এই শিশু রোমানিয়ার সিঙ্গার চার্ট অনুসারে এক সময় নাম্বার স্কোর করেছিলেন।

দশ বছরেই গ্র্যাজুয়েট
কেভিন মাত্র চার মাস বয়সেই তার বাবাকে ড্যাডি ডেকে সবাইকে চমকে দেয়। ছয় মাসের সময় যখন সে অভিযোগ করে আমার বাম কানে ইনফেকশন হয়েছে তখন উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান।১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া কেভিন মাত্র চার মাস বয়সেই তার বাবাকে ড্যাডি ডেকে সবাইকে চমকে দেয়। ছয় মাসের সময় যখন সে অভিযোগ করে আমার বাম কানে ইনফেকশন হয়েছে তখন উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। কেভিন পড়তে শেখে ওর বয়স যখন মাত্র দশ মাস। চার বছর বয়সে কেভিন জন হপকিনস প্রিকোসিয়াস ম্যাথ প্রোগ্রামের জন্য পরীক্ষা দেয় এবং সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে নির্বাচিত হয়। ছয় বছর বয়সে হাইস্কুল এবং ১০ বছর বয়সে সান্তা রোজা জুনিয়র কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সে। এ সময় সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম উঠে যায় তার।এভাবে একের পর এক অর্জন করতে করতে শেষ পর্যন্ত কোটিপতি হয়ে গেছেন তিনি।  হু ওয়ান্টস টু বি আ মিলিওনিয়ার অনুষ্ঠানে সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে অর্জন করেন ১০ লাখ ডলার বা ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।



খুদে প্রতিভা...

ফারেল য়্যু
২০১২ সাল। অস্ট্রেলিয়ান গণিত প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ স্কোর তুলে ফিলিপাইনের ১২ বছর বয়সী ফারেল এলড্রিয়ান য়্যু। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক যেন কাজ করছে তার মাথায়। কঠিন কঠিন মোট ৩০টি জ্যামিতিক ও গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে রীতিমতো সবাইকে অবাক করে দেয় এই শিশু। অসম্ভব প্রতিভাবান এই শিশুটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে বিখ্যাত ম্যাগাজিন বিজনেস ইনসাইডার। এক বছর বয়সের পর থেকেই সে গণিতে পারদর্শী হয়ে উঠতে শুরু করে।

গিওলিয়ানো স্ট্রোয়ি
বয়স মাত্র পাঁচ বছর। রোমানিয়ান এই শিশুকে দেখলে কে বুঝবে তার নাম লেখা হয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে? কারণ আর কিছুই নয়, গিওলিয়ানো স্ট্রোয়ি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বডিবিল্ডার। সে মাত্র দুই বছর বয়স থেকে তার বডি বিল্ড শুরু করে। তার শরীরে এইটপ্যাকসহ মাসলের কারুকাজ দেখে গিনেস রেকর্ড বুকে জায়গা দিতে মোটেই বেগ পেতে হয়নি কর্তৃপক্ষের। ইন্টারনেট দুনিয়ায় তার আকাশছোঁয়া তারকা খ্যাতি রয়েছে। দুই পায়ের মাঝখানে ভারী গোলক রেখে অতিদ্রুত হাত দিয়ে হেঁটে সে রেকর্ডটি করেছে। বডি বিল্ডিং ছাড়াও সে কার্টুন এবং ছবি আঁকতে পছন্দ করে।

রিয়ান ওয়াং
নিউইয়র্কের কার্নেগি হল মিউজিক। বড় বড় তারকা পিয়ানিস্টদের স্বপ্ন এখানে পিয়ানো বাজানোর সুযোগ পাওয়া। সেই পেয়েছে রিয়ান ওয়াং। তার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। পিয়ানোর জগতের বিস্ময়বালকের সুর-তাল শুনে স্রেফ মুগ্ধ হয়ে থাকতে হয় যতক্ষণ না সে থামছে। ২০১৩ সালে আমেরিকান প্রোটগল ইন্টারন্যাশনাল পিয়ানো অ্যান্ড স্ট্রিংস কম্পিটিশনে তার অবিশ্বাস্য পিয়ানো বাজানোর দক্ষতার প্রমাণ মিলেছিল। মাত্র চার বছর বয়সে ১৮ পেইজের লেশন আত্মস্থ করেছিল এই বিস্ময়কর শিশু। পিয়ানো ছাড়াও তার ইলেক্ট্রিক গিটার বাজানোর স্বাভাবিক মিউজিক সেন্স তাকে করেছে অনন্য।
  
টেইলর উইলসন
বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের কাজ নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু ১৪ বছর বয়সেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বানিয়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের টেইলর রামোন উইলসন।তার কাজ দেখতে ছুটে যান স্বয়ং বারাক ওবামা পর্যন্ত। তার প্রদর্শনী দেখে সমালোচকরাও মেনে নেয় তার কাজ এগোচ্ছে একেবারে নিখুঁত বিজ্ঞানীদের বানানো নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের মতোই। খুব দ্রুতই সে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে একজন নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী হিসেবে। এ ছাড়া বিজ্ঞান প্রবক্তা হিসেবেও তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। ছোটবেলা থেকেই রকেট এবং মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে অদম্য কৌতূহল ছিল তার। সে পথেই হেঁটে আজ সে বিস্ময়বালক।

প্রিয়ানশি সোমানি
খুব দ্রুত জটিল কোনো গাণিতিক হিসাব মেলাতে চাইছেন? পাশে যদি প্রিয়ানশি সোমানি থাকে তাকে বলতে পারেন। সঠিক জবাবটা পেয়ে যাবেন মুহূর্তেই। ভারতের এই শিশু মাত্র ছয় বছর বয়সে বুদ্ধিবৃত্তিক গণিত সমস্যা সমাধান শুরু করে।
 লিখেছেন জিয়াউদ্দীন চৌধুরী সেলিম


সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন, ২৫মে ২০১৬খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।