নেটওয়ার্কিং বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই এটি’র জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে একাধিক পিসিতে সংযোগ ঘটিয়ে খুব সহজে ডাটা আদান-প্রদান করা যায়। অনেকে মনে করে থাকে নেটওয়ার্কিং খুবই কঠিন আর জটিল এক কাজ। আসলে প্রাথমিক যে কাজগুলো দিয়ে আপনি ডাটা আদান-প্রদান করবেন তা মোটেও কঠিন কিছু নয়। নেটওয়াকিং এর প্রথম ধাপ হলো ক্যাবলিং। যেসব পিসি শেয়ারিং এর কাজে ব্যবহার করা হবে সে পিসিগুলোকে প্রথমে ক্যাবল এর মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হবে। আজকে আমরা ক্যাবল ব্যবহার করে কিভাবে একাধিক পিসি’তে সংযোগ ঘটানো যায় তা দেখব।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ
১। প্রয়োজনীয় ক্যাবলঃ প্রথমে লাগবে নেটওয়াকিং ক্যাবল (ইউটিপি ক্যাট ৫/৬ ক্যাবল), যে ক্যাবলগুলো পিসি’তে সংযুক্ত করার কাজে ব্যবহার করবো।
ক্যাবলগুলো সাধারণত মিটারে (১মিটার=৩৯.৩৭ইঞ্চি) বিক্রি করা হয়। প্রয়োজনমত কিনেত হবে। ক্যাবলগুলোতে সাধারণত ৪জোড়া বা আটটি ক্যাবল থাকে যা প্রত্যেকটা ভিন্ন ভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। যেমন Orange White, Orange, Green White, Green, Blue White, Blue, Brown White, Brown অর্থাৎ কমলা সাদা, কমলা, সবুজ সাদা, সবুজ, নীলাভ সাদা, নীল, বাদামী সাদা, বাদামী। এই আটটি ক্যাবল একটি আবরন দিয়ে ঢাকা থাকে।
ইউটিপি ক্যাবল, ক্যাট ৬ |
২। কানেক্টরঃ তারপর লাগবে কানেক্টর, যে কানেক্টরগুলো ক্যাবলের দুই পাশে লাগাতে হয়। সাধারণত আমরা যে কানেক্টরটি ব্যবহার করবো তার নাম RJ45 কানেক্টর।
ক্যাবলের প্রান্ত RJ45 কানেক্টর দ্বারা সংযুক্ত করে এটি পিসি’তে সংযুক্ত করতে হবে। ক্যাবলে যেমন ভিন্ন ভিন্ন রং এর আটটি ক্যাবল থাকে, তেমনি RJ45 কানেক্টরেও আটটি পোর্ট থাকে। অর্থাৎ এক একটি ক্যাবলের জন্য এক একটি পোর্ট। ক্যাবলিং করার পর পিসি’র পেছনে RJ45 কানেক্টর লাগানোর জন্য যে পোর্টটি আছে সেটিতে লাগাতে হবে।
RJ45 কানেক্টর |
৩। ক্রিম্পারঃ আর ক্যাবলের সাথে কানেক্টরকে যুক্ত করার জন্য লাগবে ক্রিম্পার/পানচ মেশিন। ক্রিম্পার দিয়ে ক্যাবলের প্রান্ত কেটে কানেক্টরের সাথে যুক্ত করার উপযোগী করা হয়।
ক্রিম্পার |
৪। টেস্টারঃ এরপর ক্যাবল টেস্টার। ক্রিম্পারদিয়ে ক্যাবলটিকে কেটে কানেক্টরের সাথে যুক্ত করার পর টেস্টার দিয়ে টেস্ট করে দেখা হয় ক্যাবলটি কানেক্টরের সাথে লাগানো ঠিক হয়েছে কি না। এর মাধ্যমে ক্যাবল আর কানেক্টরের কানেকশন ত্রুটি ধরা পড়ে। অর্থাৎ ক্যাবলিং সঠিকভাবে হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য ক্যাবল টেস্টার ব্যবহার করা হয়।
ক্যাবল টেস্টার |
ক্যাবল টেস্টার |
আপনি যদি প্রফেশনাললি নেটওয়ার্কিং এর কাজ করতে চান তাহলে ক্রিম্পার আর ক্যাবল টেস্টার কিনতে হবে। অন্যথায় কিনার দরকার নেই। কারণ ক্যাবলগুলো কিনার পর দোকানদারকে বললে এরা ক্যাবলগুলো কানেক্টরের সাথে যুক্ত করে দেয়।
ক্যাবল কানেক্ট করার নিয়মঃ
কানেক্টরের সাথে ক্যাবল জোড়া লাগানোর সময় দেখতে হবে আপনি কয়টি পিসি’তে শেয়ারিং করবেন। আপনার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ক্যাবলগুলো কানেক্টরের সাথে লাগাতে হবে। যেমন দুটি পিসিতে শেয়ারিং করার জন্য ক্যাবলগুলোকে দুই পাশে দুই রকম করে ক্যাবলিং করতে হবে। একে বলে ক্রস ওভার ক্যাবলিং। যদি একাধিক পিসি’তে শেয়ারিং করেন তাহলে ক্যাবলগুলো দুই পাশে একইভাবে লাগাতে হবে। একে বলে স্ট্রেইট ক্যাবলিং। আরেক ধরনের ক্যাবলিং আছে, সেটি হলো রোলওভার ক্যাবলিং। এটি সাধারণত ব্যবহার হয় না বললেই চলে। রাউটারের কনসোল পোর্টের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হয়। আমরা গুরুত্বপূর্ণ দুই নিয়ম এখানে দেখব।
ক্যাবলিং করার জন্য ক্রিম্পার দিয়ে ক্যাবলের মাথা খুব সমানভাবে কাটুন যেন ভিতরের আটটি ক্যাবলের কোন মাথা একটু লম্বা বা খাটো না হয়। কাটার পর আটটি ক্যাবলকে RJ45 কানেক্টরের সাথে লাগানোর জন্য নিচের বর্ণনামতে রং মিলিয়ে সাজান। ক্যাবলের দুই পাশের একটি “ক” হলে অন্য পাশকে “খ” হিসেবে ধরবো আমরা।
ক্রস ওভার ক্যাবলিং করার নিয়মঃ আগেই বলেছি দুটি পিসিতে শেয়ারিং অর্থাৎ পিয়ার টু পিয়ার শেয়ারিং করার জন্য এ নিয়মে ক্যাবলিং করতে হয়। এর মাধ্যমে তৈরিকৃত ক্যাবলের দু প্রান্ত দুই রকম হয় এবং দুই প্রান্ত সরাসরি দুই পিসিতে লাগাতে হয়।
ক্রমিক | ক পাশের কালার কোড | খ পাশের কালার কোড |
১ | White Orange | White Green |
২ | Orange | Green |
৩ | White Green | White Orange |
৪ | Blue | Blue |
৫ | White Blue | White Blue |
৬ | Green | Orange |
৭ | White Brown | White Brown |
৮ | Brown | Brown |
ক্যাবল যেভাবে ঢুকাতে হবে |
স্ট্রেইট ক্যাবলিং করার নিয়মঃ একাধিক পিসিতে শেয়ারিং করার জন্য এ নিয়মে ক্যাবলিং করতে হয়। এর মাধ্যমে তৈরিকৃত ক্যাবলের দু প্রান্ত একই রকম হয় এবং দুই প্রান্তের একটি যায় পিসিতে অন্যটি সুইচ বা হাব এ লাগাতে হয়।
ক্রমিক | ক পাশের কালার কোড | খ পাশের কালার কোড |
১ | White Orange | White Orange |
২ | Orange | Orange |
৩ | White green | White Green |
৪ | Blue | Blue |
৫ | White Blue | White Blue |
৬ | Green | Green |
৭ | White Brown | White Brown |
৮ | Brown | Brown |
ক্যাবলগুলো আরো কয়েকভাবেও অনেকে করে থাকে। যাই হোক কালারকোড মিলানোর পর ক্রিম্পার দিয়ে ভালভাবে চাপ দিন যেন ক্যাবলগুলো বের হয়ে আসতে না পারে।
ক্রিম্পার দিয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে |
ক্রিম্পার দিয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে |
আপনি যদি নতুন হোন তাহলে প্রথম দিকে আপনার ভুল হতে পারে। এতে RJ45 কানেক্টর নস্ট হবে। যতবার ক্যাবলিং শুদ্ধ না হবে ততবার RJ45 কানেক্টর বদলাতে হবে। কারণ RJ45 কানেক্টরকে দ্বিতীবার ব্যবহার করার সুযোগ নাই। ক্যাবলিং সম্পন্ন করার পর আপনাকে IP সেটিং এর কাজ করতে হবে।
কানেক্টর লাগানোর পর ক্যাবলের দুপাশ |
কানেক্টর লাগানোর পর ক্যাবলের দুপাশ |
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনআপনার কন্টাক নাম্বারটা দেওয়া যাবে?
উত্তরমুছুনসরি ভাই। বিজি থাকি প্রায়। মোবাইলে কথা বলা সম্ভব না। কমেন্ট করলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
উত্তরমুছুন