সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: প্রতিদিনের প্রাতরাশে মধু

প্রতিদিনের প্রাতরাশে মধু


‘আমড়া গাছের ঝোপের ভেতর মৌমাছিদের বাসা/মাঝখানে তার প্রকাণ্ড এক চাক রয়েছে খাসা’—শিয়াল পণ্ডিতের চোখে পড়ল সেই মৌচাক। লোভ হলো মধু পানের। এক রাতে শিয়াল হানা দিল মৌচাকে। ভেবেছিল, মৌমাছিরা হয়তো ঘুমিয়ে আছে। পরে তো হুলের জ্বালায় অস্থির। কবিতাটি স্কুলপাঠ্য ছিল এককালে। অনেকেরই শৈশবস্মৃতি জড়িয়ে আছে পঙ্কিগুলো সঙ্গে।

বাস্তবে শিয়াল মৌচাকে হানা দিক বা না দিক, সেকালে মধু সংগ্রহের জন্য মৌচাকে হানা দেওয়া ছাড়া মানুষের উপায়ও ছিল না। বনবাদাড়ে গাছের ডালে, কোটরে, বাড়ির চালে, ঘরদালানের ছাদে, মাটির গর্তে বুনো মৌমাছিরা যে চাক তৈরি করত, সেখান থেকেই আহরণ করা হতো মধু। এ ছাড়া প্রাকৃতিক মধুর আরেকটি বড় উৎস সুন্দরবন। এসব মধু মৌয়ালেরা ফেরি করে বিক্রি করত। মুদিখানাতেও পাওয়া যেত খোলা অবস্থায়।

দিনে দিনে অবস্থা পাল্টেছে। কৃষিবিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের যেমন প্রসার ঘটেছে, তেমনি বিপণনপদ্ধতিতেও এসেছে বিস্তর আধুনিকতার ছোঁয়া। মৌমাছিকে পোষ মানিয়ে সারা দেশেই এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌমাছির চাষ হচ্ছে। এদিকে আধুনিক নাগরিক জনসাধারণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মধুর চাহিদাও বেড়েছে। চাষের মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইদানীং বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। ঝকঝকে মোড়কে সুদৃশ্য কাচের বোতলে ভরা মধু এখন সারা দেশেই মুদিখানা থেকে পাড়া-মহল্লার অনেক ওষুধের দোকানেই সহজলভ্য।
দেশে মৌ চাষ তথা আধুনিক জনরুচির উপযোগী করে মধু বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নেপথ্যের প্রধান ভূমিকা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। বিসিকের ‘আধুনিক প্রযুক্তিতে মৌ চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’-এর প্রকল্প পরিচালক খন্দকার আমিনুজ্জামান জানালেন, দেশে এখন প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে সুন্দরবন থেকে আহরণ করা প্রাকৃতিক মধুর পরিমাণ মাত্র ২০০ টন। চলতি বছর থেকে মধু দেশের রপ্তানিপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এবারই প্রথম দেশের মৌচাষিদের উৎপাদিত মধু রপ্তানি হয়েছে ভারতে। ভারত ও ইউরোপে মধুর বিশাল বাজার রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে মধুতে ১৮১টি রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। মধুর গুণ এ থেকেই আঁচ পাওয়া যাবে। এই প্রাকৃতিক নির্যাসটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়। মধু কখনো পচে না। কারণ, এটি নিজেই একটি পচনরোধক। ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ওষুধের একটি প্রধান উপাদান মধু। প্রতিদিন এক চামচ মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, নানা রোগের উপসমসহ জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দেবে।
হাকিম ফেরদৌস ওয়াহিদ , 
অধ্যক্ষ, তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ|
গুণাগুণঃ
১. কাশি, শ্বাসকষ্ট ও বিশেষ ধরনের জ্বরের চিকিৎসায় মধু ব্যবহৃত হয়|
. ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর ক্ষত বা আলসার সারাতেও মধুর প্রয়োজন হয়|
৩. পোড়া, ছানি ও ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের ক্ষত সারাতে|
৪. প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামে শর্করার উৎকৃষ্ট উৎস|
. খাবারে মিষ্টি উপাদান হিসেবে মধুর চাহিদা অনেক|
. প্রসাধনী তৈরিতেও সুগন্ধি উপাদান বা শুষ্কতা কমানোর উপাদান|
মৌচাক থেকে জীবাণুমুক্ত প্রক্রিয়ায় মধু সংগ্রহের পরামর্শ চিকিৎ​সকদের|
দামঃ বাজারে কালোজিরা ফুলের মধুর দাম সবচেয়ে বেশি, ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। সুন্দরবনের মধু ৫০০ টাকা, লিচু ফুলের মধু ৪০০ টাকা এবং সরিষা ফুলের মধু ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি। এক কেজি, আধা কেজি, ২৫০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম এমন অনেক মাপের কাচের বোতলে এসব মধু পাওয়া যায়। সূত্র: ওয়েবমেড।
আশীষ-উর-রহমান
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২০ আগস্ট ২০১৪

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।