কারিনা চিকিতোভা, মাত্র তিন বছর সাত মাস বয়স মেয়েটার। বাড়ি রাশিয়ার এক গ্রামে। একদিন বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন। কৌতূহলী হয়ে বাবার পিছু নিল সে। সঙ্গে নিল আদরের পোষা কুকুরটাকে। একটু পরেই দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলেন বাবা, একা এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে কারিনা পা বাড়াল জঙ্গলের দিকে। মা ভেবেছেন বাবার সঙ্গেই গিয়েছে মেয়ে। আর বাবা তো জানেনই না কারিনা তাঁর পিছু নিয়েছিল। ব্যস, এভাবেই সবার অজান্তে হারিয়ে গেল মেয়েটা!
খানিক বাদেই টনক নড়ল সবার। পায়ে হেঁটে, হেলিকপ্টারে করে, এমনকি ড্রোন পাঠিয়েও ওকে খোঁজা শুরু করল উদ্ধারকর্মীর দল। ঠিক যেন হলিউডি সিনেমার মতো! কিন্তু কোথায় কারিনা? সবাই যখন দুশ্চিন্তায় অস্থির, এমনই সময় কারিনার কুকুরটা গ্রামে ফিরে এল। কুকুরটাকে ছাড়া অন্ধকার জঙ্গলে একলা কী করছে মেয়েটা, ভেবে বাবা-মায়ের বুকটা হু হু করে উঠল। ওদিকে বাইরে তখন প্রচণ্ড ঠান্ডা। কুকুরটা যে দেবদূত হয়ে ফিরে এসেছে, বোঝা গেল দুদিন পর। যখন কুকুরটাই পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল উদ্ধারকর্মীদের। সাইবেরিয়ান জঙ্গলের ভেতর উদ্ধারকর্মীরা গিয়ে দেখলেন, লম্বা ঘাসের ভেতর জবুথবু হয়ে বসে আছে কারিনা। কোলে তুলে নেওয়ার সময় দেখা গেল, কদিনের ধকলে পাখির মতো হালকা হয়ে গেছে ছোট্ট মেয়েটা। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, সে তখনো জ্ঞান হারায়নি। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সুস্থই আছে কারিনা। মশার কামড় আর খালি পায়ে হাঁটার কারণে পায়ের নিচে একটু ক্ষত ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি ওর। টানা ১১টা দিন সে কাটিয়েছে সাইবেরিয়ান জঙ্গলে। যেখানে বুনো নেকড়ে আর ভালুকেরা ঘুরে বেড়ায় সারাক্ষণ! কারিনা জানিয়েছে, বুনো জাম আর নদীর পানি খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়েছে ও। রাতে ভীষণ ঠান্ডায় কুকুরটাকেই কম্বলের মতো জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে লম্বা ঘাসের মধ্যে। কুকুরটা না থাকলে কী হতো বলো তো!
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২২ আগস্ট ২০১৪ খ্রিঃ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।