সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: নীল নদের পানি ভাগাভাগি - মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়া

নীল নদের পানি ভাগাভাগি - মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়া


নীল নদ নিয়ে মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে পানি সমস্যার সমাধানের আভাস মিলেছে। মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দীর্ঘ আলোচনার পর পানির ভাগাভাগি প্রশ্নে একটা প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছেন। নীল নদের পানি নিয়ে সমস্যাটি ছি মূলত মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে। মিশর পানির জন্য তৃষ্ণার্ত আর ইথিওপিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুধার্ত। এই নদ বয়ে গেছে সুদানের উপর দিয়েও। যে কারণে আলোচনায় সামিল হয়েছে তারাও। এই তিন দেশের পররাষ্ট্র এবং পানিমন্ত্রীরা দ্বন্দ্ব নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি মাসের শুরুতে সমবেত হয়েছিলেন খার্তুমে। সেই আলোচনার ফসল হচ্ছে প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছা। চুক্তির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে পূর্ব নীল অববাহিকার ব্যবহার ও ইথিওপিয়ার রেনেসাঁ বাঁধ। এ ব্যাপারে ইথিওপীয় প্রকৌশলী বেলাচিউ চেকেনে তেসফা মন্তব্য করেছেন, বাঁধ নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে ইথিওপিয়ার ব্যর্থতা। এই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করবো আমরা। দ্য গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম (জিইআরডি) নির্মিত হচ্ছে সুদান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। ভরা মৌসুমে এ থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত বিদ্যুত্ উত্পাদন সম্ভব হবে। আফ্রিকার মধ্যে এটিই হবে সর্ববৃহত্ জলবিদ্যুত্ প্রকল্প।

ইথিওপীয়রা বিশ্বাস করে এই বাঁধ তাদের দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। বর্তমানে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থা থেকে তারা পূর্ব আফ্রিকার বড় বিদ্যুত্ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে। ইথিওপিয়ার অধিকাংশ লোকের ধারণা, জিইআরডি জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে; খরা ও দুর্ভিক্ষের দুর্নাম ঘুচিয়ে ত্বরান্বিত করবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বাঁধটির উপর ইথিওপীয়রা এরই মধ্যে করে ফেলেছে প্রচুর বিনিয়োগ। প্রয়োজনীয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরিতে সাহায্যের জন্য কিনেছে সরকারি বন্ড। ইথিওপীয়ান ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট ফর আবে (নীলের ইথিওপীয় নাম)-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা তেসফা মন্তব্য করেছেন, এই বাঁধ আমাদের দেশের চেহারাই পাল্টে দেবে। এই সংগঠনটি বাঁধ তৈরিতে ইথিওপিয়াকে উত্সাহ যুগিয়েছে। কিন্তু নীল নদের ভাটির দেশ বলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় মিশর। মিশরীয়রা মনে করে নীলের উপর রয়েছে তাদের জন্মগত অধিকার। ঔপনিবেশিক যুগের চুক্তির জোরে যুগের পর যুগ তারা ঠেকিয়ে রেখেছে উজানের উন্নয়ন। তাতে এখন বাদ সেধেছে ইথিওপিয়া।
বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা ও পানি-বুভুক্ষু কৃষি অর্থনীতির জন্য ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে আরও অতিরিক্ত ২১ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানির প্রয়োজন পড়বে মিশরের। এখন বছরে তারা ৫৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি পায়। ঔপনিবেশিক আমলের চুক্তির দোহাই দিয়ে বাঁধ নির্মাণকে ঠেকিয়ে রাখার কম চেষ্টা করেনি তারা। ওসব এখন ধোপে টিকছে না। সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি বিরোধিতা করে যুদ্ধের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। স্বাধীন নীল নদ বিশেষজ্ঞ অ্যালান নিকোল সরাসরিই বলে ফেলেছেন, খেলা বদলে গেছে। বাঁধ মেনে নিয়েই স্বার্থ হাসিল করতে হবে, এ সত্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছে মিশর। এছাড়া তাদের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। এমনিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত তারা। তার উপর নীল নদ নিয়ে যুদ্ধের মতো কোনও ঝামেলায় জড়ানোটা হবে স্রেফ বোকামি। কায়রোতে নিযুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিকের অভিমত, নীল নদ ইস্যুতে ইথিওপিয়া রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। চূড়ান্ত চুক্তি হলে মিশর ও সুদানের মুখ রক্ষা হবে। তখন এই দুই দেশের সরকারেরই জনগণের সমালোচনার হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে।


সূত্রঃ ইত্তেপাক২৩ মার্চ, ২০১৫ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।