সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের হাদিয়া (৩য় ও শেষ )

মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের হাদিয়া (৩য় ও শেষ )



একুশতম পাঠ: জাকাত ও তার বিধান
জাকাত ফরজ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে জাকাত অন্যতম একটি রুকন নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বৎসর অতিবাহিত হলে জাকাত দেয়া ফরজ হয়আমাদের মধ্যে অনেকেই রমজানের বিশেষ ফজিলতের কারণে রমজান মাসেই জাকাত আদায় করে থাকে। এটা ঠিক যদি রমজান মাসেই সম্পদের ওপর এক বৎসর পূর্ণ হয়, আর যদি এর আগেই সম্পদের ওপর এক বৎসর পূর্ণ হয়ে যায়, তবে যখন বৎসর পূর্ণ হল তখনই জাকাত আদায় করা জরুরি রমজানের অপেক্ষা করা ঠিক নয়
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে ত্রিশেরও বেশি জায়গায় সালাতের সঙ্গে জাকাতের কথা উল্লেখ করেছেনএর দ্বারা বুঝা যায় যে, জাকাত আল্লাহ তাআলার নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্ববহ একটি মহান ইবাদত জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের শুকরিয়া আদায় করা হয়, আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয় এবং গরীবদের সঙ্গে সহানুভুতি প্রকাশ করা হয়
জাকাত জাকাতদাতাকে কৃপণতা ও ঘৃণ্য কিছু চরিত্র থেকে পবিত্র করে দেয় এবং তাকে নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতে সাহায্য করেযেসব নেককার লোকদের আল্লাহ ও মানুষ মহব্বত করে, ভালবাসে আল্লাহ তাআলা বলেন,
{خذ من أموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها} [التوبة 103]
'তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।' (সূরা তওবা : ১০৩)
অন্যত্র বলেন,
{وأحسنوا إن الله يحب المحسنين} [البقرة 195]
'আর তোমরা সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।' (সূরা বাকারা : ১৯৫)
জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং তাতে বরকত হয়আল্লাহ তাআলা বলেন,
{وما أنفقتم من شيء فهو يخلفه وهو خير الرازقين} [سبأ 39].
'আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।' (সূরা সাবা : ৩৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সূত্রে হাদীসে কুদসিতে বর্ণিত, 'হে বনি আদম, তুমি খরচ কর, তোমার জন্যও খরচ করা হবে।'

জাকাত না দেয়ার ফলে বিভিন্ন ক্ষতি হয়। যেমন :
এক. জাকাত দেয়ার ফলে যেসব উপকার হয়, জাকাত না দেয়ার ফলে জাকাত ত্যাগকারী সেসব উপকারিতা থেকে বঞ্চিত থাকে।
দুই. জাকাত না দেয়ার ফলে সম্পদ অনিরাপদ হয়ে যায়। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, 'যে সম্পদের সঙ্গে জাকাতের মিশ্রন ঘটবে, সে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।' (মুসনাদে হুমাইদি : হাদিস নং : ২৩৭, ইবনে আদি ফিল কামেল : ৬/২০৮, বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা : ৪/১০৫৯)
বর্তমান যুগে আমরা যে আগুনে পুড়ে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে, ডাকাতির কবলে পড়ে, ছিনতাইয়ের ফলে, আরো বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক ধস ও দৈউলিয়াত্বের সংবাদ শুনি এবং শষ্য ও ফলফলাদি যেসব বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ দুর্যোগের শিকার হয়, তা মূলত জাকাত না দেয়ার ফলেই হয়।
তিন. জাকাত না দেয়ার ফলে আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এ বৃষ্টিই মানুষ, জীব-জন্তু, বৃক্ষ ও ফলমুলের জীবনী শক্তি। হাদীসে এসেছে, 'যে জাতি তাদের সম্পদের জাকাত প্রদান করা বন্ধ করে দেবে, সে জাতির ওপর আসমান বৃষ্টি বর্ষণ করা বন্ধ করে দেবে।' (ইবনে মাজা : ৪০১৯, হাকেম : ৪/৫৪০, হাকেম হাদিসটি সহিহ বলেছেন এবং ইমাম জাহাবি তাকে সমর্থন করেছেন। আবুনুআইম ফিল হুলইয়া : ৩/৩২০, ৮/৩৩৩-৩৩৪)
বর্তমান সময়ে আমরা বিভিন্ন দেশে যে অনাবৃষ্টি এবং এ অনাবৃষ্টির ফলে যে খরা ও খাদ্যসঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে, তা মূলত জাকাত না দেয়ার ফলেই।
জাকাত না দেয়ার এ সব শাস্তি হচ্ছে নগদ ও ইহকালীন। আর পরকালের শাস্তি এর চেয়েও ভয়াবহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{والذين يكنزون الذهب والفضة ولا ينفقونها في سبيل الله فبشرهم بعذاب أليم * يوم يحمى عليها في نار جهنم فتكوى بها جباههم وجنوبهم وظهورهم هذا ما كنزتم لأنفسكم فذوقوا ما كنتم تكنزون} [التوبة 34، 35].

'এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) 'এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর।' (তওবা : ৩৪-৩৫)
যে সব সম্পদের জাকাত প্রদান করা হয় না, সেসব সম্পদ হচ্ছে আয়াতে উল্লেখিত কানয। এ কানযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন জাকাত পরিহারকারীদের শাস্তি দেবেন। একটি সহিহ হাদীসে এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। 'স্বর্ণ-চাঁদির যে কোন মালিক জাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকবে, কেয়ামতের দিন এগুলোকে আগুনের পাত বানিয়ে জাহান্নামের আগুনে দাহ করা হবে অতঃপর এর মাধ্যমে তার পার্শ্ব, ললাট ও পিট সেঁক দেয়া হবে। আগুন ঠাণ্ডা হয়ে গেলে, পুনরায় তা গরম করা হবে। যতক্ষণ না তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালা করা হয় এবং সবাই নিজ নিজ স্থান জাহান্নাম কিংবা জান্নাত দেখে নেয়। আর সেদিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের ন্যায়।' (মুসলিম : ৯৮৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ولا تحسبن الذين يبخلون بما آتاهم الله من فضله هو خيرا لهم بل هو شر لهم سيطوقون ما بخلوا به يوم القيامة}.
'আর আল্লাহ যাদেরকে তার অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকাল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে।' (সূরা আলে-ইমরান : ১৮০)
একটি সহিহ হাদীসে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, 'আল্লাহ যে ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়েছেন, সে যদি তার জাকাত আদায় না করে, তার এ সম্পদ কেয়ামতের দিন একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে, যার দুই চোখের ওপর দুটি কালো চিহ্ন থাকবে। সে তাকে দংশন করবে আর বলবে, আমিই তোমার মাল, আমিই তোমার সঞ্চয়।' (বুখারি : ১৪০৩)
এ হচ্ছে জাকাত পরিহারকারীর পরকালীন শাস্তি। জাকাত পরিহারকারীর সম্পদকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে তার ওপর জাহান্নামের আগুনের তাপ দেয়া হবে। অতঃপর তা দ্বারা তার পার্শ্ব, ললাট ও পৃষ্ঠে দাগ দেয়া হবে। এবং তার সম্পদের সাপের আকৃতিও দেয়া হবে, যে সাপ তাকে দংশন করবে ইত্যাদি।
আর এ শাস্তি এমন নয় যে, এক মুহূর্তের জন্য আরম্ভ হল আবার অন্য মুহূর্তে তা বন্ধ হয়ে গেল। বরং পঞ্চাশ হাজার বছর অনবরত চলতে থাকবে। আল্লাহ আমাদের এ থেকে হিফাজত করুন।
তাই, জাকাত ত্যাগকারীর পরিচয় পাওয়া গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া সমীচিন নয়। বরং তাকে নসিহত করা ও জাকাত দিতে বাধ্য করা জরুরি। তারপরও যদি সে জাকাত না দেয়, সরকারের উচিত তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া। যদি সে জাকাত ফরজের কথা অস্বীকার করে, তাকে তওবা করতে বাধ্য করা। যদি সে তওবা করে এবং তার সম্পদের জাকাত আদায় করে ভাল কথা, অন্যথায় সে মুরতাদ। তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। আর যদি সে জাকাত ওয়াজিব এ কথা স্বীকার করে কিন্তু সম্পদের মহব্বত ও কৃপণতার কারণে সে জাকাত দিচ্ছে না তা হলে তাকে শাস্তি দেয়া এবং তার থেকে জবরদস্তি মূলক জাকাত উসুল করা জরুরি। যদি তাকে হত্যা ব্যতীত তার থেকে জাকাত উসুল করা সম্ভব না হয়, তবে তাকে হত্যা করাও জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর মৃত্যুর পর সাহাবায়ে কেরাম যেমন আবুবকর রা. এর নেতৃত্বে জাকাত অস্বীকারকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। অতঃপর তারা জাকাত দিতে বাধ্য হয় এবং আল্লাহর হুকুম মেনে নেয়। আল-হামদুলিল্লাহ।



বাইশতম পাঠ: কোন কোন জিনিসের ওপর জাকাত ওয়াজিব এবং তার পরিমাণ কত?
যেসব সম্পদের ওপর জাকাত ওয়াজিব হয়, তা মূলত চার প্রকার।
প্রথম প্রকার : স্বর্ণ-রৌপ্য :
স্বর্ণ-রৌপ্য বা র্স্বণ-রৌপ্যের পরিবর্তে বর্তমান যে সব টাকা-পয়সা পরস্পর আদান-প্রদান করা হয়, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব। যেমন, দিরহাম, রিয়াল, দিনার, ডলার অথবা অন্য কোন  মুদ্রা। যদি কারো কাছে নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য বা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা তার চেয়ে বেশি থাকে এবং তার ওপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করে, তাতে জাকাত ফরজ। আর তার পরিমাণ হচ্ছে চারভাগের একভাগ। অর্থাৎ একশত টাকায় আড়াই টাকা জাকাত দেয়া ফরজ। হোক না এ সম্পদ ব্যবসার জন্য বা জীবিকা নির্বাহের জন্য বা বাড়ি-গাড়ি ক্রয় করার জন্য অথবা অন্য কোন প্রয়োজন মিটানোর জন্য। হোক না এ সম্পদ ছোট-বড়-পাগল বা অন্য কোন ব্যক্তির মালিকাধীন। ইয়াতিম বাচ্চাদের সম্পদের ওপরও জাকাত ফরজ অভিভাবকগণ তাদের সম্পদ থেকে জাকাত বের করবে।
সম্পদের লভ্যাংশ মূল সম্পদের সঙ্গে গণনা করা হবে, যদিও তার ওপর পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত না হয়।
চাকরিজীবি যে সব ব্যক্তিবর্গ তাদের বেতন থেকে অল্প-অল্প অর্থ জমা করেন, তাদের জন্য ভাল হল, রমজানের ন্যায় বরকতপূর্ণ কোন একটি মাসকে জাকাত বের করার জন্য নির্ধারণ করা ও বৎসর গণনা শুরু করা এবং তাতেই  সব অর্থের জাকাত দেয়া, বৎসর পূর্ণ হোক বা না হোক। যে ব্যক্তির মানুষের কাছে পাওনা রয়েছে, যদি তাদের পাওনা এমন ব্যক্তিদের নিকট হয়, যারা সম্পদশালী, যাদের কাছে চাওয়া মাত্র টাকা পাওয়া যাবে, তবে এসব পাওনা টাকার ওপর জাকাত দেয়া ওয়াজিব। যখন তাদের টাকা দিয়েছে তখন থেকেই বৎসর গণনা শুরু করবে। আর যদি এমন ব্যক্তিদের নিকট পাওনা হয়, যাদের টাকা-পয়সা নেই বা টাকা-পয়সা নিয়ে তারা টালমাটাল করতে পারে, তবে এসব সম্পদ হস্তগত হওয়ার পর এক বৎসরের জাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে। এটাই আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত। আর যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত কিন্তু তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সেও জাকাত দেবে। এটাই আলেমদের বিশুদ্ধ অভিমত।

দ্বিতীয় প্রকার : ব্যবসার সম্পদ :
ব্যবসার জন্য যেসব সম্পদ গচ্ছিত রাখা হয়। যেমন, গাড়ি, বাড়ি, জমি, বিভিন্ন জিনিস পত্র, খাদ্যসামগ্রী, ঔষধ পত্র ও ব্যবসায়িক নানা দ্রব্য। এসব সম্পদের ওপর বা এসব সম্পদের মূল্যের ওপর বছর অতিবাহিত হলে জাকাত দেয়া ফরজ। সে সময় তার মূল্য যত হবে, সে অনুসরারেই জাকাত দেবে। কত দিয়ে ক্রয় করেছে তা লক্ষ্য করা হবে না।
হ্যাঁ, যেসব বাড়ি-গাড়ি বা জমি বাড়া দেয়ার জন্য রাখা হয়েছে, সেসব বাড়ি-গাড়ি বা জমির ওপর জাকাত ফরজ নয়, বরং জাকাত ফরজ হচ্ছে তার ভাড়ার ওপর। বৎসরে শেষে যে পরিমাণ ভাড়া আদায় হয়েছে, সে পরিমাণ অর্থের ওপর জাকাত ফরজ।
ব্যবহৃত জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ নয়। যেমন, বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যবহৃত গাড়ি ও জিনিস পত্রের ওপর জাকাত ফরজ নয়। তবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত জিনিস পত্রের ওপর জাকাত ফরজ।
জাকাত আদায় করার সময় জাকাতের নিয়ত করা ফরজ। যেহেতু এটা ইবাদত আর ইবাদত নিয়ত ব্যতীত আদায় হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন,
: "إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى" [أخرجه البخاري رقم 1، ومسلم رقم 1907]
ইবাদতের মূলভিত্তি হচ্ছে নিয়ত, যে ব্যক্তি যা নিয়ত করবে, তার জন্য তাই মিলবে। (বুখারি : ১, মুসলিম : ১৯০৭) তাই জাকাত দেয়ার সময় নিয়ত করা জরুরি।
যদি কেউ, জাকাত দেয়ার সময় নিয়ত না করে পরে নিয়ত করে, তবে তার জাকাত আদায় হবে না। মুসলমানদের উচিত তার সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব কষে জাকাত দেয়া। যাতে জাকাতের অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হওয়ার কারণ না হয়।
জাকাত আদায় করার জন্য অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া বৈধ। জাকাত আদায়কারীর উচিত জাকাত দিয়ে কারো ওপর অনুগ্রহ প্রদর্শন না করা এবং  প্রফুল্য চিত্তে জাকাত আদায় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{يا أيها الذين آمنوا لا تبطلوا صدقاتكم بالمن والأذى} [البقرة 264].
হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল করো না। (সূরা বাকারা : ২৬৪)
আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেছেন,
{ولا يأتون الصلاة إلا وهم كسالى ولا يُنفقون إلا وهم كارهون} [التوبة 54]
আর তারা সালাতে আসে না, তবে অলস অবস্থায় এবং তারা দান করে না, তবে অপছন্দকারী অবস্থায়। (সূরা তওবা : ৫৪)
জাকাত দেয়ার সময় এ বলে দোয়া করা মুস্তাহাব।
اللهم اجعلها مغنما ولا تجعلها مغرما،
'হে আল্লাহ এ সম্পদকে তুমি গণিমত হিসেবে গ্রহণ কর, একে তুমি জরিমানায় পরিগণিত কর না।'
আর জাকাত গ্রহণকারী বলবে, 
آجرك الله فيما أعطيت وبارك لك فيما أبقيت، وجعله لك طهورا.
'তুমি যা দান করেছো আল্লাহ তোমাকে এর প্রতিদান দিন। এবং তুমি তোমার নিজের জন্য যা রেখেছ, তাতে আল্লাহ বরকত দান করুন এবং একে তোমার পবিত্রতার মাধ্যম করুন।'
আল্লাহর বান্দাগণ, এ মাসে বেশি বেশি নফল সদকা করা মুস্তাহাব। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন সদকা সব চেয়ে উত্তম ? তিনি বলেন, রমজান মাসে সদকা করা। (তিরমিজি : ৬৬৩, তিনি বলেন, হাদিসটি গরিব)
রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, যে ব্যক্তি তার হালাল রুজি থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে, আল্লাহ তা ডান হাতে কবুল করেন এবং বদ্ধির্ত করতে থাকেন, এক সময় তা বড় পাহাড়ের ন্যায় হয়ে যায়। (বুখারি : ১৪১০, মুসলিম : ১০১৪)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, সদকা আল্লাহর ক্রোধকে নির্বাপিত করে এবং অপমৃত্যু থেকে হিফাজত করে। (তিরমিজি : ৬৬৪, তিনি হাদিসটি গরিব বলেছেন)
 এ বিষয়ে আরো আয়াত ও হাদিস রয়েছে।
এ মাসে সদকা করা রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর অনুসরণ এবং তার সঙ্গে একটি সাদৃশ্যও। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মাসে বেশি বেশি কল্যাণ করার তওফিক দান করুন এবং তার মাগফেরাত দিয়ে আমাদেরকে ঢেকে দিন।

তেইশতম পাঠ: জাকাতের বিধান
আল্লাহর বান্দাগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, খালেস নিয়তে ও হালাল উপার্জন থেকে তোমরা যা সদকা কর, তা মূলত তোমরা তোমাদের রবকে করজে হাসানা প্রদান করছ। যা তোমরা আল্লাহর নিকট সঞ্চিত ও অনেক গুণ বৃদ্ধির আকারে দেখতে পাবে। অধিকন্তু এ দুনিয়াতে তোমরা আল্লাহর বরকত প্রাপ্ত হচ্ছো ও তোমাদের সম্পদ তো বৃদ্ধি পাচ্ছেই। তোমরা জাকাতের সম্পদকে খুব বেশি মনে  কর না।  অনেক মানুষ দেখা যায়, যারা মিলিয়ন মিলিয়ন টাকার মালিক, তবুও জাকাত পরিমাণ অর্থকে তারা খুব বেশি মনে করে। অথচ আল্লাহর অনুগ্রহ যে তাদের ওপর এর চেয়েও বেশি সে কথা তারা ভুলে যায়। আল্লাহ তাকে এতো অর্থ ও বিত্ত-বৈভবের মালিক বানিয়েছেন, সে কথা মনে রাখে না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে এক মুহূর্তের মধ্যে  তার এ অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্রদের মাঝে বিলিবণ্টন করে দিতে পারেন। অথবা আল্লাহ তার মৃত্যু দিয়ে দিতে পারেন, ফলে এ সম্পদের হিসাব-নিকাশ থাকবে তার দায়িত্ব আর ভোগ করবে অন্যরা।

জাকাত যারা পেতে পারে :
জাকাতের হকদার আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তাদের ভিন্ন অন্য কারো নিকট জাকাত হস্তান্তর করা বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{إنما الصدقات للفقراء والمساكين والعاملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفي الرقاب والغارمين وفي سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم} [التوبة: 60].
'নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) গোলাম আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা তওবা : ৬০)
যে ব্যক্তি এতটুকু সম্পদের মালিক, যতটুকুর মাধ্যমে তার এবং তার পরিবারের এক বছরের খরচ ঘুচে যায়। অথবা তার নির্দিষ্ট বেতন-ভাতা রয়েছে, অথবা তার অন্য কোন উৎস রয়েছে যা তার জন্য যথেষ্ট, সে ব্যক্তি ধনী। তার জন্য জাকাত গ্রহণ করা বা তাকে জাকাত দেয়া জায়েজ নয়। তদ্রূপ যে ব্যক্তি নিজ প্রয়োজন মোতাবেক রিজিক উপার্জন করতে সক্ষম এবং তার সে রিজিক অন্বেষণ করার সময় ও সুযোগ রয়েছে, তার জন্যও জাকাত নেয়া বা তাকে জাকাত প্রদান করা বৈধ নয়। হাদীসে এসেছে, 'ধনীর জন্য তদ্রূপ উপার্জক্ষম ব্যক্তির জন্য জাকাত বৈধ নয়।' (নাসায়ি ও আবুদাউদ)
তদ্রূপ কল্যাণমূলক কাজেও জাকাত দেয়া বৈধ নয়। যেমন, মসজিদ- মাদরাসা নির্মাণ অথবা অন্য কোন কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা। এসব কল্যাণকর কাজগুলো করা হবে বায়তুল মাল অথবা নফল দান-সদকা থেকে। জাকাত আল্লাহর হক, আল্লাহর নির্ধারিত নির্দিষ্ট কয়েকটি খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা বৈধ নয়। কোন ঋণের পরিবর্তে জাকাত কর্তন করা বৈধ নয়। জাকাতের মাধ্যমে ঘুষ বা অন্য কোন জরিমানা আদায় করা বৈধ নয়। নিজ অধস্তন সন্তান বা আপন পূর্বপুরুষ বা এমন কোন ব্যক্তিকে জাকাত প্রদান করা যাবে না, যার ব্যয়ভার ও খরচাদি জাকাত প্রদানকারীর ওপর ন্যস্ত।
আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট করে যাদের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের ভিন্ন অন্য কোথাও জাকাত দেয়া বৈধ নয়। কেউ অন্য কোথাও জাকাত দিলে বৈধ হবে না এবং তার জাকাত শুদ্ধ হবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা নিজেই তাদের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
{إنما الصدقات للفقراء والمساكين والعاملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفي الرقاب والغارمين وفي سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم} [التوبة 60]
'নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস-দাসী মুক্ত করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মাহজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা তওবা : ৬০)
আল্লাহ তাআলার এ বর্ণনা পদ্ধতিই বলে দেয় যে, জাকাত এদের মধ্যে সীমিত। এ আট প্রকারের কোন এক প্রকারকে জাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে, সবাইকে জাকাত দেয়া জরুরি নয়। এর প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস, তিনি মাআজ রা. কে ইয়েমেনে পাঠিয়ে বলেন, 'অতঃপর তুমি তাদের বল, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর সদকা ফরজ করেছেন, যা তোমাদের ধনীদের থেকে নিয়ে গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে।' (বুখারি : ১৪৫৮) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এখানে শুধু গরীবদের কথা উল্লেখ করেছেন, এর দ্বারা বুঝা যায় যে, শুধু গরীবদের জাকাত দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।



চব্বিশতম পাঠ: শেষ দশদিন বেশি ইবাদত করা প্রসঙ্গে
রমজানের শেষ দশ দিনকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে নাজাতের মৌসুম বানিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য দিনের চেয়ে এ দশ দিন খুব বেশি ইবাদত করতেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, 'যখন রমজানের শেষ দশ দিন প্রবেশ করত, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  রাতে জাগ্রত থাকতেন। পরিবারের লোকজন জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মনোনিবেশন করতেন।' (মুসলিম : ১১৭৪)
 তিনি অন্যত্র বলেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  রমজানের শেষ দশ দিনে এতো মেহনত করতেন, যা তিনি অন্যান্য সময় করতেন না।' (মুসলিম : ১১৭৫)
বুখারি এবং মুসলিমের অভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রমজানের শেষ দশদিনে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কোমর বেঁধে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন। নিজে জাগতেন এবং পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে তুলতেন। (বুখারি : ২০২৪, মুসলিম : ১১৭৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর ইবাদত ছিল কুরআন তিলাওয়াত, সালাত, জিকির ও সদকা ইত্যাদি। এসব আমলের জন্য আল্লাহর রাসূল অবসর নিয়ে নিতেন। আমাদেরও উচিত এসব দিনগুলোতে বেশি বেশি আমল করা এবং দুনিয়াবি আমল থেকে যথাসম্ভব অবসর নিয়ে নেয়া বা দুনিয়াবি আমল কম করে ফেলা।
এ দশ দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্যে হচ্ছে, রাতে জাগ্রত থাকার জন্য চেষ্টা করা, দীর্ঘ কিয়াম, রুকু, সেজদা ও কিরাতের মাধ্যমে সালাত আদায় করা। পরিবার ও সন্তানদের জাগিয়ে দেয়া, যাতে তারাও মুসলমানদের সঙ্গে এসব ইবাদতে অংশ গ্রহণ করতে পারে এবং ইবাদতের মাধ্যমে তারা বেড়ে উঠে। বর্তমান যুগে অনেক অভিভাবকই এ থেকে অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। তারা তাদের সন্তানদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে, বেহুদা আড্ডায় রাত জাগতে অভ্যস্ত করে তুলেছে। তারা এসব রাতকে সম্মান করে না। তাদের অন্তরে এসব রাতের কোন গুরুত্ব নেই। এটা কোন ক্রমেই সুস্থ্ তরবিয়ত বা সঠিকভাবে সন্তানদের গড়ে তোলা নয়। এটা বড় ধরনের দুর্ভাগ্য যে, এ রাতগুলো আসবে আর চলে যাবে, অথচ তাদের সন্তানরা এর থেকে কোন উপকার হাসেল করবে না। আবার কেউ কেউ বলে থাকে যে, এগুলো হচ্ছে নফল ইবাদত। আমাদের শুধু ফরজ আদায় করলেই যথেষ্ট হবে। আয়েশা রা. তাদের ব্যপারে বলেছেন, 'আমি এমন কতক লোকদের সম্পর্কে শুনতে পেয়েছি, যারা বলে, আমরা শুধু ফরজ আদায় করতে পারলেই চলে। অতিরিক্ত আমল করার ব্যাপারে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ কথা ঠিক যে, আল্লাহ ফরজ ছাড়া অন্য কোন ইবাদতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন না, কিন্তু তারা রাত দিন ভুল করছে। তোমাদের নবী তোমাদের মত একজন বান্দা ছিলেন, তোমরাও তোমাদের নবীর মত আল্লাহর বান্দা। কিন্তু তোমাদের নবী কখনো এ রাতগুলো জাগ্রত করা ত্যাগ করেননি।
এ রাতগুলোর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লাইলাতুল কদরের উপস্থিতি। যে রাতের ব্যাপারের আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ليلة القدر خير من ألف شهر} [القدر 3]
'লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকে উত্তম।' (সূরা কদর : ৩)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থাকবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।' (বুখারি : ১৯০১, মুসলিম : ৭৬০) শেষ দশ রাতের সবকটি রাতে জাগ্রত থাকা ব্যতীত এ রাত পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ কোন রাতে এর উপস্থিতি নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এখানেও রয়েছে বান্দার ওপর আল্লাহর রহমত। বান্দাগণ লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে এ দশ রাতের সবক'টিতেই বেশি বেশি ইবাদত করবে, তাদের সওয়াব বৃদ্ধি পাবে।
হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করো। এ রাতগুলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মোক্ষম সময়। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি রমজান সম্পর্কে বলেছেন, 'এ মাসের শুরু অংশ হচ্ছে রহমত, মধ্যম অংশ হচ্ছে মাগফেরাত আর তৃতীয় অংশ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির।' মুসলমানদের যে কেউ এ রহমত, মাগফেরাত ও মুক্তির মাস পেয়ে ইবাদতের জন্য চেষ্টা করে, তার সময়ের হিফাজত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য যথাসাধ্য যত্নবান থাকে সে এ মাসের সব ধরণের বরকত ও ফজিলত প্রাপ্ত হবে বলে আমরা দৃঢ় আশাবাদি। ফলে পরবর্তীতেও জান্নাতে উচ্চ মাকাম লাভে ধন্য হবে। ইনশাআল্লাহ।
অনেক ইমাম ও মুসল্লিদের দেখা যায়, রমজানের শুরু রাতে খুব ইবাদত করেন কিন্তু শেষ রাতে কিছুই করেন না। আবার কেউ কেউ রমজানের শেষ রাতে খুব ইবাদত করেন, কিন্তু শুরু রাতে কোন এবাদতই করেন না। এটা কখনো উচিত নয়। বরং শুরুতেও ইবাদত করা উচিত এবং শেষ রাতেও ইবাদত করা উচিত। তবেই এ রাতগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন হবে। ইনশাআল্লাহ।

পঁচিশতম পাঠ: এতেকাফের বর্ণনা
এখানে আরো একটি ইবাদত রয়েছে, যা রমজান ও শেষ দশ রাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর তা হচ্ছে এতেকাফ। এ এতেকাফের উল্লেখ করেই আল্লাহ তাআলা রমজান বিষয়ক আয়াত শেষ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
       {ولا تباشروهن وأنتم عاكفون في المساجد} [البقرة 187]
'আর তোমরা মসজিদরে ইতিকাফরত অবস্থা স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না।' (সূরা বাকারা : ১৮৭)
এতেকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন একটি জিনিসকে আকড়ে ধরে তার নিকট অবস্থান করা।
পরিভাষায় এতেকাফের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত পালনার্থে মসজিদে অবস্থান করা। এতেকাফ সুন্নত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। কুরআন, সুন্নত এবং উম্মতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এতেকাফের অনুমোদন রয়েছে। এতেকাফ পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও প্রচলিত ছিল। এতেকাফের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান করে, সবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, নিজের নফসকে আল্লাহর ইবাদতে আবদ্ধ রাখে এবং সমস্ত ব্যস্ততা থেকে নিজেকে মুক্ত করে একমাত্র কুরআন তিলাওয়াত, সালাত, দোয়া, তওবা, ইস্তেগফার ও আল্লাহর সৃষ্টিজীবের মধ্যে চিন্তা-ফিকিরে মগ্নথাকে। এতেকাফ সব সময়ই সুন্নত কিন্তু রমজানে তার গুরুত্ব বেশি। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করেছেন।' (বুখারি : ২০২৬, মুসলিম : ১১৭২)
 রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর স্ত্রীগণও রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সঙ্গে এতেকাফ করেছেন। তবে তারা পর্দার আড়ালে অবস্থান করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পরও তার স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন। সর্বোত্তম এতেকাফ হচ্ছে রমজানের শেষ দশ দিনে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এতেকাফ করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করেছেন।' দ্বিতীয়ত শেষ দশ দিনেই লাইলাতুল কদর পাওয়ার বেশি সম্ভাবনা বিদ্যমান।
এতেকাফের শর্ত :                   
এক. নিয়ত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, 'আমলের ভিত্তি হচ্ছে নিয়ত।' (বুখারি : ১, মুসলিম : ১৯০৭)
দুই. এতেকাফ মসজিদে হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{وأنتم عاكفون في المساجد} [البقرة 187]
আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায়। (সূরা বাকারা : ১৮৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মসজিদেই এতেকাফ করতেন।
তিন. মসজিদ এমন হতে হবে, যেখানে জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় হয়। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, 'জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় হয় এমন মসজিদ ব্যতীত এতেকাফ শুদ্ধ নয়।' (আবুদাউদ : ২৪৭৩, বায়হাকি ফি সুনানিল কুবরা : ৪/৩১৫)
কারণ, এরকম না হলে দেখা যাবে, হয়তো জামাত ত্যাগ করতে হচ্ছে কিংবা বারবার মসজিদ থেকে বের হতে হচ্ছে। অথচ এতেকাফে এসব আমল নিষিদ্ধ। এতেকাফে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া শুদ্ধ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না। কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন না এবং কোন জানাজায় অংশ গ্রহণ করতেন না। হ্যাঁ, এতেকাফের শুরুতে কেউ অসুস্থ্ ব্যক্তিদের দেখা বা জানাজায় উপস্থিত হওয়ার শর্ত করে নিলে সে বের হতে পারবে। এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
{ولا تباشروهن وأنتم عاكفون في المساجد} [البقرة 187].
আর তোমরা মসজিদরে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। (সূরা বাকারা : ১৮৭)
অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে বেশি বেশি সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মশগুল থাকা মুস্তাহাব। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করা।' (তিরমিজি : ২৩১৭, ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৬, আহমদ : ১/২০১, হাকিম ফিততারিখ : ২/২৩৭, তাবরানি ফিল আওসাত : ২৯০২ এবং তাবরানি ফিল কাবির : ৩/১৩৮, হাদিস নং ২৮৮৬)
এতেকাফকারী আগন্তুক ব্যক্তিদের সঙ্গে অল্প ও প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে পারবে। পবিত্রতা অর্জন ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে, প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য মসজিদ থকে বের হতে পারবে। বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না। এতেকাফকারী পেশাব-পায়খানা, ফরজ অজু-গোসলের জন্য এবং কেউ না থাকলে পানাহার দ্রব্য বাড়ি থেকে মসজিদে আনার জন্যও বের হতে পারবে। এ হলো শরীয়ত সিদ্ধ এতেকাফ ও তার কতক আহকাম। আল্লাহ আমাদের সকলকে এলমে নাফে ও আমলে সালেহ করার তওফিক দান করুন।
সমাপ্ত
ছাব্বশিতম পাঠ: লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এবং তাতে অধিক ইবাদতের প্রতি উৎসাহ প্রদান প্রসঙ্গে
সমস- প্রশংসা সে মহান আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি রমযান মাসকে অন্যসব মাসের উপর মর্যাদা দান করেছেন, সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদরের জন্যে রমযান মাসকেই নির্বাচিত করেছেনদরুদও সালাম নাযিল হোক মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার পরিজনও সাহাবীগণের উপরমহান আল্লাহ তালা বলেন,
إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين * فيها يفرق كل أمر حكيم} [الدخان  : 3-4
 আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারীএ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় সি'রকৃত হয়। (সূরা আদ দুখান ৩-৪) 
মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেন
 قال تعالى {إنا أنزلناه في ليلة القدر * وما أدراك ما ليلة القدر * ليلة القدر خير من ألف شهر* تنزل الملائكة والروح فيها بإذن ربهم من كل أمر * سلام هي حتى مطلع الفجر} [القدر: 1-5
আমি একে নাযিল করেছি লাইলাতুল-কদরে ২ লাইলাতুল-কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? লাইলাতুলকদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠএতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে এটা নিরাপত্তা যা ফজরে উদয় পর্যন- অব্যাহত থাকে
এ মাস কোরআন অবতীর্ণের মাস, মহান আল্লাহ তালা বলেন,
شهر رمضان الذي أنزل فيه القرآن هدى للناس وبينات من الهدى والفرقان} [البقرة 185
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথের যাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশক আর ন্যায় অন্যয়ের মাঝে পার্থক্য
বিধানকারী (সূরা আল-বাক্বারা ১৮৫ )
 সে কল্যাণময় রাত মাহে রমযানের শেষ দশকে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশীকারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
تحروا ليلة القدرفي العشرالأواخر من رمضان" متفق عليه
তোমরা লাইলাতুল-কদরকে রমযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর (সহিহ বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল-কদরের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন:
"من قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غُفر له ما تقدم من ذنبه"،
যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত পুণ্যের আশায় লাইলাতুল-কদরে ইবাদত করবে মহান আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সমস- অপরাধ ক্ষমা করে দেবেনএ রাত্রের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন :
ليلة القدر خير من ألف شهر
লাইলাতুল-কদর সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
এ নামে নামকরণ করার কারণ
যেহেতু এ রাতে আগামী এক বছরের ভাগ্য নিরূপণ করা হয় তাই এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তালা বলেছেন:
فيها يفرق كل أمر حكيم}
এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় সি'রকৃত হয়। (সূরা আদ দুখান ৩-৪)   এ রাতে যে ভাগ্য নিরূপণ হয়ে থাকে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল আগামী এক বছরের ভাগ্য নিরূপণঅন্যথায় সাধারণ ভাগ্য নিরূপণ হয়েছে আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে
আবার কেউ কেউ বলেছেন যেহেতু এরাতের মর্যদা অত্যন- বেশী তাই এ রাতকে লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত বলা হয়
خير من ألف شهر
এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠঅর্থাৎ লাইলাতুল-কদর নেই, এরূপ হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা এ রাতের ইবাদত শ্রেষ্ঠএবং এ রাতকে রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে অনুসন্ধান করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণকারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
 "اطلبوها في العشر الأواخر في ثلاث يبقين أو سبع يبقين أو تسع يبقين" [أخرجه البخاري (
তোমরা লাইলাতুল-কদরকে অনুসন্ধানকর রমযানের তেইশ, সাতাশও উনত্রিশ তারিখে
(বুখারি হাদিস নং ২০২২, ২০২১ )
বর্ণিত রাত্রগুলোর মাঝেও অধিক সম্ভাবনীয় রাত হল সাতাশ তারিখের রাতকারণ অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম যেমন ইবনে আব্বাস, উবাই বিন কাব প্রমুখ সাহাবীগনের ইহাই মত যে লাইলাতুল-কদর সাতাশ তারিখের রাত
মুমিনগন! এ রাতের সন্ধানে যেন ঈমানদার ব্যক্তি শেষ দশকের প্রতিটি রাতে অধিক পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত করতে সচেষ্ট হয়, সেজন্য এ রাতের নির্ধারিত তারিখ গোপন রাখা হয়েছেযেমন গোপন রাখা হয়েছে শুক্রবারের দোয়া কবুল হওয়ার সময়টিকে, যাতে পুরো দিন দোয়া
ইসি-গফার ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকেযেহেতু লাইলাতুল-কদর দোয়া কবুলের রাত তাই অধিক পরিমাণে দোয়া করবে, বিশেষত মুমিন জননী আয়েশা রা. হতে বর্ণিত দোয়া অধিক পরিমানে করবেবর্ণিত দোয়াটি হচ্ছে:
 اللهم انك عفو تحب العفو فاعف عني" رواه أحمد وابن ماجة [أخرجه الترمذي رقم 3513، وابن ماجة رقم 3850، والحاكم 1/530 وقال: صحيح على شرط الشيخين ووافقه الذهبي].
হে প্রভু আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমাকেই আপনি পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন
হে মুমিনগণ! এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ তাআলা যেহেতু বলেছেন যে, মাত্র একটি রাতের ইবাদত, হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তমএক হাজার মাসের পরিমাণ হচ্ছে ৮৩ বছর ৪ মাস যা অনেক দীর্ঘ সময়যদি কোন ব্যক্তি এ দীঘর্ সময় ইবাদত করে তাও লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমকক্ষ হবে নাতাই প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য এ রাতে দোয়া, ইসি-গ্‌ফারসহ অন্যান্য নেক ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়াআর এ মহামূল্যবান রাত রমযান মাসে হওয়া নিশ্চিততবে শেষ দশকে হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।  যে মুমিন সমুদয় রমযান মাসে লাইলাতুল-কদরকে অনুসন্ধান করবে সে অবশ্যই এ রাত পাবে ইনশাল্লাহঐ ব্যক্তি অপেক্ষা ভাগ্যবান আর কে, যে এ রাতের ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত পেয়েছেতাই আমরা সকলেই সফলতার নিমিত্তে এ রাতের অনুসন্ধানে সচেষ্ট হবযে নিজ অলসতা আর অবহেলার কারণে এরাতের বরকত হতে বঞ্চিত রইল নিশ্চয় সে হতভাগাহে অপরাধী তুমি তোমার প্রভুর নিকট ক্ষমা পার্থনা করতোমার জন্যে ক্ষমার সকল দরজা উম্মুক্ত করে দিয়ে তার প্রতি তোমাকে আহবান করা হচ্ছেএবং পাপ মুক্তিও পূণ্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ দেয়া হয়েছে, সুতরাং নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচানের জন্য চেষ্টা কর
সাতাইশতম পাঠ: রমযানের শেষাংশে করণীয় বিষয় প্রসঙ্গে
সমস্ত প্রসংশা সে মহান আল্লাহ তাআলার জন্যে যিনি ঈমানদাদের সদা সজাগ ও শিক্ষা লাভের সাথে সাথে নেক আমলের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্যে প্রতিটি বস্তুর সমাপ্তিও অস্তিত্ব বিলিনের ব্যবস্থা করেছেনযাতে তারা এগুলোর উপর নির্ভর হয়ে ধোকায় না পড়ে
দরুদও সালাম নাযিল হোক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার পরিবার পরিজনের উপর
বন্ধুগণ! রাত-দিনের দ্রুত গমনা-গমনের প্রতি লক্ষ্য কর, যা তোমাদের জীবনকে ছোট করে আমল নামার খাতাগুলোকে গুটিয়ে নিয়ে আসছেসময় থাকতে তওবা ইসি-গফার করে নেক-আমলের প্রতি অগ্রসর হও
বন্ধুগণ! গতকাল যে রমযানকে স্বাগত জানিয়েছিলে সে রমযানকেই আজ  বিদায় যানাচ্ছযা তোমাদের কৃত আমলের উপর সাক্ষী হয়ে থাকবেসুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্যে যার নেক আমলের উপর এ রমযান সাক্ষ্য দেবেএবং তাকে জান্নাতে প্রবেশও জাহান্নাম  হতে মুক্তির   জন্যে সুপারিশ করবেধ্বংস আর আফসোস ঐ ব্যক্তির জন্য যার অন্যায়-অপরধের কারণে এ রমযান তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেসুতরাং তোমরা রমযানকে বিদায় জানাও নেক আমল ও কল্যাণময় কাজের মাধ্যমেমনে রাখবে শেষ আমলই নির্ভর যোগ্যযে ব্যক্তি এখনো মন্দ কাজে লিপ্ত তার উচিত মন্দ পরিহার করে আল্লাহর দরবারে তওবা ইসি-গফার করে স্বীয় অপরাধ হতে পরিত্রাণ লাভে সচেষ্ট হওয়াহতে পারে এটাই তার জীবনের শেষ রমযানহয়ত আর কোন রমযান সে জীবনে পাবে নাসুতরাং রমযানকে ভাল আমলের মাধ্যমে বিদায় জানাওএবং রমযানের পরও ভাল আমলের উপর অবিচল থাককারণ প্রতিটি মাসের প্রভু এক আল্লাহ যিনি সদা বিদ্যমানঅবলোকন করছেন তোমাদের আমলসমূহযে ব্যক্তি রমযান মাসের উদ্দেশ্যে ইবাদত করেছে রমযান শেষে তার ইবাদত ছেড়ে দেয়াই যুক্তি যুক্তকরণ রমযান মাসতো আর নেইআর যে মহান আল্লাহ তালার জন্যে ইবাদত করেছে, তিনি সদা বিদ্যমান তার ইবাদত ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে নাবরং সে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করবেইঅনেক ভাইদেরকে দেখা যায় যে, রমযানে তারা কোরআন তিলাওয়াত, জামাতের সহিত নামায, দান খায়রাত ইত্যাদি অধিক পরিমাণে করে থাকেরমযান শেষ হওয়া সাথে সাথে অলসতায় তাকে অলসতায় পেয়ে বসেতাই হয়ত ইবাদত একেবারে ছেড়েই দেয়আর না হয় তাতে শিথিলতা প্রদর্শন করেঅবস্থা দৃষ্টে মনে হয় যে  রমযান মাসের জন্যেই সে ইবাদত করেছেতাদের দৃষ্টান- হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যেমন কোন ব্যক্তি একটি ঘর নির্মাণ বা কাপড় বুনাতে আরম্ভ করল, মাঝ পথে গিয়ে নির্মাণাধীন ঘরটিকে ভেঙ্গে দিল আর বুনানো কাপড়টি টুকরো টুকরো করে দিলতাদের ধারণা, ফরয ওয়াজিব পরিত্যাগসহ সারা বছর যত অন্যায় অপরাধ করেছে রমযানের ইবাদতই তা ক্ষমার জন্যে যথেষ্টতাদের এ সব ধারণা সম্পূর্ণ ভুলকারণ রমযানের ইবাদত বন্দেগি দ্বারা গুনাহ ক্ষমা হওয়ার পূর্বশর্ত হল কবিরা গুনাহ হতে বেচে থাকামহান আল্লাহ তাআলা  বলেন
{إن تجتنبوا كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيئاتكم} [النساء:31
যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহ্‌গুলো থেকে বেঁচে থকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব। (সূরা আন্‌-নিসা ৩১)
এমনি ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان كفارة لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر" [أخرجه مسلم16/233].
পাঁচ ওয়াক্ত নামায  এবং এক জুমুআ হতে অপর জুমুআ, এক রমযান হতে অপর রমযান, মধ্যবর্তী সময়ের জন্যে কাফ্‌ফারা হিসাবে গৃহিত
শিরিকের পর সবচেয়ে বড় অপরাধ হল নামায ত্যাগ করাঅথচ নামায ত্যাগ করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছেযারা রমযানের আগেও পরে ক্রমাগত অন্যায় অপরাধ করে আসছে, শুধু রমযানের ইবাদত তাদের কোন উপকারে আসবে নাএক আল্লাহর ওলীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যারা শুধু রমযান মাসেই আল্লাহর ইবাদত করে, রমযান শেষে হওয়া মাত্রই অন্যায় অপরাধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ব্যাপারে আপনার কি মন-ব্য? তিনি বললেন, যারা শুধু রমযানেই মহান আল্লাহ তাআলাকে চেনে অন্য সময় নয়, তার নিতান- মন্দ লোকযারা সত্যিকার অর্থে মহান আল্লাহ তাআলাকে চিনে তারা সর্বদা তাকে ভয় করেএমনও অনেক লোক আছে যাদের ঈমানও নেই, ছওয়াবের আশাও নেই, তথাপিও রমযানের রোযা রাখে, নামায পড়েএটা হল সামাজিকতা আর ভদ্রতাসে শুধু  সমাজকেই অনুসরণ করেতাই এ ধরণের কাজ মুনাফেকির অন-র্ভক্তকারণ মুনাফেকগণই লোকদেখানো ইবাদত করতসামাজিক বন্ধনের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও পাপ করতে পারে না তাই তারা রমযান মাসকে বন্দী জীবন মনে করেরমযান বিদায় নেয়ার সাথে সাথে অন্যায় অপরাধে ঝাঁপিয়ে পড়েতার সার্বক্ষণিক রমযানের বিদায় কামনা করেরমযান শেষ হলেই তারা স্বসি-বোধ করে, কারণ তারা এখন বন্দী জীবন হতে মুক্ত হলবিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ইবনে খুযাইমা রহ. স্বীয় গ্রনে' সাহাবী আবু-হুরাইরা হতে বর্ণনা করেন, যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"أظلكم شهركم هذا بمحلوف رسول الله صلى الله عليه وسلم، ما مر بالمسلمين شهر خير لهم منه، ولا مر بالمنافقين شهر شر لهم منه، بمحلوف رسول الله صلى الله عليه وسلم، إن الله ليكتب أجره ونوافله قبل أن يدخله ويكتب وزره وشقاءه قبل أن يدخله، وذلك أن المؤمن يُعد فيه القوت والنفقة لعبادة الله، ويعد فيه المنافق اتباع غفلات المؤمنين واتباع عوراتهم فغنم يغنمه المؤمن" الحديث [أخرجه ابن خزيمة في صحيحه رقم  1884، وأحمد في المسند2/524، والبيهقي في سننه الكبرى 4/304 وشعب الايمان 7/214ـ 215 رقم 3335].
আবু হুরাইরা রা. বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ করে বলেছেন মুসলমানদের জন্যে উৎকৃষ্টতম মাস হচ্ছে রমযান মাসআর মুনাফেকদের জন্যে নিকৃষ্টতম মাস হচ্ছে রমযান মাসরাসূল শপথ করে আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসে কোন পূণ্যময় কাজের ইচ্ছা করে মহান আল্লাহ তাআলা আমল করার পূর্বেই সে কাজের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেনপক্ষান-রে যে ব্যক্তি এ মাসে কোন অন্যায় কাজের নিয়ত করে, অন্যায় কাজ করার পূর্বেই তার আমলনামায় অন্যায় কাজের অপরাধ লিপিবদ্ধ করে দেন
রমযান শেষে মুমিনগণ এজন্য খুশি হয় যে, তারা এ মাসকে আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে পেরেছে, পক্ষান-রে মুনাফেকগণ এ জন্য খুশিহয় যে, তাদের অন্যায় অপরাধের অন-রায় ছিল রমজান যা এখন শেষ হয়ে গিয়েছেতাদের অন্যায়-অপরাধে আর কোন বাধা নেইতাই দেখা যায় যে মুমিনগণ এ মাসকে বিদায় জানায় তওবা,ইসি-গফার আর অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমেআর মুনাফেকগণ বিদায় জানায় খেলা-ধুলা আর নাচ-গানসহ অন্যান্য জঘন্য অপরাধের মাধ্যমেমুমিনগণ আল্লাহকে ভয় করে এ মাসকে তওবা-ইসি-গফারের মাধ্যমে বিদায় জানায়
দরুদও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। 
আঠাইশতম পাঠ: রমজান মাস শেষে শরীয়ত অনুমোদিত করণীয় কাজ সমূহ
সমস- প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি রমযান মাসকে সমাপ্ত করেছেনএবং আমাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা এমাসে অধিক পরিমাণে নেক-আমল করার তাওফীক দান করেছেনদরুদ ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের উপর
আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় কর, তিনি সর্বদা তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেনতিনি চিরন-ন বিনিদ্রকখন তোমাদের অবস্থা হতে অন্যমনস্ক হন না
আল্লাহর বান্দাগণ! রমযান শেষে তোমাদের জন্যে অনুমোদিত বিষয়সমূহ হচ্ছে (এক) ঈদের নামায, মহান রাব্বুল আলামীন নিজ দয়াগুণে আমাদিগকে  রমযানের ফরয রোযা রাখার তাওফীক দান করেছেন, তাই তার শোকরিয়া স্বরূপ আমরা ঈদের নামায আদায় করে থাকিযেমন আদায় করে থাকি ঈদুল আযহার নামায ফরয হজ্ব আদায় করার শোকরিয়া স্বরূপএ দুটো হল রাসূল স্বীকৃত ইসলামি ঈদমদীনায় আগমন করার পর রাসূল দেখলেন  সেখানের লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে দুদিন খেলা-ধুলা করেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা বল্লেন
قد أبدلكم الله بهما خيرا منهما: يوم النحر ويوم الفطر" [أخرجه أبو داود رقم 1134 وأبو يعلى في مسنده 6/452رقم 3841 والبغوي في شرح السنة 4/292رقم 1098، وأحمد 3/178، 250، والحاكم في المستدرك 1/294والبيهقي في السنن الكبرى3/277.
আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ দুদিনকে তদপেক্ষা উত্তম দিনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেনএকটি হল ঈদুল-আযহা অপরটি হল ঈদুল ফিতর
হাদীসে বর্ণিত দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ শরিয়ত স্বীকৃত নয়চাই তা ঈদ নামে পালন করা হোক বা অন্য কোন নামেযেমন ঈদে-মিলাদুন্নবী, জম্ম বার্ষিকী, জাতীয় ও সামপ্রদায়ের ঈদ ইত্যাদিকারণ এসব হল মুর্খ যুগের ঈদ যদিও তার নাম পরিবর্তিত হয়। 
ঈদকে ঈদ বলা হয় কেন? ঈদ শব্দটি عاد .يعود হতে উৎপত্তি, যার অর্থ ফিরে আসা, বার বার আসাঈদ যেহেতু ইসলামের মহৎ দুই স-ম্ভ রোযাও হজ্ব আদায়ে খুশির বার্তা নিয়ে প্রতি বছর বার বার আসে, তাই ঈদকে ঈদ বলা হয়
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এ দিনে  আল্লাহর রহমত ও মুক্তি তার বান্দাদের দিকে ঘুরে ঘুরে বার বার আসতে থাকে, তাই ঈদকে ঈদ বলাহয়এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস-রের জনসাধারণকে  ঈদগাহে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেনএমনকি ঋতুবতী মহিলাদেরকে ও ঈদগাহে যাওয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেনতারা যদিও নামায পড়তে পারবে না, কিন্তু মুসলমানদের দুআয় অংশ গ্রহণ করতে পরবেহাঁ এ ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের সাথে সংমিশ্রণ ও আকর্ষণীয় পোশাকাদি ব্যবহারও সুগন্ধি মাখান  হতে বিরত থাকবে
সাহাবী উম্মে আতিয়া রা. বলেন আমাদেকে ঈদগাহে যেতে বলাহয়েছে তাই কুমারী ও ঋতুবতি মহিলাসহ সকল নারীগণ ঈদগাহে  বের হতেনঋতুবতি মহিলগণ ঈদগাহের পিছনে থাকতেন, নামাযরত মুসল্লিগণ যখন তাকবীর বলতেন তাদের সাথে তারাও তাকবীর বলতেন, এবং মুসল্লীগণ যখন দুআ করতেন তারাও তাদের সাথে দুআয় অংশগ্রহণ করতেনএটাকে তারা এ দিনের সর্বউৎকৃষ্ট কল্যাণময় কাজ মনে করতেন
এরূপ দলবদ্ধভাবে ঈদগাহে যাওয়া ইসলামের সুমহান এক প্রতীক বা নিদর্শন
মনে রাখবেন, ঈদের-নামাযে উপসি'তি  বকতময় রমযান মাসের পরিপুরকতাই সকলেই এতে অংশগ্রহণে সচেষ্ট হওয়া উচিৎএবং সর্বাবস'ায় আপন মুখকে হেফাজত করবে মিথ্যা ও অশ্লীল কথা হতে আর কর্ণদয়কে হেফাজত করবে নাজায়েয গান-বাজনা ও অনর্থক কথা- বার্তা শোনা হতেকারণ নেক-কাজের সমাপ্তি নেক-কাজ দ্বারাই হয়মন্দ কাজ দ্বারা নয়তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষে শাওয়ালের ছয় রোযা রাখতে  অনুপ্রাণিত করেছেনমুসলিম শরিফের বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من صام رمضان وأتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر" [أخرجه مسلم رقم 1164، وأبو داود رقم 2433، والترمذي رقم 759، وابن ماجة رقم 1716]،
যে মাহে রমযানে সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালে ছয়টি রোযা রাখল, সে যেন পুরা বছরই রোযা রাখলমহান আল্লাহ তাআলার নিয়ম হল একে দশগুণ দেয়াসুতরাং যে রমযানের রোযা রাখল সে দশ মাস রোযা রাখার ছওয়াব পেলঅতঃপর যখন শাওয়ালের ছয় রোযা রাখল তাতে পেল ষাট রোযা তথা দুমাসের ছওয়াব তাই সে যেন পুর্ণ বছরই রোযা রাখলতাই আমরা সবাই শাওয়ালের ছয় রোযার প্রতি গুরুত্ব দেব, যাতে পুর্ণ বছর রোযা রাখার ছওয়াব পেতে পার
উনত্রিশতম পাঠঃ সদকাতুল-ফিতরের বর্ণনা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি আমাদিগকে পরিপূর্ণভাবে নেক-আমল করার তাওফিক দান করেছেনদরুদও সালাম নাযিল হোক প্রতিটি কল্যাণময় কাজে অগ্যগামী নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার পরিজন ও কিয়ামত পর্যন্ত যারা যত লোক তাদের মতাদর্শের অনুসারী হবে তাদের উপর
মহান আল্লাহ তাআলা সিয়াম সাধনার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন সদকাতুল-ফিতরের দ্বারাকায়মনে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের আমলগুলো কবুল করেন এবং আমাদিগকে জাহান্নাম হতে মুক্তি প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন
হে মুমিনগণ!
মহান আল্লাহ তাআলা রমযান শেষে এমন কিছু ইবাদতের ব্যবস্থা করেছেন, যা দ্বারা মানুষ সহজে তার প্রভুর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়তার একটি হল: সদকায়ে ফিতরযা তার আদায়কারীকে কৃত অপরাধ হতে পবিত্র করেসদকায়ে ফিতরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট বড় স্বাধীন পরাধীন নারী পুরুষ সকলের উপর ফরয করেছেনএটা শরীরের জন্য যাকাত আর ফকীর-মিসকীনের জন্যে সহানুভূতি স্বরূপপ্রতিটি মুসলমান নিজের পক্ষ হতে এবং আপন পরিবার পরিজন তথা যাদের বরণ পোষণের দায়-দায়িত্ব তার উপর, তাদের সবার পক্ষ হতে সদকাতুল- ফিতর আদায় করবেমাতৃগর্ভে অবস্থানরত সন্তানের পক্ষ হতে দেয়াও মুস্তাহাব
সদকাতুল-ফিতর আদায় করার স্থানঃ অবস্থানরত দেশেই সদকাতুল ফিতর আদায় করবেঅবস্থানরত দেশে ফিতরা গ্রহণ করার মত লোক থাকা পর্যন্ত-  অন্য দেশে স্থানান্তর করা জায়েয নেইযদি তার দেশে ফিতরা গ্রহণ করার মত লোক না পাওয়া যায় তাহলে তার নিকটতম দেশের দরিদ্র লোকেরাই সদকাতুল ফিতর পাওয়ার অধিক হকদারএখানে স্বদেশ বা পার্শবর্তী দেশের দরিদ্র লোক বলতে তাদেরকেই বুঝায় যারা সে দেশের স্থানীয় বা ভিন্নদেশ হতে এসে স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করেনিজে এক দেশে বাস করে আর তার পরিবার পরিজন অন্যদেশে বসবাস করে এমতাবস্থায় তার ফিতরার সাথে সকলের ফিতরা নিজ দেশেই দেবেহাঁ এটাও জায়েয আছে যে, তাদেরকে তাদের অবস্থানরত দেশে সবার সদকাতুল ফিতর আদায়ের জন্য দায়িত্ব দিয়ে দেবে
সদকাতুল ফিতর আদায়ের সময়ঃ
সদকাতুল ফিতর আদায় করার সময় হচ্ছে, ঈদের রাতের সূর্যাসে-র পর হতে ঈদের নামাযের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন-তবে ঈদের দুএকদিন পূর্বেও দেয়া যেতে পারেতবে উত্তম হচ্ছে ঈদের দিন সকালে নামাযের পূর্বে আদায় করাযদি কেউ নামাযের পূর্বে আদায় না করে তাহলে নামাযের পরে আদায় করবেআর যদি কেউ ঈদের দিন আদায় না করে তাহলে পরবর্তিতে তার কাজা আদায় করবেউল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, সক্ষম ব্যক্তিকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেই হবেসদকাতুল ফিতর আদায়ের দুটো সময়   একটি হচ্ছে উত্তম সময় অপরটি জায়েযউত্তম সময় হচ্ছে ঈদের রাতের সূর্যাসে-র পর হতে ঈদের নামায পর্যন-আর জায়েয সময় হচ্ছে ঈদের দুএক দিন পূর্ব হতেহাঁ ঈদের নামাযের পর হতে সূর্যাস- পর্যন-ও জায়েয সময়ের অন-র্ভুক্ততারপর আরম্ভ হয় কাযার সময়যেসব ফকীর মিসকীন সম্পদের যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত তারাই সদাকাতুল ফিতর পাওয়ার উপযুক্তসুতরাং ফিতরা আদায়ের নির্ধারিত সময়ের মাধ্যে হয় নিজ হাতে বিতরণ করবে অথবা দায়ভার গ্রহণকারী লোকের নিকট সোপর্দ করবেবন্টনের দায়িত্ব না দিয়ে শুধু কারো কাছে ফিতরার মাল রেখে দেয়া তা আদায়ের জন্যে যথেষ্ট নয়


সদকাতুল ফিতরের পরিমাণঃ
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হচ্ছে, গম আটা খেজুর কিশমিশ পনির চাউল ভুট্টা ইত্যাদি স্থানভেদে যেগুলো মানুষ খাদ্য হিসাবে গণ্য করে থাকে, সেগুলো হতে এক সা প্রচলিত মাপ অনুযায়ী প্রায় তিন কেজি
শরীয়তের মূল সূত্রের পরিপন্থী হওয়ার কারণে খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দেয়া যথেষ্ট নয়দেশবরণ্য ওলামায়ে কেরামের ফত্‌ওয়া অনুযায়ী খাদ্য ক্রয় করে ভিন্নদেশে বিতরনের জন্যে টাকা পাঠিয়ে দেয়াও জায়েয নেই, যদিও এরূপ  অনেকেই করে থাকে
নগদ অর্থদিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় না হওয়ার কারণসমূহ
(১) এ পদ্ধতি অবলম্বনে বস্তু না দিয়ে বস্তুর মূল্য দেয়া হয়। (২) সদকাতুল-ফিতরের মূল্য রোযাদারের স্বদেশ হতে বিদেশ পাঠানো হয় (৩) সময়মতে বিতরণের সুবিধার্থে সদকাতুল-ফিতর আদায়ের নির্ধারিত সময় আগেই সে মূল্য ভিন্নদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়আমরা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের অভাবী মুসলমানদের সাহায্যের বিরোধী নইকিন্তু সদকাতুল-ফিতর এমন একটি ইবাদত যার জন্যে রয়েছে, নির্ধারিত স্থান, কাল ও পাত্রসুতরাং এ ইবাদত এ সমস- শর্তসাপক্ষেই হতে হবে
নগদ অর্থ রাসূলের যুগেও বিদ্যমান ছিল কিন- তা দিয়েতো রাসূল কখনো সদকাতুল ফিতর আদায় করেন নেই, যদি জায়েয হত তাহলে  উম্মতের শিক্ষার জন্যে অবশ্যই রাসূল তা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতেনঅথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা নিজে বা তাঁর কোন সাহাবী নগদ অর্থ দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করেন নেইযারা নগদ অর্থ দেয়া জায়েয বলে ফত্‌ওয়া দিয়েছেন, তারা এ ফত্‌ওয়া শরীয়তের কোন মূলনীতির উপর ভিত্তি করে নয়, নিজ ইজতেহাদের উপর ভিত্তি করেই  দিয়েছেনযা ভুলত্রুটির উর্ধে নয়
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, মূল্য দেয়া জায়েয নেইকিছু লোক বলল, ওমর বিন আব্দুল-আযিযতো মূল্যই গ্রহণ করতেন?তিনি বলেলন, মানুষ রাসূলের কথা অমান্য করে কেমন করে বলে যে অমুকে এরূপ করেছে! অথচ সাহাবী ওমর রা. বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সদকাতুল-ফিতর এক সা-ই ফরয করেছেন
এ মাসের শেষাংশে মহান আল্লাহ তালার নির্বাচিত আর একটি আমল হচ্ছে তাকবীরযা    ঈদের রাতের সূর্যাস- হতে শুরু করে ঈদের-নামায পর্যন্ত অব্যাহত থাকবেমহান আল্লাহ তালা বলেন,
 {ولتكملوا العدة ولتكبروا الله على ما هداكم ولعلكم تشكرون} [البقرة 185]
যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা আল বাক্বারা ১৮৫ )
ঈদের নামাযও রমযান শেষে শরীয়ত স্বীকৃত আমলসমূহের অন-র্ভক্ত, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
قد أفلح من تزكى * وذكر اسم ربه فصلى} [الأعلى14-15]
 নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অত: পর নামায আদায় করে। (সূরা আল-আলা ১৫-১৬)
ওলামায়ে কেরামের মতে এখানে     যাকাত দ্বারা সদকাতুল ফিতর আর নামায দ্বারা ঈদের নামাযই উদ্দেশ্য

ত্রিশতম পাঠ: রমজান বাদ মুসলমানদের করণীয় কাজ
সমস্ত প্রশংসা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি কাল ও সময়ের পরিচালকশুকরিয়া আদায় করছি তার অগণিত নেয়ামতেরএবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে শরিক হীন এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেইতিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।  আরও সাক্ষ দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাও তার রাসূলযিনি ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ বাহক এর উজ্জ্বল বাতি সাদৃশ্যদরুদও সালাম নাযিল হোক তার উপর ও তার পরিবার পরিজনের উপর
জগতের মানুষ সকল! সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করবেরাত-দিনের দ্রুত গামিতার প্রতি লক্ষ করএ পৃথিবী হতে বিদায় নেয়ার কথা স্মরণ কর, নেক-আমল করে  পরপারের পুঁজি জোগাড় করসমস- কল্যাণও বরকতময় রমযান-মাস আগমন পর দ্রুত তোমাদের হতে বিদায় নিয়েছেযারা তার মূল্যায়ন করেছে, এবং ইবাদত বন্দেগী দ্বারা তা হতে উপকৃত হয়েছে রমযান তাদের স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেবেপক্ষান্তরে যে রমযানকে অবমূল্যায়ন করেছে, অন্যায়ও অনর্থক কাজে তা অতিবাহিত করেছে রমযান তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেসুতরাং প্রতিটি ব্যক্তিকে গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে যে, সে রমযানকে কতটুকু কাজে লাগিয়েছে।  ভাল করে থাকলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে এবং আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার জন্যে দোয়া করবে, এবং ভবিষ্যতে নিয়মিত সে নেক আমল করতে থাকবেআর যারা মন্দ করেছে তারা তওবা করবে এবং আগামীতে নেক-আমল করার জন্যে প্রস্তুতি নেবে, হয়ত মহান আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেনআল্লাহ তাআলা বলেন,
وأقم الصلاة طرفي النهار وزلفا من الليل إن الحسنات يذهبن السيئات ذلك ذكرى للذاكرين} [هود : 114]
আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতেরও প্রান-ভাগে, পুণ্য কাজ অবশ্যই পাপ দুর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক। (সূরা হুদ ১১৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -
وأتبع الحسنة السيئة تمحها" [أخرجه الترمذي رقم : 1987، والدارمي رقم 2719، وأحمد 5/153، والحاكم 1/45]،
মন্দ কাজের পর ভাল কাজ করে নাও যাতে মন্দের জন্যে কাফ্‌ফারা হয়ে যায়
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
إلا من تاب وآمن وعمل عملا صالحا فأولئك يبدل الله سيئاتهم حسنات وكان الله غفورا رحيما} [الفرقان ৭০].
কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেনআল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আল-ফুরকান ৭০)
আল্লাহর বান্দাগণ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে-রমযানকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেনশুরু অংশ রহমত, মধ্যাংশ ক্ষমা আর শেষাংশ মুক্তিকারণ মানুষও তিন ভাবে বিভক্ত ১ম শ্রেণীর মানুষ যারা রমযানের পূর্ব হতেই ছোট বড় সব ধরণে গুনাহ হতে বেচে থাকতো ইবাদত বন্দেগীর প্রতিও যত্নবান ছিলঅতঃপর রমযান আসাতে আরও অধিক আমলে সচেষ্ট হলতারা  শুরু হতেই আল্লাহ রহমত পেতে থাকবে, কারণ তারা  প্রকৃত সৎকর্মশীলমহান আল্লাহ তালা বলেন:
{إن رحمة الله قريب من المحسنين} [الأعراف 56].
 নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী (সূরা আল-আরাফ ৫৬)
২য় শ্রেণীর মানুষ যারা ইতিপূর্বে ইবাদত বন্দেগী করতেন এবং রমযান মাসেও নামায রোযার প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী, কিন্তু তার ঘাড়ে ছোট খাট কিছু গুনাহ ছিলতাই সে কিছুদিন সিয়াম সাধনার পর কৃত অপরাধ হতে ক্ষমা পাবেমহান আল্লাহ তালা বলেন:
إن تجتنبوا كبائر ما تنهون عنه نكفر عنكم سيئاتكم وندخلكم مدخلا كريما} [النساء ৩১]
যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহগুলো হতে বেচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজননক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। (সূরা আন-নিসা ৩১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان كفارة لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر" [أخرجه مسلم رقم 233، والترمذي رقم 214، وأحمد 2/359
যদি কবিরা গুনাহ হতে বেচে থাক তাহলে পাঁচওয়াক্ত নামায এবং এক জুমআ হতে অপর জুমআ এক রমযান হতে অপর রমযান মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফ্‌ফারা হিসাবে গৃহিত হয়
৩য় শ্রেণীর মানুষঃ যারা মাহে-রমযানে ইবাদত বন্দেগী করেছে সত্য, কিন' তার ঘাড়ে শিরক ব্যতীত অন্য কবিরা গুনাহ রয়েছে, যার কারণে তার জাহান্নামে প্রবেশ অনিবার্য হয়ে গিয়েছেসেসব লোক যখন এ মাসে তওবা-ইস্তিগফারের সাথে সাথে সাধ্যমতে ইবাদত বন্দেগী করবে মহান আল্লাহ তালা তদেরকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেবেন
আবার কিছু মানুষ এমনও আছে যারা এ মাস পেয়েছে সত্য, কিন্তু তারা এ মাস হতে কোনরূপ উপকৃত হতে পারে নেইবরং ক্ষতির মাত্রাই বাড়ছে তাদেরতারা না করছে অপরাধ ত্যাগ আর না করছে ফরয ইবাদততারা ছিল স্বীয় অপরাধের উপর অবিচলএরাই হল প্রকৃত হতভাগারমযান অতিবাহিত হল, কিন' তারা স্বীয় অপরাধ হতে মুক্তি পেল নাএদের সম্পর্কে ফেরেশরতা জিবরাঈল বলেছেন
ومن أدركه شهر رمضان فلم يغفر له فأبعده الله، قل آمين، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: آمين"
যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল অথচ স্বীয় অপরাধ ক্ষমা নিতে পারে নাই, আল্লাহ তাকে নিজ রহমত হতে বঞ্চিত করুনআপনি বলেন, আমীনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমীন
নিতান- হতভাগ্য আর বঞ্চিত সে যে আল্লাহর দয়া ও রহমত হতে বঞ্চিত রইল
আল্লাহর বান্দাগণ! মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ইবাদতের কোন সমাপ্তি নেইমহান আল্লাহ তালা বলেন:
واعبد ربك حتى يأتيك اليقين} [الحجر 99] وقال تعالى: {يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون} [آل عمران 102]،
এবং পালনকর্তার ইবাদত করুন, যে পর্যন- আপনার কাছে নিশ্চিত কথা না আসে। (সূরা হিজর ৯৯) হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকএবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (সূরা আল-ইমরান১০২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث" الحديث [أخرجه مسلم رقم 1631، والبخاري في الأدب المفرد رقم38، وأبو داود رقم 2880، والترمذي رقم 1376، والنسائي رقم 3653.
মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তিনটি কাজ ব্যতীত সমস্ত আমলের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়মনে রাখবে মৃত্যু খুবই কাছেতুমি যে কোন সময় আক্রান- হতে পার
মুসলমানদের ইবাদত হবে জীবনব্যাপীকারণ আল্লাহর ইবাদতের মাঝে কিছু আছে দৈনিক ইবাদত, যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযযা ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ, কালিমায়ের শাহাদাতের পরই এর স্থানআর কিছু আছে সাপ্তাহিক ইবাদত, যেমন জুমআর নামাযযা মুসলমানদের ঐক্যের প্রতীকসকল মুসলমান একত্রিত হয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানেও  সুনির্দিষ্ট দিনে   সম্মিলিতভাবে আদায় করে থাকেআবার কিছু আছে বাৎসরিক ইবাদত, যেমন যাকাতমালের যাকাত দেবে বছরে একবার এবং তা যেকোন সময় হতে পারেআর ফসলের যাকাত দেবে যখন তা হস-গত হয়রোযাও রাখবে বছরে একবারতবে তা হবে পুরা রমযান-মাস ব্যাপীব্যয় ভার বহন করতে সক্ষম ব্যক্তি হজ ওমরা করবে জীবনে একবারএকাধিক বার করতে পারলে তা হবে নফলউপরোল্লিখিত ফরয ইবাদতগুলোর পাশাপাশি রয়েছে নফল ইবাদতযেমন নফল নামায নফল রোযা নফল সদকা ইত্যাদিউল্লিখিত আলোচনা হতে প্রতিয়মান হয়, যে মুসলমানদের জীবনের কোন অংশ ইবাদত হতে খালি নয়হয়ত ফরয ইবাদত হবে  না হয় নফলযারা এরূপ ভাবে যে আমরা শুধু রমযান মাসে ইবাদত করতে আদিষ্ট অন্য সময় নয়তাদের এ ধারনা ভুলতারা আল্লাহর হক সম্পর্কে অজ্ঞ তারা তাদের প্রভুকে চিনতে পারে নাইপারে নাই বুঝতে তাদের প্রভূর আদেশের মর্যাদাকারণ, তারা শুধু রমযানেই তার হুকুমের মূল্যায়ন করছে অন্য সময় নয়রমযানেই তাকে ভয় করেছে অন্য সময়ে করেনিরমযানেই পূণ্যের আশা রেখেছে অন্য সময় রাখেনিএ সমস- ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে সুসম্পর্ক রাখে নাইঅথচ সে আল্লাহর দয়া ছাড়া একমুহুর্তও বাঁচতে পারে নাশুধু রমযান মাসের ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয় যদিও তা পরিমাণে অনেক বেশী হয়কারণ তার আমলগুলো আগেও পরের সাথে কোন সম্পর্ক নেইরমযানের আমল দ্বারাতো শুধু তারাই উপকৃত হবেন, যারা বিশ্বাস করে যে  সমস্ত মাসের প্রভূ এক আল্লাহ এবং তিনি সার্বক্ষনিক আমাদের সকল আমল  অবলোকন করছেনদরুদও সালাম নাযিল হোক মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার পরিবার পরিজনও সাহাবীগণের উপর
 
লেখক : শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান
অনুবাদ: কতিপয় বিজ্ঞ আলেম
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
ইসলাম হাউজ থেকে সংগ্রীহিত

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।