চট্টগ্রাম মহানগরী বিশ্বের কাছে বন্দর নগরী নামে খ্যাত। সুদীর্ঘ প্রাচীন কাল হতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বনিকরা চট্টগ্রামে ব্যবসা করতে আসতেন। কেননা এখানে ব্যবসায় তারা প্রচুর লাভবান হতেন। আরব বনিকগন ব্যবসা করতে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলেন। তারা ব্যবসার পাশাপাশি ধর্ম প্রচারও করতেন। তাদের মাদ্যমে চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম ও আরবী ভাষার বিস্তার ঘটে। আরবের প্রশিদ্ধ পর্যটক ইদ্রিসী ১১৫৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদশন করেন এবং তিনি চট্টগ্রাম কে কর্ণফুল নামে আখ্যায়িত করেন। ভস্কোদ্যা গামা ভারত বর্ষের জলপথ আবিষ্কারের ৩৫ বছর পর ১৫১৭ সনে ইউরুপিয়ানদের মধ্যে পতুগীজ ব্যবসায়ীরাই প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন পরবতীতে মাটিন আলফসসো দি মেলো জামাইটির নেত্রিতে দু হজার সৈনিক ভর্তি ৫টি জাহাজ নিয়ে পর্তুগিজরা চট্টগ্রাম প্রবেশ করেন। সি,ই পেরিজ ডিসেম্পায়ারের মতে ১৫৩৮ সনে ৯টি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম আসে এবং এখানে তাদের স্থায়ী মিশন গড়ে তোলে। ভারত বর্ষের বাংলা রাজ্যের চট্টগ্রাম একটি সম্পদশালী শহর কারন চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর প্রাচ্যের সামুদ্রিক বানিজ্য শহরের চাহিদা মিটাত।
ভৌগোলিক অবস্থনের কারনে চট্টগ্রাম বন্দরের মর্যদা বেড়ে যায়। গৌড় যাবার প্রথম জলপথ মেঘনা নদী, অন্য পথ হুগলি হয়ে। মেঘনার মোহনার নিকটে অবস্থিত চট্টগ্রাম বন্দর নৌ চলাচলের জন্য উপযোগী হওয়ায় গৌড় সম্রাজ্যের একমাত্র প্রবেশদ্বার ছিল চট্টগ্রাম। তারা চট্টগ্রামকে পোর্তে গ্রান্ডি বা বড় বন্দর আখ্যাখিত করেছিল। পরবর্তীতে গৌড় রাজ্যের পতন, পর্তুগীজরা হুগলীতে কারখানা স্থাপন, চট্টগ্রামকে নিয়ে মোঘল ও মগদের মধ্যে লড়ায় এবং পর্তুগীজ হানাদারদের বঙ্গোপ সাগরে ডাকাতি ইত্যাদি কারনে চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় অবনতি ঘটে।
আগে চট্টগ্রামের কালেক্টর অব কাষ্টম চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত, পরবর্ততে ১৮৮৭ সনে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাষ্ট গঠিত হয় এবং ০১/৪/১৮৮৯ইংরেজী হতে পোর্ট ট্রাষ্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চটগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে চেয়ার ম্যান এবং কিমশনার গন সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্টান কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। ১৮৯৮ সাল হতে পালের জাহাজের পরিবর্তে বড়বড় বাষ্পচালিত জাহাজের চলাচল শুরু হওয়ায় বন্দরের কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে রেল সংযোগ না থাকায় ১৯১০ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে অতিরিক্ত ৩টি জেটি সহ মোট ৪টি জেটি নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বন্দর কার্যক্রম পরিচালনা করত ফলে পোর্ট ট্রাষ্টের একাংশের নিয়ন্ত্রন সরাসরি আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হাতে চলে যায়। এভাবে দ্বৈত ব্যবস্থপানা চলতে থাকে এবং ০১/৭/১৯৬০ইংরেজী হতে চট্টগ্রাম বন্দরের একক নিয়ন্ত্রন পোর্ট ট্রাষ্টের নিকট হস্থান্তর করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাষ্টের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে এবং ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোর্ট এ্যাক্ট-১৯১৪ রহিত করে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি প্রতিষ্টা করা হয়।
দেশের মোট আমদানী রপ্তানীর প্রায় ৭০ শতাংশ মালামাল এ বন্দর দিয়ে যাতায়ত করে এবং জাতীয় রাজস্ব আয়ের সিংহ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর হতে এসে থাকে। মালমাল পরিবহনে কন্টেইনার পদ্ধতি হওয়ার কারনে বন্দরে মালামাল উঠা-নামায় ও পন্য খালাসে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন হলেও রাজস্ব প্রাপ্তির তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দর নগরীর উন্নয়ন প্রায় অবহেলিত বললেই চলে। চট্টলাবাসীর প্রত্যাশা সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্ব মানের অত্যাধুনিক বন্দর হিসাবে গড়ে তুলবেন পাশাপাশি বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে তিলোত্তমা ঢাকার মত না হলেও অন্তত সিলেট মহানগরীর মত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করবেন।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।