সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: কৌতূহলী সাঙ্গীতিক উপাসনালয়

কৌতূহলী সাঙ্গীতিক উপাসনালয়



গুরুদুয়ারা নানক শাহী। এটি শিখ সম্প্রদায়ের প্রধান উপাসনালয়। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর কার্তিকীয় পূর্ণিমায় পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণকারী শ্রী গুরুনানক দেবজী শিখদের প্রধান ধর্মযাজক হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো এ সম্প্রদায়েরও কিছু বিশেষত্ব আছে। এ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় পদ্ধতি অনেকটা সাঙ্গীতিক। প্রার্থনার সময় এ সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মগ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি নানা বাদ্যযন্ত্র বাজায়, যা অন্যান্য সম্প্রদায় হতে অনেকটা স্বতন্ত্র। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার প্রার্থনা শেষে শিখদের উপাসনালয়ে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আর এ ভোজন উৎসবে অংশ নিতে পারে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও।

গুরুদুয়ারার প্রার্থনাস্থলকে বলা হয় 'দরবার সাহেব'। নারী-পুরুষ সবাই এ দরবার সাহেবে প্রার্থনায় অংশ নিতে পারে। গুরুদুয়ারায় হলুদ রঙের পতাকা টাঙানো থাকে। এক বলে 'নিশান সাহেব'। নিশানের দু'দিকে তলোয়ারের অাঁকা ছবি, যা 'খাণ্ডা' নামে পরিচিত। এই নিশানকে শিখদের জাগতিক ও আধ্যাত্দিক শক্তির প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। বাংলাদেশে শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এবং দর্শনীয় উপাসনালয় হচ্ছে গুরুদুয়ারা নানক শাহী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের ঠিক উল্টো পাশে এটি অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীই এ স্থাপত্যটির পাশ দিয়ে চলাচল করলেও এর সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না। শুধু চোখে দেখার সৌন্দর্য উপভোগের তুষ্টি নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে। লোকমুখে শোনা কাহিনী অনুযায়ী সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৬-১৬২৮) ষষ্ঠ শিখগুরু হরগোবিন্দ শিং শিখ পুরোহিত আলমাসত বা আলামাস্টকে পূর্ব বাংলায় পাঠান। এ পুরোহিতের প্রচেষ্টায়ই এ গুরুদুয়ারা উপাসনালয়টি নির্মিত হয়। ১৮৩৩ সালে এটিকে সংস্কার করা হয়। জানা যায়, ১৮৪৭ সালের পর থেকে ষাট দশক পর্যন্ত এটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এ উপাসনালয় কেন্দ্রটিকে সংস্কার করে আবার নতুন রূপদান করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কিছু দূর গেলেই সবার দৃষ্টি কাড়ে এ ব্যতিক্রমধর্মী এই স্থাপত্য। 'গুরুদুয়ারা' বর্গাকার ড্রামের ওপর স্থাপিত গম্বুজবিশিষ্ট। প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ৩০ ফুট। পূর্বমুখী হয়ে স্থাপিত গুরুদুয়ারা পূর্ব-উত্তর ও পশ্চিম দেয়ালে পাঁচটি করে প্রবেশপথ আছে। কেন্দ্রীয় কক্ষের চারদিকে পাঁচ ফুট প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দার প্রত্যেক কোণে একটি করে মোট চারটি কক্ষ রয়েছে। বারান্দার পর তিনটি করে খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ রয়েছে। সব মিলিয়ে উপাসনালয়টি ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্ত্রী গুরশরণ কাউর গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর গুরুদুয়ারায় প্রার্থনা শেষে গুরুদুয়ারার নবনির্মিত অফিস কক্ষ ও বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য অতিথি কক্ষের উদ্বোধন করেন।

গুরুদুয়ারার কেন্দ্রীয় কক্ষের একটি অনুচ্চ বেদির ওপর শিখদের ধর্মগ্রন্থ 'গ্রন্থসাহেব' রক্ষিত আছে। এই ধর্মগ্রন্থটি হাতে লিখিত। এ গ্রন্থকে ঘিরেই শিখদের পূজা-অর্চনা চলে। গুরুদুয়ারা নানক শাহীতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পবিত্র গ্রন্থসাহেব পাঠ এবং প্রার্থনা করা হয়। এদের ধর্মাচারকে 'আরদাস' বলা হয়। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সাপ্তাহিক জমায়েত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান পুরোহিত গ্রন্থ পাঠ করে শুনান এবং কীর্তনও করেন। কীর্তনের সময় তবলা, ডুগডুগি, খাকসা, হারমোনিয়াম বাজানো হয়। প্রার্থনা শেষে স্তোত্র পাঠ এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়। গুরুদুয়ারা নানক শাহীতে একটি ভোজনালয় আছে। একে 'গুরুকা লঙ্গর' বলা হয়। প্রার্থনা শেষে সবাই মিলে ভোজ করাকে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির সহায়ক বলে শিখরা মনে করে। এতে অংশ নিতে পারে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও। শুক্রবার ভক্তের আগমন গুরুদুয়ারা মুখরিত হয়ে ওঠে। গুরুদুয়ারা নানক শাহী প্রদর্শন করতে চাইলে শুক্রবারই উত্তম দিন। বাংলাদেশের শিখ সম্প্রদায়ের আরও কয়েকটি উপাসনালয় আছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বাংলাবাজারে অবস্থিত গুরুদুয়ারা গুরু তেগবাহাদুরের আস্তানা, গুরুদুয়ারা নানক কুয়ান। আর উর্দুবাজারের গুরুদুয়ারা সুতরা শাহী এবং ইংলিশ রোডের গুরুদুয়ারা বাবা মোহন সিং এখন বিলুপ্ত। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের চকবাজার শিখ মন্দির ও পাহাড়তলি শিখ মন্দির, ময়মনসিংহের এ.বি. গুহ রোডের গুরু নানক মন্দির অন্যতম। আর সিলেটের গুরুদুয়ারা সাহেব এখন পরিত্যক্ত। গুরুদুয়ারা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ রবি দাস পাপ্পু বলেন, অনেক সাংবাদিকই এখানে আসেন, আমাদের তথ্য দেশের জনগণকে জানান। তাদের কারণেই মানুষ আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।