সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: পাঁচ মিনিটেই বিভক্ত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা !!!

পাঁচ মিনিটেই বিভক্ত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা !!!


পাঁচ মিনিটেই আইন পাস। বিভক্ত হয়ে গেল ঢাকা সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুটি আলাদা সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরু করল। ৯০ দিনের মধ্যে এ দুটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করতে হবে। নতুন আইন অনুযায়ী এখন বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশনের জন্য দুজন প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। আইনে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলেই বর্তমান ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিদায় নেবেন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা।


গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধন বিল, ২০১১ উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিকেল চারটা ৩৫ মিনিটে বিলটি উত্থাপিত হয়। স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে পাঁচ মিনিটেই পাস হয়ে যায় বিলটি। বিলটির ওপর কোনো সাংসদ জনমত যাচাই বা সংশোধনী প্রস্তাব না আনায় দ্রুততম সময়ে বিলটি পাস হয়ে যায়। কয়েকজন সাংসদ জনমত যাচাইয়ের নোটিশ দিলেও সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। বিল উত্থাপন করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্যই ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়েছে। তিনি বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তৎক্ষণাৎ তা কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যায়। জনমত যাচাইয়ের নোটিশ প্রদানকারীদের একজন রাশেদ খান মেনন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুততম সময়ে এভাবে বিলটি পাস করায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ, ঢাকার সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া মাত্র ১০ মিনিটেই দুটি বিল পাস করা হয়েছে। অধিবেশনে ঢুকতে ঢুকতেই বিল পাস করে অধিবেশন শেষ করা হয়েছে। ফলে, আপত্তি উত্থাপনের সুযোগই পাইনি।’ ঢাকাকে ভাগ করা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তিনি।

৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনঃ আইন অনুসারে প্রশাসক নিয়োগের ৯০ দিনের মধ্যে (ফেব্রুয়ারির মধ্যে) ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। এখন সরকার তার পছন্দের দুজন ব্যক্তিকে প্রশাসক নিযুক্ত করবে। তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন, না-ও হতে পারেন।

প্রশাসক নিয়োগঃ সদ্য পাস হওয়া আইন অনুসারে মেয়াদ শেষে দেশের সব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। ২০০৯ সালের আইনের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়া পর্যন্ত মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে এ বিধান বাতিল করা হয়েছে। সব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের বিধান করা হলেও মেয়াদ ভিন্ন রাখা হয়েছে। আইনের ২৫(৪) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রশাসকের মেয়াদ নতুন করপোরেশনের জন্য ১৮০ দিন রাখা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ভেঙে দেওয়া সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের মেয়াদ রাখা হয়েছে ৯০ দিন।
ডিসিসিকে দুই ভাগ করতে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) বিল, ২০১১’ ২৩ নভেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই কমিটির প্রতিবেদন পেশসহ গতকাল বিলটি পাস হয়।

বিশেষজ্ঞ মতঃ প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাড়াহুড়ো করে এ বিল পাস করে সরকারের কী রাজনৈতিক অর্জন হলো, তা স্পষ্ট নয়। কোনো উদ্দেশ্য ঠিক না করেই এ ধরনের আইন করে সরকার একটি ঝুঁকি নিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো লাভ হতো। কারণ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও কিন্তু মনে করেন, এভাবে ঢাকাকে ভাগ করা ঠিক হয়নি।
কোন ভাগে কোন ওয়ার্ডঃ ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠন করা হলো। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে: ১ থেকে ২৩, ৩৭ থেকে ৪৭ এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত হলো ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে। এগুলো হচ্ছে: ২৪ থেকে ৩৬, ৪৮ থেকে ৫৩ এবং ৫৬ থেকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড।

টাকা থাকলে চার ভাগ করতামঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করা হয়েছে। ছোট ছোট এলাকা থাকলে সেবাও বেশি পৌঁছে দেওয়া যায়। সরকারের যথেষ্ট টাকা থাকলে ডিসিসিকে চার ভাগ করতাম।’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে একাদশ অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে তিনি প্রায় ৫০ মিনিট বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে স্পিকার সংসদের একাদশ অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে শেয়ারবাজার ও বিরোধী দলের নেত্রীর কিছু বক্তব্যেরও জবাব দেন। ঢাকাকে ভাঙা হচ্ছে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকাকে ভাঙছি না, বরং সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য ডিসিসিকে ভাগ করা হয়েছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু কিছু লোক অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এর বিরোধিতা করছে।’ তিনি বলেন, লন্ডনে দুটি, ম্যানিলায় ১২টি, সিডনি, মেলবোর্নসহ অনেক শহরেই একাধিক সিটি করপোরেশন করে সুফল পাওয়া গেছে। বিরোধী দলকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ভালো কাজকে জনগণের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতেই বিরোধিতা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। একসময় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা ছিল গ্রাম। সেগুলো এখন সিটিতে পরিণত হয়েছে। মূল ঢাকা দক্ষিণে, সম্প্রসারিত ঢাকা উত্তরে। ভেতরে ৪১টি থানা, অঞ্চল আটটি। জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই এ বিশাল এলাকা এক সিটি করপোরেশনের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন সকাল সাতটার দিকে রাস্তায় বের হয়ে দেখি রাস্তায় ময়লা-অবর্জনায় ভরা। অর্থা ৎ সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা দিতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকাকে ভাগ করছি না, সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’
সংসদ নেত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষ এ নিয়ে সমালোচনা করেই চলছেন। সমালোচনা করাই তাঁদের কাজ। সরকার যে কাজটাই করছে তাতে বাগড়া দিতে হবে, যাতে জনগণকে বোঝানো যায় যে, সরকার ভালো কাজ করছে না।’ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের সফলতার তথ্য তুলে ধরে বিরোধী দলের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেই কাজটিই করি না কেন, তারা উল্টো বলে। তারা যেভাবে সমালোচনা করছে, মনে হয় এক দিন তারাই বলবে, দেশে বোমার আওয়াজ নেই কেন, জঙ্গিবাদ নেই কেন?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে নেই। তিনি সংসদ ছেড়ে সড়কে চলে গেছেন, রোডমার্চ করছেন। কিছুদিন আগেও বলেছেন দেশের রাস্তাঘাট খারাপ। প্রশ্ন হলো, তিনি এত খারাপ রাস্তায় কীভাবে রোডমার্চ করলেন? আশঙ্কা করেছিলাম অভিযোগ করবেন, তাও করেননি। তার মানে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা টিপাইমুখ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন, জবাবও পেয়েছেন। দুটি চিঠিতে কী আছে তা জাতি জানল না। জনসম্মুখে চিঠি প্রকাশ করবেন আশা করি।’ তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকে সংসদে এসে চিঠির জবাব জানানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট অধিকারসচেতন। এরই মধ্যে আমরা দুজন প্রতিনিধি (দিল্লি) পাঠিয়েছি। দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু মেনে নেব না, হতে দেব না। ক্ষতিকারক কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী জানেন না, পদের লোভে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দল ছাড়েন না। আওয়ামী লীগ যারা করে তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। পয়সা দিয়ে আওয়ামী লীগের বড় নেতা তো নয়-ই, তৃণমূলের নেতাও নেওয়া সম্ভব নয়। আইয়ুব, জিয়া, এরশাদ চেষ্টা করেও পারেননি।’

বিএনপি প্রতিষ্ঠার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট টোকানো দলটির কাজ। তিনি (জিয়া) এ গাছের ছাল, ওই গাছের বাকল নিয়ে দল তৈরি করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী, আন্ডারগ্রাউন্ড, সর্বহারা, পচা কমিউনিস্ট নিয়ে দল করেছেন। ভালোগুলো আমাদের সঙ্গে আছেন। খারাপগুলো ওদিকে গেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী বলছেন আমি নাকি দেশ ছেড়ে চলে যাব। আমার জন্ম বাংলাদেশে টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর জন্ম ভারতের শিলিগুড়িতে। সুতরাং ভাগলে তিনিই ভাগবেন। আমি নই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে, এ ব্যবসায় ঝুঁকি আছে। শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে। শুধু লাভ হবে, লোকসান হবে না—এমন ভাবা ঠিক নয়।’ তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বাড়ি-জমি বিক্রি করে ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে যাবেন না। কারও তালে পড়ে, কানকথা শুনে শেয়ারবাজারে যাবেন না। বুঝে-শুনে সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারবাজারে যাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচক ভালো। যাদের জনমত নেই, ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে, তারা দেশ নিয়ে হতাশার কথা বলে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদেরও বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হবেই। এ অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারলে দেশ হবে সমৃদ্ধ, উন্নত ও শান্তিপূর্ণ।’
সূত্রঃ প্রথম আলো ১ম  ও ২য়

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।