গুড়িয়া দাশের মুখের ওপর মাছি বসায় সে চিৎকার করছিল। অপেক্ষা করছিল মা কখন এসে মাছি তাড়িয়ে দেবে। তার বয়স ১২ বছর হলেও দেখে মনে হয়, ছয় বছরের মেয়ে। এক বছর বয়সেই সেরিব্রাল পালসি বা মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয় মেয়েটি। ইউরেনিয়ামের পরোক্ষ প্রভাবে তার এই দশা।
গুড়িয়া দাশের বাড়ি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভুম জেলার জাদুগুড়া শহরের ইছরা এলাকায়। জাদুগুড়া শহরেই রয়েছে ইউরেনিয়ামের বিশাল মজুদ। গুড়িয়ার বাবা ছাতুয়া দাশ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমার মেয়েটি যখন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়, তখন এই এলাকায় ৩৩টি প্রতিবন্ধী শিশু ছিল। এখন এই সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেছে।’
ছাতুয়া ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীর ছয়টি শিশুই মারা গেছে বয়স এক বছর হওয়ার আগে। এর কারণ সম্ভবত একটিই— ইউরেনিয়ামের খনি। লক্ষ্মী দাশ বলেন, ‘আমি জানি, আমার মেয়ের এই অবস্থার সঙ্গে ইউরেনিয়ামের খনির একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এখানকার পানিতে এখন ইউরেনিয়াম মিশে আছে।’ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, খনির বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তিনটি তথাকথিত পুকুরে পুঁতে ফেলার মাধ্যমে খনি কর্তৃপক্ষ এখানকার ভূগর্ভস্থ পানি বিষিয়ে তুলছে। তবে এই অভিযোগ স্বীকার করে না ইউরেনিয়াম করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআইএল)। জাদুগুড়ার ইউরেনিয়ামের খনিটি পরিচালনা করে এই সংস্থা।
ইউসিআইএল ১৯৬৭ সালে জাদুগুড়াতে প্রথম ইউরেনিয়ামের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালু করে। এর পর থেকে সেখানে আরও ছয়টি খনিতে কাজ চলছে। এতে বেশ ভালো বেতনে কাজ পেয়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার গরিব মানুষ। ভারতের অন্যতম দরিদ্র এই রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থারও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে এই ইউরেনিয়ামের খনির বদৌলতে। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকায় সেই অগ্রগতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তেজস্ক্রিয় দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করছে ঝাড়খণ্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেনস্ট রেডিয়েশন (জেওএআর)। সংস্থাটি বলছে, ওই এলাকায় মৃত ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম এবং বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ক্যানসার, কিডনি রোগ ও যক্ষ্মার হার বেড়ে যাচ্ছে। জেওএআরের প্রতিষ্ঠাতা ঘনশ্যাম বিরুলি বলেন, ‘এই ধরনের রোগবালাই এখানে কেন হঠাৎ বেড়ে গেল? কারণ আমাদের এলাকাটি এখন তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের ভাগাড়।’ তবে জাদুগুড়ার এই স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে ইউরেনিয়ামের খনির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে ইউসিআইএল। সংস্থার কৌশলগত পরিকল্পনা শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে সারাঙ্গি বলেন, এখানকার আকরিকের মাত্রা বেশ কম, কাজেই তেজস্ক্রিয়ার মাত্রাও খুব কম। যে পুকুরে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পুঁতে ফেলা হয়, সেখান থেকে এক-দুই শ মিটার দূরে থাকলে আর কোনো ঝুঁকি থাকে না। (প্রথম আলো এর সৌজন্যে)
সূত্রঃ ডিজিটাল সময় ডেস্ক/০৭ ডিসেম্বর ২০১১/০২০৫ঘ./এটিএম
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।