সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: চাঁদের বুকে স্টেশন তৈরি করতে চলছে গবেষণা

চাঁদের বুকে স্টেশন তৈরি করতে চলছে গবেষণা

চাঁদের খনিজ পদার্থ আহরণ করার জন্য এখন সেখানে কীভাবে একটি স্টেশন তৈরি করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছেন গবেষকরা৷ আর সেই স্টেশন তৈরির জন্য চাই উপযুক্ত রোবট, যারা চাঁদের চরম তাপমাত্রার মধ্যে কাজ করতে পারবে৷

 
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি কেবল রূপকথার চাঁদ মামা হিসেবেই থাকতে রাজি নয়৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই উপগ্রহে রয়েছে অনেক ধরণের দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ৷ চাঁদে রয়েছে লোহা, স্বর্ণ, টাইটান, প্লাটিনাম ও ইরিডিয়ামের খনি৷ আরও রয়েছে হিলিয়াম থ্রি গ্যাস যা পাওয়া যায় কেবল সূর্যের আলোতে৷ এটি হচ্ছে আলোর একটি কণা যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করে৷ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সৌর বায়ুর কারণে এই হিলিয়াম থ্রি পৃথিবীর বুকে জমা হতে পারে না৷ কিন্তু চাঁদে তো কোন বাতাস নেই, তাই এই হিলিয়াম থ্রি বাধা পায় না৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে এই হিলিয়াম থ্রি চাঁদের বুকে জমা হয়েছে যার নাম তারা দিয়েছেন রিগোলিথ৷ বিজ্ঞানীদের আরও ধারণা, এই হিলিয়াম থ্রি পৃথিবীর কয়েকশ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারবে৷

চাঁদের বুকে মানুষ
চাঁদের বুকে মানুষ
তবে এই সবই এখন পর্যন্ত কল্পকাহিনী৷ পার্থক্য কেবল এই যে, এগুলো রূপকথার বইতে নয়, মহাকাশ বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রে লেখা৷ তবে সেই কল্পকাহিনীর সত্যতা যাচাই করে দেখার জন্য চেষ্টার শেষ নেই৷এই লক্ষ্যে কাজ করছে জার্মানির মহাকাশ কেন্দ্র বা ডিএলআর৷ এই কাজে তাদের সহায়তা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷ নাসার কাছ থেকে পাওয়া ছবি কাজে লাগিয়ে এখানকার বিজ্ঞানীরা চাঁদের পুরো পৃষ্ঠভাগের একটি ডাটাসেট তৈরি করেছেন৷ এর মাধ্যমে চাঁদের কোন জায়গাটি স্টেশন তৈরির উপযুক্ত সেটি তারা খুঁজে বের করা চেষ্টা করছেন৷  


তবে চাঁদের পরিবেশে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি একটি বড় বাধা, জানালেন গবেষক রাল্ফ ইয়াউমান৷ তার বক্তব্য, ‘‘চাঁদে জ্বালানির প্রশ্নটি অত্যন্ত মৌলিক বিষয় যা আমরা পৃথিবী থেকেই দেখতে পাই৷ সেখানে ১৪ দিন সূর্যের আলো থাকে, ১৪ দিন থাকে পুরো অন্ধকার৷ সেখানে যাই করা হোক না কেন টানা ১৪ দিন সূর্যের আলো ছাড়াই কাজ চালাতে হবে৷ চাঁদে তাপমাত্রা অত্যন্ত চরম৷ কোন পাহাড়ের পাশে ছায়ার মধ্যে গেলেই তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি থেকে নেমে গিয়ে মাইনাস ১০০ ডিগ্রিতে গিয়ে দাঁড়ায়৷ সুতরাং রোবটকে সেটি সহ্য করতে হবে৷''
চাঁদের এই চরম তাপমাত্রাতে কোন মানুষের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়৷ তাই রোবটই ভরসা৷ কিন্তু সেই রোবটকেও হতে হবে অন্যান্য রোবটের চেয়ে পুরো আলাদা, যার থাকবে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা৷ তেমন রোবট তৈরির কাজ করছেন জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা কেন্দ্র৷ এখানকার বিজ্ঞানী ফ্র্যাংক কির্শনার ও তাঁর সহযোগীরা ছয় পা ওয়ালা একটি রোবটের মডেল তৈরি করেছেন৷ চাঁদের তাপমাত্রা আর রুক্ষ পৃষ্ঠভাগে দ্রুত চলাচল করতে পারবে এমন রোবট তারা তৈরি করতে চান৷ বিজ্ঞানী কির্শনার বললেন, ‘‘ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভিন্ন গ্রহে দ্রুত চলাচল করতে পারে এমন বস্তু তৈরি করা, যা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ কোন রোবট চাঁদ কিংবা মঙ্গলে গেলে তার প্রতিটি গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা পারবো না৷ তাই এটির নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও স্বাধীনতা থাকতে হবে৷''
তবে বিজ্ঞানী কির্শনার চাঁদে খনিজ পদার্থ থাকার কল্পকাহিনীর পেছনে ছুটছেন না৷ তিনি এই ধরণের কাজ করতে পছন্দ করেন বলেই এই রোবট তৈরির চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘চাঁদের বুকে খনন চালানোটা কতটুকু কাজে দেবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ কারণ চাঁদের ব্যাপারে আমরা মানব জাতি এখনও নিশ্চিত নই৷ তবে অন্যান্য গ্রহে অনেক দুষ্প্রাপ্য বস্তু রয়েছে৷ বিশেষ করে পৃথিবীর আশেপাশে ছুটে চলা উল্কাগুলোতে৷ কারিগরি দিক থেকে বলতে গেলে, সেইসব উল্কার বুকে পৌঁছতে আমাদের খুব বেশি দেরি নেই৷''
বিজ্ঞানীদের মতো সাধারণ মানুষেরও আশা, হয়তো চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ থেকেই একদিন আমরা জ্বালানির উৎস খুঁজে পাবো৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।