সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: প্যানিক ডিজঅর্ডার-সতর্ক থাকুন

প্যানিক ডিজঅর্ডার-সতর্ক থাকুন


ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্যানিক ডিজঅর্ডার রোগটি বেশি হয়। রোগটি সব বয়সেই হতে পারে। তবে ১৫-২৫ এবং ৪৫-৫৫ বয়সে বেশি হয়। বিপত্নীক বিধবা, স্বামী-স্ত্রী দু'জনে আলাদা হয়ে যাওয়া-এ ধরনের পারিবারিক পরিস্থিতিতে বেশি দেখা দেয়। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারানো এবং বড় ধরনের মানসিক আঘাত পাওয়া- এদের মধ্যে প্যানিক ডিজঅর্ডার রোগ১ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রোগীদের ভাবনাঃ তার হার্টের অসুখ। এজন্য বার বার ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করে বেড়াচ্ছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। মানে স্ট্রোক করে ফেলবে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। মনে হয় প্যারালাইসিস হয়ে যাবে। 

প্যানিক ডিজঅর্ডারের লক্ষণ : হঠাৎ করে বুক ধড়পড় করা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা। দম বন্ধ হয়ে আসা, বড় বড় করে হাঁপানি রোগীর মতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া। হাত-পা অবশ হয়ে আসা। শরীরে কাঁপুনি হওয়া। বুকের মধ্যে চাপ লাগা এবং ব্যথা অনুভব করা। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো রোগী বলে হঠাৎ পেটের মধ্যে একটা মোচর দেয়। তারপর উপর দিকে উঠে বুক ধড়পড় শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গ হাত-পা অবশ হয়ে যায়। আর কথা বলতে পারে না। বমি বমি ভাব লাগে। পেটের মধ্যে অস্বস্তিবোধ লাগা ও গলা শুকিয়ে আসা। পেটের মধ্যে গ্যাস ওঠে, খালি গ্যাস ওঠে এবং বুকে চাপ দেয়। দুশ্চিন্তা থেকেও মাথা ব্যথা হতে পারে। কোনো কোনো রোগী বুকে ব্যথা ও হাত-পায়ের ঝিমঝিমকে হার্টঅ্যাটাকের লক্ষণ মনে করে প্রায়ই ছুটে যান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার দেখাতে। মৃত্যু ভয় দেখা দেওয়া, মনে হয় যেন এখনই মরে যাবেন রোগ যন্ত্রণায়। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা। বার বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া/ইসিজি করা। দূরে কোথাও গেলে স্বজনদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে যায়, যেন মাঝখানে অসুস্থ হলে ধরতে পারে। নামাজ পড়তে গেলে একপাশে দাঁড়ায় যেন অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি বের হতে পারে।

উল্লেখযোগ্য কারণঃ জিনগত কারণ। সাইকোলজিক্যাল কারণ। যেমন- বুক ধড়পড় করা। এসব থেকে রোগের মধ্যে আরও টেনশন তৈরি হয়। এ লক্ষণগুলো রোগীরা ভয়ঙ্করভাবে গ্রহণ করে এবং জটিল অসুখ যেমন- হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ইত্যাদি ভেবে তার মধ্যে আরও টেনশন তৈরি হয়। শরীরে উদ্ভূত, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিরসনের (সেরোটনিন গাবা ও নরএডরেনলিন) রোগটি দেখা দিতে পারে। *যাদের হার্টের ভাল্পের সমস্যা আছে তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পরিণতিঃ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে এ ধরনের রোগী ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সর্বস্বান্ত হয় এবং সব শেষে নিজে একজন হার্টের রোগী বলে কাজকর্ম ছেড়ে দেয়। * বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। * নেশায় জড়িয়ে যেতে পারে। * এগোরেফোবিয়া নামক আরও একটি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তখন রোগীরা বাইরে বের হতে, হাটবাজার, রেস্টুরেন্ট, ক্যান্টিন ইত্যাদি জায়গায় যেতেও ভয় পায়।

চিকিৎসাঃ নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো। নির্দিষ্ট সময়ান্তে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। সঠিক সময়ে সাইকিয়াট্রিস্টের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে।



লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক
স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা। ফোন : ০১৮১৭০২৮২৭৭

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।