মিসর, সরকারি নাম মিসর আরব প্রজাতন্ত্র, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি প্রাচীন দেশ। মিসরের বেশিরভাগ অংশ আফ্রিকাতে অবস্থিত, কিন্তু এর সবচেয়ে পূর্বের অংশটি, সিনাই উপদ্বীপ, সাধারণত এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। সিনাই উপদ্বীপ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে স্থলসেতুর মতো কাজ করে। মিসরের অধিকাংশ এলাকা মরুময়। নীলনদ দেশটিকে দুটি অসমান অংশে ভাগ করেছে। নীলনদের উপত্যকা ও ব-দ্বীপ অঞ্চলেই মিসরের বেশির ভাগ মানুষ বাস করেন। কায়রো দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।
নামের উৎস : প্রাচীন মিসরের ভাষায় দেশটির একটি নাম ছিল 'কমেট' বা কালো মাটির দেশ। নীলনদের বন্যার সঙ্গে বয়ে আনা উর্বর কালো মাটি যা মরুভূমির মাটি অথবা 'লাল জমি' থেকে আলাদা। লিখিত ইতিহাস অনুসারে প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই একটি সংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মিসর বিদ্যমান। সেচভিত্তিক কৃষি, সাক্ষরতা, নগরজীবন এবং বড়মাপের রাজনৈতিক সংগঠনবিশিষ্ট ইতিহাসের প্রথম সভ্যতাগুলোর একটি নীলনদের উপত্যকাতে গড়ে উঠেছিল। বার্ষিক বন্যা মিসরকে একটি স্থিতিশীল কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে সামরিক কৌশলগত স্থানে অবস্থিত ছিল বলে এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং ভারত ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যপথের ওপর অবস্থিত ছিল বলে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি দেশটি দখল করে এবং এখানে নতুন নতুন ধর্ম ও ভাষার প্রবর্তন করে। কিন্তু মিসরের সমৃদ্ধ কৃষিসম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক একতার ফলস্বরূপ এখনো পুরনো ঐতিহ্য ও রীতিনীতিগুলো হারিয়ে যায়নি। বর্তমান মিসর আরবিভাষী মুসলিম রাষ্ট্র হলেও এটি অতীতের খ্রিস্টান, গ্রিক-রোমান ও প্রাচীন আদিবাসী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এখনো ধরে রেখেছে।
৬৪১ সালে আরবের মুসলমানরা মিসর দখল করে। তখন থেকেই মিসর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। আধুনিক মিসরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী। দেশটি যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল, তখন ১৮০৫ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির বড়লাট ছিলেন। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিসর দখল করে। এরপর প্রায় ৪০ বছর মিসর ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯২২ সালে দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ব্রিটিশ সেনারা মিসরে থেকে যায়। ১৯৫২ সালে গামাল আবদেল নাসেরের নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে এবং একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিসর প্রতিষ্ঠা করে। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে মিসর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনা সরিয়ে দেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি আনোয়ার-সাদাতের নেতৃত্বে মিসর প্রথম জাতি হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমানে মিসর সমগ্র আরব বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ২০০৫ সালে দেশের প্রথম বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তী প্যালিওলিথিক যুগ থেকেই উত্তর আফ্রিকার শুষ্ক জলবায়ু আরও উষ্ণ ও শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষ নীলনদ উপত্যকায় নিবিড় জনবসতি গড়ে তুলতে শুরু করে। নরম্যাডিক আধুনিক শিকারি-সংগ্রাহক মানবজাতি মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে অর্থাৎ বারো লাখ বছর আগে এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল। সে সময় থেকেই নীলনদ মিসরের জীবনরেখা। নীলনদের উর্বর প্লাবন সমভূমি এ অঞ্চলের অধিবাসীদের স্থায়ী কৃষি অর্থনীতি ও একটি অধিকতর উচ্চমানের ও কেন্দ্রীভূত সমাজ গঠনে সাহায্য করে, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক মাইলফলক রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাচীন মিসরীয়দের নানা কৃতিত্বগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খনি থেকে অট্টালিকাদি নির্মাণের জন্য পাথর খনন, সমীক্ষণ ও নির্মাণ কৌশলের দক্ষতা। * রকমারি ডেস্ক
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।