সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: পোস্টমর্টেম কাহিনী

পোস্টমর্টেম কাহিনী



পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত শব্দটি আমরা সবই মাঝে মাঝে শুনি। অনেকেই কাটা-ছেঁড়াকে ভয় পান বলে এই পোস্টমর্টেমের কথা শুনলেই কেমন যেন আঁতকে উঠেন।বহু প্রাচীনকাল থেকেই পোস্টমর্টেমের সঙ্গে ধর্ম, রাজনীতি, যৌক্তিক মতবাদ, আধিভৌতিক জাদুবিদ্যা প্রভৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। বর্তমানে বিশ্বে তিনটি পদ্ধতিতে পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়ে থাকে। মেডিক্যাল পরীক্ষা পদ্ধতি, করোনার পদ্ধতি এবং কন্টিনেন্টাল পদ্ধতি।


লাশকাটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মৃতদেহ। আত্দীয়স্বজন অধীর অপেক্ষায় আছে রিপোর্টের জন্য, যার নাম পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। এ ময়নাতদন্ত কী ও কেন? এ প্রশ্ন শুধু আজকের নয়। হাজার বছর ধরে মানুষ জানতে চেয়েছে তার প্রিয়জন মারা গেল কেন, কীভাবে, কখন ইত্যাদি। মানুষের সব কালের এ জিজ্ঞাসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার নামই পোস্টমর্টেম।
ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি উচ্চ পেশাগত ও কারিগরি মরদেহ পরীক্ষা। আতশ কাচের সাহায্যে দেখে, লাশের প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল, কেমিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল, সেরোলজিক্যাল প্রভৃতিসহ সব জৈবাঙ্গ পরীক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করা এর কাজ। ময়নাতদন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের দীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার সোনালি ফসল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দে মিসর, ব্যাবিলন, সুমেরু, চীন ও ভারতে প্রথম মৃত্যুরহস্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরের ফারাও জোসের আমলে প্রধান চিকিৎসক হেব্রিয়ন, ইমহোটেপ, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৬৫ অব্দে গ্রিসের হিপোক্রেট, মিসরীয় চিকিৎসক হেব্রিয়ন ১১৭-১৩৮ খ্রিস্টাব্দে ১২০০-১২৫০ খ্রি. চীনে এবং ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে ইতালির চিকিৎসক ফরচ্যুনিতো ফেদেলে পোস্টমর্টেমের ওপর পুস্তক রচনা করেন।

বহু প্রাচীনকালে থেকেই পোস্টমর্টেমের সঙ্গে ধর্ম, রাজনীতি, যৌক্তিক মতবাদ, আধিভৌতিক জাদুবিদ্যা প্রভৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ, মৃত্যুর ধরন, মৃত্যুকাল, মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, কোনো বহিঃবস্তুর উপস্থিতি যেমন বুলেট ইত্যাদি থাকলে তা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হলে তা কী বিষ, কীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে তা নির্ধারণ, অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ হলে ভবিষ্যৎ শনাক্তকরণের জন্য তা সংরক্ষণ প্রভৃতি পোস্টমর্টেমের উদ্দেশ্য।

ময়নাতদন্ত সাধারণত দুই প্রকার।
(ক) সব অপমৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনানুগ বা মেডিকো লিগ্যাল, রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত।
(খ) ডাক্তারদের প্রশিক্ষণমূলক ও অজ্ঞাত রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনে ময়নাতদন্ত।

বর্তমানে বিশ্বে তিনটি পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়ে থাকে। মেডিক্যাল পরীক্ষা পদ্ধতি, করোনার পদ্ধতি এবং কন্টিনেন্টাল পদ্ধতি। বাংলাদেশে পুলিশি সুরতহাল বা ইংকোয়েস্ট ও ডাক্তারি পরীক্ষা- এ দুধরনের ময়নাতদন্ত ব্যবস্থা প্রচলিত। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল বাধ্যতামূলক।

সুরতহাল রিপোর্ট, সংশ্লিষ্ট থানার চালান, বহনকারী ও শনাক্তকারী থানার সিপাহির উপস্থিতি, আধুনিক সুবিধাসংবলিত সরকারি মর্গ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও বিশেষজ্ঞ ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী, পর্যাপ্ত দিবালোক, নির্ধারিত ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ফরম, প্রভৃতি পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করতে একান্ত অপরিহার্য শর্ত। এ ছাড়া পোস্টমর্টেম শেষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা রাখাও জরুরি। সমগ্র দেহ, পরিচিত বা অজ্ঞাত যারই হোক, অপমৃত্যু হলেই পোস্টমর্টেম হতে পারে। দেহের যে কোনো অঙ্গের, থেঁতলানো বা মণ্ডে পরিণত দেহাবশেষের, নরকঙ্কাল, একটি একক হাড়ের, দেহ বিচ্যুত যে কোনো অঙ্গের, এমনকি একটি আঙ্গুলেরও ময়নাতদন্ত হতে পারে। লাশ পচা বা-গলিত হলেও তার পোস্টমর্টেম হতে পারে। অত্যন্ত জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় এ কাজটি সম্পন্ন করতে সরকারের চারটি বিভাগকে সম্মিলিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট থাকতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেনসিক চিকিৎসা বিভাগ, আইনজীবীগণ তথা আইন মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং সর্বোপরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ বিভাগকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হয় ময়নাতদন্ত কার্যে। * হাসান ভূইয়া

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।